তুরস্ক এবং আরব সম্পর্কে নতুন বাতাস?
প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান ও রজব তাইয়েপ এরদোগান - ছবি সংগৃহীত
চ্যালেঞ্জ এখনো আছে
রাজনৈতিকভাবে, তুরস্কের জন্য মিসরকে বিশেষত সংযুক্ত আরব আমিরাত, গ্রিস ও অন্যান্য রাষ্ট্রের হাতে জিম্মি হওয়া থেকে রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ। এসব দেশ তুরস্কের বিরুদ্ধে তাদের নিজস্ব লড়াইয়ে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে চায় কায়রোকে। এই অর্থে, আঙ্কারা মিসরকে উন্মুক্ত হতে সহযোগিতা করেছে।
তবুও, মিসর ও তুরস্কের মধ্যে ইতিবাচক বার্তাগুলো বিনিময় হওয়ার অর্থ এই নয় যে, তাদের সম্ভাব্য সম্পর্ক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে না। এর সহজ অর্থ হলো, তারা চেষ্টা করছেন- নির্দিষ্ট বিষয়ে মতপার্থক্য তাদের সাধারণ স্বার্থে একসাথে কাজ করা থেকে যেন বিরত না করে।
তবে স্পষ্টভাবে এমন ছদ্মবেশী অনেক শক্তি রয়েছে যারা তাদের নিজস্ব প্রভাব রক্ষার জন্য তুরস্ক আর মিসরের মধ্যে সহযোগিতা করার চেয়ে সঙ্ঘাতকে বেশি পছন্দ করবে। আঙ্কারার বিপরীতে, মিসরের বার্তাগুলো আসল কি না তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এমনো হতে পারে যে, কায়রো তার অংশীদারদের (আমিরাত, গ্রিস এবং ইসরাইল) চোখে নিজের মূল্য পুনরুদ্ধার করতে আঙ্কারাকে ব্যবহার করে কৌশলগত লাভ অর্জন করতে চাইছে। অথবা সর্বাধিক নিরাপত্তার জন্য তুরস্কের সাথে তার বিকল্পগুলো খোলা রেখে একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য রয়েছে দেশটির যাতে সব ‘খেলোয়াড়’ থেকে লাভ আদায় করে নিতে পারে।
এ ধরনের ব্যাখ্যা কায়রো কখনো কখনো মিশ্র বা বিবাদযুক্ত বার্তা কেন পাঠায়, তার কারণ হতে পারে। দেশটি অন্যের সমর্থন না হারিয়ে তুরস্কের কাছে নিজেকে উন্মুক্ত করতে চাইতে পারে। যেভাবেই হোক, তুরস্কের সাথে যোগাযোগ স্থাপন মিসরের নিজস্ব অ্যাজেন্ডাকে সামনে হাজির করে।
তুরস্ক এবং আরব সম্পর্কে নতুন বাতাস?
আরব-তুর্কি সম্পর্কে ‘শান্তি তৈরির’ নতুন বাতাস বইছে এবং অভিন্ন স্বার্থ সন্ধানে উত্তেজনা লাঘব করতে উভয়পক্ষ সহায়তা করছে। আঙ্কারা, কায়রো এবং রিয়াদের মধ্যে সহযোগিতার বার্তা আদান-প্রদান নিয়মিতই হচ্ছে। আর যদি পরিস্থিতি ঠিকঠাক হয় তবে অনুরূপ বার্তা অন্যান্য আরব রাজধানী থেকেও আদান-প্রদান হতে পারে। মনে হচ্ছে যে, বিভিন্ন পক্ষ দীর্ঘমেয়াদি প্রক্সি যুদ্ধের ফলে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।
মিসর-তুরস্কের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা নিয়ে উপরে আলোচনা হয়েছে। রিয়াদের ক্ষেত্রে মনে হচ্ছে, জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন আঙ্কারার সাথে সম্পর্ক বাড়ানোর সুযোগ এনে দিয়েছে। বাদশাহ সালমান ও রাষ্ট্রপতি এরদোগানের মধ্যকার টেলিফোনে ওআইসির সম্মেলন চলাকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে বৈঠকের দ্বার উন্মুক্ত হয়। এখন, দু’দেশের মধ্যে সহমর্মী বার্তা আদান প্রদান অব্যাহত রয়েছে।
সর্বশেষ ফাঁস হওয়া তথ্যে ইয়েমেনে তুর্কি-সৌদি সহযোগিতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যা তুরস্কের ড্রোন চুক্তি দিয়ে শুরু হয়েছিল। ড্রোনগুলো লিবিয়া ও আজারবাইজানে তাদের কার্যকারিতা প্রমাণ করার পরে রিয়াদ তা কেনার বিষয়ে আগ্রহী বলে মনে হয়। আঙ্কারা ও রিয়াদ উভয়েই ইয়েমেনের রাষ্ট্রপতি হিসাবে মনসুর হাদির বৈধতাকে স্বীকৃতি দেয় এবং উভয়ে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের বিরুদ্ধে লড়াই করা হুতির প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলাহ পার্টির সাথে সম্পর্ক বজায় রাখে। অধিকন্তু, উভয়পক্ষই বাইডেন প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে বিশেষভাবে মানবাধিকারের বিষয়ে এবং নতুন মার্কিন রাষ্ট্রপতি যে সমালোচনা করছিলেন, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।
লিবিয়া তুরস্কের সাথে প্রকাশ্যে ও গোপন সংলাপের জন্য মিসরের প্রবেশদ্বার ছিল। তেমনি উপসাগরীয় মিলনে কাতার সৌদি আরবের প্রবেশদ্বারে পরিণত হয়েছে। সৌদি-কাতার সম্পর্ক ধারাবাহিকভাবে উন্নত হওয়ায় এটি স্পষ্ট যে, তুরস্ক ও সৌদি আরবের সম্পর্ক শান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে আর কাতারের এতে ভূমিকা থাকতে পারে। এই সম্পর্কের যে রাজনৈতিক দিক রয়েছে, বিশেষত মুসলিম ব্রাদারহুডের ওপর এর কি প্রভাব পড়বে, সেটি বিস্তারিত আলোচনার দাবি রাখে। আগামী কোনো কলামে এর ওপর আলোকপাত করা হবে।
mrkmmb@gmail.com