মধ্যপ্রাচ্যে পরিবর্তনের পূর্বাভাস : ৪টি ঘটনা
বাদশাহ সালমান ও প্রিন্স মোহাম্মদ - ছবি সংগৃহীত
মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলের সর্বশেষ উন্নয়নের ঘটনাগুলোর প্রতি নজর রাখলে এখানে চলমান পরিবর্তনের বিষয়টি পরিষ্কার হতে পারে।
প্রথমত, সৌদি আরব ও আমিরাতের সাথে তুরস্কের যে আঞ্চলিক বিভিন্ন ইস্যুতে মতের ব্যবধান তৈরি হয়েছে তা নিরসনে উভয়পক্ষ কাজ শুরু করেছে। এর একটি প্রাকঘটনা হলো উপসাগরীয় সহযোগিতা সংস্থা-জিসিসির সদস্য সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন এবং এর সাথে মিসর মিলে যে ‘কাতার অবরোধ’ করেছিল তার অবসান ঘটানো; আর সবক’টি দেশের সাথে কাতারের সম্পর্ক নতুন করে সচল হওয়া। কাতারের অবরোধের অবসানের যে নেপথ্য আলোচনা তার সাথে য্ক্তু ছিল আঙ্কারাও।
দ্বিতীয়ত, লিবিয়ায় দুই পক্ষের মধ্যে যে মুখোমুখি লড়াই ও স্বার্থের সঙ্ঘাত অনেক বড়ভাবে সামনে এগোচ্ছিল তা বন্ধ হওয়া। দেশটিতে জাতিসঙ্ঘের মধ্যস্থতায় সমঝোতার সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে সরকার পূর্ব-পশ্চিমে বিভক্ত প্রশাসনকে সমন্বিত ও একীভূত করে আগামী ডিসেম্বরে একটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের হাতে অখণ্ড লিবিয়ার শাসন বা নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেবে। লিবীয় দ্বন্দ্বে জাতিসঙ্ঘ স্বীকৃত ত্রিপোলি সরকারের পেছনে সর্বাত্মক সামরিক ও কূটনৈতিক সহায়তা জুগিয়েছে তুরস্ক। অন্য দিকে মিসর, আমিরাত, রাশিয়া ও ফ্রান্স সমর্থন জুগিয়েছে বিদ্রোহী খলিফা হাফতার ও সালেহর নেতৃত্বাধীন বেনগাজিভিত্তিক সরকারকে। এক বছরের বেশি সময় যুদ্ধ করেও শেষ পর্যন্ত তুরস্কের সক্রিয় সমর্থনের কারণে খলিফা হাফতার ত্রিপোলি সরকারের পতন ঘটাতে ব্যর্থ হন। এখন সব পক্ষ নতুন সমঝোতায় সম্মত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
তৃতীয়ত, ভূমধ্যসাগরের সমুদ্রসীমা বিরোধে তুরস্কের অধিকারকে প্রান্তিক পর্যায়ে ঠেলে দেয়ার ব্যাপারে গ্রিস, মিসর, সাইপ্রাস, ইসরাইল ও ফ্রান্সের মধ্যে অক্ষ তৈরির পর তুরস্ককে অনেকখানি একঘরে মনে হয়েছিল। এখন সব পক্ষ এমনকি, জাতিসঙ্ঘের সহায়তায় গ্রিসও তুরস্কের সাথে আলোচনা করছে। ভূমধ্যসাগরের জ্বালানি অনুসন্ধান ও উত্তোলন নিয়ে কায়রো-আঙ্কারা সমঝোতার এক বিরাট প্রভাব পড়বে এই অঞ্চলে। তুরস্ক ও লিবিয়া ত্রিপোলিভিত্তিক সররাজ সরকারের সাথে সমুদ্রসীমা নিয়ে যে চুক্তি করেছিল তার প্রধান প্রতিবাদকারী ছিল মিসর। মিসরের সাথে তুরস্কের সমঝোতা হলে কায়রো গ্রিস-সাইপ্রাসের চুক্তির চেয়ে সমুদ্রাঞ্চলের বেশি অধিকার লাভ করবে দেশটি। অন্য দিকে, জ্বালানি উত্তোলন চুক্তিতেও বাড়তি সুবিধা ভোগ করবে কায়রো।
চতুর্থত, মিসর ও সুদানের জন্য বাঁচা মরার প্রশ্ন হলো ইথিওপিয়ার আননাহদা (রেনেসাঁ) বাঁধ নির্মাণের বিষয়টি। দুটি দেশই কৃষির জন্য বহুলাংশে নীল নদীর পানি প্রাপ্তি নির্ভর। ইথিওপিয়া এই নীল নদের উজানে বাঁধটি নির্মাণ করছে। মিসর ও সুদানের সাথে সমঝোতা চুক্তি ছাড়াই বাঁধটি ভরার জন্য পানি প্রত্যাহার শুরু করতে চাইছে ইথিওপিয়া। মিসর এককভাবে প্রভাব বিস্তার করে ইথিওপিয়াকে নিবৃত্ত করতে পারছে না। তুরস্ক অতি সম্প্রতি ইথিওপিয়ার কাছে আননাহদা বাঁধ নির্মাণ বিষয়ক বিরোধে মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দিয়েছে। তুরস্কের রাষ্ট্রপতি রজব তাইয়েব এরদোগানের বিশেষ দূত ভিসেল ইরোগলু বলেছেন যে, তার দেশ ইথিওপিয়ার এই বাঁধ সম্পর্কিত মধ্যস্থতা আলোচনার নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত রয়েছে। এই ইস্যুটির সাথে তুরস্কের সম্পৃক্ততা সঙ্কটের সমাধানের ব্যাপারে বড় চাপ তৈরি করতে পারে ইথিওপিয়ার ওপর।