রেড ইন্ডিয়ানদের দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
রেড ইন্ডিয়ানদের দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র - ছবি : সংগৃহীত
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আদি অধীবাসীদের নাম রেড ইন্ডিয়ান। ক্রিস্টোফার কলম্বাস নামের ইতালি নাবিক ১৪৯২ সালে আমেরিকা আবিষ্কার করেন। মূল আমেরিকা ছিল গ্রেট ব্রিটেনের ১৩টি উপনিবেশ। ব্রিটেনের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে জর্জ ওয়াশিংটনের নেতৃত্বে ১৭৭৬ সালে ৪ জুলাই ১৩টি উপনিবেশ সম্মিলিতভাবে গ্রেট ব্রিটেনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা লাভ করে। এ ঘটনা আমেরিকা বিপ্লব নামে পরিচিত। তখন থেকে আমেরিকায় ৪ জুলাই স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।
আমেরিকা বিপ্লবের মধ্য দিয়েই পৃথিবীতে প্রাথমিকভাবে গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক সংস্কৃতি চর্চার শুরু হয়। মূলত এখান থেকেই ব্রিটিশ আধিপত্যের ক্ষয়ও শুরু হয়।
১৭৮৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন জর্জ ওয়াশিংটন। তিনিই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একমাত্র প্রেসিডেন্ট যিনি ১০০ শতাংশ ইলেকটোরাল ভোট পেয়ে দুই মেয়াদে ক্ষমতায় ছিলেন। যদিও স্বল্প সংখ্যক শ্বেতাঙ্গদের ভোটে তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে মনোনীত হন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন সংবিধান রচিত হয় ১৭৮৯ সালে বিশ্বের ক্ষুদ্রতম, লিখিত সংবিধান হিসেবে। সারা বিশ্বে মার্কিন সংবিধান 'গোল্ডেন বুক' হিসেবে পরিচিত।
আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি দেশ যেখানে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি অঞ্চল থেকে অভিবাসনের ধারাবাহিক তরঙ্গ প্রবাহিত হয়েছে। দেশটি 'অভিবাসীদের দেশ' হিসেবে পরিচিত। বেশির ভাগ মার্কিনিদের পারিবারিক উৎস অনুসন্ধান করলে দেখা যায় এশিয়া, আফ্রিকা বা ইউরোপে তাদের পারিবারিক বন্ধন রয়েছে।
বহুসংস্কৃতির এই দেশটি পশ্চিম গোলার্ধে অবস্থিত আয়তনে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তর দেশ। এবং জনসংখ্যায় বিশ্বে তৃতীয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অন্বেষণ করার জন্য একটি বিশাল দেশ, যার মধ্যে ৫০টি অঙ্গ রাজ্য রয়েছে। আলাস্কা এবং হাওয়াই ছাড়া আটচল্লিশটি অঙ্গরাজ্য সংযুক্ত অবস্থায় রয়েছে। হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জটি প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত এবং এটি ক্ষুদ্রতম, ৫০ তম প্রদেশ হিসেবে যুক্ত হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে। আলাস্কা সবচেয়ে বড় অঙ্গরাজ্য। ১৮৬৭ সালে রাশিয়ার কাছ থেকে ৭২ লাখ ডলারে কিনে নেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি পশ্চিম সীমান্তে প্রশান্ত মহাসাগরের সাথে মিলিত হয়, পূর্ব দিকে আটলান্টিক মহাসাগর এবং একটি অবিশ্বাস্যরকম বৈচিত্রময় সুন্দর ভূখণ্ডের আচ্ছাদন রয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৩৫০ থেকে ৪৩০ টি কথ্য ভাষা রয়েছে যা দেশটিকে বিশ্বের অন্যতম ভাষাতাত্বিকভাবে বৈচিত্র্যময় একটি দেশ হিসাবে পরিচয় দেয়। ফেডারেল স্তরে কোনো সরকারি ভাষা না থাকলেও অনেক রাজ্যই ইংরেজি এবং অন্যান্য দেশীয় ভাষাকে অফিসিয়াল ভাষা হিসেবে গ্রহণ করেছে। অন্তত ২৮ টি রাজ্যের সরকারি ভাষা ইংরেজি। দেশটিতে প্রায় ৮০ শতাংশ বয়স্ক লোকের একমাত্র ভাষা ইংরেজি।
