হাম হলে করণীয়
হাম হলে করণীয় - ছবি সংগৃহীত
হাম সাধারণ রোগ নয়। হামের কারণে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, অপুষ্টিসহ নানা রকম জটিলতা হতে পারে। এ রকম প্রচারণা আমরা প্রতিনিয়ত শুনি। ইদানীং হাম শুধু শিশুদের নয়, বড়দেরও আক্রমণ করছে। এ জন্য হাম প্রতিরোধে আমাদের আরো সচেতন হতে হবে।
হাম ভাইরাসজনিত একটি রোগ। এটা অত্যন্ত সংক্রামক ব্যাধি। পৃথিবীব্যাপী এর প্রকোপ দেখা যায়। সাধারণত আক্রান্ত রোগীর হাঁচি-কাশির মাধ্যমে এর ভাইরাস আশপাশের সুস্থ মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্ত ব্যক্তির কক্ষে প্রবেশ করলেও সুস্থ কেউ হামের জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে।
হামের ভাইরাসের সুপ্তিকাল ১০ থেকে ১৪ দিন। অর্থাৎ সুস্থ কারোর শরীরে ভাইরাস প্রবেশ করার ১০ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে রোগের লক্ষণ ও উপসর্গ প্রকাশ পায়। হাম হলে প্রচণ্ড জ্বর হয়। জ্বরের সাথে সারা শরীরে ব্যথা, চোখ-নাক দিয়ে পানি ঝরা, কাশি, মাথাব্যথা, কানে ব্যথাসহ নানাবিধ উপসর্গ থাকে। জ্বর শুরু হওয়ার তিন থেকে পাঁচ দিনের মাথায় শরীরে লাল দানা ওঠে। হামের লাল দানা ওঠার চার দিন আগে থেকে শুরু করে পরবর্তী চার দিন পর্যন্ত রোগীর শরীর থেকে হামের জীবাণু অন্যদের মধ্যে ছড়াতে পারে। সারা বছর পৃথিবীতে প্রায় এক কোটি মানুষ হাম দ্বারা আক্রান্ত হয়। এদের মধ্যে নানা রকম জটিলতার কারণে দুই লাখের মৃত্যু ঘটে থাকে। হামের কারণে পাঁচ বছর কম বয়সী শিশুরাই বেশি মৃত্যুবরণ করে। নবজাতক ও বড়রাই হামের জটিলতার বেশি শিকার হয়।
ইদানীং কলেজ-ভার্সিটির ছাত্রছাত্রী এবং বড়দের হাম হতে দেখা যাচ্ছে। আগেই বলা হয়েছে বড়দের হাম হলে জটিলতা বেশি হয়। হামের জটিলতার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মারাত্মক নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, কানের সংক্রমণ ইত্যাদি। এ ছাড়া অনেক সময় মস্তিষ্কের প্রদাহ হতে পারে। হাম শিশুদের অপুষ্টির একটি কারণ। গর্ভাবস্থায় মায়েদের হাম হলে গর্ভপাত ও অকাল প্রসব হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়া গর্ভস্থ শিশুর ওজন কমে যায়।
কারো হাম হলে অবশ্যই অবহেলা করা যাবে না। হাম আক্রান্ত ব্যক্তির পর্যাপ্ত বিশ্রাম, পুষ্টি এবং পানীয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
হাম প্রতিরোধযোগ্য একটি ব্যাধি। এর বিরুদ্ধে অত্যন্ত কার্যকর টিকা রয়েছে। স¤প্রসারিত টিকা দান প্রকল্পের অধীনে অন্যান্য রোগের পাশাপাশি হামের বিরুদ্ধেও টিকা দেয়া হয়।
এ ছাড়া হাম, মাম্পস ও রুবেলা রোগের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য আরেক ধরনের অত্যন্ত কার্যকর টিকা বাজারে পাওয়া যায়। যাদের জন্ম ১৯৫৭ সালের পরে এবং যাদের শৈশবে হাম হয়নি কিংবা শৈশবে হামের টিকা নেয়ার নিশ্চিত প্রমাণ নেই তাদের এমএম আর টিকা গ্রহণ করা উচিত। বিশেষত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, স্বাস্থ্যকর্মী, বিদেশ ভ্রমণকারী কিংবা ঝুঁকিগ্রস্ত মনে করছেন এমন প্রত্যেকের অন্তত দুই ডোজ এমএম আর টিকা গ্রহণ করা উচিত। হামের টিকা নিরাপদ। এমএমআর টিকারও তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। তবে গর্ভাবস্থায় মায়েদের এবং যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল তাদের এ টিকা গ্রহণ করা উচিত নয়। টিকা নেয়ার পরে সামান্য জ্বর কিংবা টিকা প্রদানের স্থানে লাল চাকা কিংবা ফুলে যেতে পারে, যা কয়েক দিনের মধ্যেই স্বাভাবিক হয়ে যায়।
মেনাস বিশ্ববিদ্যালয়, অস্ট্রেলিয়া