বিবাহবিচ্ছেদের পর নারীরা কোথায় যাবে?
বিবাহবিচ্ছেদের পর নারীরা কোথায় যাবে? - ছবি সংগৃহীত
আমার বাসায় দু’জন মহিলা আইনজীবীর সাথে কথা হচ্ছিল। তারা মহিলাদের একটি বড় সমস্যার কথা তুলে ধরেন। তারা বলেছেন, গ্রামাঞ্চলে ও শহরে তালাকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব নারীর সমস্যা হচ্ছে, তালাকের পর তাদের যাওয়ার কোনো স্থান থাকে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাবা না থাকলে বাবার বাড়িতে যাওয়াও সমস্যা হয়। ভাইয়েরা এবং ভাইদের পরিবার বিষয়টি সদয়ভাবে নিতে চায় না; সব ক্ষেত্রে নয়, অনেক ক্ষেত্রে। তবে বাবা থাকলে সমস্যা হয় কিছু কম।
এ সমস্যা আলোচনা করতে গিয়ে ওই দুই আইনজ্ঞ মহিলার সাথে একমত হই যে, ইসলাম নারীদের মা-বাবার সম্পত্তিতে যে অধিকার দিয়েছে, সেই অধিকার যদি পুরোপুরিভাবে বাবার বাসস্থানে প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলে এ ধরনের নারীদের দুর্ভোগ অনেক কম হবে। আমরা আরো একমত হলাম, বাবার বাসস্থান যদি ক্ষুদ্র হয় তার মধ্যেও মেয়েদের সম্পত্তির অধিকার (বিশেষ করে ঘরবাড়িতে অধিকার) পূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠিত হওয়া প্রয়োজন। এটি দারিদ্র্য সমস্যার সমাধান নয়, এটি এসব নারীর সামাজিক সমস্যার অন্যতম সমাধান।
এ কথাও বলা ভালো, বাবার সম্পত্তিতে মেয়ের অধিকার ছেলের তুলনায় কম, এ আলোচনায় আমরা এখন যাচ্ছি না। কিন্তু এটুকু উল্লেøখ করছি, সব বিচারে দেখা গেছে, যদি সম্পত্তির অধিকারের সাথে ভরণপোষণের অধিকার একত্রে দেখা হয়, তাহলে ইসলামের এ সংক্রান্ত আইনে কোনো অসঙ্গতি দেখা যাবে না। উপরন্তু দেখা যাবে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নারীরই সুবিধা। এ কথাও উল্লেখ করা প্রয়োজন, তালাক হলে স্ত্রীর ভরণপোষণের অধিকার সাবেক স্বামীর দায়িত্বে থাকে না (ইদ্দতের সময় ছাড়া)। তখন সেই নারী যদি নিজের ভরণপোষণ না করতে পারে তাহলে তার ভরণপোষণের দায়িত্ব আত্মীয় স্বজনের ওপর বর্তায়। যদি আত্মীয় স্বজনও না থাকেন, তাহলে বাংলাদেশে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ওয়াক্ফ বোর্ড এ দায়িত্ব নিতে পারে। উল্লেখ্য, ভারতের প্রাদেশিক ওয়ার্ক্ফ বোর্ডের ওপর এই দায়িত্ব ন্যস্ত করা হয়েছে। আর তা আইন করেই করা হয়েছে। এই ভিত্তিতে আমি মনে করি, বাংলাদেশ সরকারও নিম্নরূপ ব্যবস্থা নিতে পারে-
ক. ইসলামী আইন মোতাবেক সর্বাবস্থায় বাবার সম্পত্তিতে মেয়ের অধিকার, বিশেষ করে বাবার বাড়িতে (যা প্রকৃতপক্ষে মেয়েরও বাড়ি) বহাল করতে হবে। এ ব্যাপারে প্রজ্ঞাবান আলেম সমাজ ও ইসলামী সংগঠনগুলোকে বিশেষ নজর দিতে হবে। তা করা হলে সব নারীর আর্থিক অবস্থা তুলনামূলকভাবে ভালো হবে এবং তালাকের ক্ষেত্রে তাদের সমস্যা অপেক্ষাকৃত কম হবে।
খ. সরকারকে এ ব্যাপারে একটি আইন করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। সব তালাকপ্রাপ্ত নারী নিজেদের ভরণপোষণে সক্ষম নন (এবং যাদের ভরণপোষণে কোনো আত্মীয় নেই) তাদের ভরণপোষণ সরকারের একটি প্রকল্পের আওতায় করা যেতে পারে। যেমন- বৃদ্ধ ও বিধবাদের জন্য আমাদের প্রকল্প রয়েছে। তেমনি তালাকপ্রাপ্ত নারীদের জন্য আলাদা প্রকল্প বা ভাতা চালু করতে হবে। তালাকপ্রাপ্ত নারীদের সংখ্যা প্রকৃতপক্ষে বেকারদের বা অভাবী বৃদ্ধদের তুলনায় অনেক কম হওয়ার কথা। এ প্রসঙ্গে সব বেকার এবং সব অসহায়ের জন্য অসহায় বা বেকার ভাতা চালু করার জন্য অনুরোধ করছি।
একটি আইনি সমস্যা
আজকাল লক্ষ করছি, কোনো কোনো মামলায় কয়েক হাজার লোককে অজ্ঞাত বলে আসামি করা হচ্ছে। যেমন আশুলিয়াতে যখন গার্মেন্টস শিল্পে অস্থিরতা দেখা দেয় এবং ওখানে যখন বিভিন্ন আন্দোলন হয়, তখন সেখানে অজ্ঞাত কয়েক হাজার লোককে আসামি করা হয়েছিল। তেমনিভাবে, সিরাজগঞ্জে ট্রেন দুর্ঘটনায় কয়েকজন লোক মারা যাওয়ার পর কয়েক হাজার লোককে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছিল। চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ে ছাত্রদের বেতন বৃদ্ধির আন্দোলনে কয়েক হাজার অজ্ঞাত লোককে আসামি করা হয়েছিল। এ ধরনের মামলা পাকিস্তান আমলে এবং বাংলাদেশে শুরুর সময় দেখিনি। এ ধরনের অসংখ্য অজ্ঞাত লোককে আসামি করে মামলা করার কোনো যৌক্তিকতা দেখা যায় না। এর ফলে জনগণ হয়রানির শিকার হচ্ছে। এ কথা অস্বীকার করা কঠিন, পুলিশ প্রশাসনের সর্বপর্যায়ে দুর্নীতির ব্যাপকতা রয়েছে। দুর্নীতির প্রধান উপায় হচ্ছে, হয়রানি করে টাকা অর্জন করা। এ বাস্তবতাকে সামনে রেখে এ রকম অজ্ঞাত হাজার হাজার লোককে আসামি করা অসঙ্গত। সরকারে আমি অনুরোধ করি, এ বিষয়টি বিবেচনায় নেয়ার জন্য, যাতে মানুষ হয়রানি থেকে রক্ষা পায়। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইন করা যেতে পারে। দেশের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের ও রাজনৈতিক দলগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এ বিষয়ে।
লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার