তেতো খাবারে থাকে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট
উচ্ছে - ছবি : সংগৃহীত
রোজ দিন সকালে এক গ্লাস নিমপাতার রস খেতেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শান্তিনিকেতনের ছাত্রদেরও পঞ্চতিক্ত পাঁচন খাওয়ানো শুরু করেছিলেন কবি। তখন চারদিকে মহামারি, ওই পাঁচন ছাত্রদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে বলে কবির বিশেষ নির্দেশ ছিল। নিম, থানকুনি, তেউরি, গুলঞ্চ আর নিশিন্দা একসঙ্গে বেটে তৈরি হত পাঁচন। বাঙালি রসনাতেও তেতো স্বমহিমায়। তেতো বলে কি শুক্তোর স্বাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া যায়? নিম, উচ্ছে, সজনে ডাঁটা বা ফুল- তেতো খাবার বলতে মূলত এগুলোই বোঝানো হয়। তা ছাড়া মেথি, কালমেঘ বা থানকুনিও আছে। সাধারণত গরমের দিনেই তেতো খাওয়ার চল বেশি। তার প্রধান কারণ, এগুলো সব মরসুমি আনাজ। তা ছাড়া গ্রীষ্মকালে রোগের দাপটও বাড়ে। তাই চিকিৎসকদের নিদান ইমিউনিটি বাড়াতে তেতোর স্বাদ চাখতেই হবে।
তেতোর গুণ
উচ্ছে এমন একটি আনাজ, যা সারা বছর মেলে। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, সি, বি কমপ্লেক্স, বিটা কেরাটিন, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রয়েছে। উচ্ছের উপকারিতার ব্যাখ্যায় ডায়াটিশিয়ান সুবর্ণা রায়চৌধুরী বলছিলেন, ‘‘ইমিউনিটি বাড়াতে, ব্লাড প্রেশার, সুগার কমাতে উচ্ছে সাহায্য করে। এর মধ্যে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটারি উপাদান আছে যা, ব্লাডে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এর ফলে হার্ট ভাল থাকে, ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে থাকে। উচ্ছের মধ্যে থাকা স্যাপোনিনস এবং টারপেনয়েডস এগুলোতে সাহায্য করে। চুল, স্কিন ভালো রাখার জন্যও সহায়ক।’’
• ত্বক ভালো রাখতে নিম যে অব্যর্থ, তা সকলেই জানেন। এ ছাড়া নিমের মধ্যে রয়েছে আয়রন, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, ফাইবার, ফসফরাস। নিমের মধ্যে থাকা আয়রন হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য করে। এর অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রক্ত পরিশোধনে সাহায্য করে।
• সজনে ডাঁটা বা ফুলও উপকারী। এতে ভিটামিন সি, এ, কে, বি আছে। ব্লাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখতে, সর্দি-কাশি নিরাময়ে সাহায্য করে।
• কালমেঘ আর থানকুনি পাতাও অনেক রোগের উপশম করে। এদের মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রক্ত পরিশুদ্ধ করে, ইমিউনিটি বাড়ায়।
তেতো নিয়ে কিছু ধারণা
বলা হয়, গরমকালে তেতো খাওয়া ভালো, খালি পেটে খেলে বেশি উপকার... ডা. সুবর্ণা রায়চৌধুরীর কথায়, ‘‘গরমে রোগের দাপট বাড়ে, তাই ইমিউনিটি দরকার। সে জন্য হয়তো কথাগুলো প্রচলিত। তবে খালি পেটে খেতে হবে এমন নয়। সেটা হয়তো স্বাদের কারণে বলা হয়।’’ কৃমি সারাতে, লিভার ভালো রাখতে বা জন্ডিসের রোগীদের জন্য নিম উপকারী, বলা হয়। ‘‘উচ্ছে, নিম বা সজনের মধ্যে অ্যান্টি-ব্যাকটিরিয়াল উপাদান রয়েছে, যা কৃমি সারাতে, লিভার ভালো রাখতে সাহায্য করে। যেহেতু এগুলো ইমিউনিটি বাড়ায় তাই পক্স, জন্ডিসের রোগীদের জন্যও ভালো,’’ বক্তব্য সুবর্ণার। তেতোর মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট যে বহু রোগের উপশম করে, তা মেনে নিলেন জেনারেল ফিজিশিয়ান সুবীরকুমার মণ্ডলও। তবে তার পরামর্শ, ‘‘কোনো কিছু একনাগাড়ে বেশি দিন খাবেন না। সবই
মরসুমি আনাজ, তাই নির্দিষ্ট সময় পর্যন্তই খান।’’
কী ভাবে খাওয়া যায়
উচ্ছের রস বা নিমের রস খেতে পারলে ভালো। এগুলো শরীর থেকে টক্সিন বার করে দেয়। একটু লেবুর রস আর বিটনুন দিয়ে খেলে অতটা তেতো লাগবে না। বাঙালি বাড়িতে তেতোর ডাল খাওয়ার চল আছে। উচ্ছে দেয়া ডাল খেতে ভালোই লাগে। উচ্ছে ভাজা বা নিম-বেগুন ভাজা খেতেও বেশ। সজনে ফুলের বড়া করতে পারেন। শুক্তো তো আছেই, গরমের দিনে নিমঝোলও খাওয়া যায়। নিম-সজনে শুধু হলুদ আর ধনে গুঁড়ো দিয়ে তৈরি ঝোল, ঠান্ডা ঠান্ডা চুমুক দিয়ে খেয়ে নেয়া যায়। বাচ্চাদের তেতো খাওয়ানো মুশকিল। তাই মায়েদের ঘরোয়া টোটকা— নিম পাতা বেটে ছোট ছোট বড়ি করে খাইয়ে দিন। এ ভাবে কালমেঘ বা থানকুনিও খাওয়াতে পারেন। খাদ্যতালিকায় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে তেতো রাখতেই হবে।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা