মরক্কো নিয়ে ইসরাইলের খেলা
মরক্কো নিয়ে ইসরাইলের খেলা - ছবি সংগৃহীত
মরক্কোর মূল সমস্যার উদ্ভব পশ্চিম সাহারা নিয়ে। বিরাট ভূখণ্ড, ২,৫২১২০ বর্গকিলোমিটার; লোক সংখ্যা পাঁচ লাখ ৮০ হাজার। এলাকাটি মূলত মরু অঞ্চল; খুবই গরম ও শুষ্ক। গত ডিসেম্বরের ১০ তারিখ, ২০২০ ইসরাইল-মরক্কোর সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ ঘোষিত হয়। এটা আফ্রিকান ইউনিয়নের গালে চড় মারার মতো একটি বিষয়। এমন এক সময়ে সম্পর্ক হলো যখন মরক্কোর আফ্রিকা ইউনিয়নে পুনঃঅন্তর্ভুক্তির বিষয়ে সংস্থার মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। আফ্রিকান ইউনিয়ন মরক্কোকে পশ্চিম সাহারা থেকে সরে আসার ও স্বায়ত্তশাসনের ব্যবস্থার জন্য চাপ দিচ্ছে বহু বছর ধরে। রাবাত সবসময় এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। মরক্কো দাবি করে, পুরো সাহারা মরক্কোর অংশ, সার্বভৌমত্ব তাদেরই। পশ্চিম সাহারাকে স্বাধীন করার জন্য শুরু থেকে কাজ করছে পলিসারিও ফ্রন্ট। এদের সহায়তা করছে পাশের আলজেরিয়া। মরক্কোর সাথে পলিসারিও গেরিলা নিয়ে একটি স্থায়ী বিরোধে আলজেরিয়ার সহায়তা দিচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র এই বিরোধের কারণে ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার মধ্যস্থতা করে এবং পশ্চিম সাহারার ওপর মরক্কোর সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন তুরুপের তাস ছোড়ে। আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ প্রমাণ করে আফ্রিকান ইউনিয়ন নখ-দন্তহীন এক সংস্থা। মরক্কোকে সংস্থা থেকে বের করে দেয়ার কথাও চলছে। এতসব আয়োজনে কোনো পক্ষই বিচলিত নয়। কী হবে পশ্চিম সাহারার? কী হবে নির্যাতিত মানুষের, যাদের শুধু আশার বাণী শোনানো হয়েছে কয়েক দশক ধরে? মরক্কো-ইসরাইল সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের মধ্যে উত্তরের চেয়ে প্রশ্ন বেশি।
জাতিসঙ্ঘ শুরু থেকে বিরোধ নিষ্পত্তির চেষ্টা করে এলেও যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন এবার সেটিকে কটাক্ষ করল। নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘ইসরাইল ও মরক্কোর সম্পর্ক এখন দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হলো’। ট্রাম্পের সময় শেষ হওয়ার মাত্র এক মাস আগে তিনি এই ঘোষণা দেন এবং দু’টি দেশের সম্পর্কের দূতিয়ালি করেন।
ইসরাইলের সাথে আরব দেশগুলো যতই সম্পর্ক স্বাভাবিক করুক না কেন ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন দেশের বিষয়টি কোনোভাবেই বাদ দেয়া যায় না। এক দিকে ফিলিস্তিনিদের নরক-যন্ত্রণা আর কিছু দূরে তেলআবিবে আরবদের সৌকে বা সুপার মলে ঘুরে বেড়ানো। এটি একধরনের মুনাফেকির বহিঃপ্রকাশ। অবস্থা এখন এত দূর গড়িয়েছে যে, ইসরাইল হাতে ধরে একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র বানিয়ে না দিলে এতগুলো আরব নেতৃত্ব কিছুই করতে পারবে না যেন। ২০০২ সালের আরব শান্তি প্রচেষ্টা থেকে এরা সবাই উল্টো দিকে দৌড়াচ্ছে। আরব রাষ্ট্রগুলো দেশের ভেতরে এবং বন্ধু দেশের সাথে অবন্ধুসুলভ আচরণ করে চলছে। ফলে ভেঙে খানখান হচ্ছে সব ঐক্যজোট। বন্ধুর প্রতি বন্ধুর বিশ্বাস গেছে কমে, একে অপরের তথ্য হাতিয়ে নেয়ার জন্য গোয়েন্দাবৃত্তিতে লিপ্ত। মুসলিম উম্মাহর বিষয়টি এখন আজিব রাজনৈতিক কল্পনা!
২০২০ সালের মধ্যে আফ্রিকায় অস্ত্রের ঝনঝনানি বন্ধ করার পরিকল্পনা ছিল, সেটি এখন কল্পনার সাগরে ভাসছে। চুক্তির কারণে পলিসারিও ফ্রন্টের যুদ্ধ করা ছাড়া কোনো উপায় রইল না। শান্তির পরিবর্তে রাবাত, ওয়াশিংটন ও তেলআবিব আরো যুদ্ধের দুয়ার খুলে দিলো। এ কারণে আফ্রিকানরা আফ্রিকান ইউনিয়নে মরক্কোকে সদস্য রাখতে চায় না এবং সম্পর্কও রাখতে চায় না। সংগ্রাম, লড়াই ও বিরোধ এখন চলার সাথী।
ট্রাম্প মরক্কোর বাদশাহ মুহাম্মদকে ফোনে সমর্থন জানিয়ে তিন দশক পুরনো বিষয়টির বিরোধ সিল করে দিয়েছেন বলা যায়। ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্থাপনকারী দেশের মধ্যে আরো আছে আরব আমিরাত, বাহরাইন ও সুদান। ট্রাম্প প্রশাসন পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়াকে চাপ দিয়েছে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে, ওয়াশিংটনের এই চাপ এখনো অব্যাহত রয়েছে মর্মে বিশ্লেষকরা বলছেন। তবে বাইডেন এ পর্যন্ত কোনো কথা বলেননি। রাবাত ও তেলআবিবে দূতাবাস বা লিয়াজোঁ অফিস খোলা হবে খুব দ্রুত, শুরু হবে অর্থনৈতিক বিনিয়োগ, প্রকল্প গ্রহণ। তুরস্ক কোনো পক্ষ না নিয়ে বলেছে তারা পশ্চিম সাহারার একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান চায়। চুক্তির পর মরক্কোকে সন্ত্রাসী তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে ওয়াশিংটন। চুক্তির পরপরই মরক্কোর কাছে ১০০ কোটি বা এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের অস্ত্র বিক্রি করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। মরক্কোকে চারটি ড্রোন এবং দূর-নিয়ন্ত্রিত গোলাবারুদ দেবে যুক্তরাষ্ট্র। আলজাজিরা ও ব্লুমবার্গ জানায়, আরব আমিরাতের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের সময়ও আমিরাতে ২৩ বিলিয়ন ডলারের অত্যাধুনিক অস্ত্র-গোলাবারুদ বিক্রি করছে যুক্তরাষ্ট্র।
আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত পশ্চিম সাহারার কিছু অংশ সাহরাবি আরবদের দখলে, নাম দিয়েছে সাহরাবি আরব ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক। বর্তমানে পশ্চিম সাহারার ৮০ শতাংশ মরক্কোর দখলে। পলিসারিও ফ্রন্ট কিছু জায়গা দখল করে আছে; কিন্তু তাদের হেডকোয়ার্টার আলজেরিয়ার সীমান্তবর্তী তিনদৌফে। আন্তর্জাতিক কোর্ট অব জাস্টিস লক্ষ করে যে, পশ্চিম সাহারার কতিপয় উপজাতি নেতা মরক্কোর সুলতানের কাছে আনুগত্য স্বীকার করেছে।
মাদ্রিদ চুক্তিতে স্পেন পশ্চিম সাহারাকে ত্রিপক্ষীয় প্রশাসনের হাতে দেয়ার বিষয়টি তুলে আনে, অর্থাৎ পশ্চিম সাহারার প্রশাসন, মরক্কো ও মৌরিতানিয়ার হাতে এবং ২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৬ তারিখের মধ্যে স্পেন এলাকা ছেড়ে চলে যাবে। মাদ্রিদ চুক্তিতে সার্বভৌমত্বের কোনো বিষয় উল্লেখ ছিল না। প্রশাসনিক কর্তৃত্ব হস্তান্তর হওয়ায় পশ্চিম সাহারা Non Self Governing Territory স্ট্যাটাসের কোনো হেরফের হয়নি। ধার্য তারিখেই সব স্পেনীয় সেনা পশ্চিম সাহারা ত্যাগ করে। ১৯৭৯ সালে মৌরিতানিয়া ও পলিসারিওর মধ্যে শান্তিচুক্তি হয় এবং মৌরিতানিয়ার অংশ দিয়ে দেয়। ১৯৯১ সালে মরক্কো ও পলিসারিওর মধ্যে যুদ্ধবিরতি হয়। অনেক দেশ সাহারায় পলিসারিওদের পক্ষে এবং অনেক দেশ সাহারার ওপর মরক্কোর সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে। ফলে জটিলতা বাড়তে থাকে।
তিন দশক ধরে মরক্কো ও পলিসারিও গেরিলাদের মধ্যে লড়াই চলছে। দক্ষিণের মৌরিতানিয়া থেকে মরক্কোতে সড়কপথে যেসব মালামাল যায় পলিসারিও সেনারা প্রায়ই রাস্তা বন্ধ করে দেয়। এখন সেই প্রতিবন্ধকতা আরো বেড়েছে। তাদের মুখপাত্র সিদি ওমর বলেন, পশ্চিম সাহারার ওপর তাদের অধিকার ছেড়ে দেয়া হবে না। মরক্কো সেনাবাহিনীর সাথে পলিসারিওদের যুদ্ধবিরতি থাকলেও কখনও তা ভেঙে তুমুল সংঘর্ষ বাধে। মরক্কো দাবি করে যে, আন্তর্জাতিক শান্তি আলোচনা ও চুক্তি মোতাবেক কোন রাস্তা বন্ধ করা অপরাধের শামিল। সামনের দিনগুলোতে যেন পলিসারিও সেনারা অবরোধ করতে না পারে সে জন্য বালির পাহাড় তৈরি ও কমান্ডো সেনা পাঠানো হয়েছে। মরক্কো ডেজার্ট ট্যাঙ্ক ও মিসাইল বসিয়েছে। যুদ্ধ শুরু হলে মারাত্মক অস্ত্র ব্যবহার করা হবে বলে হুমকি দিয়েছে।
মরক্কো ও ইসরাইল খুশির জোয়ারে ভেসে গেলেও মরক্কোর অনেকে এটিকে ফিলিস্তিনিদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা মনে করছেন। মরক্কোর কাছে পশ্চিম সাহারার অধিকার পাওয়া মানে অনেকটা ‘বিশ্ব জয়ের মতো’। পশ্চিমা বিশ্ব পশ্চিম সাহারা প্রশ্নে মরক্কো ও আলজেরিয়াকে নিয়ে খেলেছে। ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক করে মরক্কো পশ্চিম সাহারার ওপর সার্বভৌমত্ব অর্জন করল। পিজেডি বা মরক্কোর জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি ২০১৬ নির্বাচনে প্রচুর ভোট পায়। তারা এই সম্পর্কের বিরোধিতা করেছে। পিজেডি ইসলামী গণতন্ত্রের পক্ষপাতী। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিগত দু’টি নির্বাচনে এক-তৃতীয়াংশ সিট পেয়েছে ও জনসমর্থন বাড়ছে।
