ভাষা আন্দোলন : গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়

মুহম্মদ মতিউর রহমান | Mar 16, 2021 02:41 pm
ভাষা আন্দোলন : গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়

ভাষা আন্দোলন : গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় - ছবি সংগৃহীত

 

ভাষা আন্দোলন আমাদের জাতীয় ইতিহাসের অতি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। প্রত্যেক দেশ, জাতি ও মানবগোষ্ঠীর একটি ধারাবাহিক ইতিহাস থাকে। ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় অসংখ্য ঘটনার মধ্যে এমন দু-একটি ঘটনা থাকে, যা সমগ্র দেশ-জাতি-মানবগোষ্ঠীকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করে, ইতিহাসের গতিধারাকে পরিবর্তন করে দেয়, মানব-সভ্যতার ইতিহাসেও তা স্মরণীয় হয়ে থাকে। ভাষা আন্দোলন এমনই একটি তাৎপর্যময় গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এ আন্দোলন আমাদের জাতিগত অস্তিত্ব বিকাশ ও স্বতন্ত্র-স্বাধীন জাতিসত্তা নির্মাণের এক ঐতিহাসিক মাইলফলক।

আধুনিককালে আমাদের জাতিগত অস্তিত্ব বিকাশের বিভিন্ন পর্যায় রয়েছে। এ পর্যায়গুলোকে এভাবে বিভক্ত করা যায়- প্রথম পর্যায় হলো ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন। পলাশী যুদ্ধে পরাজয় বরণের পর থেকেই স্বাধীনতা ফিরে পাওয়ার জন্য সশস্ত্র আন্দোলন শুরু হয়। মীর কাসেমের বিদ্রোহ, ফকির বিদ্রোহ, ফরায়েজী আন্দোলন, তিতুমীরের যুদ্ধ ইত্যাদি নানা বিদ্রোহ ও যুদ্ধের মাধ্যমে ইংরাজ বিতাড়নের প্রচেষ্টা চলে। ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহ ব্যর্থতাবরণের পর সশস্ত্র আন্দোলনের পরিবর্তে গণতান্ত্রিক পথে আন্দোলনের প্রস্তুতি। এ পর্যায়ে ১৮৮৫ সালে ‘হিন্দু কংগ্রেস’ প্রতিষ্ঠা এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। কংগ্রেস এক দিকে ব্রিটিশ-হঠাও আন্দোলনের সাথে সাথে অখণ্ড ভারতে একচ্ছত্র হিন্দুরাজ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে। ব্রিটিশ আমলের শুরু থেকেই রাজ্যহারা, বঞ্চিত, নিষ্পেশিত মুসলিম সমাজ নব্যভারতে একচ্ছত্র হিন্দুরাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে শঙ্কিত হয়ে পড়ে। ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় মুসলমানদের স্বার্থরক্ষায় ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ হয়। মুসলিম স্বার্থ ও পূর্বাঞ্চলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম আধিপত্য প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা সমূলে বানচাল করার উদ্দেশ্যে ভারতব্যাপী হিন্দুরা বঙ্গভঙ্গ রদ আন্দোলন শুরু করে। এতে ভারতীয় মুসলিম আরো আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে। ঠিক এ পর্যায়েই তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আত্মরক্ষার এবং নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার তাগিদ অনুভব করে।

