কম ঘুমালে হতে পারে যেসব মারাত্মক সমস্যা
কম ঘুমালে হতে পারে যেসব মারাত্মক সমস্যা - ছবি সংগৃহীত
মোবাইল ফোন নিয়ে ঘুমোতে যাওয়ায় সকলেরই ঘুম কমে গেছে। ঘুমের সমস্যা এখন বিশ্বব্যাপী এক সমস্যা। অথচ এই নিয়ে আলোচনা খুবই কম। পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বের প্রায় ৪৫ শতাংশ মানুষ ঘুমের নানা সমস্যায় ভুগছেন। বেশির ভাগ উচ্চরক্তচাপ, ডায়বিটিস, কিডনির দীর্ঘমেয়াদি অসুখের মূলে আছে কম ঘুম, বলছেন চিকিৎসক সৌম্য দাস।
ঘুমের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে ‘ওয়ার্ল্ড অ্যাসোসিয়েশন অফ স্লিপ মেডিসিন’ ২০০৮ সাল থেকে ঘুম দিবস পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়। তখন থেকে মার্চ মাসের দ্বিতীয় শুক্রবার বিশ্ব ঘুম দিবস বা ‘ওয়ার্ল্ড স্লিপ ডে’ পালন করা হচ্ছে। অনেকেই ভাবেন, কম ঘুম ক্ষতিকারক নয়। কিন্তু সৌম্য দাস জানালেন, নিয়ম করে গভীর ঘুম না হলে, নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। ভাল ঘুমের জন্য ৩টি বিষয়ের ওপর নজর দেওয়া দরকার।
১) সময় (ছোটদের ৮–৯ ঘণ্টা এবং প্রাপ্তবয়স্কদের ৭–৮ ঘণ্টা ঘুম দরকার)
২) ধারাবাহিকতা
৩) গভীরতা
কম ঘুমের কারণে ওজন বাড়তে শুরু করে। এ ছাড়া মনঃসংযোগের সমস্যা হয়, রক্তচাপ, হৃদরোগের আশঙ্কা বাড়ে। ঘুম সংক্রান্ত আরও কিছু অসুখ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের সচেতন হওয়া উচিত বলে মত নাক-কান-গলা ও নিদ্রা বিশেষজ্ঞ উত্তম আগরওয়ালের। ভারী চেহারার মানুষের বেশি নাকে ডাকে। তাতে ভাল ঘুম হয় না। তাতে ওজন আরও বাড়ে। পুরো ব্যাপারটা চক্রাকারে চলে। চিকিৎসার পরিভাষায় নাক ডাকার অসুখের নাম ‘অবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া’ বা ওএসএ। এই অসুখে গলার কিছু পেশি শিথিল হয়ে গিয়ে বাতাস চলাচলের পথে বাঁধা সৃষ্টি হয়। ঘুমের মধ্যে বিকট শব্দে নাক ডাকে। এই সমস্যা না সারালে উচ্চরক্তচাপ, হৃদযন্ত্রের অসুখ-সহ নানা সমস্যা হয়। আবার নিরবিচ্ছিন্ন ঘুম না হওয়ায় সারা দিন ঘুম পায়।
কম ঘুমের সমস্যা
* ঘুম কম হলে অবসাদ বাড়ে। মনঃসংযোগ কমে যায়।
* নিয়ম করে ৭–৮ ঘণ্টা না ঘুম হলে ধৈর্য্য কমে যায়। মেজাজ চড়ে যায়।
* ঘুমের মধ্যে গ্রোথ হরমোন বেশি নিঃসৃত হয়। তাই বাচ্চার কম ঘুমোলে তাদের ঠিক মতো বৃদ্ধি হয় না।
* ঘুমের মধ্যে নাক ডাকার সমস্যা থাকলে রক্তচাপ বাড়ে। হৃদরোগ ও মস্তিষ্কে রক্ত ক্ষরণের আশঙ্কা দেখা দেয়।
* সারা পৃথিবীর ৪ শতাংশ মানুষের স্লিপ অ্যাপনিয়া আছে।
ভালো ঘুমের টিপস
* প্রত্যেক দিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমোতে যাওয়া ও ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করলে, ঘুমের সমস্যা কমে।
* ঘুমোতে যাবার অন্তত দেড়-দু’ঘণ্টা আগে রাতের খাবার খেয়ে নেয়া উচিত।
* সন্ধ্যার পর চা, কফি পান করলে সহজে ঘুম আসে না।
* নিয়ম করে ব্যায়াম করলে ভালো ঘুম হয়।
* মদ্যপান করলে সাময়িক ভাবে ঘুম পেলেও পরে নেশায় পরিণত হয়।
* ঘুমানোর ৪ ঘণ্টা আগে মিষ্টি বা বেশি মশলাদার খাবার খাবেন না।
* ঘুম কম হলে ঘুমের ওষুধ খাবেন না।
* ঘুমোতে যাবার আগে হালকা সুতির পোশাক পরা উচিত।
* যদি মাস খানেক বা তারও বেশি সময় ধরে ঘুমের অসুবিধে চলতে থাকে, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা