বিষণ্ণতাকে পুষে নিজের ক্ষতি করবেন না, দূর করুন এভাবে
বিষণ্ণতাকে পুষে নিজের ক্ষতি করবেন না, দূর করুন এভাবে - ছবি : সংগৃহীত
বর্তমান যুগে 'ডিপ্রেশন' নামক শব্দটার সাথে ছোট থেকে বড় সবাই কম বেশি পরিচিত। আমাদের চলতি কথাবার্তার মধ্যে মাঝেমাঝেই এই শব্দটা আমরা ব্যবহার করে থাকি। বাংলায় আমরা একে 'বিষণ্ণতা' বলে থাকি। সারা বিশ্বেই ডিপ্রেশন এক মারাত্মক ব্যাধি বলে স্বীকৃত। এই বিষণ্ণতা মানুষকে আস্তে আস্তে অক্ষমতার দিকে ঠেলে নিয়ে যায়।
ছোট, বড় প্রত্যেকেই কম বেশি স্ট্রেস, বিষণ্ণতায় ভোগে কোনো না কোনো সময়। ডিপ্রেশন এমন একটি মেন্টাল ডিসঅর্ডার, যার কারণে কোনো মানুষের জীবন ক্ষতবিক্ষত হয়ে যেতে পারে। বর্তমান সময়ে ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতা বেশিরভাগই দেখা যায় ছাত্র-ছাত্রী বা টিনএজারদের মধ্যে। বিশেষ করে, বয়ঃসন্ধিকালে যে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন আসে ওই সময় স্ট্রেস দেখা দেয়। ছেলেমেয়েদের ওপর এই সময় সবথেকে বেশি বিষণ্ণতা ভর করে এবং তারা আবেগবশত কিছু ভুল করে ফেলে। কেউ কেউ আত্মহত্যার পথও বেছে নেয়। আবার, কেউ কেউ ধূমপান, মদ্যপান ও নানারকম খারাপ কাজের সাথে জড়িয়ে পড়ে। যা মারাত্মক আকার ধারণ করে এবং অনেক সময় ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দেয়। মাঝেমাঝেই খবরের শিরোনামে উঠে আসে এই ধরনের খবর।
ডিপ্রেশন কী?
বিষণ্ণতা বা ডিপ্রেশন, স্ট্রেস এমনই মারাত্মক ব্যাধি যা মানুষের অনুভূতি, চিন্তা ও কাজ-কর্মের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অনেক সময়, আমরা আমাদের মনখারাপ বা দুঃখবোধ ও বিষণ্ণতাকে এক বলে মনে করি। কিন্তু, এই দুটি এক নয়। দুঃখবোধ হলো সাময়িক মনখারাপ যা কিছু সময়ের মধ্যেই ঠিক হয়ে যায়। আর এর জন্য কোনও চিকিৎসার দরকার হয় না। কিন্তু, ডিপ্রেশন হল দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা। যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।
টিনএজার ছেলে-মেয়েদের বিষণ্ণতার কারণ :
ক) অনেকসময় পড়াশুনায় ব্যর্থ হলে বা কোনো কাজে সফল না হতে পারলে এই বয়সের ছেলে মেয়েরা বিষণ্ণতায় ভোগে।
খ) বন্ধুদের সঙ্গে মনোমালিন্যের কারণেও বিষণ্ণতা দেখা দেয়।
গ) কলেজ মানেই সদ্য স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে এক নতুন রঙিন জগৎ। নতুন বন্ধু-বান্ধব, পাশাপাশি প্রেমের আনাগোনা। সেই প্রেমে ধাক্কা খেয়ে বিষণ্ণতায় ভোগে এই বয়সী ছেলে-মেয়েরা।
ঘ) বড়রা বকা-ঝকা করলে অপমানহীনতায় ভোগে।
ডিপ্রেশনের লক্ষণ :
ক) এক্ষেত্রে ব্যক্তির মন-মেজাজের পরিবর্তন হয়। সবকিছুতেই নেতিবাচক মনোভাব দেখা যায়।
খ) তারা সাধারণত স্বাভাবিক কাজ করতে অক্ষম হয়ে পড়ে, শক্তিহীন, অলস ও নিস্তেজ বোধ করে।
গ) ঘুম হয় না। শরীরে ক্লান্তি অনুভব হয়।
ঘ) রোজকার খাদ্যাভাসে অনীহা দেখা দেয়। নিজের প্রতি খেয়াল রাখার ইচ্ছা থাকে না।
ঙ) যেকোনো কাজে মনোযোগের অভাব দেখা দেয়।
চ) অল্প কিছুতেই কেঁদে ফেলার ইচ্ছা হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাঁচার ইচ্ছে চলে যায়।
ছ) অবসাদের সবথেকে বড়ো উপসর্গ হলো, যেটা করতে সবচেয়ে বেশি ভালোলাগে সেটা না করার ইচ্ছা।
বিষণ্ণতা দূর করার উপায় :
শুধুমাত্র টিনএজারই নয়, মধ্যবয়স্ক থেকে বয়স্ক প্রত্যেকেই কখনো না কখনো ডিপ্রেশনে ভুগে থাকেন। বিষণ্ণতা যেমন মানুষের ক্ষতি করে, তেমনই এর থেকে মুক্তির উপায়ও আছে। এই উপায়গুলো মেনে চললে ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
ক) মিউজিক মানুষের মেজাজকে নিমেষের মধ্যে বদলাতে পারে। এটা ওষুধের মতো কাজ করে ডিপ্রেশনের সময়। মিউজিক শুনলে আমাদের মন শান্ত হয়ে যায়। মস্তিষ্ক আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হতে শুরু করে।
খ) পর্যাপ্ত সময় ঘুমানো উচিত। সঠিক সময় খাবার খাওয়া উচিত।
গ) বাইরে ঘুরতে যাওয়া ও নিজের জন্য শপিং করতে পারেন।
ঘ) রোজ ডায়রি লেখার অভ্যাস করুন।
ঙ) হাসির সিনেমা বা কমিকস্ পড়লে মন ভালো থাকে।
চ) শিশুদের সঙ্গে সময় কাটান।
ছ) নেতিবাচক চিন্তা থেকে দূরে থাকুন।
সূত্র : বোল্ডস্কাই