এ পর্যায়ে ঢাকার নবাব স্যার সলিমুল্লাহর আহ্বানে ঢাকার শাহবাগে ১৯০৬ সালের ডিসেম্বরে ‘অল ইন্ডিয়া মুসলিম এডুকেশনাল কনফারেন্স’ নামে এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তিন দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানে উপমহাদেশে মুসলিমদের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার পর ‘মুসলিম লীগ’ গঠিত হয়। এ ক্ষেত্রে আমাদের অস্তিত্ব রক্ষা ও জাতিসত্তার বিকাশে নবাব সলিমুল্লাহ এক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার মূলভিত্তি স্থাপিত হয় ঢাকায় অনুষ্ঠিত এ সম্মেলন ও ‘মুসলিম লীগ’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। এটাকে জাতিসত্তা বিকাশের দ্বিতীয় পর্যায় তথা ভারতীয় মুসলমানদের অস্তিত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করা যায়।
১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ, ১৯১৭ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, ১৯২০-২২ সালে খিলাফত আন্দোলন ইত্যাদি আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অবশেষে ১৯৩৫ সালে ভারত শাসন আইন পাস ও ১৯৩৭ সালে নির্বাচন এবং নির্বাচনোত্তর শেরেবাংলা মন্ত্রিসভা গঠন, ১৯৩৯-৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, ১৯৪০ সালে লাহোরে অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগের অধিবেশনে ‘লাহোর প্রস্তাব’ (পাকিস্তান প্রস্তাব নামে পরিচিত) পাশের মধ্য দিয়ে জাতিসত্তা বিকাশের তৃতীয় পর্যায় অতিক্রান্ত হয়। এ পর্যায়কে বিশেষভাবে আত্মসচেতনতাবোধ জাগরণের পর্যায় বলা যায়। এরপর ১৯৪৩ সালের মন্বন্তর, ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান, ১৯৪৬ সালের গণভোট, হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা ইত্যাদি রক্তাক্ত ঘটনার মধ্য দিয়ে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা হয়। এটাকে আমাদের জাতিসত্তা বিকাশ ও আত্মপ্রতিষ্ঠার তৃতীয় পর্যায় বলা যায়।

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকে পাকিস্তান আমলের তেইশ বছরকে আমাদের স্বাধীন সত্তা বিকাশের চতুর্থ পর্যায় বলে গণ্য করা যায়। এ চতুর্থ পর্যায়ে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় রচিত হয় ভাষা আন্দোলনের রক্তাক্ত পথ ধরে। পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন, সর্বক্ষেত্রে ন্যায্য অধিকার আদায় ও পূর্ব-পশ্চিমের মধ্যকার বৈষম্য নিরসনের আন্দোলন এ পর্যায়ের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমাদের স্বাধীন জাতিসত্তা বিকাশের পঞ্চম ও চূড়ান্ত পর্যায়। সীমাহীন আত্মত্যাগ আর এক সাগর রক্তের বিনিময়ে এ পর্যায়ে পৃথিবীর মানচিত্রে এক নতুন জাতির অভ্যুদয় ঘটে, স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম হয়।

ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন দেশবরেণ্য নেতার যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, সাধারণভাবে সচেতন জনগণের ভূমিকাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। নেতার নেতৃত্ব আর জনগণের ঐক্যবদ্ধ শক্তিই সব আন্দোলন-সংগ্রামের প্রধান চালিকাশক্তি এবং জাতীয় সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। তাই গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রচনায় উভয়ের ভূমিকাই গুরুত্বপূর্ণ।

ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে ১৯৫২ সাল একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। বিশেষত এ বছর একুশ ফেব্রুয়ারি ভাষার দাবিতে অনুষ্ঠিত ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশের গুলীবর্ষণের ফলে যে রক্তাক্ত ইতিহাসের সৃষ্টি হয়, তার ফলেই শেষ পর্যন্ত বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। কিন্তু প্রত্যেকটি ঘটনারই একটি পটভূমি থাকে। এক দিনে নয়, দীর্ঘ দিন ধরে এ ভাষার দাবি বিভিন্নভাবে উচ্চারিত হয়েছে। বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করে তারপর ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারির রক্তাক্ত ইতিহাস সংঘটিত হয়েছে। তাই এ আন্দোলনের পটভূমি আলোচনা করাও গুরুত্বপূর্ণ।

ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে ১৯১১ সালে। টাঙ্গাইলের জমিদার সৈয়দ নবাব আলী চৌধুরী ১৯১১ সালে রংপুরে এক শিক্ষা সম্মেলনে বক্তৃতাকালে বাংলাকে শিক্ষার মাধ্যম করার দাবি জানান। এরপর সাহিত্যিক এয়াকুব আলী চৌধুরী বাংলা ১৩২২ সনে, মওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ ও এস ওয়াজেদ আলী ১৩২৫ সনে, আবুল কালাম শামসুদ্দিন ১৩৪৫ সনে তাদের বিভিন্ন লেখা ও বক্তৃতায় বাংলা ভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম করার দাবি জানান।

