ইন্দো-বাংলা কানেকটিভিটি ও ভূ-রাজনীতির সমীকরণ

ড. এ কে এম মাকসুদুল হক | Mar 22, 2021 04:03 pm
এস জয়শঙ্কর

এস জয়শঙ্কর - ছবি সংগৃহীত

 

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে ধন্যবাদ। সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে এসে তিনি একটি অত্যন্ত সত্য বলে গেছেন। কথাটি দীর্ঘদিন ধরে ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে বলা হচ্ছিল। আঞ্চলিক কানেকটিভিটি, ব্যবসায়-বাণিজ্য, সভ্যতা, উন্নয়ন ইত্যাদি বিভিন্ন মোড়কে ভারতকে ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্ট দেয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। কিন্তু গত ৪ মার্চ জয়শঙ্কর বাংলাদেশে এসে সরাসরি বলে গেছেন, ‘কানেকটিভিটিই হবে বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ’। ২৬-২৭ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রস্তুতিমূলক হিসেবে ঢাকায় এসে জয়শঙ্কর এই বক্তব্য দেন। এই সফরের সময় তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং সুশীল সমাজের একটি অংশের সাথে সাক্ষাৎ শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন। আরো একটি বিষয় তিনি সামনে নিয়ে আসেন, সেটা হলো- ‘ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি (আইপিএস)’ বা ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক কৌশলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার বাংলাদেশ।

১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষের স্বাধীনতাকালে ব্রিটিশ সরকারের রেখে যাওয়া অবকাঠামোতেই তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা অব্যাহত ছিল। কিন্তু ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধোত্তর সেই ব্যবস্থায় ছেদ পড়ে। তখন থেকেই ভারত বিশেষ করে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাথে মূল ভূ-খণ্ডের যোগাযোগ রক্ষায় বিপাকে পড়ে। ১৯৬৭ সালে সিকিম নিয়ে চীনের সাথে দ্বন্দ্বে ভারত এ বিষয়ে আরো উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে ভারত সর্বাত্মক সহযোগিতা করে আমাদের স্বাধীনতা অর্জন সহজ করে দেয়। সেই সাথে দিল্লি নিজের ষোলআনা সহজে আদায় করে নিতে পারবে বলে ভেবেছিল।

কিন্তু পরবর্তীতে ভারতের স্বার্থবাদী ও আগ্রাসী আচরণে বাংলাদেশে ভারতবিরোধী সেন্টিমেন্ট রাজনীতির নিয়ামক হয়ে দাঁড়ায়। তবে দিল্লির অব্যাহত কৌশল ও চাপে ১৯৯৬ সালে উঠে আসে ‘এশিয়ান হাইওয়ে’র আদলে ভারতকে ট্রানজিট দেয়ার আলোচনা। পক্ষে-বিপক্ষে চলে যুক্তি, পাল্টা যুক্তি। এরই মধ্যে ভারত ধীরে ধীরে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ শুরু করে বলে অভিযোগ। ২০০৮ সালে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদকে ভারত রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় অভ্যর্থনা দিয়ে সেনাসমর্থিত তত্ত্ববধায়ক সরকারের সাথে মধুর সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করে। ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর ভারতের কানেকটিভিটি স্বপ্ন ফের উজ্জীবিত হয় এবং তা বাস্তব হতে শুরু করে। ২০১৪ সালে আমাদের জাতীয় নির্বাচনে ভারত সরাসরি হস্তক্ষেপ করে প্রতিবেশী দেশে কর্তৃত্ব বিস্তৃতির জানান দেয়। আমরাও ভারতকে অকৃত্রিম বন্ধু এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের সহায়তাকারী হিসেবে উদারভাবে দিল্লির সব অনুরোধ পূরণ করতে থাকি। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আগরতলায় পরীক্ষামূলকভাবে পণ্যবাহী ট্রেন পরিচালনা করা হয়। ত্রিপুরাকে সংযুক্ত করতে অভ্যন্তরীণ নৌপথে দু’টি নতুন প্রটোকল রুট যুক্ত করা হয়েছে। কন্টেইনার ও পার্সেল ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। আমাদের একটি নদীর বুক চিরে সড়ক বানিয়ে ভারতের বড় বড় কন্টেনারবাহী ট্রাক আশুগঞ্জ থেকে ত্রিপুরায় পৌঁছে দিয়েছি। সম্প্রতি ফেনী নদীর উপর ১ দশমিক ৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে সেতু উদ্বোধন করা হয়েছে বাংলাদেশের রামগড় ও ভারতের সাব্রুমকে সংযুক্ত করতে। ভারত উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন রাজ্য থেকে সাব্রুম পর্যন্ত রেল ও সড়কপথ নির্মাণ করছে। ফলে ভারত এক হাজার ৬০০ কিলোমিটার রাস্তা কমিয়ে মাত্র ১০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে কলকাতা থেকে ত্রিপুরা পৌঁছতে সক্ষম হচ্ছে।

