প্রাচীন মিসরে রাজকীয় পোষা প্রাণীদের জন্য আলাদা সমাধি!
প্রাচীন মিসরে রাজকীয় পোষা প্রাণীদের জন্য আলাদা সমাধি! - ছবি সংগৃহীত
মিসরের বন্দর শহর বেরেনিস। লোহিত সাগরের তীরে অবস্থিত এই শহরের তলায় লুকিয়ে ছিল দুই হাজার বছরের পুরনো কবরের ইতিহাস।
সম্প্রতি পোষা প্রাণীদের সেই কবরস্থানের সন্ধান মিলেছে এই বেরেনিসের তলায়। মাটি খুঁড়ে যার খোঁজ দিয়েছেন প্রত্নতত্ত্ববিদ মার্টা অসিপিন্সকা এবং তার সহযোগীরা। এটি বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো পোষা প্রাণীদের কবরস্থান কি না তা নিয়ে গবেষণা চলছে।
সব মিলিয়ে প্রায় ৫৮৫টি প্রাণীর কবরের সন্ধান পেয়েছেন তারা। তাদের এই খোঁজ ওয়ার্ল্ড আর্কিওলজি নামে একটি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
২০১১ সালে অসিপিন্সকা এবং তার দলবল প্রথম এই কবরস্থান খুঁজে পান। মিসরের শহর বেরেনিসের একটি আবর্জনা ফেলার জায়গার নিচে মাটি খুঁড়ে বার করতে হয় কবরস্থানটি।
২০১ থেকে খনন শুরু করলেও প্রথম প্রাণীর কঙ্কালের সন্ধান পান ২০১৬ সালে। ওই বছর তারা শ’খানেক কঙ্কাল খুঁড়ে বার করেন এবং সেগুলোর পরীক্ষা করেন। কিন্তু তখনো তারা জানতেন না এটি পোষা প্রাণীদের কবরস্থান ছিল না কি ভাগাড়ের মতো কিছু ছিল।
অনেক গবেষণার পর, সমস্ত প্রাণীদের দাঁত, হাড়ের টুকরো ইত্যাদি পর্যবেক্ষণের পর তারা এটি কবরস্থান বলে নিশ্চিত করেন।
যেখানে বিড়াল, কুকুরের পাশাপাশি বাঁদরের হাড়ও পেয়েছেন তাঁরা। সেই বাঁদর আবার ভারত থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সে দেশে।
যে কটি বাঁদরের হাড় উদ্ধার করা গেছে তার পরীক্ষা করে গবেষকরা জানতে পেরেছেন, প্রত্যেকটি বাঁদরই খুব কম বয়সে মারা গেছে।
সম্ভবত ভারতের আবহাওয়ায় জন্ম হওয়া ওই বাঁদরগুলো সুদূরে মিসরের জলবায়ুর সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেনি। ওই কারণেই তাদের মৃত্যু হয়েছে।
তবে যে হেতু পোষা প্রাণী হিসেবে বিড়াল এবং কুকুরের সংখ্যাই বেশি, তাই ওই কবরস্থানে সবচেয়ে বেশি কবর দেয়া হয়েছে বিড়ালের।
কবরস্থানের ৯০ শতাংশ কবরই বিড়ালের, ৫ শতাংশ কুকুরের। বাকি ৫ শতাংশের মধ্যে বিভিন্ন প্রাণী রয়েছে।
প্রতিটি প্রাণীর কবরেই রাজকীয়তা লক্ষ্য করা গিয়েছে। কোনো প্রাণীকে উলের গরম জামা জড়িয়ে কবর দেয়া হয়েছিল। কোনো প্রাণীর গলায় সুন্দর কারুকার্য করা বেল্ট পরানো ছিল।
গবেষকদের আশ্চর্য করে তুলেছিল একটিই বিষয়। মিসর জুড়ে সাধারণত মমি করে মৃতদেহ সংরক্ষণের যে চল ছিল এ ক্ষেত্রে তা দেখা যায়নি।
কোনো প্রাণীর শরীরে শুধুমাত্র কাপড় জড়িয়ে আবার কোনওটায় কাপড় জড়ানো ছাড়াই কবর দেয়া হয়েছিল।
সে সময়ের মমি করে রাখার চলতি প্রথা কেন এ ক্ষেত্রে মানা হয়নি তা আজও নিশ্চিত করে বলতে পারেননি গবেষকেরা। সে বিষয়টিও তাদের গবেষণাধীন।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা