কিভাবে বুঝবেন, আয়রনের স্বল্পতায় ভুগছেন
কিভাবে বুঝবেন, আয়রনের স্বল্পতায় ভুগছেন - ছবি সংগৃহীত
আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিন উৎপাদনের জন্য আয়রন একটি প্রয়োজনীয় খনিজ এবং এটি দেহের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়াতেও ভূমিকা রাখে। কোনো ব্যক্তির দেহে অপর্যাপ্ত আয়রন থাকার ফলে আয়রনের ঘাটতিজনিত রক্তাল্পতা (Iron Deficiency Anaemia) হয়। এর ফলে, দেহে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যকর লাল রক্তকণিকার অভাব হয়। রক্তাল্পতা প্রতিরোধ থেকে শুরু করে দেহের শক্তি বাড়াতে, এই খনিজটির প্রচুর উপকারিতা রয়েছে।
আয়রনের স্বাস্থ্য উপকারিতা
১) রক্তাল্পতা প্রতিরোধ করে
হিমোগ্লোবিনের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য একটি মানবদেহে আয়রন প্রয়োজন হয়। আয়রন রক্তস্বল্পতাজনিত রোগের চিকিৎসা ও প্রতিরোধে সহায়ক, যা হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম হওয়ার ফলে হয় এবং এর বিভিন্ন লক্ষণ হলো- ক্লান্তি, খারাপ মেজাজ, শ্বাসকষ্ট, ইত্যাদি। হিমোগ্লোবিন এমন একটি প্রোটিন যা, লোহিত রক্তকণিকায় উপস্থিত থাকে। এই প্রোটিন লাল রক্ত কণিকাকে ফুসফুস থেকে শরীরের অন্যান্য অংশে অক্সিজেন বহন করতে সহায়তা করে।
২) প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
আয়রন প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি ক্ষতিগ্রস্ত কোষ, টিস্যু এবং অঙ্গগুলিতে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায়। এছাড়াও, বিভিন্ন সংক্রমণের সাথে লড়াই করতে এবং রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
৩) ফোকাস ও একাগ্রতা উন্নত করে
ডায়েটে আয়রন অন্তর্ভুক্ত করার আরেকটি কারণ হল, ফোকাস এবং একাগ্রতা উন্নত করা। দেহে আয়রনের মাত্রা কম হওয়া আমাদের জ্ঞান ভিত্তিক ক্রিয়াকে অনেকাংশে প্রভাবিত করে, যার ফলে কোনও কিছুতে মনোযোগ কম হয়, স্মৃতি লোপ পায়।
৪) শক্তি বাড়ায়
অপর্যাপ্ত পরিমাণ আয়রন গ্রহণের ফলে ক্লান্তি আসে যা, একজন ব্যক্তির প্রতিদিনের ক্রিয়াকলাপে হস্তক্ষেপ করে। সুতরাং, আপনার দেহে যত বেশি আয়রন থাকবে আপনি তত বেশি শক্তিশালী বোধ করবেন কারণ, আয়রন পেশী এবং মস্তিষ্কে অক্সিজেন বহন করে যা, শারীরিক এবং মানসিক উভয় কার্যকারিতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৫) স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থা
গর্ভাবস্থায়, রক্তের পরিমাণ এবং লাল রক্ত কণিকার উৎপাদন খুব দ্রুত হারে বৃদ্ধি পায়। যদি গর্ভাবস্থায় আয়রনের মাত্রা কম থাকে তবে, অকাল জন্ম, জন্মের সময় ওজন কম, শিশুদের মধ্যে প্রতিবন্ধী আচরণ ও জ্ঞানভিত্তিক ক্রিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
৬) পেশী শক্তি বৃদ্ধি করে
পর্যাপ্ত পরিমাণ আয়রন দেহের পেশীগুলির শক্তি এবং স্থিতিস্থাপকতার জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণে অক্সিজেন সরবরাহ করে। এটি অ্যাথলেটিকদের পারফরম্যান্স আরও ভাল করতে সহায়তা করে। আয়রনের মাত্রা কম হলে পেশীর দুর্বলতা দেখা দেয়।
৭) ভালো ঘুম হয়
একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে দেহে আয়রনের স্তর খুব কম থাকলে ঘুমের ব্যাঘাত হয়। অনিদ্রা ও স্লিপ অ্যাপনিয়ার মতো ঘুমের সমস্যাও তৈরি করে। দিনে কত আয়রন গ্রহণ করা উচিত শিশুদের জন্য ০ থেকে ৬ মাস - ০. ২৭ মিলিগ্রাম ৭ থেকে ১২ মাস - ১১ মিলিগ্রাম বাচ্চাদের জন্য ১ থেকে ৩ বছর - ৭ মিলিগ্রাম ৪ থেকে ৮ বছর - ১০ মিলিগ্রাম ছেলেদের জন্য ৯ থেকে ১৩ বছর - ৮ মিলিগ্রাম ১৪ থেকে ১৮ বছর - ১১ মিলিগ্রাম ১৯ বছর এবং তার চেয়ে বেশি বয়সের ক্ষেত্রে - ৮ মিলিগ্রাম মেয়েদের জন্য ৯ থেকে ১৩ বছর - ৮ মিলিগ্রাম ১৪ থেকে ১৮ বছর - ১৫ মিলিগ্রাম ১৯ থেকে ৫০ বছর - ১৮ মিলিগ্রাম ৫১ বছর এবং তার চেয়ে বেশি বয়সের ক্ষেত্রে - ৮ মিলিগ্রাম গর্ভাবস্থার সময়কাল - ২৭ মিলিগ্রাম স্তন্যপানের সময়কাল - ১০ মিলিগ্রাম অতিরিক্ত আয়রন গ্রহণের ঝুঁকি পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন পাওয়ার সর্বোত্তম উপায় হলো, ডায়েট এবং ওরাল আয়রন সাপ্লিমেন্টের মাধ্যমে।
তবে, এর অতিরিক্ত মাত্রা পেট খারাপ, অঙ্গের সমস্যা, অভ্যন্তরীণ রক্তপাত এমনকি, মৃত্যুর মতো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য আয়রন সাপ্লিমেন্টের প্রস্তাবিত ডোজটি হল প্রতিদিন ৬০ থেকে ১২০ মিলিগ্রাম।
সূত্র : বোল্ড নিউজ