ভাষার প্রশ্নে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সূচনা হয় ১৯১৮ সালে। ওই সময় রবীন্দ্রনাথের সভাপতিত্বে শান্তিনিকেতনে অনুষ্ঠিত এক সভায় রবীন্দ্রনাথসহ সব হিন্দু পণ্ডিত ও বিশেষজ্ঞ হিন্দিকে ভারতের সাধারণ ভাষা (খরহমঁধ ভৎধহপধ) করার প্রস্তাব পাস করেন। সভায় উপস্থিত একমাত্র মুসলিম সদস্য ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এর বিরোধিতা করে বাংলাকে ভারতের সাধারণ ভাষা করার প্রস্তাব করেন। ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ১৯১৮ সালে ‘বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সম্মিলনী’তে এবং ১৯১৯ সালে ওই একই সম্মিলনীতে বাংলাকে ভারতের সাধারণ ভাষা করার দাবি জানান। ১৯২০ সালে রবীন্দ্রনাথের সভাপতিত্বে বিশ্ব ভারতীতে অনুষ্ঠিত আর একটি সম্মেলনে রবীন্দ্রনাথ, ডক্টর সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়সহ উপস্থিত ১৮ জন পণ্ডিত হিন্দিকে ভারতের সাধারণ ভাষা করার পক্ষে মত দিলেও একমাত্র ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ তার বিরোধিতা করে বাংলাকে ভারতের সাধারণ ভাষা করার পক্ষে জোরালো যুক্তি উপস্থাপন করেন। কংগ্রেস নেতা গান্ধীসহ ভারতের সব হিন্দুনেতা হিন্দিকেই ভারতের সাধারণ ভাষা করার পক্ষে ছিলেন।

১৯২১ সালে সৈয়দ নবাব আলী চৌধুরী সরাসরি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব করেন ব্রিটিশ সরকারের কাছে। এরপর ১৯২৭ সালে সিলেট গোলাপগঞ্জের রলখেলী গ্রামের আবদুল হামিদ চৌধুরী সোনামিয়া (১৮৮৯-১৯৫৭) আসাম আইন পরিষদে বাংলায় বক্তৃতা দেয়ার অধিকার জানিয়ে বাংলা ভাষায় বক্তৃতা করেন। ১৯৩৭ সালে দৈনিক আজাদ পত্রিকায় বাংলাকে ভারতের রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানিয়ে সম্পাদকীয় লেখেন মওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ। ১৯৪০ সালে মুসলিম লীগের লাহোর অধিবেশনে পাকিস্তান প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পর ১৯৪২ সালে দৈনিক আজাদ সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দিনের নেতৃত্বে কলকাতায় ‘পূর্ব পাকিস্তান রেনেসাঁ সোসাইটি’ এবং ১৯৪৩ সালে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ডক্টর সৈয়দ সাজ্জাদ হোসাইনের সভাপতিত্বে ঢাকায় ‘পূর্ব পাকিস্তান সাহিত্য সংসদ’ গঠিত হয়। এ দু’টি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন সময় বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি উত্থাপন করে। অতঃপর বাংলা ১৩৫০ (১৯৪৪) সনের কার্তিক সংখ্যা মাসিক মোহাম্মদীতে আবুল মনসুর আহমদ ‘পূর্ব পাকিস্তানের জবান’ শীর্ষক প্রবন্ধে বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করেন। ১৯৪৫ সালে ৫ নভেম্বর কলকাতা বেকার হোস্টেলে এক সভায় উপস্থাপিত ‘আমরা কোন পথে’ শীর্ষক এক প্রবন্ধে বাংলাকে ভবিষ্যৎ পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানানো হয়। ওই সময় কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজকে কেন্দ্র করে ‘বেঙ্গলি লিটার‌্যারি সোসাইটি’ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে তার মাধ্যমে মুসলিম ছাত্ররা বাংলা ভাষার সপক্ষে কাজ করেন বলে ডক্টর মুহম্মদ গোলাম মুয়াজ্জম তার লেখা ‘ভাষা আন্দোলন ও কিছু কথা’ শীর্ষক এক প্রবন্ধে উল্লেখ করেন। ১৯৪৭ সালের ৩০ জুন দৈনিক আজাদ পত্রিকায় ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’ শীর্ষক এক প্রবন্ধে লেখক আবদুল হক বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার সপক্ষে জোরালো বক্তব্য তুলে ধরেন। অতঃপর পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার অব্যবহিত পূর্বে ১৯৪৭ সালের জুলাই মাসে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ডক্টর জিয়াউদ্দিন আহমদ স্বাধীন ভারতে হিন্দিকে রাষ্ট্রভাষা করার পরিপ্রেক্ষিতে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে প্রস্তাব পেশ করেন। ওই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ দৈনিক আজাদ পত্রিকায় ২৯ জুলাই ‘রাষ্ট্রভাষা সমস্যা’ শীর্ষক এক প্রবন্ধ লেখেন। এতে তিনি পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যা ও তাদের ব্যবহৃত ভাষার সংখ্যাতাত্ত্বিক বিবরণ দিয়ে জনসংখ্যার ভিত্তিতে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার সপক্ষে জোরালো বক্তব্য তুলে ধরেন।

