করোনার জন্য প্যানিক অ্যাটাক : কী করবেন?

ডা. জয়রঞ্জন রাম ও ডা. নাফিসা ইয়াসমিন | Apr 02, 2021 03:39 pm
করোনার জন্য প্যানিক অ্যাটাক : কী করবেন?

করোনার জন্য প্যানিক অ্যাটাক : কী করবেন? - ছবি : সংগৃহীত

 

টেলিমেডিসিন বিভাগে অভিজ্ঞতা

ঘটনা ১- ‘বুক ধড়ফড় করছে। মনে হচ্ছে জ্বর হয়েছে। কিন্তু থার্মোমিটারে মেপে দেখছি ৯৮। আমার কি করোনা হতে পারে’?

ঘটনা ২- ফোনের ওপারে একজন বৃদ্ধ। স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে একাই থাকেন। সন্তানরা কাজের সূত্রে থাকেন বাইরে। করোনার ভয়ে বৃদ্ধ ঘণ্টায় ঘণ্টায় তাপমাত্রা মাপছেন। কোন ঘণ্টায় কত তাপমাত্রা ছিল (সবসময়ই ছিল স্বাভাবিক) সেটাও অবলীলায় জানালেন। তারপরই জানতে চাইলেন, ‘বলুন তো করোনার কিছু বুঝছেন কি না?’

ঘটনা ৩- শেষ তিন-চার দিন জ্বর রয়েছে। চিকিৎসক করোনা পরীক্ষা করতে দিয়েছিলেন। সেই রিপোর্টে আজ করোনা পজিটিভ এসেছে। রিপোর্ট শোনামাত্রই হঠাৎই শরীরে ব্যথা ও দুর্বলতা বেড়ে গেল। শুরু হল সামান্য শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরা। প্রশ্ন, ‘কেন এমনটা হচ্ছে ডাক্তারবাবু?’

এগুলো কিছু উদাহরণ মাত্র। করোনা অতিমারীর মধ্যে এমন অসংখ্য অদ্ভুত সব সমস্যার সাক্ষী হচ্ছে চিকিৎসাজগৎ। মানুষের মনে সচেতনতার দেওয়াল ডিঙিয়ে অতিরিক্ত আশঙ্কা, ভয়, অবসাদ বাসা বাঁধছে।

কেন হচ্ছে?
 করোনা আক্রান্তের সংখ্যা রোজ বাড়ছে। এর বিরূপ প্রভাব মনের উপর সরাসরি পড়ছে। কিছু ক্ষেত্রে সাধারণ এই চিন্তা আতঙ্কে পরিণত হয়ে সমস্যা তৈরি করছে।

 করোনা আক্রান্ত অনেককেই হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। অনেকেই বাস্তব পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তায় পড়ছেন। হয়তো ভাবছেন, কীভাবে ঘরের মধ্যে দূরত্ব রক্ষা করবেন? কোনো সমস্যা, বিপদ-আপদে কার সাহায্য পাবেন? পেলে কীভাবেই বা পাবেন? আমার জন্য পরিবারের অন্যদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়ালে, তখন? অজস্র প্রশ্ন মনের অন্দরে ঘনীভূত হচ্ছে। তা থেকেও মনে দুশ্চিন্তার ঝড় ওঠা সম্ভব।

 বহু মানুষ আগে থেকেই অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা (অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার), অবসাদ (ডিপ্রেশন) ইত্যাদি মানসিক সমস্যায় ভোগেন। করোনা পরিস্থিতিতে তাঁদের সমস্যা আরো বাড়ছে।

 করোনা সম্পর্কিত নেতিবাচক খবর দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। কতজন অসুস্থ, কতজন মারা গেলেন, চিকিৎসা পরিষেবার দুরাবস্থা ইত্যাদি নানা ধরনের খবর সারাদিন চোখের সামনে এসে পড়ছে। রোজকার এমন নেতিবাচক পরিস্থিতি অবশ্যই মনের উপর প্রভাব ফেলে।
সমাধান কীভাবে?

এমন প্রশ্ন মনে এলে চিকিৎসকদের কাছে আসলে প্রাথমিকভাবে তারা মানুষটিকে বোঝাতে চেষ্টা করছেন। এরপরও কাজ না হলে হাউজ ফিজিশিয়ানের পরামর্শ নিতে বলা হচ্ছে। হাউজ ফিজিশিয়ান যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন সত্যিটা মানুষটির মনে গেঁথে দেয়ার। তাতেও সমাধান না হলে বিশেষজ্ঞ মনোবিদের পরামর্শ নিতেই হবে।

আশঙ্কা এড়াতে কী করবেন?
 সতর্ক থাকতে হবে। সতর্ক থাকার জন্য চিন্তাও করা যেতে পারে। তবে চিন্তাকে কোনওভাবেই দুশ্চিন্তা বা আশঙ্কায় পরিণত করা যাবে না। বরং মনে রাখবেন, দুশ্চিন্তা করে লাভ নেই, আপনি ভালো থাকতেও পারবেন না।

 ভালো খবরে বেশি মন দিন। দেখুন, রোজই আক্রান্ত রোগীর পাশাপাশি সুস্থ হওয়া মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে। এই ভালো খবরগুলোকে মাথায় ঢুকিয়ে নিতে পারলে সমস্যা কমবে।

 চিকিৎসাব্যবস্থার ওপর ভরসা রাখতে হবে। চিকিৎসকের কাছে আসা বেশিরভাগ রোগীই ভালো হয়ে যান।

 কোয়ারেন্টাইনে থাকার সময় অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শমতো চলুন। নিয়মিত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন।

 দুশ্চিন্তা হলে চেপে রাখবেন না। পরিবারের লোকজন, বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে কথা বলুন। দরকারে বিশেষজ্ঞের সঙ্গেও নির্দ্বিধায় কথা বলতে পারেন। সমস্যা ভাগ করে নিলে দুশ্চিন্তাও অনেকটা কমে।

 আগে থেকে অবসাদ, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা বা অন্য মানসিক সমস্যা থাকলে নিয়মিত নিজের ওষুধ খেয়ে যেতে হবে। সমস্যা বাড়লে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

সূত্র : বর্তমান

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us