প্রচণ্ড গরমে কেন ওরস্যালাইন পান করবেন?

ডা. অনির্বাণ দলুই | Apr 06, 2021 01:05 pm
প্রচণ্ড গরমে কেন ওরস্যালাইন পান করবেন?

প্রচণ্ড গরমে কেন ওরস্যালাইন পান করবেন? - ছবি সংগৃহীত

 

মানব শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা হলো ৯৮.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট। কখনো খেয়াল করে দেখেছেন কি, বাইরের পরিবেশের তাপমাত্রার হেরফের হলেও আমাদের শরীরের মূল তাপমাত্রার পরিবর্তন হয় না! এইরকম হওয়ার কারণ হলো, আমাদের শরীর অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা বা ‘কোর টেম্পেরেচার’ ধরে রাখতে নানা ধরনের উপায় অবলম্বন করে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উপায় হলো ত্বকের মাধ্যমে ঘাম বের করে দেয়া। শরীরের তাপমাত্রা বাড়লে এই ঘাম তাপ

সঙ্গে নিয়ে বাতাসে বাষ্পীভূত হয়ে যায়। ফলে শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যায়। সেই কারণেই শরীরের তাপমাত্রা বজায় থাকে।

তবে ঘাম আবার দুই ধরনের হয়। এক ধরনের ঘাম আছে যা গা থেকে দরদর করে ঝরে। এই ধরনের ঘাম আমরা চোখে দেখতে পাই। আবার একধরনের ঘাম বের হয় যা আমরা চোখে দেখতে পাই না। অথচ তা শরীর থেকে বের হয়। আসলে আমাদের ত্বকে থাকে রক্ত জালিকা। বাইরের তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করলে মস্তিষ্কের নির্দেশে স্নায়ুর মাধ্যমে ত্বকের নিচে থাকা ঘর্ম গ্রন্থিগুলো উত্তেজিত হয় ও ফল স্বরূপ ঘাম বের হয়। অতিরিক্ত পরিশ্রমেও শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করে। আমাদের শরীর এই তাপমাত্রা বৃদ্ধি আটকাতে ত্বকের নিচের রক্তজালিকায় বেশি মাত্রায় রক্ত পৌঁছে দেয়। এসবের কারণে সেখানে অবস্থিত ঘর্ম গ্রন্থি থেকে পানির সাথে খনিজ লবণ সাথে নিয়ে ঘাম হিসেবে বেরিয়ে আসে ও জলীয়বাষ্পরূপে বাতাসে মিশে যায়। দরদর করে ঘাম বেরনো বন্ধ হলেও ত্বক থেকে জলীয়বাষ্প রূপে ঘাম বেরনো কিন্তু কখনোই বন্ধ হয় না।

পানির অভাব
বেশি মাত্রায় ঘাম বেরলে শরীরে পানির মাত্রা হ্রাস পায়। এই ঘাটতি পূরণ করার দরকার পড়ে। মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস নামে অংশ তখন তৃষ্ণার উদ্রেক ঘটায়। এরপর আমরা পানি পান করি ও শরীরের পানির অভাব পূরণ করি। ঘাম হওয়া ছাড়াও ইউরিন, বমি ও ডায়ারিয়ার কারণেও শরীরে পানির অভাব দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রেও পর্যাপ্ত পানিপানের মাধ্যমেই শরীরে পানির জোগান বজায় রাখতে হয়। এই প্রসঙ্গেই জানিয়ে রাখি ঘাম, ইউরিন, বমি ও ডায়ারিয়ার মাধ্যমে পানির সঙ্গে শরীর থেকে প্রয়োজনীয় কিছু খনিজও বেরিয়ে যায়। এই খনিজের মধ্যে অন্যতম হলো সোডিয়াম ও পটাশিয়াম। শরীর থেকে খনিজ বেরিয়ে গেলে পেশিতে টান ধরতে শুরু করে। ফলে শরীরে জড়তা আসে, অস্বস্তিভাব শুরু হয়, এমনকী কথাবার্তা অসংলগ্ন ও হয়ে পড়ে।