এভাবে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পূর্বেই বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার যুক্তিপূর্ণ দাবি বিভিন্নভাবে তুলে ধরা হয়। তখন এ ব্যাপারে কারো মনে কোন সন্দেহ ছিল না যে, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর উর্দুর পাশাপাশি বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করা হবে। কারণ পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণ উর্দুর সপক্ষে ছিল এবং তাদের দাবিও উপেক্ষণীয় ছিল না। পাকিস্তান-পূর্বকালে যেসব বিশিষ্ট ব্যক্তি বাংলাকে ভবিষ্যৎ পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার সপক্ষে জোরালো বক্তব্য তুলে ধরেন, তাদের মধ্যে সর্বাগ্রগণ্য ও বিশেষ উল্লেখযোগ্য হলেন, সৈয়দ নবাব আলী চৌধুরী, মওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ, ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, আবুল কালাম শামসুদ্দিন, আবুল মনসুর আহমদ, হাবিবুল্লাহ বাহার চৌধুরী, ডক্টর কাজী মোতাহার হোসেন, মুজীবুর রহমান খাঁ, আবদুল হক, মাহবুব জামাল জাহেদী, ডক্টর সৈয়দ সাজ্জাদ হোসাইন, ডক্টর হাসান জামান, তালেবুর রহমান প্রমুখ।

উপমহাদেশের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা নিয়ে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠিত হয়। পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যা পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ৫৬ ভাগ এবং তাদের সবার ভাষা বাংলা। তাই পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা যে বাংলা হবে, সে ব্যাপারে সন্দেহ করার কোনো কারণ ছিল না। কিন্তু পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় প্রশাসনে উচ্চপদস্থ অধিকাংশ কর্মচারী ছিল উর্দুভাষী। তাদের ষড়যন্ত্রে উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার চেষ্টা করা হয় এবং নতুন রাষ্ট্রের পোস্টকার্ড, এনভেলপ, মানিঅর্ডার ফরম, রেলগাড়ির টিকিট ইত্যাদি সবকিছুতে ইংরাজির পাশাপাশি শুধু উর্দু ভাষা ব্যবহৃত হয়। ফলে শিক্ষিত সচেতন বাঙালি বিশেষত ছাত্র সমাজ এতে ক্ষুব্ধ হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম এ ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে এবং ক্রমান্বয়ে তা প্রবল আন্দোলন ও গণ-প্রতিরোধের রূপ পরিগ্রহ করে।

এ আন্দোলন ও গণ-প্রতিরোধের প্রথম সংগঠিত রূপ পরিলক্ষিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের তৎকালীন তরুণ অধ্যাপক আবুল কাসেমের নেতৃত্বে ১ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৭ তারিখে ‘তমদ্দুন মজলিস’ গঠনের মধ্য দিয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ‘সুরুজ-জামাল’ (পরে রশিদ বিল্ডিং)-এর উপর তলায় তমদ্দুন মজলিসের অফিস স্থাপিত হয়। এ তমদ্দুন মজলিসের নেতৃত্বেই ক্রমান্বয়ে সমগ্র বিদ্যালয় এলাকার ছাত্র-শিক্ষক, ঢাকার বুদ্ধিজীবী মহল ও শেষ পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানব্যাপী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। পরে তমদ্দুন মজলিসের কার্যক্রম আজিমপুরে অধ্যাপক আবুল কাসেমের বাসায় স্থানান্তরিত হয়। এভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আজিমপুর ভাষা আন্দোলনের সুতিকাগারে পরিণত হয়।

