পোশাকে লাল-সবুজের আমেজ
পোশাকে লাল-সবুজের আমেজ - ছবি : অন্য এক দিগন্ত
২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে বিশ্বের বুকে নতুন একটি দেশের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধশেষে, লাখো শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে এবং অসংখ্য মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয় নতুন দেশ বাংলাদেশ। স্বাধীনতা দিবস দিনটিকে আমরা স্মরণ করি গভীর শ্রদ্ধা এবং স্বজন হারানোর শোক ও দেশের প্রতি ভালোবাসায়।
স্বাধীনতা দিবস মানেই বাংলাদেশীদের জন্য অনেক আবেগ এবং অহঙ্কারের দিন। বাঙালির লাল-সবুজের সাথে সখ্য রক্তে মিশে আছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর ইতিহাস বুকে ধারণ করে তাই তো স্বাধীনতা দিবসের উৎসবকে রাঙিয়ে তুলতে চায় ভিন্ন আমেজে। এই বিশেষ দিনের উৎসবকে ঘিরে ফ্যাশন সচেতন তরুণ-তরুণীদের ট্রেন্ড ফ্যাশনেও আনে নানা পরিবর্তন। জাতীয় পতাকার প্রিয় লাল-সবুজ রঙের প্রাধান্যে তৈরি পোশাকাদিতে সেজে ওঠে দিনটি। আর তাই ট্রাডিশনাল পোশাকে সাজানো হয় স্বাধীনতা দিবসের সংগ্রহ।
লাল-সবুজের মাস এই মার্চ। সবুজের মধ্যে লাল-সবুজ বাংলাদেশের বুকে শহীদের রক্তের প্রতীক যেন। এই মাসেই আপামর বাঙালি নিজের জীবন বাজি রেখে দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আর সেই স্বাধীনতার চেতনা এখন শুধু পোশাক-পরিচ্ছদ কেনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। ফ্যাশন সচেতন হিসেবে নিজেদের মূল্যবোধকে শাণিত করে তুলেছে বহুগুণ। উৎসব-পার্বণ ছাড়াও স্বাধীনতা দিবসের ফ্যাশনগুলো আকর্ষণ করে সব বয়সী ক্রেতাকে। এই দিনে ছেলে মেয়েরা বিশেষ সাজে সেজে থাকে। জাতীয় এই বিশেষ দিনে পুরুষদের পোশাক মানেই যেন পাঞ্জাবি। কেউ পরেন পায়জামার সাথে আবার কেউ কেউ পাঞ্জাবির সাথে বেছে নেন জিন্স। আজকাল অনেক তরুণ বিশেষ দিবসের রঙের সাথে সামঞ্জস্য রেখে টিশার্ট পরছেন। শিশুরাও বাদ যায় না। তারাও সাজে লাল-সবুজের ধারায় এবং মেতে থাকে স্বাধীনতার আনন্দে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুনতাহার সাথে এই প্রসঙ্গে কথা বললাম। স্বাধীনতা দিবসের বিশেষ পোশাক সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বললেন, প্রতিটি উপলক্ষের একটা নিজস্ব ফ্লেভার থাকে। তার সঙ্গে মিলিয়ে পোশাক পরতে ভালোবাসি। উপলক্ষের সঙ্গে মিলিয়ে পোশাক পরলে অনেক বেশি একাত্ম হওয়া যায়। বাংলা বর্ষবরণে লাল-সাদা পোশাক বেছে নিতে বেশির ভাগ মানুষকে দেখা যায়। একুশে পড়া হয় সাদা-কালো। স্বাধীনতা দিবসে ও বিজয় দিবসে লাল-সবুজ শাড়ি-পাঞ্জাবি পরাটা সেই উদযাপনেরই অংশ। তবে না পড়লেও কোনো ক্ষতি নেই।
কয়েক বছর আগেও নারীরা স্বাধীনতা দিবসে পোশাক হিসেবে শাড়িই বেছে নিত। স্বাধীনতা দিবসের পোশাকে একচেটিয়াভাবে রঙের স্থান দখল করে ছিল লাল-সবুজ। শাড়ির পাশাপাশি সালোয়ার-কামিজ, ওড়না, কুর্তি, ফতুয়া পরার চল বেড়েছে। বিশেষ এই দিনের পোশাকের রঙেও এসেছে কিছু পরিবর্তন। লাল-সবুজের সাথে সহকারী রঙ হিসেবে থাকে সাদা, কমলা, হলুদ, গোল্ডেন হলুদ, টিয়া। পোশাকের নকশা ফুটিয়ে তোলা হয় নানা ভ্যালু অ্যাডেড মিডিয়ার ব্যবহারে। এর মধ্যে আছে ব্লকপ্রিন্ট, স্ক্রিনপ্রিন্ট হাতের কাজ ইত্যাদি।