১৯৪৮ সালে ইসরাইল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে থেকেই অনেক ইহুদি মরক্কোতে বসবাস করত, এখন সংখ্যায় তিন হাজারের বেশি। মরক্কোর রাজনৈতিক বলয়ে এদের বড় প্রভাব রয়েছে শুরু থেকে। বার্ষিক ৫০ হাজার ইহুদি মরক্কো সফর করে ধর্মীয় ও আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখার জন্য। মরক্কোর ইহুদিরা বলে যে, মরক্কোর সাথে ইহুদিদের সম্পর্ক তিন হাজার বছর ধরে। ইসরাইলের কেবিনেট মন্ত্রী মিরি রেজেভের পিতা-মাতা মরক্কো থেকে ইসরাইল আসেন। বিভিন্ন সময়ে সর্বমোট দুই লাখ ৫০ হাজার ইহুদি মরক্কো থেকে ইসরাইল আসে, অনেকের মতে পাঁচ লাখ। তাই ইসরাইলিদের কাছে মরক্কো আপন দেশের মতো। অচিরেই মরক্কোর কৃষি ও পানীয় জলের খাতে ইসরাইল বিনিয়োগ করবে।
মরক্কো অপেক্ষা করছে বাইডেনের দৃষ্টিভঙ্গির আভাস পেতে। তবে বাইডেন মরক্কোর বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করবেন না এমনটি মনে করা হয়। মরক্কো-ইসরাইল প্রীতি নিয়ে মাহমুদ আব্বাস ও অন্যান্য ফিলিস্তিনি নেতৃবর্গ এখনো মুখ খোলেননি। কিন্তু মিসেস হানান আশরাবি বলেছেন, ‘ট্রাম্প ইসরাইলি পথচলাকে মসৃণ করছেন’। তিনি আরো বলেন, ‘এটা দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ, পাওয়ার পলিটিক্সে ইন্ধন জোগাবে এই পদক্ষেপ, আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করবে সবখানে।’
চুক্তির সাথে সাহারার উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে, জনগণকে সেটি বেশি বোঝানো হয়েছে। রাবাত সরকারিভাবে বলেছে, এতদঞ্চলে তাদের অবস্থান সংহত হয়েছে। আপাতত চুক্তির দু’টি বড় দিক পরিস্ফুট হয়েছে। প্রথমটি সম্পূর্ণ সাহারার ওপর মরক্কোর কর্তৃত্ব ও সার্বভৌমত্ব, মরক্কোর দাখালায় একটি আমেরিকান কনস্যুলেট স্থাপন এবং তিন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ। লেইউন ও দাখালায় আন্তর্জাতিক ক্রীড়া, সঙ্গীত ও সাংস্কৃতিক নানা ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় ৫০টি দেশ পলিসারিও ফ্রন্টকে সমর্থন করে না। মরক্কো এখন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে আফ্রিকায় বেশ সচল। পলিসারিও অবরোধ থেকে ‘গুরগুরেট বাফার জোন’ মুক্ত করতে মরক্কোর সেনারা প্রস্তুত। দ্বিতীয়টি, মরক্কো চুক্তির আগেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল থেকে যুদ্ধ সরঞ্জাম কিনে আসছে। এবার এই কেনাকাটায় অনেক সুবিধা ভোগ করবে ও নতুন নতুন অস্ত্রসম্ভারে সাজাবে সেনাবাহিনীকে। পলিসারিওদের ধ্বংস করার জন্য, যা থেকে আলজেরিয়াবিরোধী লড়াইও শুরু হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, একই সাথে মৌলবাদী ডেভেলপমেন্ট ও জাস্টিস পাার্টিকে