জাঙ্কফুড কতটুকু খাওয়া নিরাপদ!
জাঙ্কফুড কতটুকু খাওয়া নিরাপদ! - ছবি সংগৃহীত
এক সময় আমাদের বলা হতো মাছে-ভাতে বাঙালি। তিনবেলার খাবারই ছিল ভাত-মাছ। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তন ঘটেছে স্বাদের। এখন ফাস্টফুড বা জাঙ্কফুড আমাদের প্রধান খাবারের জায়গা দখল করতে শুরু করেছে। এমন ব্যক্তি পাওয়া দুস্কর হবে না যিনি দিনে তিনবার জাঙ্কফুড খাননি। ঢাকার অলিতে গলিতে এখন ফাস্টফুডের দোকান। এগুলো কিন্তু কম চলে না, ভিড় লেগেই থাকে। মফস্বল শহরগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ছে। জাঙ্ক মানে অতিরিক্ত বা যা কোনো কাজে আসে না। আসলে জাঙ্কফুডও তাই। সমুচা, হটডগ, পিজা, বার্গার, রোল, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই,ক্যান্ডি, কোমল পানীয়, পেস্ট্রি, স্ন্যাক্স, ফ্রাই ইত্যাদিই হলো জাঙ্কফুড। এটা শরীরের পুষ্টি চাহিদা তো পূরণ করেনা উল্টো শরীরে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি করে। জাঙ্কফুডে চর্বি, চিনি বা স্যুগার, সোডিয়াম বেশি পরিমাণে থাকে। ক্ষতি করে এগুলোই।
বিশ্বব্যাপী স্থূল মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আমাদের দেশেও কিন্তু এ সংখ্যা আর কম নেই। রাস্তাঘাটে সহজেই চোখে পড়ে। স্থুলতা কিন্তু মারাত্মক সব রোগের মা। স্থুলদের হতে পারে ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, রক্তনালীতে চর্বি জমা, ক্যান্সারসহ নানাবিধ জটিলতা। জাঙ্কফুড প্রচলনের পর থেকেই বাড়ছে স্থুলতা। এসব খাবারের অতিরিক্ত চর্বি ও ক্যালরি এ জন্য দায়ী।
টিনেজাররা এসব খাবারের ভক্ত। এ বয়সে শরীরে হরমোনের খেলা চলে। দেখা দেয় হরমোনের তারতম্য। এতে করে তারা অবসাদ, মানসিক অশান্তি, দুচিন্তা, আত্মহত্যায় আক্রান্ত হয় বেশি। স্বাস্থ্যকর খাবার কিন্তু এ হরমোনের খেলায় বাধা দেয়। কিন্তু জাঙ্কফুডের মতো অস্বাস্থ্যকর খাবার এ কাজটি করতে পারে না। ফলে তারা ধীরে ধীরে আক্রান্ত হয় মানসিক ব্যাধিতে।
চেম্বারে একশ’ রোগী দেখলে ষাটজনের বেশি পেটের সমস্যার জন্য আসেন। কী জন্য এ সমস্যা বাড়ছে, ভেবেছেন একবারও। ফাস্টফুডই কিন্তু হতে পারে মূল কারণ। ফাইবার কম থাকে এসব খাবারে। এতে দেখা দেয় হজমে অশান্তি। ঝাল-তেল বেশি থাকে বলে হতে পারে আলসার, গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ, বদহজম।
ফাস্টফুডে রিফাইন সুগার বেশি পরিমাণে থাকে। তাই এ খাবার খাওয়ার সাথে সাথে শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা বেড়ে যায়। ইনসুলিন রক্তে সুগারের পরিমাণ কমিয়ে ফেলে। বেশি কমে গেলে অস্থিরতা লাগে। তীব্র ক্ষুধা লাগে। আবার খেতে ইচ্ছে করে। খেতে হয় খাবার। যেন মাদকের মতো। বেশি খেতে খেতে দেখা দেয় স্থূলতা। আবার ইনসুলিনের এমন তারতম্যের কারণে শরীরে ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে যেতে থাকে বিনিময়ে দেখা দিতে পারে ডায়াবেটিস।
জাঙ্কফুড রক্তে কোলস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড বা চর্বির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। এ বৃদ্ধি বাড়ায় হৃদরোগের ঝুকি। রক্তনালীতে জমাট বাঁধে চর্বি। হৃদপিণ্ডে রক্তচলাচল কমে দেখা দেয় হার্ট অ্যাটাক। এখন দেশে কম বয়সী হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত রোগী দিন দিন বাড়ছে। এ ধরনের খাবার যে অন্যতম কারণ নয় তা বলি কিভাবে।
আগেই বলেছি এসব ছাইপাস খাবারে সোডিয়াম থাকে বেশি। সোডিয়াম বা লবণ যে উচ্চ রক্তচাপের জ্ঞাতি ভাই তা তো আমরা সবাই জানি। তাই বেশি পরিমাণে এসব খাবার খেলে উচ্চরক্তচাপে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও যে বাড়ে।
সবশেষে আসি ক্যান্সারে। ইউরোপিয়ান জার্নাল অব ক্যান্সার প্রিভেনশনে প্রকাশ করা হয়েছে ফাস্টফুড বেশি খেলে কোলরেক্টাল ক্যান্সার আক্রান্তের ঝুঁকি বাড়ে বহুগুন। ফ্রেড হাচিসন ক্যান্সার রিসার্চ সেন্টার দেখেছে যেসব পুরুষ মাসে দুইবারের বেশি ফাস্টফুড বা ভাজাপোড়া খাবার খান তাদের প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্তের ঝুঁকি দ্বিগুন বাড়ে।
তাই জাঙ্কফুড বা ফাস্টফুড কতটা খাবেন তার সিদ্ধান্ত নিন আপনি। তবে মনে রাখবেন জীবন কিন্তু একটাই। অসুস্থ হয়ে বাঁচার স্বাদ নেই।