টিকা নিয়ে যা করছে ইসরাইল
টিকা নিয়ে যা করছে ইসরাইল - ছবি সংগৃহীত
ইসরাইলে ৫০ লাখেরও বেশি অথবা জনসংখ্যার অর্ধেক মানুষকে কোভিড-১৯ ভাইরাসের টিকা দেয়া হয়েছে। আর দেশটিতে করোনা সংক্রমণের হার ক্রমেই কমছে। তবে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে ফিলিস্তিনে করোনা সংক্রমণ তথা কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। ফিলিস্তিনের হাসপাতালগুলোতে প্রায় ২০০টি ভেন্টিলেটর রয়েছে। সবগুলোই এখন ব্যবহৃত হচ্ছে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেছে, তারা আর কোনো কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীকে ভেন্টিলেটর সুবিধা দিতে পারছে না। কেন এই বৈষম্য? কারণ হচ্ছে, ইসরাইল তাদের সামরিক শাসনের অধীনে বসবাসরত ৪০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে করোনার টিকা সরবরাহ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। সংক্ষেপে বলা যায়, এটা হলো চিকিৎসায় বর্ণবাদ যেখানে একটি গ্রুপ টিকা গ্রহণ বা টিকাদানের সুবিধা পাচ্ছে; অপর দিকে, অন্যরা রোগে ভুগছে। কারা সুস্থভাবে জীবনযাপন করবে এবং কাদেরকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া হবে সেজন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে চিকিৎসকদের চাপ দেয়া হচ্ছে। ইসরাইলি সামরিক আইনের অধীনে বসবাস করার অর্থ হলো, প্রকৃতপক্ষে বিশেষভাবে চলাফেরা করার অধিকারসহ সব সিদ্ধান্ত ইসরাইলের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
এই আইন মানুষ এবং পণ্য চলাচলের ওপরও প্রয়োগ করা হচ্ছে। পশ্চিম তীর ও গাজা ভূখণ্ডে যে কোনো কিছু পাঠাতে হলে বা সেখান থেকে বের করতে হলে ইসরাইলের অনুমতি নিতে হয়। ফিলিস্তিনের নিজস্ব কোনো বিমানবন্দর বা সমুদ্রবন্দর নেই। টিকাসহ যে কোনো কিছু ফিলিস্তিনিদের কাছে পাঠাতে হলে সেগুলো ইসরাইলের মাধ্যমেই পাঠাতে হবে।
মহামারী মোকাবেলায় ফিলিস্তিনিরা যাতে কোনো ব্যবস্থা নিতে না পারে এবং তাদের অবস্থা যাতে ক্রমশ খারাপের দিকে যায় সে জন্য ইসরাইল ফিলিস্তিনে টিকা সরবরাহ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। অপর দিকে, আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করে নিজেদের দূতাবাস জেরুসালেমে স্থানান্তরকারী দেশ গুয়েতেমালা ও হন্ডুরাসে ইসরাইল টিকা সরবরাহ করেছে।
কোভিড-১৯ ইসরাইলের চিকিৎসা ক্ষেত্রে বর্ণবাদী কার্যক্রমের একমাত্র উদাহরণ নয়। ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের জীবনযাপনের ব্যাপারে বহুক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। ফিলিস্তিনি হাসপাতালগুলোতে এমনকি ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহৃত রেডিয়েশন যন্ত্রাংশ বা উপাদানসহ চিকিৎসাসংক্রান্ত সরঞ্জাম তথা ওষুধপত্র সরবরাহ করাও তারা বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে হাসপাতালগুলো থেকে চিকিৎসা না পেয়ে রোগীরা বাড়ি ফিরে যাচ্ছে।
অনেকেই যুক্তি দিচ্ছে, ফিলিস্তিনে কোভিডের টিকা পাঠানোর ব্যাপারে ইসরাইলের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্তু তাদের এই বক্তব্য ভুল। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, ইসরাইলের মতো দখলদারদের অবশ্যই সংক্রামক রোগ এবং মহামারীর বিস্তার রোধের জন্য ওষুধপত্র বা সিকিৎসাসামগ্রী সরবরাহ করতে হবে এবং এ জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আইনের বাইরে গিয়ে সহায়তা করার ব্যাপারে কি নৈতিক বাধ্যবাধকতা নেই? কে বা কারা খ্রিষ্টান বা মুসলিম বা ইহুদি ভাইরাস, তার মধ্যে বাছবিচার চলে না। চেকপয়েন্টে ভাইরাস থেমে থাকে না। চিকিৎসার ক্ষেত্রে বর্ণবাদের অবসান ঘটানোর এখনই সময়।
লেখক : ফিলিস্তিনি-কানাডীয় আইনজীবী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
‘আলজাজিরা’র সৌজন্যে
ভাষান্তর : মুহাম্মদ খায়রুল বাশার