ভারতীয় মুসলিম তরুণী আফিফার অনন্য কৃতিত্ব
মারিয়াম আফিফা আনসারী - ছবি : সংগৃহীত
সবচেয়ে কম বয়সী নিউরো সার্জেন হিসেবে কৃতিত্ব অর্জন করলেন ডা. মারিয়াম আফিফা আনসারী। মারিয়াম নিউরো সার্জারিতে তার পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছেন হায়দরাবাদের ওসমানিয়া মেডিক্যাল কলেজ থেকে। তিন বছরের ডিগ্রি সম্পন্ন হওয়ার পরে ভারতীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে তিনি একজন সর্বকনিষ্ঠ নিউরো সার্জেন হিসেবে পরিচিত লাভ করেন। মাত্র ২৭ বছর বয়সেই সাফল্য তার ঝুলিতে।
‘আমার সাফল্য আল্লাহর কাছ থেকে পাওয়া সবচেযে বড় উপহার ও আশীর্বাদ', বলে জানিয়েছেন নিউরো সার্জেন মারিয়াম আফিফা আনসারী।
২০২০ সালের অল ইন্ডিয়া নিট এসএস পরীক্ষায় মারিয়াম আফিফা ১৩৭র্ যাঙ্ক পান। তবে মারিয়াম দশম ক্লাস পযর্ন্ত উর্দু মাধ্যমেই পড়াশোনা করেছেন। তিনি মহারাষ্ট্রের মালেগাঁওয়ের তহজিন হাইস্কুলে সপ্তম শ্রেণি পযর্ন্ত পড়াশোনা করেন। এরপর তিনি হায়দরাবাদ চলে আসেন। এরপর দুরুশ্বর বালিকা বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু হয় মারিয়ামের। বরাবরই পড়াশোনায় কৃতিত্বের সঙ্গে স্থান অধিকার করেন তিনি। দশম ক্লাসের পরীক্ষায় তিনি টপার হন ও সোনার পদক অর্জন করেন। পরীক্ষায় শীর্ষ র্যাংক দখল করে সফলতার সঙ্গে হায়দরাবাদের এমএস জুনিয়র কলেজ থেকে উত্তীর্ণ হন তিনি। তার এই কৃতিত্বের জন্য মারিয়াম হায়দরাবাদের ওসমানিয়া মেডিক্যাল কলেজ এমবিবিএস পড়ার সুযোগ পান।
এমবিবিএস পড়ার সময় তিনি পাঁচটি সোনার পদকে পুরস্কৃত হন। ২০১৭য়ে তার ইন্টারমিডিয়েট শেষ হওয়ার পরে মারিয়াম জেনারেল সার্জারির জন্য নিখরচায় ওই কলেজেই পড়ার সুযোগ পান। ২০১৯ তিনি সার্জারিতে পোস্ট গ্রাজুয়েট এমআরসিএস সম্পন্ন করেন ইংল্যান্ডের রয়্যাল কলেজ থেকে। এরপর আফিফা ২০২০ সালে ভারতের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অধীনে বিশেষ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি জাতীয় বোর্ড কোর্সের ডিপ্লোমেট সম্পন্ন করেন।
সমস্ত মুসলিম মেয়ের উদ্দেশে মারিয়াম বলেছেন, ‘কখনো হাল ছেড়ে দেবেন না– কাউকে কখনো বলবেন না– যে আপনি এটা করতে পারবেন না– সাফল্য অর্জন করে তাদের ভুল প্রমাণ করে দিন’।
সমস্ত তরুণ প্রজন্মে কাছে একটি অনুপ্রেরণার নাম মারিয়াম আফিফা আনসারী।
সূত্র : পুবের কলম
অচেনা দ্বীপের বাসিন্দা থেকে তানজানিয়ার প্রেসিডেন্ট
তিনি মৃদুভাষী– নম্র ও একজন বলিষ্ঠ রাজনীতিবিদ। হঠাৎই একটা গোটা দেশের শাসনভার এসে পড়েছে তার কাঁধে। অসুস্থতার কারণে প্রেসিডেন্ট জন মাগফুলির জীবনাবসানের পর ভাইস প্রেসিডেন্ট থেকে তানজানিয়ার প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়ে গিয়েছেন সামিয়া সুলুহু হাসান।
শুক্রবার দেশটির বাণিজ্যিক রাজধানী দার এস সালামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের মাঝে প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেন ৬১ বছরের সামিয়া হাসান। তবে প্রেসিডেন্ট হওয়ার আনন্দ বা উচ্ছাস কোনোটাই নেই তার চোখে মুখে। শপথ নিয়ে বললেন, আজ আমার কথা বলার জন্য ভালো দিন নয়। কারণ আমার হৃদয়ে গভীর ক্ষত রয়েছে। আজ আমি যে শপথটি নিয়েছি তা আমার কর্মজীবনের অন্য শপথগুলোর চেয়ে আলাদা। আগেরগুলো আমি আনন্দে নিয়েছি– আর আজ অফিসের শীর্ষ পদের শপথ নিলাম শোকাতুর হয়ে।’ এখন দেশের সংবিধান মাফিক ২০২৫ পর্যন্ত ক্ষমতায় থেকে সামিয়া হাসান পরলোকগত প্রেসিডেন্ট মাগফুলির পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করবেন।
তানজানিয়ার ক্ষমতাসীন মধ্যবামপন্থী চামা চা মাপিনদুজি সিসিএম দলের কর্মী ছিলেন তিনি। ক্রমে নিজের যোগ্যতার মাধ্যমে কাজ করে দলীয় নেতাদের নজরে আসেন এবং পদমর্যাদো বাড়তে থাকে তার। শেষপর্যন্ত ২০১৫ সালে জন মাগফুলি তাকে রানিং মেট বানান এবং নিজের প্রথম নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন সামিয়াকে নিয়েই। ওই ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয় লাভ করে মাগফুলির দল এবং ঐতিহাসিকভাবে তানজানিয়ার প্রথম মহিলা ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন সামিয়া হাসান। বিগত অক্টোবরের নির্বাচনে অবশ্য নানা অব্যবস্থাপনার অভিযোগের মাঝে পুননির্বাচিত হয় মাগফুলিসামিয়া জুটি। এরপর থেকে প্রেসিডেন্ট মাগফুলির প্রতিনিধি হয়ে অপরিচিত মুখ হয়েই বহুবার বিদেশ সফর করেছেন তিনি। কারণ তানজানিয়ার বাইরে তেমন কেউই তাকে চিনতেন না।
তবে আজ হাতে পবিত্র কুরআন ধরা ও মাথায় স্কার্ফ পরা সামিয়ার ছবি ভেসে উঠেছে সবগুলো আন্তর্জাতিক টিভি চ্যানেলে। বিশ্ব মানচিত্রে লুকিয়ে থাকা একটি ছোট্ট দ্বীপের মেয়ে এখন আফ্রিকার আইকন বনে গিয়েছেন। মিডিয়া তাকে নিয়ে মাতামাতি করলেও তিনি কিন্তু মৃদুস্বরেই ১৪ দিনের শোক ঘোষণা করেছেন দেশে। এরপর বলেছেন– আমি সামিয়া হাসান সৎভাবে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে তানজানিয়ার সংবিধানকে সুরক্ষিত রাখার কথা দিলাম।
সূত্র : পুবের কলম