তাই ভাষা আন্দোলনের উদ্গাতা হিসেবে অধ্যাপক আবুল কাসেম ও তমদ্দুন মজলিসের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ রয়েছে। ১৯৪৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর তমদ্দুন মজলিসের পক্ষ থেকে ‘রাষ্ট্রভাষা উর্দু না বাংলা’ শীর্ষক একটি পুস্তিকা ছেপে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার অকাট্য যুক্তি উপস্থাপন করা হয়। এতে আবুল মনসুর আহমদ, ডক্টর কাজী মোতাহার হোসেন ও অধ্যাপক আবুল কাসেমের লেখা তিনটি প্রবন্ধ সংকলিত হয়। এ পুস্তিকায় পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে চারটি দাবি তুলে ধরা হয়। প্রথম দাবি হলো- “বাংলা ভাষাই হবে- (ক) পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষার ভাষা, (খ) পূর্ব পাকিস্তানের আদালতের ভাষা, (গ) পূর্ব পাকিস্তানের অফিসাদির ভাষা। দ্বিতীয় দাবি হলো- পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের রাষ্ট্রভাষা হবে বাংলা ও উর্দু।” বাকি দু’টি দাবিতে পাকিস্তানের শিক্ষা, অফিস-আদালতে বাংলা ও উর্দু এ দু’টি ভাষা কিভাবে ব্যবহৃত হবে সে সম্পর্কে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ স্থান পেয়েছে।

এভাবে তমদ্দুন মজলিস ভাষা আন্দোলনের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য-উদ্দেশ্য তুলে ধরে, যা বুদ্ধিজীবী ও ছাত্র সমাজের মধ্যে ব্যাপকভাবে আলোচিত ও গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে এবং এর ভিত্তিতে ক্রমান্বয়ে আন্দোলন সংগঠিত হয়। এ সময় বিশিষ্ট কবি ফররুখ আহমদ বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানিয়ে যুক্তিপূর্ণ এক প্রবন্ধ লেখেন। প্রবন্ধটি ছাপা হয় বাংলা ১৩৫৪ (ইংরাজি ১৯৪৭) সালের ভাদ্র সংখ্যা ‘সওগাতে’। ১৯৪৫ সালে তিনি বাংলা ভাষার বিরোধিতাকারীদের উদ্দেশ্যে ‘বাংলা বনাম উর্দু’ নামক এক ব্যঙ্গ কবিতা লেখেন। এ সময় কবি বাংলা ভাষার পক্ষে আরো অনেক গান ও কবিতা রচনা করেন এবং উর্দুর সপক্ষে যারা ওকালতি করছিল, তাদের সমালোচনা করে স্বনামে-বেনামে অনেকগুলো ব্যঙ্গ কবিতা রচনা করেন। ভাষা আন্দোলনে তাঁর এসব লেখা শিক্ষিত মহলে গভীর আলোড়ন সৃষ্টি করে। বিশিষ্ট ভাষা-বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ ডক্টর মুহম্মদ এনামুল হক এ সময় ‘পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষার পরিপ্রেক্ষিতে উর্দু ও বাংলা’ শীর্ষক এক প্রবন্ধে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার যুক্তি উপস্থাপন করেন। প্রবন্ধটি নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রকাশিত ‘কৃষ্টি’ পত্রিকার কার্তিক ১৩৫৪ (১৯৪৭) সালে প্রকাশিত হয়।

তমদ্দুন মজলিস গঠিত হওয়ার পর বিভিন্ন সাহিত্য সভা, প্রচারপত্র প্রকাশ, পথসভা ও বক্তৃতা-বিবৃতির মাধ্যমে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার সপক্ষে প্রবল জনমত সৃষ্টি হয়। তমদ্দুন মজলিসের উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফজলুল হক মুসলিম হলে ১৯৪৭ সালের অক্টোবর মাসে এক সভা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন মন্ত্রী হাবিবুল্লাহ বাহার চৌধুরী। বক্তৃতা করেন কবি জসীমউদ্দীন, ডক্টর কাজী মোতাহার হোসেন, অধ্যাপক আবুল কাসেম ও কয়েকজন মন্ত্রীসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ। এ সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার পরই রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিকে জোরদার করার উদ্দেশ্যে তমদ্দুন মজলিসের উদ্যোগে ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর নূরুল হক ভূঁইয়া সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক নির্বাচিত হন।

১৯৪৭ সালের ৫ নভেম্বর শিল্পচার্য জয়নুল আবেদিনকে সংবর্ধনা জানানোর উদ্দেশ্যে ‘পূর্ব পাকিস্তান সাহিত্য সংসদে’র উদ্যোগে ফজলুল হক মুসলিম হলে এক সভার আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ডক্টর কাজী মোতাহার হোসেন। বক্তৃতা করেন দৈনিক আজাদ সম্পাদক আবুর কালাম শামসুদ্দীন, অধ্যক্ষ এ এফ এম শরফুদ্দিন, অধ্যাপক আবুল কাসেম, কবি কিরণশঙ্কর সেনগুপ্ত, অধ্যাপক ফজলুল করিম, অধ্যাপক মনসুর উদ্দিন, সাহিত্যিক আবুল হাসনাৎ, সাংবাদিক আবু জাফর শামসুদ্দিন প্রমুখ। সভায় সবাই বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানান।
এ সময় যুগপৎ দু’টি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন বিশেষ গতি লাভ করে। ১৯৪৭ সালের ১৫ নভেম্বর কেন্দ্রীয় পাবলিক সার্ভিস কমিশনের তদানীন্তন ইংরাজ সচিব মি. গুড ইন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে উচ্চতর সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার বিষয় সম্পর্কে একটি সার্কুলার পাঠান।

এতে পরীক্ষার জন্য মোট ৩১টি বিষয় নির্ধারণ করা হয়, যার মধ্যে ৯টি ছিল ভাষাবিষয়ক, তাতে হিন্দি, উর্দু, ইংরেজি, জার্মান, ফরাসি এমনকি মৃত ভাষা ল্যাটিন ও সংস্কৃত থাকলেও বাংলা ভাষা ছিল না। এর প্রতিবাদ করে অধ্যাপক আবুল কাসেম ও আবুল মনসুর আহমদ পত্রিকায় কড়া বিবৃতি প্রচার ও সম্পাদকীয় লেখেন। এরপর ১৯৪৭ সালের ২৭ নভেম্বর থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত করাচিতে এক শিক্ষা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে পাকিস্তানের তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ঢাকার নবাব পরিবারের ফজলুর রহমান উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার সুপারিশ করেন। এ খবর ঢাকায় পৌঁছার সাথে সাথে ৬ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের বেলতলায় এক প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে তমদ্দুন মজলিস। অধ্যাপক আবুল কাসেমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তৃতা করেন অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, ঢাকসুর ভিপি ফরিদ আহমদ (মৌলভী), অধ্যাপক এ কে এম আহসান, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ভিপি আবদুর রহমান চৌধুরী (পরে বিচারপতি), কল্যাণ দাসগুপ্ত ও এস আহমদ। ওই সভায় শিক্ষামন্ত্রীর সুপারিশের কঠোর সমালোচনা করে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানানো হয়। সভা শেষে প্রতিবাদ মিছিল বের হয়। মিছিলটি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিনের বাসভবনে, সচিবালয় ও মর্নিং নিউজ পত্রিকার অফিসে গিয়ে বিক্ষোভ করে।