তবে সাম্প্রতিক আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ভারত অত্যন্ত বিব্রত এবং উদ্বিগ্ন। কাশ্মির নিয়ে পাকিস্তানের সাথে পুরোনো দ্বন্দ্বের সাথে গত বছরের জুনে চীনের সঙ্গে সীমান্ত সংঘর্ষের পর ভারত এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসতে মরিয়া। বৈশ্বিক কূটনীতি এবং বাংলাদেশের সাথে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে এই সমস্যা সমাধানের যুতসই উপাদান হিসেবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে দিল্লি। চীনের সাথে বাদানুবাদে বাংলাদেশের সহযোগিতা ভারতের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা ছাড়া দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাত রাজ্য অচল হয়ে পড়বে। সম্প্রতি নেপালের সাথেও খুব ভালো সম্পর্ক যাচ্ছে না বিধায় শিলিগুড়ি হয়ে ‘চিকেন নেক’-এর মতো করিডোর খুব সহজেই বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হবে। ফলে ‘সাতবোন’ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কাজেই জনবল, রসদ, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি পরিবহনের কাজ বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা ছাড়া সম্ভবই হবে না। অর্থনৈতিকভাবে ভারতের যে কী লাভ হবে; তা বুঝতে এটাই যথেষ্ট যে, এক হাজার ৬০০ কিলোমিটার রাস্তা বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে মাত্র ১০০ কিলোমিটারে পরিণত হয়েছে। সব মিলিয়ে ইন্দো-বাংলা কানেকটিভিটি বা সংযুক্তি ভারতের এখন জীবন-মরণ বিষয়। এমতাবস্থায় বাংলাদেশের আন্তরিক সহযোগিতায় এবং ভারতের সাথে দ্বিপক্ষীয় কানেকটিভিটিতে অন্তর্ভূক্ত হওয়ায় দিল্লি স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ছে বলে মনে হয়।

কূটনৈতিক অঙ্গনেও ভারত সফল বলে আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে। ২০০৮ সালে ভারতের গুরুপ্রীত এস খুরানা নামের এক সাগরকৌশলবিদ ভারত, জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে ‘ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় স্ট্র্যাটেজি’ (আইপিএস) নামে একটি ধারণা প্রকাশ করেন। চীনের উত্থান ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্র উন্মুক্ত প্রশান্ত মহাসাগরীয় ধারণার অংশ হিসেবে ‘আইপিএস’কে গ্রহণ করে ২০১৮ সালে। চীনের ‘আঞ্চলিক আগ্রাসনে ভীতসন্ত্রস্ত’ হয়ে জাপান এবং অস্ট্রেলিয়াও এখন ‘আইপিএসের’ সক্রিয় অংশীদার হচ্ছে। দিল্লি খুব কৌশলে ‘আইপিএস’কে সক্রিয়ভাবে ব্যবহার করে ওয়াশিংটন, টোকিও এবং ক্যানবেরাকে চীনবিরোধী শিবিরে একত্রিত করতে সক্ষম হয়েছে। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র ভারতপ্রেমে গদগদ হয়ে ‘আইপিএসে’ সক্রিয় হচ্ছে না। মার্কিন স্বার্থেই একমাত্র ‘চীন ঠেকাও’ নীতি কার্যকর করতেই দিল্লির ওপর ভর করেছে ওয়াশিংটন। এদিকে, চীনা আগ্রাসনের বিরোধী অবস্থান জাপান নিলেও টোকিওর এ অঞ্চলে মূল স্বার্থ, মিয়ানমারে ব্যাপক বিনিয়োগের বিষয়টি লাভজনক করে তুলতে এই কানেকটিভিটির কথা বলছে।

জাপান অবশ্য চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-রাখাইন হাইওয়ের কথা বলছে। জানা যায়, রোহিঙ্গাদের দেশছাড়া করে মিয়ানমারে বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে তুলতে রাখাইনে কৃষি ও মৎস্য খামারেও জাপান বিনিয়োগ করছে। জাপানি টয়োটা, সুজুকি ইত্যাদি গাড়ি তৈরির কোম্পানি মিয়ানমারে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে। অন্যদিকে জাপান ‘বে-অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্টের’ (বিগবি) আওতায় বাংলাদেশে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে। মোট ৫ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার সাহায্যের মাধ্যমে ‘ঢাকা মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট’, ‘মাতারবাড়ি দ্বীপে গভীর সমুদ্রবন্দর’ এবং ‘প্রতিবেশী দেশে চলাচলে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার’ সড়কের নির্মাণকাজ করছে। ওই চারটি দেশই একযোগে ‘আইপিএস’ বাস্তবায়নে নেমেছে। জাপান ‘আইপিএস’কে নিজেদের অর্থনৈতিক-বাণিজ্যিক প্রজেক্ট ‘বিগবি’র সাথে একীভূত করতে চাইছে। এ বিষয়ে টোকিও বাংলাদেশকে যুক্ত করতে বিশাল অর্থনৈতিক লাভের বয়ান দিয়েছে; যেন জাপান শুধু বাংলাদেশেরই লাভ চায়! ঢাকাকে দক্ষিণ এবং দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার প্রবেশদ্বার বানাবে টোকিও, বাংলাদেশ হবে আঞ্চলিক বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু, ইত্যাদি আরো অনেক অর্থনৈতিক প্রলোভন দেখানো হচ্ছে। তবে আমাদের পর্যবেক্ষণে থাকা প্রয়োজন, এটা শুধুই ‘চীন ঠেকাও’ প্রজেক্ট কি না। একই সাথে পর্যালোচনা করা দরকার, বিগত ৫০ বছরে আমরা ভারতকে কি প্রকৃত বন্ধু হিসেবে পেয়েছি? আমাদের চিন্তা করতে হবে, বঙ্গোপসাগরে যখন ইন্দো-মার্কিন উপস্থিতি ব্যস্ত হয়ে উঠবে তখন চীনের প্রতিক্রিয়া কী হবে? বঙ্গোপসাগর কি তখন সংঘর্ষের কেন্দ্রস্থল হবে? ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর আলোচিত এই কানেকটিভিটির সাথে জাপানকে যুক্তের প্রস্তাব দিয়েছেন। বোঝা যাচ্ছে, এ ব্যাপারে একটি চতুরমুখী তৎপরতা শুরু হয়েছে। জয়শঙ্করের ঢাকা সফরের আগের সপ্তাহে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াশিংটন সফরের সময় প্রেসিডেন্ট বাইডেনের বিশেষ সহকারী ও যুক্তরাষ্ট্রের ‘জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের’ দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরিচালক সুমনা গুহ তাকে টেলিফোন করে ‘আইপিএস’ বিষয়ে আলোচনা করেন। কাজেই জয়শঙ্করের বাংলাদেশ সফর এবং জাপানকে কানেকটিভিটিতে সংযুক্তির প্রস্তাবের মধ্যে ‘আইপিএস’ এবং ভূ-রাজনীতির একটি সংযোগ থাকা অস্বাভাবিক নয়।

ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীর্ঘ বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় যেসব বিষয় আলোচনা হয়েছে; তাতে ভারতের জন্য সুখবর থাকলেও বাংলাদেশের জন্য তেমন খবর পাওয়া যায়নি। বৈঠক-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এস জয়শঙ্কর শুধু কানেকটিভিটির কথা বলেন, যার মর্ম দাঁড়ায়- বাংলাদেশের থেকে ভারতে কানেকটিভিটি দেয়ার ওপরই দুই দেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নির্ভর করছে। বৈঠকে চূড়ান্ত হয় দ্বিপক্ষীয় কানেকটিভিটির কয়েকটি উপাদান। এর মধ্যে ‘ফেনী সেতু’ ইতোমধ্যেই নরেন্দ্র মোদি উদ্বোধন করেছেন। ২৬-২৭ মার্চ ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের সময় উদ্বোধন করা হবে স্বাধীনতা সড়ক নামে মুজিবনগর-ভারত মহাসড়ক এবং ঢাকা-নতুন জলপাইগুড়ি যাত্রীবাহী রেলগাড়ি। বাংলাদেশ প্রস্তাব রেখেছে ত্রিপক্ষীয় ভারত-মিয়ানমার-থাইল্যান্ড মহাসড়কে বাংলাদেশকে যুক্ত করতে। জবাবে ভারত বলেছে, দিল্লি এ ব্যাপারে ওইসব দেশের সাথে কথা বলবে। তা ছাড়া, ত্রিপক্ষীয় বাংলাদেশ-ভারত-নেপাল মোটরগাড়ি চলাচল চুক্তির বাস্তবায়ন চাওয়া হয়েছে। ভারত উত্তর দিয়েছে, এ জন্য প্রটোকল সই করতে হবে। অর্থাৎ বাংলাদেশের এ দু’টি ন্যায্য অধিকারকে ভারত পাত্তাই দেয়নি। শুধু কূটনৈতিক জবাব দিয়েছে। অথচ চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে ভারত উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোতে মালামাল পাঠাতে পারছে। ভূ-বেষ্টিত আসাম, মেঘালয় এবং ত্রিপুরা রাজ্য চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে উন্মুক্ত সমুদ্র বাণিজ্যের সুযোগ পেয়েছে। তদুপরি, চট্টগ্রাম বিমানবন্দর ব্যবহারের প্রস্তাবও দিয়ে রাখা হয়েছে ত্রিপুরাকে।

দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে জয়শঙ্করের বক্তব্য আরো হতাশ করেছে সীমান্ত হত্যা অস্বীকার করায়। সীমান্ত হত্যাকে ‘মৃত্যু’ বলেছেন তিনি। এসব মৃত্যু অপরাধের কারণেই হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন। অর্থাৎ সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যা ভারত বন্ধ করতে রাজি নয়। জয়শঙ্করের এটাও সত্য ভাষণ ছিল। অথচ প্রতিটি দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় বলা হয়, দুই দেশের সম্পর্ক ‘সর্বোচ্চ মাত্রা’য় রয়েছে। এ উচ্চতা আকাশ ছুঁঁয়ে গেলেও সীমান্ত হত্যা বন্ধ হবে না বলেই মনে হয়। তিস্তা চুক্তির বিষয়ে জয়শঙ্কর বলেছেন, ভারত এ চুক্তির ব্যাপারে আগের অবস্থানেই আছে। মানে, মমতা ব্যানার্জি পানি না দিলে দিল্লি চুক্তি করবে না। পশ্চিমবঙ্গ ভারতের একটি অঙ্গরাজ্য, কিন্তু আমাদের চুক্তি হবে দিল্লির সাথে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা মানছেন কি মানছেন না, তা দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়। সেটা সামাল দেয়ার দায়িত্ব ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের। মমতাকে ‘বর্ম’ হিসেবে ব্যবহার করতেই ভারত তিস্তাচুক্তি সম্পন্ন করছে না বলে মেন হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।

‘কানেকটিভিটি’ বলতে আমরা ভারত ও অন্যান্য প্রতিবেশী দেশের সাথে সড়ক, রেল এবং নৌ-যোগাযোগ বুঝলেও দিল্লি বুঝে শুধু ভারত থেকে বাংলাদেশ হয়ে পুনরায় ভারতে পণ্য পরিবহনের সুবিধাকে। তারপরও আমরা ভারতকে কানেকটিভিটি সুবিধা দিচ্ছি। কিন্তু দিল্লিকে বুঝতে হবে, প্রতিবেশীসুলভ দায়বদ্ধতা। শুধু ‘বাংলাদেশই প্রথম প্রতিবেশী’ এ ধরনের ‘লিপ সার্ভিস’ দিয়ে এবং চাপ সৃষ্টি করে সুবিধা আদায় করা যায়; কিন্তু বন্ধুত্ব এবং টেকসই সুবিধা পাওয়া যায় না। বরং এতে বিরোধীতার সেন্টিমেন্ট তৈরি হয়। এই সেন্টিমেন্ট ধীরে ধীরে রাজনৈতিক একটি উপাদানে পরিণত হতে পারে। কারণ, উজানের নদীতে বাঁধ দিয়ে পানি প্রত্যাহারের ফলে তিস্তা ও পদ্মা অববাহিকার মানুষ খরতাপ ও বন্যায় নিঃস্ব হওয়ার যন্ত্রণা ভোগ করছেন। সীমান্তে প্রতিটি হত্যা এবং সঙ্কটকালে পেঁয়াজ আসা বন্ধ করে দেয়ায় বাংলাদেশে ভারতবিরোধী মনোভাব সৃষ্টি করছে। অন্যদিকে ফেনী নদীর পানি দেয়া, কানেকটিভিটির জন্য আমাদের দেশকে উন্মুক্ত করে দেয়া, অসংখ্য ভারতীয়কে অবাধে কর্মসংস্থানের সুযোগ দেয়া ইত্যাদি সুবিধা প্রদান আজ মানুষের মাঝে প্রতিবেশী সম্পর্কে জটিল মনঃস্তত্ত্ব তৈরি করছে। এটি দু’পক্ষকেই বুঝতে হবে। এটা ভারত যত তাড়াতাড়ি বুঝবে, তত তাড়াতাড়ি তা দুই দেশ তথা ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য মঙ্গলজনক হবে।
লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক

E-mail: maksud2648@yahoo.com

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us