যুক্তরাষ্ট্র কি কৃষ্ণাঙ্গবিরোধী দেশ?

নাহিদা ইয়াসমিন | Apr 03, 2021 05:23 pm
যুক্তরাষ্ট্র কি কৃষ্ণাঙ্গবিরোধী দেশ?

যুক্তরাষ্ট্র কি কৃষ্ণাঙ্গবিরোধী দেশ? - ছবি সংগৃহীত

 

‘আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না।’ জর্জ ফ্লয়েড নামে এক কৃষ্ণাঙ্গের মৃত্যুকালীন আকুতি! মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এমনই নারকীয় অবস্থা দাস, নারী ও কৃষ্ণাঙ্গদের।

আমেরিকাতে দাসত্বের শুরু হয়েছিল ১৭ শতকের গোড়ার দিকে।
যা দুই শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে দাস প্রথা নামে মানুষের উপর নির্যাতন অব্যহত ছিল। দাসদের দ্বারা কোনো রকম অসন্তুষ্ট হলেই নির্যাতনের মাত্রা চরমে ওঠত। বেশিরভাগ দাসদের আফ্রিকা থেকে আনা হয়েছিল, তারা প্রথমে তামাক উৎপাদন এবং পরে তুলা উৎপাদনের কাজ করেছিল। ১৭৯৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক ভিত্তি দাসদের ওপর নির্ভর করে গড়ে ওঠেছিল।

১৯ শতকের মাঝামাঝি নাগাদ আমেরিকার দক্ষিণ অঞ্চলে দাস প্রথার সম্প্রসারণ ঘটতে থাকে এবং উত্তরে ক্রমবর্ধমান দাসবিরোধী আন্দোলনের সাথে দাসত্বের বিষয়ে জাতীয় মতবিরোধ দেখা দেয়। যা পরে আমেরিকাকে গৃহযুদ্ধের দিকে নিয়ে যায়।

পেনসিলভেনিয়ার কোয়েকার অঞ্চলে আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম আনুষ্ঠানিক-দাসত্ব বিরোধী রেজুলেশন গ্রহণ করেছিল।

১৭১২ সালের এপ্রিল মাসে নিউ ইয়র্ক সিটিতে দাস বিদ্রোহ হয়, এ সময় নয়জন শ্বেতাঙ্গ মানুষ মারা গিয়েছিল, যার ফলে দাসদের উপর বিধিনিষেধ মাত্রা আরো বেড়ে যায়।

জর্জ ওয়াশিংটনের নেতৃত্বে ১৭৭৬ সালে ৪ জুলাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৩টি উপনিবেশ সম্মিলিত ভাবে গ্রেট ব্রিটেনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা লাভ করে।

১৭৮৯ সালে 'জর্জ ওয়াশিংটন' প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ব্রিটেনের রাজতন্ত্র থেকে বের হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচন হয়েছিল। তবে নির্বাচনে জর্জ ওয়াশিংটন তার বিপুল জনপ্রিয়তায় ভোটে জিতলেও, এ নির্বাচলে কৃষ্ণাঙ্গ, দাস ও নারীদের ভোটের অধিকার ছিল না। স্বল্পসংখ্যক শ্বেতাঙ্গদের ভোটে তিনি আমেরিকার প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে মনোনীত হন।

১৮৬৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৬তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন আব্রাহাম লিংকন। দাস প্রথার চরম বিরোধী লিংকন ১৮৬৩ সালে দাস প্রথার মতো জঘন্য প্রথার আইনত অবসান ঘটান। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ অঞ্চলের নাগরিকরা এ আইন মেনে নিতে না পারায় দেশে গৃহযুদ্ধে মেতে ওঠে। ওই সময় পেনসিলভেনিয়ার গেটিসবার্গের প্রায় আট হাজার মানুষ নিহত হন।