দেশটির রাজধানী, ওয়াশিংটন ডিসি মধ্য আটলান্টিক উপকূলে অবস্থিত। জনসংখ্যায় বৃহত্তম শহর নিউইয়র্ক সিটি।
১৮৬৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৬তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন আব্রাহাম লিংকন। দাস প্রথার বিরোধী লিংকন ১৮৬৩ সালে দাস প্রথার মতো জঘন্য প্রথাকে চিরকালের জন্য অবসান ঘটান। ওই সময় দেশে গৃহযুদ্ধ বেঁধে যায়। পেনসালভেনিয়া অঙ্গ রাজ্যের গেটিসবার্গে প্রসিডেন্ট লিংকন একটি ভাষণ দেন। এই ভাষণই ইতিহাসে বিখ্যাত গেটিসবার্গ ভাষণ হিসেবে পরিচিত ।
দেশটি স্বাধীন হওয়ার প্রায় দেড় শ' বছর পর নারীরা ভোটাধিকার পায় ১৯২০ সালে সংবিধানের ১৯ তম সংশোধনীর মাধ্যমে। আদিবাসীরা ভোটাধিকার পায় ১৯২৪ সালে।
বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি পদে বহাল আছেন জো বাইডেন। তিনি আমেরিকার ৪৬তম প্রেসিডেন্ট। প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় আছেন কমলা হ্যারিস।
যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ব্যস্ততম বিমানবন্দর জর্জিয়া রাজ্যে হার্টসফিল্ড-জ্যাকসন আটলান্টা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
আমেরিকার ফ্রিজ আলাস্কা। এটি বৃহত্তম ও শীতলতম অঙ্গরাজ্য। মেরু ভালুক ও স্থানীয় ইউপিকের লোকদের সন্ধান পাওয়া যায় আলাস্কা অঙ্গরাজ্যে।
আমেরিকানরা বছরে প্রায় তিন বিলিয়ন পিজ্জা বিক্রি করে। প্রতিদিন প্রায় ১০০ একর পিজ্জা খায়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের 'কিং ডেজার্ট স্টেট' হিসেবে পরিচিত অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্য। এখানে গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড তাপমাত্রা ও শীতকালে তুষারপাত হয়। যদিও ১৯৫০-এর দশক থেকে, অ্যারিজোনার জনসংখ্যা ও অর্থনীতি নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় নিদর্শন স্ট্যাচু অব লিবার্টি। নিউ ইয়র্ক শহরের কোলে হাডসন নদীর তীরে অবস্থিত এই মূর্তিটি ফ্রান্স আমেরিকাকে উপহার দেয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-রাজনৈতিক প্রভাবের একটি অংশ ক্যালিফোর্নিয়া। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্বের শক্তিশালী অর্থনৈতিক সুপার পাওয়ার। বিশ্বের বৃহত্তম টেক কোম্পানিগুলোর মধ্যে তিনটি কোম্পানি সিলিকন ভ্যালিতে রয়েছে।
মেরিল্যান্ড মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ধনী ও সর্বাধিক শিক্ষিত কৃষ্ণাঙ্গদের আবাসস্থল। এটি অলিম্পিক স্বর্ণপদক বিজয়ী মাইকেল ফেল্পসেরও বাড়ি মেরিল্যান্ডে।
ফিনল্যান্ডের মতো আমেরিকার মিনেসোটা। এটি "দশ হাজার হ্রদের ভূমি" হিসেবে পরিচিত। এছাড়াও এখানে কিছু ফিনিশ এবং নর্ডিক লোক রয়েছে যারা এখানে বাস করেন।
বিস্তৃত সমভূমি, তুষার আবৃত পর্বতমালা, বনভূমি ঘূর্ণায়মান পাহাড়, মরুভূমি, আজব পাথর, চমকপ্রদ উপকূল রেখা, চিত্তাকর্ষক জাতীয় উদ্যান ও সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক দৃশ্য; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যগুলো সমস্ত কিছুতে সমৃদ্ধ।
লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।