স্বাধীনতার মাসে পোশাক তৈরির প্রতিষ্ঠানগুলোয় থাকে বিশেষ আয়োজন। আমাদের ফ্যাশন হাউজগুলো নতুন প্রজন্মকে পোশাকের দিক থেকে করেছে স্বদেশমুখী। ডিজাইনারদের ডিজাইনের বড় অংশজুড়ে থাকে দেশাত্মবোধের চেতনা। বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, স্বাধীনতা দিবসে তাদের বিক্রির তালিকায় লাল-সবুজ রঙের পোশাকের প্রাধান্য থাকে। স্বাধীনতা দিবস সামনে রেখে সেজেছে রাজধানীসহ বিভাগীয় শহর এবং জেলা শহরের পোশাকের শোরুমগুলো। দোকানের সামনে সাজানো পুতুলের গায়ে চড়েছে লাল-সবুজ শাড়ি, পাঞ্জাবি। গাঢ় সবুজ টিশার্টের বুকে কোথাও পতাকার লাল সূর্য, কোথাও স্লোগান। লাল-সবুজের আঁচড়ে সাজানো পোশাকগুলো যেন একেকটি স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। বিশেষ করে শাড়ি-পাঞ্জাবি-সালোয়ার কামিজে আমাদের জাতীয় পতাকার লাল-সবুজের পাশাপাশি পতাকায় থাকা হলুদ রঙে আঁকা মানচিত্রও থাকে। স্ক্রিনপ্রিন্ট করা শাড়ি ও পাঞ্জাবিও বিশেষ আকর্ষণীয়।
ছেলেদের ফ্যাশনেও প্রতি বছর থাকে বৈচিত্র্য। এবারো তার ব্যতিক্রম হয়নি। লাল-সবুজের প্রাধান্য দিয়ে স্বাধীনতার আমেজ তুলে ধরা হয়েছে পোশাকে। স্বাধীনতা দিবসের পোশাকের আয়োজনে ছোটদের জন্য ফ্যাশন হাউজগুলো তৈরি করেছে লাল-সবুজ আর টিয়া-কমলা রঙে ছোট মেয়েদের সালোয়ার-কামিজ, টপস ও ফতুয়া। আর ছোট ছেলেদের পাঞ্জাবি ও টিশার্ট সাজানো হয়েছে স্বাধীনতার রঙে। এক দশক আগেও স্বাধীনতা দিবস নিয়ে পোশাকের ক্ষেত্রে এত আনুষ্ঠানিকতা ছিল না। দিন দিন মানুষ সৌখিন হচ্ছে। ক্রেতাদের পছন্দের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী ফ্যাশন হাউজগুলো রুচিসম্মত এবং উৎসবনির্ভর পোশাক তৈরি করছে। স্বাধীনতা দিবসের পোশাকে উঠে আসছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, কবিতা, স্লোগান, মিছিল, স্মৃতিসৌধের প্রতিকৃতি, গৌরবোজ্জ্বল বিভিন্ন মুহূর্ত, দেশাত্মবোধক গানের লাইন ও বর্ণমালা।
দিবসভিত্তিক পোশাকের ব্যাপারটা আমাদের সংস্কৃতিতে অন্তর্ভুক্ত করেছেন আমাদের দেশের ফ্যাশন ডিজাইনাররা। দিবসের সাথে ফ্যাশনের ধারাটা চালু থাকা প্রমাণ করে আমাদের জাতীয় জীবনের বড় প্রাপ্তির ইতিহাস- স্বাধীনতা দিবস। ৭১-এ বাঙালির আত্মত্যাগ যেমন হৃদয়ছোঁয়া, মর্মস্পর্শী, আবেগঘন তেমনি আনন্দময়তাও কম নয়। ফলে দু’টি রূপের প্রতিফলন বিম্বিত হয় জাতীয় দিবসগুলোর ফ্যাশন কনসেপ্টে।
স্বাধীনতা দিবসের রঙ দিয়ে রাঙানো পোশাকগুলো পাওয়া যাবে দেশীয় ফ্যাশন হাউজ আড়ং, অঞ্জন’স, বিশ্বরঙ, কে ক্রাফট, রঙ বাংলাদেশ, বিবিয়ানা, নিত্য উপহার, নিপুণ, বাংলার মেলা, নবরূপাসহ অন্যান্য অনেক ফ্যাশন হাউজে। ব্যবসায়ীরা বলেন, শুধু ব্যবসায়িক কারণে নয়, দায়িত্ব ও মূল্যবোধ এবং দেশপ্রেম থেকেই তারা স্বাধীনতা দিবসের বিশেষ আয়োজন করে থাকেন। এসব পোশাকের মূল্য ক্রেতাদের নাগালের মধ্যেই।
গত বছর স্বাধীনতা দিবস করোনার কারণে পালন করা থেকে বিরত থেকেছেন রাষ্ট্রসহ সাধারণ সব মানুষ। এক বছরের ব্যবধানে টিকা আবিষ্কার হয়েছে। এখন প্রতিদিন করোনার টিকা নিচ্ছেন বাংলাদেশের মানুষ। করোনার প্রকোপ অনেক কমে এসেছে। তবু উৎসব পালন করতে গিয়ে মাস্ক পরার কথা ভুলে গেলে চলবে না। পোশাকের সাথে অবশ্যই মাস্ক পড়ে নিন এবং স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলুন।