বিভীষিকা হয়ে দেখা দিয়েছে করোনাভাইরাস। টিকা প্রয়োগের পরও এই ভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক কমেনি। বরং নতুন নতুন সংক্রমণ ছড়াচ্ছে।

হিসাবে দেখা গেছে, গত সোয়া এক বছরে ১২ কোটির ওপরে সংক্রমণ। ২৬ লাখের বেশি মৃত্যু। নভেল করোনাভাইরাসের এই অতিসংক্রামক ক্ষমতার বিবর্তন ঘটেছিল আগেই। বাদুড়ের শরীরে। তার পর বাদুড়ের থেকে মানব শরীরে সংক্রমণ। ‘প্লস বায়োলজি’ নামে জার্নালে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে এই দাবি করা হয়েছে।

গ্লাসগো ইউনিভার্সিটি-র ‘সেন্টার ফর ভাইরাস রিসার্চ’ সম্প্রতি ভাইরাসটির অতিসংক্রামক চেহারার কারণ বিশ্লেষণ করে দেখেছে। গবেষণায় তারা ভাইরাসটির কয়েক শ' হাজার জিনোম সিকোয়েন্স বিশ্লেষণ করে দেখে। গ্লাসগোর বিজ্ঞানীদের দাবি, পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, অতিমারীর প্রথম ১১ মাসে ভাইরাসের তেমন কোনো জেনেটিক বদল ঘটেনি। তবে পরে ডি৬১৪জি মিউটেশন ও অন্য আরো কিছু বদল ঘটেছে। গবেষক দলের প্রধান অস্কার ম্যাকলিয়ান বলেন, ‘‘তার মানে এই নয় যে মানব শরীরে কোনো বদল ঘটেনি। উল্লেখযোগ্য বদল তেমন ঘটেনি। অন্য ভাইরাসের ক্ষেত্রে লাখো মিউটেশন ঘটতে দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে সেটা অমিল ছিল।’’ বিজ্ঞানীদের কথায়, ‘‘খুব চমকে যাওয়ার মতো বিষয়টা। শুরু থেকেই এত সংক্রামক!’’

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেম্পল ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানী সের্গেই পন্ড বলেন, ‘‘সাধারণত দেখা যায়, যে সব ভাইরাস একটি প্রাণীর দেহ থেকে অন্য প্রাণীর দেহে বাসাবদল করে, সেখানে তাদের থিতু হতে সময় লাগে। তার পর তার সংক্রমণ ক্ষমতা তৈরি হয়।’’ কিন্তু এ ক্ষেত্রে নভেল করোনাভাইরাস বা সার্স-কোভ-২ শুরু থেকেই
ব্যাপক সংক্রামক।

গত কয়েক মাসে বরং একাধিক মিউটেশন ঘটিয়ে আরও শক্তি বাড়িয়েছে ভাইরাসটি। ব্রিটেন, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলে নতুন স্ট্রেন তৈরি হয়েছে। এগুলোর সংক্রমণ ক্ষমতা আরো বেশি। নতুন স্ট্রেনে বিপর্যস্ত ইউরোপ-আমেরিকা। টিকাকরণের পাশাপাশি ফের লকডাউনের কথা ভাবছে ইউরোপের একাধিক দেশ। বিশেষ করে ইটালি। ইস্টারের ছুটিতে তারা দেশ জুড়ে লকডাউন ঘোষণা করবে বলে জানিয়েছে। সেই সঙ্গে লক্ষ্য নেয়া হয়েছে— সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৮০% বাসিন্দার টিকাকরণ।

ফ্রান্স সরকারও জানিয়েছে, প্যারিসে নতুন করে লকডাউনের কথা ভাবা হচ্ছে। কারণ, নতুন করোনা স্ট্রেনে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। আইসিইউয়ে শয্যা ফাঁকা নেই। পরিস্থিতি এমনই হয়েছে, বিশেষ মেডিক্যাল বিমানে করে রোগীদের অন্য এলাকার হাসপাতালে পাঠাতে হচ্ছে। সেই সঙ্গে উদ্বেগ বাড়িয়েছে, প্রতিষেধকের অভাব। ফ্রান্সের অভিযোগ, চুক্তি মতো যথেষ্ট পরিমাণ টিকা তারা পাচ্ছে না। ফ্রান্সের জাতীয় স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান জেরম সলোমন বলেন, ‘‘খুব জটিল, উদ্বেগজনক অবস্থা। প্যারিসের পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। তাই প্রয়োজন হলে লকডাউন চালু করা হবে ফের।’’

সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা