জনসংখ্যা ইস্যুতে ব্যর্থ জাপান : রাশিয়াকে রক্ষা করলেন পুতিন

নাঈম হাসান | Apr 06, 2021 04:29 pm
পুতিন

পুতিন - ছবি সংগৃহীত

 

ভুমিকম্প বা সুনামি নয়- জাপানের সামনে এর চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে তাদের জনসংখ্যা হ্রাস পাওয়া। একদিকে গড় আয়ু বাড়ার ফলে মানুষ বেঁচে থাকছে ৮০-৯০ বছর, অন্যদিকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার মাইনাসে।

বয়োবৃদ্ধদের খরচ বহন করতে হয় সরকারকে, অন্যদিকে বয়স্কদের প্রতিস্থাপন করার জন্য নতুন শ্রমশক্তি নেই। এটি একটি ভয়াবহ বিপদ, একরকম অস্তিত্ব সংকট।

তরুণরা বাচ্চা নেয়া তো দূরে থাক, বিয়ে শাদিতেই আগ্রহী নয়। বিয়েতে অনাগ্রহে প্রধানতম কারণ ব্যয়ভার। এছাড়া ওখানে ক্যারিয়ার অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক। তাছাড়া আছে ওভারওয়ার্ক কালচার। ফলে অনেক কাজ করতে হয় সাফল্যের জন্য। বিয়ে করার অর্থই হচ্ছে মেয়েরা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে যাওয়া। কারণ বাচ্চাদের প্রচুর সময় দিতে হয়।
তাছাড়া যৌথ পারিবারিক ব্যবস্থা ওখানে বিলুপ্তির পথে, যেকোনো ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবাদী ক্যাপিটালিস্টিক সমাজে যৌথ পরিবার বিলুপ্ত।

সরকার অনেক চেষ্টা করছে৷ প্রতিবছর বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়ে ফলাফল শূন্য। কেউ মা-বাবা হইতে রাজি নয়। ফলে জাপান এখন সবচেয়ে উন্নত অর্থনীতির সবচেয়ে ডিপ্রেসড জাতি। এদের সুইসাইড রেটও অন্যতম সর্বোচ্চ। এরা কাজ আর ক্যারিয়ারকে জীবনের মানজিলে মাকসাদ বানিয়ে বিষন্নতার এক অন্তহীন চোরাবালিতে আটকে গেছে।

ইমিগ্রেশন বা আর্টিফিশিয়াল রোবট দিয়ে ডেমোগ্রাফিক ক্রাইসিসের অসম্পূর্ণ সমাধান হয়।

আর এই দৃশ্যপটের ঠিক উল্টা পথে হেঁটেছে রাশিয়া। সোভিয়েত পতনের পর রাশিয়া একটি গভীর সাংস্কৃতিক ও জনসংখ্যা সংকটে পড়ে। পতিত অর্থনীতি, কনফিউজড মোরালিটি আর পোস্ট-কমিউনিস্ট লিবারেলিজমের ফলে রাশিয়া এ জনসংখ্যার সংকটে পড়ে।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই রোগটা ধরতে পারেন। এই চ্যালেঞ্জ পুতিন খুব সিরিয়াসলি নেন। তিনি ধরতে পারেন যে জনসংখ্যা নেমে আসার মানে শুধু অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ অন্ধকার করা নয়, বরং একসময়ের ঐতিহ্যবাহী রাশিয়ার অস্তিত্ব সংকটে পড়া। ওদিকে রাশিয়ার মুসলিম জনসংখ্যা বাড়তেছিল বিপুল হারে। মুসলিমরা কখনো রাশিয়ার কৌর আইডেন্টিটি নির্মাণ করবে না, এটাই স্বাভাবিক।

পুতিন এখানেই একটা ট্রিক্স খেলে বসেন। তিনি ওয়েস্টার্ন লিবারেলিজমের বদলে রাশিয়ায় ক্রিশ্চিয়ানিটির পুনর্জাগরণের ব্যবস্থা করেন।
হাজার হাজার নতুন চার্চ নির্মাণ শুরু করেন। সোভিয়েত আমলে রাশিয়ায় চার্চ সংখ্যা ছিল সর্বসাকুল্যে দুই হাজার, সেখান থেকে এখন সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে ২১ হাজারে। শুধু তাই নয়, স্কুলগুলোতে ক্রিশ্চিয়ান ভ্যালুজ শেখানো শুরু করে।

এসব কাহিনী করার উদ্দেশ্য কিন্তু অর্থডক্স খ্রিস্টান ধর্মের প্রতি পুতিনের আসক্তি নয়, পুতিনের মূল গরজ ছিল ওয়েস্টার্ন লিবারেলিজমকে মোকাবিলা করা। কারণ পুতিন বুঝতে পারছিলেন যে লিবারেলিজম আমদানি করলে পরিবার সংকটে পড়বে, আর রাশিয়ার জনসংখ্যা সমস্যার ও আরো অবনতি ঘটবে।

গোটা ইউরোপ সমকামিতা সেলেব্রেট করলেও পুতিন করেননি। রাশিয়ায় সমকামিতা প্রচার নিষিদ্ধ করা হয়। এলজিবিটি, র‌্যাডিক্যাল ফ্যামিনিজম সবকিছুই রাশিয়া সিস্টেমিক্যালি নিয়ন্ত্রণ করেছে। এসবই ছিল পুতিনের গেইম প্লান। এটা তার একনায়কতন্ত্রকেও সুসংহত করেছে কোনো সন্দেহ নেই।

পুতিন আরেকটা কাজ করেছেন। তাহলো যে যত বাচ্চা নেবে, তাকে তত রাষ্ট্রীয় সুবিধা প্রদান। সর্বোচ্চ সংখ্যক বাচ্চা যে নেবে, তার জন্য প্রতিবছর রাষ্ট্রীয় পদকেরও বন্দোবস্ত করা হয়।
বলা হয়, পুতিনের নতুন রাশিয়ান সাম্রাজ্যের তিনটি প্রধান মটো- God..Family & Patriotism...

এসবের ফলাফল ও চোখের সামনে। রাশিয়া তাদের ডেমোগ্রাফিক উইন্টার কাটিয়ে উঠছে।
অন্যদিকে গোটা ইউরোপ ওই সংকটে ডুব দিচ্ছে।

ভবিষ্যৎ অর্থনীতি ও রাজনীতি তে জনসংখ্যাই সবচেয়ে বড় অস্ত্র। জার্মানি, ফ্রান্স এই দেশগুলো ২০৫০ সালে সেরা ১০-এর ভেতরেও থাকবে না। কিন্তু রাশিয়া হয়তো চলে আসবে সেরা ৫ এর ঘরে।
ডিক্টেটর পুতিনকেই রাশিয়ার ইতিহাস সবচেয়ে বড় সেভিয়র হিসেবে মনে রাখবে।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us