মুখের ক্যান্সার চিনবেন কিভাবে?
মুখের ক্যান্সার চিনবেন কিভাবে? - ছবি সংগৃহীত
ঠোঁট, গালের ভিতরের দিক, উপরের চোয়াল, নিচের চোয়াল, জিভের সামনের ভাগ, উপরের তালু, জিভ ও দাঁতের মাঝের গর্ত মতো জায়গা (ফ্লোর অব মাউথ), দুই চোয়ালের শেষ অংশ যেখানে দাঁতের বদলে টিস্যু থাকে (রেট্রোমোলার ট্রাইগন)— এই গোটা জায়গার ক্যান্সারকে বলে মুখের কান্সার বা ওরাল ক্যান্সার।
মুখের ক্যান্সার বাড়ছে
ভারতে পুরুষের ক্যান্সারের মধ্যে প্রথম স্থানে এবং মহিলাদের মধ্যে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ওরাল ক্যান্সার। দেশের ক্যান্সার রোগীর মধ্যে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশই মুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত। আরো কঠিন বাস্তবতা হলো, এই বিপজ্জনক রোগটিতে আক্রান্তের সংখ্যা প্রতি বছরই বাড়ছে।
মুখের ক্যান্সারের কারণ
গুটখা, খৈনির মতো ধোঁয়াহীন তামাক সেবন এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার মুখ্য কারণ।
সিগারেট, বিড়ি এবং অন্যান্য ধোঁয়াযুক্ত তামাকজাত দ্রব্য সেবন।
অনেকেই ভাবেন, সুপারি থেকে কোনও ক্ষতির সমস্যা নেই। তবে সত্যিটা হল, সুপারি থেকেও মুখের ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে। তাই পানমশলা বা শুধু সুপারি খাওয়াও বেশ বিপজ্জনক।
মদ্যপান।
এছাড়া জিনগত কারণ এবং পরিবেশেরও এর নেপথ্যে দায়ী থাকে।
লক্ষণ
মুখের ঘা দুই-তিন সপ্তাহ সারছে না।
মুখের মধ্যে অস্বাভাবিক মাংসপিণ্ড রয়েছে।
মুখের ভিতরে সাদা সাদা দাগ হয়। এই দাগগুলোকে বলে লিউকোপ্লেকিয়া। এগুলি অবশ্য ক্যান্সার নয়। তবে এই সাদা দাগের মধ্যে লাল রঙের আলসার দেখা দিলেই সতর্ক হতে হবে।
দাঁত নড়ছে। দাঁতের গোড়ায় অনেকদিন ঘা মতো তৈরি হয়েছে।
মুখের ভিতরে ছোট ঘা থাকলেও তা অনুভব করা যাচ্ছে না। কিন্তু বেশকিছুদিন ধরে গলার গ্ল্যান্ড ফুলে রয়েছে।
মনে রাখবেন, এই লক্ষণগুলি থাকা মানেই ক্যান্সার নয়। অন্য রোগও হতে পারে। তবে এই উপসর্গগুলো থাকলে ক্যান্সারের আশঙ্কা থাকে বহুগুণে বেশি। তাই সতর্ক থাকতে হবে।
রোগ নির্ণয়
প্রাথমিকভাবে ভালো করে রোগীর সমস্যার জায়গাটিকে দেখা হয়। করা হয় ক্লিনিক্যাল এক্সামিনেশন। এরপর সন্দেহ হলে বায়োপ্সি করতে হয়। বায়োপ্সি বলে দেয় ক্যান্সার আছে না নেই। রোগ কতটা ছড়িয়েছে বুঝতে সিটি স্ক্যান, এমআরআই করতে হয়।
চিকিৎসা
ওরাল ক্যান্সারের মূল চিকিৎসা হলো সার্জারি। তবে এক্ষেত্রেও ক্যান্সারের স্টেজ অনুযায়ী চিকিৎসার বিভেদ ঘটে। স্টেজ ১, স্টেজ ২-এর মতো প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ ধরা পড়লে সাধারণত শুধুমাত্র সার্জারি করেই রোগীকে সুস্থ করা সম্ভব। বেশিরভাগ সময়ই অন্য কোনো চিকিৎসার সাহায্য নিতে হয় না। এই পর্যায়ে ক্যান্সারের চিকিৎসায় সাফল্যের হারও বেশি। তবে মনে রাখতে হবে, এ দেশের ক্যান্সার মানচিত্রে প্রাথমিক স্তরে খুব কম মানুষেরই কর্কট রোগ ধরা পড়ে। বেশিরভাগ রোগীরই স্টেজ ৩ বা স্টেজ ৪-এর মতো অ্যাডভান্সড স্টেজে রোগ নির্ণয় হয়। এই স্টেজের ক্যান্সারে প্রথমে সার্জারি করা হয়। তারপর দেয়া হয় রেডিওথেরাপি। রোগ খুব খারাপ অবস্থায় থাকলে রেডিওথেরাপির পাশাপাশি কেমো থেরাপি দেয়া হয়।
খুবই অ্যাডভান্সড স্টেজ, যেখানে সার্জারি করার কোনো উপায় থাকে না, তখন দেয়া হয় প্যালিয়েটিভ কেয়ার। এই চিকিৎসার মূল উদ্দেশ্য হলো রোগীর যন্ত্রণা এবং উপসর্গের উপশম করে যতটা সম্ভব ভালো জীবন দেয়া।
রোগ প্রতিরোধ
মুখের ক্যান্সার থেকে দূরে থাকতে যেকোনো ধরনের তামাকজাত দ্রব্যের সেবন ছাড়তে হবে। নিত্যদিন সুপারি, পানমশলা খাওয়া চলবে না। মদ্যপানে না বলতে হবে। আর অবশ্যই কোনো উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। যত তাড়াতাড়ি রোগ ধরা পড়বে তত দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকবে।
সূত্র : বর্তমান