১৯২০ সালের ১৮ আগস্টের আগে যুক্তরাষ্ট্রে যে সকল নারী জন্মগ্রহণ করেছেন তাদের ভোট দেয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নারীরা ভোটাধিকার পায় ১৯২০ সালে সংবিধানের ১৯ তম সংশোধনীর মাধ্যমে। আদিবাসীরা ভোটাধিকার পায় ১৯২৪ সালে।
তবে কৃষ্ণাঙ্গরা রয়ে গেলো দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক! তারা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হওয়া সত্বেও নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত।

১৯৬৫ সালে 'ভোটিং রাইটস অ্যাক্ট' স্বাক্ষরিত হওয়ার মাধ্যমে জন্মসূত্রে কৃষ্ণাঙ্গরা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অধিকার পায়। যাকে কখনো কখনো প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের দেয়া দাস মুক্তির ঘোষণার পর 'দ্বিতীয় মুক্তি' বলা হয়। তখন প্রায় ১০ লাখ কৃষ্ণাঙ্গ ভোটার হন।

মার্কিন জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি নারী, কিন্তু দেশটিতে নারী অধিকারের শতবর্ষ অতিক্রম করার পরও দেখা যাচ্ছে কোনো নারী প্রেসিডেন্ট নেই। ২০১৬ সালে মার্কিন নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম নারী হিসেবে হিলারি ক্লিনটন প্রেসিডেন্ট পদে লড়লেও তার পরাজয় যেন নিশ্চিতই ছিল। প্রেসিডেন্ট পদে শুরু থেকে এখন পর্যন্ত পুরুষদের কর্তৃত্ব, কোনো নারী এ স্থান দখল করতে পারেনি। যদিও প্রথমবারের মতো ২০২০ সালের নির্বাচনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে মনোনীত হন কমলা হ্যারিস।

কাগজ-কলমে এ দেশে দাসপ্রথা নিষিদ্ধ হয়েছে দেড় শ' বছর আগে, কিন্তু এখনো মগজে মননে রয়ে গেছে এর পৈশাচিকতা। বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, আমেরিকায় পুলিশের গুলিতে নিহতদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষ। কৃষ্ণাঙ্গরা এখনো আমেরিকার সবচেয়ে দরিদ্র ও অনগ্রসর জনগন। সুবিধাবঞ্চিত এলাকায় তাদের বাস। স্বাস্থ্য শিক্ষার মতো মৌলিক চাহিদায় তারা অবহেলিত। কৃষ্ণাঙ্গদের ছেলেমেয়েরা ভালো স্কুলে পড়ার সুযোগ পায় না। তারা যে সব স্কুলে পড়াশোনা করে , যার ৯০ শতাংশেরও অধিক হয় কৃষ্ণাঙ্গ না হয় অভিবাসী। তাদের আসল অপরাধ দারিদ্র্য, তাদের গায়ের রং কালো।

সাদা কালো সকল মানুষের সমান অধিকারের স্বপ্ন দেখেছিলেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র। ১৯৬৩ সালে তার ১৭ মিনিটের বক্তব্য আজ মানব ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন।

'আমার একটি স্বপ্ন আছে যে একদিন, জর্জিয়ার লাল পাহাড়ে, সাবেক দাসের সন্তান আর সাবেক দাস-মালিকের সন্তান একসঙ্গে বসতে সক্ষম হবে ভ্রাতৃত্বের আসনে। আমার একটি স্বপ্ন আছে যে একদিন, এমনকি মিসিসিপি স্টেটে— যেটি ছটফট করছে অবিচারের উত্তাপে, যেটি ছটফট করছে নিষ্পেষণের উত্তাপে— সেটিও পাল্টে গিয়ে হয়ে উঠবে মুক্তি আর ন্যায়ের মরূদ্যান।আমার একটি স্বপ্ন আছে যে আমার ছোট চারটি সন্তান একদিন এমন একটি জাতির মধ্যে বসবাস করবে, যেখানে গাত্রবর্ণ দিয়ে আর তাদের বিচার করা হবে না, করা হবে চরিত্রগুণ দিয়ে...
আজকে আমার একটি স্বপ্ন আছে।'

লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us