কোভিড ভ্যাকসিন নেয়ার পর কী করবেন, কী করবেন না
কোভিড ভ্যাকসিন নেয়ার পর কী করবেন, কী করবেন না - ছবি সংগৃহীত
বাংলাদেশে করোনার প্রকোপ আবার বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রথম থেকেই দেশের মানুষের চলাফেরা দেখে বোঝার উপায় নেই যে, করোনা বলে ভয়াবহ একটি ভাইরাস গোটা বিশ্বকে আতঙ্কিত করে ফেলেছে। এভাবে অসচেতনভাবে চলাচলের পর লোকডাউন চলতে থাকলে সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও বহুদিন লাগবে।
উন্নত বিশ্বে সামাজিক সচেতনতা আর ব্যাপকহারে ভ্যাকসিন দেয়ার ফলে সবকিছু আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হচ্ছে। স্বল্প পরিসরে স্কুল খুলে দিয়েছে। অথচ বাংলাদেশে কবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু হবে তা এখনো নিশ্চিত নয়।
তবে, এ মুহূর্তে করোনা মহামারী মোকাবেলায় সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক বিষয় হচ্ছে- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভুল তথ্য উপেক্ষা করে সচেতন মানুষদের করোনা ভ্যাকসিন গ্রহণ করা। ভ্যাকসিন নিয়ে আসলে দৈনন্দিন জীবনের পরিবর্তন হলো কি না সেটি এখন সবার প্রশ্ন।
যুক্তরাষ্ট্রের CDC (Centers for Disease Control and Prevention) চমৎকারভাবে এর দিকনির্দেশনা দিয়েছে। যারা ভ্যাকসিনের ডোজ (মডার্না, ফাইজারের দুটি অথবা জনসন অ্যান্ড জনসনের একটি) শেষ করেছেন তারা ভ্যাকসিন গ্রহণের দুই সপ্তাহ পর থেকে নিন্মোক্ত নির্দেশনা অনুযায়ী দৈনন্দিন চলাফেরা করতে পারবেন।
ভ্যাকসিন নেয়ার পর যা পরিবর্তনীয়-
ষ কোনো একটি রুম/ঘরের মধ্যে সবাই ভ্যাকসিন দেয়া থাকলে মাস্ক ব্যবহার করা অথবা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা আবশ্যকীয় নয়।
ষ ভ্যাকসিনের ডোজ শেষ করা ব্যক্তি অন্য একজন ভ্যাকসিন না নেয়া ব্যক্তির সামনেও মাস্ক ছাড়া যেতে পারবে। কিন্তু যদি ওই ভ্যাকসিন না নেয়া ব্যক্তি এমন কারো সাথে বসবাস করে যিনি করোনার কারণে উচ্চ ঝুঁকিতে আছে তাহলে ভ্যাকসিন নেয়া ব্যক্তির ওই ভ্যাকসিন না নেয়া ব্যক্তির সামনে মাস্ক ছাড়া যাওয়া সমীচীন হবে না।
ষ একজন ভ্যাকসিন নেয়া ব্যক্তি কোনো করোনা রোগীর সংস্পর্শে আসার পর তার কোনো করোনা উপসর্গ প্রকাশ না পেলে কোয়ারেন্টিনে যাওয়ার অথবা করোনা টেস্ট করার প্রয়োজন নেই।
ভ্যাকসিন নেয়ার পর যা অপরিবর্তনীয়-
ষ ভ্যাকসিন নেয়া ব্যক্তি যদি বাইরে যান যেখানে বেশির ভাগ লোক এখনো ভ্যাকসিন গ্রহণ করেননি, সেখানে সতর্কতাস্বরূপ মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
ষ ভ্যাকসিন নেয়া ব্যক্তি যদি করোনার কারণে উচ্চ ঝুঁকিতে আছে এমন কারো সাথে দেখা করতে যান তাহলেও মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
ষ ভ্যাকসিন নেয়া ব্যক্তিকে ছোটখাটো পারিবারিক জমায়েতে গেলেও মাঝারি বা বড় পরিসরের সমাগম পরিহার করতে হবে।
