ঘুমালে কি ওজন কমে?
ঘুম - ছবি : সংগৃহীত
ওজন কমানো বেশ কঠিন একটা বিষয়। আবার ততোধিক কঠিন হলো শরীরে নতুন করে মেদ জমতে না দেয়াটাও। তবে জানলে হয়তো অবাক হবেন, বিভিন্ন গবেষণায় ঘুম ও দৈহিক ওজনের হ্রাস-বৃদ্ধির মধ্যে কিছু সংযোগ পাওয়া গিয়েছে।
ঘুম ও ওজনের সংযোগ
গত কয়েক দশক ধরে, সারা পৃথিবীতেই মানুষ ভুগছেন ঘুমের অভাবে। আমেরিকানদের নিয়ে করা এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, যারা কম ঘুমান তাদের দৈহিক ওজন থাকে বেশি। সাধারণত তারা স্থূলকায় হন। এখানেই শেষ নয়। দেখা গেছে বাধাপূর্ণ ঘুম এবং খারাপ গুণমানের ঘুমের কারণে হতে পারে মেটাবলিক ডিজঅর্ডার। মেটাবলিজম অর্থাৎ খাদ্য গ্রহণ, শোষণ ও আত্তীকরণের সমগ্র প্রক্রিয়াটিতেই সমস্যা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা থাকে। এই কারণেই বাড়তে থাকে ওজন। একইসঙ্গে হানা দেয় অন্যান্য অসুখও।
ঘুমের অভাব আর খিদে
খিদে নিয়ন্ত্রিত হয় দু’টি হর্মোনের মাধ্যমে। এই দু’টি হর্মোনের নাম গ্রেলিন ও লেপটিন। পাকস্থলী থেকে ক্ষরিত হয় গ্রেলিন নামক হর্মোনটি। এটি খিদের অনুভূতি দেয়। অন্যদিকে ক্ষুদ্রান্ত্র থেকে ক্ষরিত হয় লেপটিন হর্মোন। যা পেট ভরে যাওয়ার অনুভূতি প্রদান করে। সারাদিনের মধ্যে শরীরে প্রাকৃতিকভাবেই এই দুই হর্মোন প্রয়োজনমতো নিঃসৃত হয়। এইভাবে প্রয়োজন অনুসারে শরীর কিছু ক্যালোরি গ্রহণ করে।
দেখা গিয়েছে ঘুমের অভাবে এই হর্মোনের ভারসাম্যে অভাব ঘটতে পারে।
এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, যে সকল পুরুষ দিনে ৪ ঘণ্টা ঘুমোন, তাদের দেহে লেপটিনের মাত্রা কমেছে ও গ্রেলিনের মাত্রা বেড়েছে। অতএব বোঝাই যাচ্ছে, কম ঘুমনো মানুষের দেহে গ্রেলিন ও লেপটিনের মাত্রার এমন হেরফের খিদের বৃদ্ধি ঘটায় ও পেট ভরার অনুভূতি কমায়। এখানেই শেষ নয়। বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে জানা যাচ্ছে, কম ঘুমের অভ্যেস বদলে দিতে পারে খাদ্যাভ্যাস। দেখা গিয়েছে, কম ঘুমোনো ব্যক্তিরা এমন খাদ্য নির্বাচন করতে পছন্দ করেন যাতে ক্যালোরি বেশি থাকে । অর্থাৎ ভাজাভুজি বা বেশি মিষ্টিজাতীয় অথবা শর্করাজাতীয় খাদ্য তারা খেতে ভালোবাসেন।
ঘুম কি মেটাবলিজম বাড়ায়?