এ সময় আরো কয়েকটি ঘটনা সংঘটিত হয়, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে যা বিশেষ উল্লেখযোগ্য। একটি ঘটনা ঘটে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে। ১৯৪৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রথম ব্যাটালিয়নের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানটিতে পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নর স্যার ফ্রেডারিক ব্রেরন, মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিন, মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবর্গ ও সামরিক কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে তৎকালীন ব্রিগেডিয়ার আইয়ুব খান বাঙালি সৈনিকদের উদ্দেশে বলেন : From now onwords Bengali soldiers will speak in urdu and not Bengali. তাতে একজন মেজর এম আই হোসেন ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিবাদ করেন, Excuse me sir, In West Pakistan pathan soldiers have been allowed to speak in poshtu and urdu. Similarly our Bengali soldiers should be allowed to speak in Bengali and urdu. রাগান্বিত হয়ে ব্রিগেডিয়ার আয়ুব খান বলেন, Nonsense, absurd, sit-down. আবেগতাড়িত কণ্ঠে মেজর গণি বললেন, Excuse me sir, whatever major M. I. Hossain has said is not correct. We Bengali soldiers will never speak in urdu, but in our mother tongue Bengali. এর জবাবে আয়ুব খান চটে গিয়ে বললেন, Shut up, sit down. বলাবাহুল্য, এই মেজর গণিই এক সময় ‘টাইগার গণি’ রূপে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।

এ ঘটনার কিছুদিন পর ব্রিগেডিয়ার আয়ুব খান একটি লিখিত আদেশ জারি করেন। তাতে বলা হয়, ‘‘কোনো বাঙালি সৈনিক, জেসিও এবং অফিসাররা বাংলায় কথা বলতে পারবে না।’’ প্রতিবাদে মেজর গণি ও মেজর হোসেন এ হুকুম অমান্য করেন। ফলে তাদের উভয়কে নির্যাতন ভোগ করতে হয়। প্লাটুন থেকে বের করে দেয়া হয়।” (দ্রষ্টব্য : তিতাস চৌধুরী : আমার দেশ, ১৩ মার্চ ২০১১)।

দ্বিতীয় ঘটনাটি হলো, ১৯৪৮ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার জন্য সর্বসাধারণের নিকট আহ্বান জানিয়ে এক বিবৃতি প্রদান করা হয়। অন্যান্যের মধ্যে এতে স্বাক্ষর করেন রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ডক্টর এ এস এম নূরুল হক ভূঁইয়া, অধ্যাপক আবুল কাসেম, অধ্যাপক রেআয়ৎ খাঁ (অবাঙালি), অধ্যাপক ডক্টর ফজলুল করিম, আজিজ আহমদ, আব্দুল ওয়াহেদ চৌধুরী, এম.এ খায়ের, নঈমুদ্দিন আহমদ, ওলি আহাদ প্রমুখ।

এর পর ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদের অধিবেশনে যোগ দেয়ার জন্য যাওয়ার আগে ২০ ফেব্রুয়ারি তমদ্দুন মজলিসের রাষ্ট্রভাষা সাব-কমিটি ও পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে অধ্যাপক আবুল কাসেমের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিন, মন্ত্রী হাবিবুল্লাহ বাহার চৌধুরী, নূরুল আমিন ও গিয়াসউদ্দিন পাঠানের সাথে দেখা করে পাকিস্তানের টাকার নোট, রেলওয়ের টিকিট, মানিঅর্ডার ফরম, নৌ-বাহিনী ও অন্যান্য বিভাগের পরীক্ষায় বাংলাকে বাদ দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি যে অবিচার করা হয়েছে, তার প্রতিকার বিধানের অনুরোধ জানান। তারা এ দাবির প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করলেও করাচিতে অনুষ্ঠিত গণপরিষদের অধিবেশনে ২৫ ফেব্রুয়ারি পূর্ব পাকিস্তানের অন্যতম প্রতিনিধি কুমিল্লার ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত উর্দু ও ইংরেজির পাশাপাশি বাংলাকে গণপরিষদের অন্যতম ভাষা করার প্রস্তাব উত্থাপন করেন। পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খাঁ এ প্রস্তাবকে পাকিস্তানের ঐক্য ও সংহতি বিরোধী বলে প্রত্যাখ্যান করেন। তাকে সমর্থন করেন গণপরিষদের সহসভাপতি মৌলভী তমিজউদ্দিন খাঁ, রাজা গজনফর আলী খাঁ ও খাজা নাজিমউদ্দিন। নাজিমউদ্দিন তার বক্তৃতায় বলেন, “পূর্ব পাকিস্তানের অধিকাংশ মানুষ চায় যে, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।”


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us