সময়টা যখন গ্রীষ্মকাল
গ্রীষ্মকালে অতিরিক্ত ঘাম বেরনোর কারণে পেশিতে টান ধরা ছাড়াও হিট-এক্সজশ্চন ও হিটস্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কাও থেকে যায়। এক্ষেত্রে শরীর গরম হয়ে ওঠে, শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা হারিয়ে যায়। হিটস্ট্রোকের রোগী অজ্ঞান হয়ে যান। এমনকী রোগীর অভ্যন্তরীণ অঙ্গের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাও থাকে।

অতএব পেশিতে টান ধরলে কিংবা হিটস্ট্রোক হলে বুঝতে হবে রোগীর শরীরে পানি ছাড়াও খনিজের অভাবও ঘটেছে। সেক্ষেত্রে ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশন (ওআরএস বা ওরস্যালাইন) অত্যন্ত উপযোগী প্রমাণিত হতে পারে। অবশ্য হিটস্ট্রোকের রোগীকে ও আরএস পান করানোর সঙ্গে তাকে ঠান্ডা পানিতে গোসল করাতে হবে। সম্ভব হলে বরফ ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করানো যেতে পারে। এর ফলে রোগীর শরীর শীতল হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ওরস্যালাইন
হু-এর নির্দেশিকা অনুযায়ী প্রতি এক লিটার ওআরএস তৈরির জন্য দরকার ২.৬ গ্রাম সোডিয়াম ক্লোরাইড। ১৩.৫ গ্রাম গ্লুকোজ, ১.৫ গ্রাম পটাশিয়াম ক্লোরাইড, ট্রাইসোডিয়াম সাইট্রেট ২.৯ গ্রাম। এক্ষেত্রে গ্লুকোজ শরীরকে তৎক্ষণাত শক্তির জোগান দেয়। একই সাথে সোডিয়াম ও পানির ঘাটতি মেটাতে সাহায্য করে। অন্যদিকে খনিজের ভারসাম্য বজায় রাখে সোডিয়াম ও পটাশিয়াম। সাইট্রেট বজায় রাখে দেহে অম্লও ক্ষারের ভারসাম্য।

কীভাবে পান করবেন ওআরএস?
আমাদের মতো গ্রীষ্ম প্রধান দেশে সবসময় দরদর করে ঘাম না হলেও জলীয়বাষ্পের মাধ্যমে শরীর থেকে পানি বেরিয়েই যাচ্ছে। বিশেষ করে তীব্র রোদে বেরিয়ে শ্রম দান করতে হয় এমন মানুষের ক্ষেত্রে ঘাম ও জলীয়বাষ্পের আকারে শরীর থেকে পানি বেরিয়ে যাওয়া রুখতে হলে নিয়মিত ওআরএস পান করতে হবে। এক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন মেনে তৈরি হয়েছে এমন ওআরএস-এর প্যাকেট কিনে এক লিটার পানিতে মেশান।

এইভাবে দুই থেকে তিন লিটার ওআরএস তৈরি করে পান করতে পারেন সারাদিনে। তবে যারা গ্রীষ্মের দিনে অফিসে বসে কাজ করছেন তাদের সারাদিনে নিয়ম মেনে তৈরি করা একলিটার ওআরএস পান করতেই পারেন। তবে হ্যাঁ, কিডনি রোগীরা বা হার্ট ফেলিওর রোগীরা চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে তবেই ওআরএস পান করবেন। কারণ এদের পক্ষে সোডিয়াম, পটাশিয়াম এবং অতিরিক্ত পানি ক্ষতিকারক প্রমাণিত হতে পারে। একবার পানিতে মেশানো হয়ে গেলে সেই পানীয় চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে ব্যবহার করে ফেলতে হবে।

রেডিমেড ওআরএস
বাজারে এখন ফ্রুট জ্যুসের মতো বোতলে, টেট্রা প্যাকে পুরে ওআরএস বিক্রি হচ্ছে। তবে এই ধরনের ওআরএস কিনে খাওয়ার আগে দেখতে হবে সেখানে ডব্লিউএইচও-এর গাইডলাইন মেনে গ্লুকোজ, সোডিয়াম ও পটাশিয়াম মেশানো হয়েছে কি না।

ঘরোয়া বিকল্প
যদি ওআরএস কোনো কারণে পাওয়া না যায় সেক্ষেত্রে কিছু ঘরোয়া পানীয় পান করা যেতে পারে। যেমন ডাবের পানি, লবণ চিনির শরবত, দইয়ের ঘোল ইত্যাদি।

সূত্র : বর্তমান


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us