উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন? নিয়ন্ত্রণে আনতে যা করতে পারেন
উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন? - ছবি সংগৃহীত
আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা যত দ্রুত হচ্ছে ততই বাড়ছে লাইফস্টাইল জনিত সমস্যাগুলো। আর এদেরকে বিশেষজ্ঞরা 'সাইলেন্ট কিলার' বলে বর্ণনা করে থাকেন। কারণ, চুপিসারে কখন যে এই সমস্যাগুলো আমাদের শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করে দেয় আমরা বুঝতেও পারি না। লাইফস্টাইলজনিত সমস্যাগুলোর মধ্যে প্রথমেই আসে হাইপারটেনশন অর্থাৎ উচ্চ রক্তচাপ। এ এমন এক রোগ যা শুধু নিজে আসে তাই নয়, সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রিত না হলে ডায়াবেটিস, কিডনির সমস্যাসহ আরো অনেক মারণ রোগকেও ডেকে আনে।
প্রথমেই দেখি যে আমরা বুঝব কী করে যে আমাদের রক্ত চাপ বেশি? গবেষণা বলছে, ৪৫ ভাগ মানুষ জানেনই না যে, তারা উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যায় ভুগছেন, তাই এখন প্রত্যেক সচেতন নাগরিককেই নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষার জন্য ডাক্তাররা পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
আমেরিকান হার্ট এসোসিয়েশন অনুযায়ী ১২০/৮০ এমএম/এইচজিকে নরমাল ব্লাড প্রেসার হিসাবে ধরা হয়।
কী কী কারণে ব্লাড প্রেসার বাড়ে?
এর সঠিক কারণ হিসাবে বর্তমানে ধরা হয় আমাদের সেডেন্টারি জীবনযাত্রা, অতিরিক্ত ফাস্ট ফুড খাওয়া, ডায়েটে অতিরিক্ত নুনের ব্যবহার এবং কিছুটা জিনগত কারণ এ ছাড়াও স্মোকিং, এলকোহল পান, মেদাধিক্য, স্ট্রেসও কিন্তু এর জন্য অনেকাংশে দায়ী।
এই ক্ষেত্রে বলা যেতে পারে ডায়েট যদি হয় সুষম তাহলে কিন্তু উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যাগুলোকে আমরা সহজেই প্রতিহত করতে পারব। এবং কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় একদম শুরু থেকেই নিয়ন্ত্রণ করলে ধীরে ধীরে ওষুধ এর পরিমাণ ও কমতে থাকে। তাহলে দেখে নিন কোন কোন খাবার দৈনিক তালিকায় রাখতেই হবে।
১. শাকসবজি : সাধারণত শাকসবজি হয় নাইট্রেট সমৃদ্ধ, যা ব্লাড প্রেসার কমাতে উপযোগী।
২. বেরী : ব্লু বেরী বা স্ট্রবেরি তে রয়েছে অন্থসায়ানইন (এক প্রকার ফ্লাভোনওয়েড)। গবেষণায় দেখা গেছে এই এন্টিঅক্সিডেন্ট টির নিয়মিত গ্রহণে হাই ব্লাড প্রেসারের রিস্ক প্রায় ৮ ভাগ কমে যায়।
৩. কলা : পাকা কলাতে রয়েছে প্রচুর পটাশিয়াম যা রক্তচাপ কমাতে বেশ উপযোগী।
৪. বিট : বিট শুধু রংয়েই নয়, পুষ্টিতেও পরিপূর্ণ। এতে রয়েছে প্রচুর ইনোরগানিক নাইট্রেট যৌগ, যা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।তাই তরকারি হোক বা স্যালাড ডায়েটে রাখতেই হবে বিট।
৫. ডার্ক চকলেট : ডার্ক চকলেট কিন্তু হেলদি ডায়েটের একটা পার্ট এখন।প্র চুর ম্যাগনেসিয়াম ও পলিফেনলের উপস্থিতির জন্য রক্ত চাপ কমাতে ডার্ক চকলেট বেশ উপকারী। ভালো ঘুমের জন্যও কিন্তু এর বিকল্প নেই।
৬. কিউই ফল : এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি, ও বায়ো এক্টিভ যৌগ যা ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে উপযোগী।
৭. তরমুজ : এতে রয়েছে এমাইনো এসিড সিট্রুলিন যা দেহে নাইট্রিক অক্সাইড তৈরি করে ধমনীর স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি করে, ফলে ব্লাড প্রেসার ও নিয়ন্ত্রণে থাকে, এছাড়াও এতে জলের পরিমাণ বেশি থাকায় হাইড্রেশনেও সাহায্য করে।
৮. ওটস : এতে রয়েছে ফাইবার বিটা গ্লুক্যান যা দেহে কোলেস্টেরল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং সর্বোপরি ব্লাড প্রেসার ও নিয়ন্ত্রণ করে।
৯. রসুন : রসুনে উপস্থিত এলিসিন দেহে নাইট্রিক অক্সাইডের উৎপাদন বাড়িয়ে সিস্টোলিক ও ডায়াস্টোলিক প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করে। তাই রান্নায় মসলা হিসাবে রসুনের ব্যবহার অপরিসীম।
১০. টক দই : টক দই তে উপস্থিত উপকারী প্রো বায়োটিক ব্যাকটেরিয়া ল্যাকটোব্যাসিলাস শুধু গাট হেলথ ভালো রাখে তাই নয়, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা ও রক্তচাপ ও নিয়ন্ত্রণ করে।
১১. বেদানা : বেদানাকে আমরা বলি সুপার ফুড, প্রচুর পলিফেনলের উপস্থিতির জন্য শুধু যে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করে তাই নয়, কোলেস্টেটলের মাত্রা কমায় ও হার্টের পাম্পিং ক্ষমতাও ভালো রাখতে সাহায্য করে।
১২. দারচিনি : প্রাচীন ভারতীয় মশলাগুলোর মধ্যে দারচিনি অন্যতম। সারাদিনে রান্নায় বা ডিটক্স ওয়াটারে দারুচিনির পর্যাপ্ত ব্যবহার রক্তবাহকগুলোর এলাস্টিসিটি বাড়ায়। ফলে দেহে রক্ত সংবহন ভালো হয়।
১৩. নাটস ও সিডস : বিভিন্ন উপকারী নাটস যেমন আমন্ড, আখরোট ইত্যাদিতে রয়েছে উপকারী ফ্যাট, বিভিন্ন সিডস যেমন পাম্পকিন, সানফ্লাওয়ার , ফ্ল্যাক্স সিড ইত্যাদিতে রয়েছে উন্নতমানের প্রোটিন, ও ফাইবার। যা হার্ট ভালো রাখে, অপকারী ফ্যাটের পরিমাণ কমায়, ও ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করে। তবে শুধু সুষম খাদ্যই নয়, ব্লাড প্রেসারের মতো নিঃশব্দ মারণ সমস্যাগুলোকে প্রতিহত করতে যোগাসন এবং কিছু ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়াম ও কিন্তু করতে হবে। ভালো খান, সুস্থ থাকুন।
সূত্র : এই সময়