মেনোপজ ও হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি

অধ্যাপক ডা: মো: আবদুল মান্নান | Mar 16, 2021 03:19 pm
মেনোপজ ও হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি

মেনোপজ ও হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি - ছবি সংগৃহীত

 

মেনোপজ হচ্ছে নারীর জীবনে এমন একটি পর্যায় বা পরিবর্তন বয়সকালে যখন মহিলাদের মাসিক বন্ধ হয়ে যায়। অনেক সময় প্রায় দেখা যায় ৪৫-৫০ বছরের মধ্যে প্রায় মহিলাদের মেনোপজ শুরু হয়। এ সময় হরমোন নিঃসরণ গ্রন্থি ডিম্বাশয় ধীরে ধীরে সঙ্কুচিত হয় এবং মেয়েলি হরমোন ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন নিঃসরণ কমতে কমতে একেবারে বন্ধ হয়ে যায়, ফলে মাসিক বন্ধ হয় এবং গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। মেয়েদের জীবনে এই পরিবর্তন মেয়েদেরকে স্বাভাবিকভাবে ধরে নিতে হবে বা মেনে নিতে হবে। মনে রাখতে হবে এটা জীবন চলার পথে একটি স্বাভাবিক অধ্যায়। মেয়েদের প্রধান দু’টি হরমোন ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টরন স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মেয়েদের যৌবন তৈরি থেকে শুরু করে, মেয়েদের প্রতি মাসে মাসিক হওয়া, বাচ্চা হওয়ার ক্ষমতা (প্রজনন), সুন্দর চেহারা, ত্বকের তাপ ও মসৃণতা রক্ষা ইত্যাদিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ ছাড়াও হাড়ের ঘনত্ব ও যোনি পথের আর্দ্রতা রক্ষায় ইহার বিরাট ভূমিকা রয়েছে।

ইস্ট্রোজেন হরমোন কমে যাওয়ার কিছু কারণ গুলো
বয়স কাল : সাধারণত বয়স কালে ৪৫-৫০ বছর বা তৎঊর্ধ্ব, যাকে মেনোপজ বলে।
কিছু কিছু রোগের কারণ, যেমন : অটো ইম্মুন হাইপোগোনাডিজম।
জরায়ুর বা ডিম্বাশয়ের রোগের কারণে জরায়ুর সাথে বা আলাদাভাবে অপারেশন করে ডিম্বাশয় ফেলে দেয়া। কিছু ক্ষেত্রে বয়স কালের আগেই ডিম্বাশয় ও জরায়ুর অপারেশন দরকার হয় যেমন : (ক) জরায়ুর টিউমার/ক্যান্সার (খ) ডিম্বাশয়ের টিউমার/ক্যান্সার।

মেনোপজের উপসর্গগুলো

ষ অনিয়মিত মাসিক, ধীরে ধীরে মাসিক কমে গিয়ে পরিশেষে বন্ধ হয়ে যাওয়া।
ষ হটফ্ল্যাশ অর্থাৎ হঠাৎ মুখ চোখ গরম হওয়া, নাক কান দিয়ে গরম বাতাস বের হওয়া, অস্থিরতা ও অনিদ্রা, ঘুম কম হওয়া। হটফ্ল্যাশ অনুভূতিটি এমন হয় যে, গরম বাতাস যেন ঢেউয়ের মতো শরীরে বয়ে যায়।
ষ যোনি পথ শুকনা থাকা।
ষ মানসিক অস্বস্তি ও ভাব মুর্তির পরিবর্তন।
ষ যৌন সঙ্গমে অনীহা ভাব।
ষ প্রস্রাবের বেগ ধরে রাখতে না পারা অর্থাৎ জোরে কাশি বা হাঁচিতে প্রস্রাব বের হয়ে আসা।
ষ শরীরের হাড় ক্ষয় যাওয়া।

উপরিউক্ত উপসর্গগুলো সাধারনত দুই-তিন বছরের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। যদিও যোনিদ্বার অনেক দিন ধরে শুকনা থাকে এবং অনেক সময় ইহার চিকিৎসার দরকার হতে পারে। হাঁড়ের ক্ষয় বয়স বৃদ্ধির সাথে বাড়তেই থাকে এবং ইহার জন্যও চিকিৎসা পরামর্শ দরকার হয়। মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে অনেক সময় অনিয়মিতভাবে মাসিক হতে পারে। এই সময়কে পেরিমেনোপজাল কাল বলা হয়। হরমোনের অভাবে অনেকের শারীরিক ও মানসিকভাবে অস্বস্তি অনুভব করতে পারে। এই সময়ে রক্তে হরমোনের মাত্রা উঠানামা করে, ফলে মহিলাদের শরীর ও মনে নানা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় এবং বেশ কিছু উপসর্গ ও দেখা যেতে পারে।

মেনোপজের সময় জরায়ু ও এর আশপাশের ত্বকের পরিবর্তন দেখা যায়। ত্বক শুষ্ক, সঙ্কুচিত ও পাতলা হয়ে যায়। ফলে সহবাসে সমস্যা দেখা দিতে পারে এবং সেখানে নানান ধরনের ইনফেকশান হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ ছাড়া পেরিনিয়ামের মাংসপেশি গুলো ঢিলা হয়ে যায়, ফলে প্রস্রাব নিয়ন্ত্রণে অসুবিধা হয়। জোরে হাঁচি, কাশি দিলে প্রস্রাব বের হয়ে আসতে পারে। মেনোপোজ হয়ে গেলে রক্তের কোলেস্টরেলের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যার ফলে হৃৎরোগের প্রকোপ ও উচ্চ রক্তচাপের হার বেড়ে যেতে পারে। মহিলাদের যৌবন কালের হরমোন প্রজেষ্টরনের ভূমিকা কম নয়। ইহা জরায়ুর ভেতরের দেয়ালকে রক্ষা করে এবং জরায়ুতে শিশুর জন্ম দেয়ার সুযোগ ও সুন্দর পরিবেশের সৃষ্টি করে। সে জন্য এর অভাবে জরায়ুর ভেতরের দেয়ালের ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। সেজন্য যাদের জরায়ু অক্ষত অবস্থায় মেনোপোজ হয় তাদের যদি এইচ আর টি (ইস্ট্রোজেন) দিতে হয় তবে তার সাথে প্রজেষ্টেরন হরমোন ও দেয়া উচিত।

হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি :
সারা পৃথিবী এই এইচআরটি সম্বন্ধে অনেক স্ট্যাডি বা পর্যালোচনা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি লাভ হয়েছে মেনোপজ মহিলাদের উপসর্গগুলোর উপশম করার পক্ষে। এই হরমোন নেয়ার ফলে মেনোপজ মহিলাদের অস্বস্তিকর অবস্থার উপসম সহজ হয়েছে। ফলে উপসর্গ সম্মিলিত মেনোপজ মহিলারা শান্তি ও স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়েন এবং সুস্থবোধ করেন।

এ ছাড়া এইচআরটি ব্যবহারের ফলে হাড়ের অস্টিওপরোসিস, কলোনিক ক্যান্সার ও রেকটাল ক্যান্সার ঝুঁকি অনেক কমে যায়। কিন্তু এই হরমোনের দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারের জন্য এখনো কোনো প্রকার সুপারিশ করা হয়নি। কারণ দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহার এর পার্শ¦প্রতিক্রিয়া হিসেবে ব্রেস্ট ও জরায়ুর ক্যান্সার এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এ হরমোন (এইচআরটি) ব্যবহারের উপকার রয়েছে, তবে ঝুঁকি ও সুফলের দিকে বিচার করে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।

লেখক : অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us