চীনের সাথে কেমন সম্পর্ক রক্ষা করবে সৌদি আরব!
মোহাম্মদ বিন সালমান - ছবি সংগৃহীত
চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াংয়ের আঞ্চলিক সফরে সৌদি আরব হয়ে যে ইরান ভ্রমণ করেন, তার প্রতীকী ও তাৎপর্যপূর্ণ গুরুত্ব- উভয়ই রয়েছে। সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সাথে ২৪ মার্চ রিয়াদে বৈঠকে ওয়াং বলেছেন, চীন সার্বভৌমত্ব, জাতীয় মর্যাদা, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় সৌদি আরবকে সমর্থন এবং যেকোনো অজুহাতে সৌদি আরবের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করে।
যুবরাজ মোহাম্মদ প্রতিক্রিয়ায় নিশ্চিত করেন, চীনা উত্থান বিশ্ব শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির পাশাপাশি আরো সুষম বৈশ্বিক সম্পর্কের বিকাশে সহায়ক হবে। সৌদি ক্রাউন প্রিন্স আশা প্রকাশ করেন যে, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে উচ্চ স্তরে উন্নীত করতে দুই দেশ সন্ত্রাসবিরোধী ও নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়িয়ে তুলবে। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, ক্রাউন প্রিন্স বলেছেন, সৌদি আরব জিনজিয়াং ও হংকং সম্পর্কিত ইস্যুতে চীনের বৈধ অবস্থানকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে, যেকোনো অজুহাতে চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের বিরোধিতা এবং চীন ও ইসলামী বিশ্বের মধ্যে মতবিরোধ বপন করার জন্য কয়েকটি পক্ষের প্রয়াসকে প্রত্যাখ্যান করে।
দু’পক্ষের বক্তব্যে মনে হয় যে, চীন ইরানের সাথে ২৫ বছরের যে চুক্তি করেছে তা সৌদি আরবের সাথে চীনের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। সৌদি নিরাপত্তা উদ্বেগ নিরসন এবং সৌদি তেলের চীনা বাজারের সুযোগ সৃষ্টি আর সৌদি আরবে চীনা বিনিয়োগের মাধ্যমে এমন একটি সম্পর্ক নির্মাণ করা হবে যা সৌদি আরবকে চীনের বিরুদ্ধে আমেরিকা শিবিরের টুলস করবে না; অন্যদিকে সৌদি নিরাপত্তায় ইরানের যেকোনো প্রচেষ্টায় চীন বাধা তৈরি করে সমঝোতামূলক নীতি গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করবে।
সাধারণভাবে বলতে গেলে, সৌদি আরব চীনের বিরুদ্ধে জিনজিয়াং সম্পর্কিত বর্তমান মার্কিন প্রচারণায় অংশ নিচ্ছে না। জিনজিয়াং ইস্যুতে চীনকে চাপে ফেলা বাইডেন প্রশাসনের একটি তাৎপর্যপূর্ণ কৌশল। প্রকৃতপক্ষে, ওয়াংয়ের আঞ্চলিক সফর ও মাঠের এই বাস্তবতায় মনে হয় যে চীনের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলের সাথে একাত্ম হয়ে কাজ করার অংশীদার কমে যাচ্ছে।
তবে সৌদি আরব শতাব্দিকাল থেকে পাশ্চাত্যের কৌশলগত বন্ধু। এখন চীনের সাথে কতটা ঘনিষ্ঠ হতে পারবে তুরস্কের মতোই তারও একটি সীমানা থাকবে বলে মনে হয়। চীন-রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক নিয়ে এখনো যুক্তরাষ্ট্র বা তার মিত্ররা চূড়ান্ত তৎপরতা শুরু করেছে বলে মনে হচ্ছে না। তবে এ বিষয়টি আগে থেকে অনুমান করে চীন তার অভিযান শুরু করেছে বলে মনে হচ্ছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধে জড়িত, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্দিষ্ট কিছু দেশ ‘মানবাধিকার’ এবং ‘গণতন্ত্রের’ নামে চীনকে চাপ দিচ্ছে। এই পরিস্থিতি তৃতীয় পক্ষের দেশগুলোকে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি পক্ষ বেছে নেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করার পর্যায়ে এখনো যায়নি। শুধু যুক্তরাষ্ট্রই নয় বৃটেন জার্মানি জাপানের মতো দেশও হঠাৎ করেই তাদের প্রতিরক্ষা বাজেট ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করতে শুরু করেছে। প্রাক সংঘাতের একটি প্রস্তুতি পাশ্চাত্যে শুরু হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।