ষ ভ্যাকসিন নেয়া ব্যক্তি কোনো গুরুতর করোনা রোগীর সংস্পর্শে গেলে লক্ষ রাখতে হবে কোনো করোনা লক্ষণ প্রকাশ পায় কি না। লক্ষণ প্রকাশ পেলে কোয়ারেন্টিনে থাকা উচিত। লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া ভ্যাকসিন নেয়া ব্যক্তির কোয়ারেন্টিনে যাওয়াটা মূলত তার আশেপাশের ভ্যাকসিন না নেয়া মানুষের প্রতিরক্ষার জন্য প্রয়োজন।
ষ ভ্যাকসিন গ্রহণ করলেও অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক ভ্রমণ এড়িয়ে চলা উচিত।
যেসব প্রশ্নের পরিষ্কার উত্তর বিজ্ঞানীদের
এখনো অজানা-
ষ যদিও এটি প্রমাণিত যে, করোনা ভ্যাকসিন গুরুতর করোনা সংক্রমণ অথবা করোনায় মৃত্যু রোধে কার্যকর, তবুও কোনো কোনো variant-এর বিপক্ষে ভ্যাকসিন দুর্বল তা এখনো স্পষ্ট নয়। কিছু কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, কোনো কোনো variant-এর বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন অপেক্ষাকৃত কম কার্যকর, কিন্তু সেগুলো কোনগুলো তা এখনো নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত নয়।
ষ ভ্যাকসিন গ্রহণকারী ব্যক্তি করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে কি না?
ষ সর্বোপরি, করোনা ভ্যাকসিন একজন মানুষকে কতদিন পর্যন্ত সুরক্ষা দেবে?
যদিও সিডিসি মডার্না, ফাইজার এবং জনসন অ্যান্ড জনসনের ভ্যাকসিন নেয়া ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে উপরোক্ত নির্দেশনা দিয়েছে, তবুও অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন গ্রহণকারীদের ক্ষেত্রেও একই নির্দেশনা মেনে চলা যেতে পারে।
সম্প্রতি ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছিল। এর মূল কারণ হিসেবে ভ্যাকসিন নেয়া ব্যক্তির রক্ত জমাট বাঁধার ব্যাপারটি সামনে এসেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পরিষ্কারভাবেই ঘোষণা দিয়েছে যে, AstraZeneca-এর ভ্যাকসিন প্রোগ্রাম বন্ধ করার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। এ ছাড়া, European Medicine Agency (EMA) আবার ভ্যাকসিন কার্যক্রম শুরুর অনুমোদন দিয়েছে। EMA মূলত কয়েকটি বিষয়কে লক্ষ রেখে আবার ভ্যাকসিন কার্যকম চালু করার নির্দেশ দিয়েছে।
প্রথমত, করোনা ভ্যাকসিনের উপকারিতার তুলনায় সামান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুবই নগণ্য।
দ্বিতীয়ত, অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন করার মতো তেমন কিছুই পরিলক্ষিত হয়নি। সর্বোপরি, ভ্যাকসিনের কারণে রক্ত জমাট বাঁধার কোনো নিশ্চিৎ প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
আরেকটি বিষয় বিবেচনায় রাখা যেতে পারে, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ৪৫ লাখের উপর অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন ডোজ দেয়া হয়েছে কিন্তু রক্ত জমাট বাধা বা অন্য কোনো গুরুতর শারীরিক সমস্যার কথা আলোচনায় আসেনি। সুতরাং, সার্বিক বিবেচনায় করোনা ভ্যাকসিন নিরাপদ বিবেচনা করা যেতে পারে।
করোনার মতো একটি অতি সংক্রামক ভাইরাস নির্মূলে সবার জন্য ভ্যাকসিন নিশ্চিৎ করা জরুরি। তাহলে শিগগিরই করোনা মহামারী থেকে মুক্তি মিলবে।