মেটাবলিজম একটি জৈবরাসায়নিক প্রক্রিয়া। এক্সারসাইজ করলে সাময়িকভাবে মেটাবলিজম বাড়ে। তবে ঘুমের সময় মেটাবলিজম অন্তত ১৫ শতাংশ হ্রাস পায়। আর মেটাবলিজম সবচাইতে কমে যায় সকালের দিকে। নানা সমীক্ষায় দেখা গেছে ইনসমনিয়া, স্লিপ অ্যাপনিয়াসহ অন্যান্য নিদ্রা সংক্রান্ত অসুখ মেটাবলিজমের বারোটা বাজায়।
ঘুমের অভাব বাড়িয়ে তোলে দুশ্চিন্তা করার প্রবণতা। একইসঙ্গে বেড়ে যায় রক্তে শর্করার মাত্রা যা ডায়াবেটিস ডেকে আনতে পারে। এমনকী শরীরে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়িয়ে দেয় পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব। আবার বেশি সময় জেগে থাকার অভ্যেস বাড়তি খাদ্য খাওয়ার সুযোগ তৈরি করে দেয়।
ঘুম এবং এক্সারসাইজ
কম ঘুমোলে এক্সারসাইজসহ কায়িক শ্রম করার জন্য উৎসাহের অভাব হয়। অথচ সবাই জানেন কায়িক শ্রমের কাজ ও এক্সারসাইজই পারে ওজন কমিয়ে রাখতে। গবেষকরা বলছেন, দিনেমানে প্রতিদিন এক্সারসাইজ করলে ঘুমের গুণমান বাড়ে। প্রতি সপ্তাহে ২২৫ মিনিট মাঝারি ও ভারী শরীরচর্চা রাতে ঘুমের গুণগত মান ভালো করে। দিনের বেলায় ঝিমুনি আসে না।
ঘুম এবং স্থূলত্ব
বাচ্চা এবং বয়ঃসন্ধিকালের ছেলেমেয়েদের মধ্যে কম ঘুমোনো এবং মোটা হওয়ার প্রবণতার মধ্যে সংযোগ মিলেছে। অবশ্য সকলেই এই তত্ত্ব পুরোপুরি মানতে রাজি নন। তবু দেখা গিয়েছে পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবের প্রভাব বাচ্চাদের মেটাবলিজমে পড়ে। বিশেষ করে দেরিতে ঘুম থেকে ওঠার কারণে বাচ্চারা ব্রেকফাস্ট খেতে চায় না। বরং সারাদিনে খিদের চোটে মিষ্টি, নোনতা, ভাজাভুজি এবং শর্করাযুক্ত খাদ্য খেতে বেশি পছন্দ করে। স্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায় ওজন।
প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে অবশ্য গবেষণার ফলাফল পুরোপুরি পরিষ্কার নয়। তবে দেখা গেছে যে সকল প্রাপ্তবয়স্ক রাতে ৬ ঘণ্টার কম ঘুমোন তারা সাধারণত একটু মোটাই হন।
ভালো ঘুমোনোর টিপস—
• প্রতিদিন রাতে নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমোতে যান। চেষ্টা করুন রাত সাড়ে দশটার মধ্যে শুয়ে পড়তে। যত বেশি রাত করবেন তত বেশি কুপ্রভাব পড়বে মেটাবলিজমে। এমনকী ইনসুলিনের প্রতি সংবেদনও হ্রাস পাবে। ফলে রক্তে সুগারের মাত্রা বাড়তে থাকবে।
• বিকেল থেকেই চা, কফি, কোল্ড ড্রিংকস খাওয়া বন্ধ করতে হবে।
• অন্ধকার ঘরে শুয়ে থাকুন। ঘরে কোনো আলো জ্বলা চলবে না। হাতের কাছে মোবাইল রাখা চলবে না। টিভি কোনওমতেই চালানো যাবে না।
• দেখা গেছে দ্রুত শুয়ে পড়লে ও ভোরে উঠলে যেকোনো কাজে এনার্জি মেলে। রাতে চোখে দ্রুত ঘুম নেমে আসে। যারা এমন রুটিন মেনে চলেন তাদের দৈহিক ওজনও স্বাভাবিক থাকে।
সূত্র : বর্তমান