নির্মূল করার জন্যও সার্বিক সহায়তা পাবে। তৃতীয়টি মরক্কো বারাক ওবামার সময় যথেষ্ট চাপ সহ্য করেছে। রাবাত ট্রাম্পের ডিল অব দি সেঞ্চুরিকে সমর্থন দেয়নি এবং পম্পেও-সহ নেতানিয়াহুর সফর অনুমোদন করেনি। এখন যেকোনো সময় নেতানিয়াহু বা ওয়াশিংটনের নেতৃবর্গ ও জেনারেলরা রাবাতে ছুটে যেতে পারেন। বাদশাহ চাইলেও এসবে আর বাধা দিতে পারবেন না।
মরক্কো সবসময় ফিলিস্তিনিদের নাড়ির স্পন্দনের সাথে সম্পৃক্ত ছিল। শিমন প্যারেজকে ফাঁসিতে ঝোলানোর জন্য মরোক্কানরাই আন্দোলন করেছিল। মরক্কো সাহারার সার্বভৌমত্ব ধরে রাখার জন্য পলিসারিও ফ্রন্ট, আলজেরিয়া ও দেশের ভেতরের রাজনৈতিক দলের সাথে যুদ্ধে জড়াবে, নাকি কোনো সমঝোতায় উপনীত হবে তা এখনো বোঝা যাচ্ছে না। ভবিষ্যতে এদের নিয়ে নতুন সমস্যা ও লড়াই হবে এখন থেকে সেটি আঁচ করা যায়। হাজার হাজার ইহুদি কি আবার মরক্কোতে ফিরে আসবে? তাহলে মরক্কো দ্বিতীয় ফিলিস্তিনে রূপান্তরিত হবে। আলজেরিয়া ও মৌরিতানিয়া জর্ডান ও সিরিয়ার মতো অবস্থানে চলে যাবে।
সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের কারণে কয়েক শত বছরের মরক্কো-ফিলিস্তিন সম্প্রীতি আস্তে আস্তে নিভে যাবে। মরক্কোর বাদশাহ আল-কুদস কমিটির প্রধান হিসেবে কাজ করেন। প্রকারান্তরে ইসরাইল সেখানেও আঘাত করে চেতনা খ-িত করল। অনেক কূটনীতিক মনে করেন যে, মরক্কোর জন্য পরিপূর্ণ সার্বভৌমত্ব ধরে রাখা কঠিনতর হবে। মরক্কোর রাজনীতিতে খুব দ্রুত জিওনিস্ট অর্থনীতি, রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক প্রভাব অক্টোপাসের মতো আঁকড়ে ধরবে। ইসরাইল স্বার্থ উদ্ধারের জন্য দুর্বল দেশগুলোকে টার্গেট করে বা দেশটিকে দুর্বল করে ফেলে। বিশেষ করে যেখানে ইসলামী রাজনীতিতে মাঠ সরগরম সেসব দেশকে চিহ্নিত করা হয়। যেমন এখন মরক্কো ও তিউনিসিয়া।
এসব যাদের মনমেজাজে ঢুকবে না তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এমন সময়ও আসতে পারে যখন ইসরাইলের ভয়ে দুর্বল এমন দেশ অস্থিরতায় ভুগবে। আফ্রিকায় সামরিক ও নিরাপত্তার রাজনৈতিক কৌশল প্রয়োগে যুক্তরাষ্ট্র মরক্কোকে প্লাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। মরক্কোর এত দূর আসার পেছনে পাশের দেশগুলাও কম দায়ী নয়, বিশেষ করে আলজেরিয়া। বলা হয় আলজেরিয়া মরক্কোকে দু’ভাগে বিভক্ত করতে চায়। আফ্রিকায় মাগরেব ইউনিয়ন ইস্যু, রাশিয়ার সামরিক বিস্তৃতি, চীনা অর্থনীতির প্রসারের ইস্যুগুলোর সাথে পশ্চিমাদের দ্বন্দ্ব সাহারা এলাকাকে আরো উত্তপ্ত করবে।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব ও গ্রন্থকার