বার্লি চাষে জামালের চমক
বার্লি চাষে জামালের চমক - ছবি : অন্য এক দিগন্ত
চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো ঔষধি ও পুষ্টিগুণে ভরা শিশুখাদ্যের সেরা বার্লি (যব) চাষে চাষির চমক চোখে পড়ার মতো। চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার চাষি মো: জামাল উদ্দিন এই প্রথমবারের মতো চট্টগ্রামে বার্লি চাষ করে শতভাগ সফল হয়েছেন। শনিবার দুপুরে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বরুমচড়া গ্রামে ভরাট শঙ্খের তীরে জামাল উদ্দিনের বার্লি চাষের মাঠ দেখে চোখ জুড়িয়ে আসে। মৃদু বাতাসে ধানের শীষের মতো দুলছে বার্লির শীষ। রবি মৌসুমের সঠিক সময়ে এই বার্লির চাষ না হলেও ফলনে দারুণ আশাবাদী সংশ্লিষ্ট চাষি ও কৃষিবিদরা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অধীনে নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম ও চাঁদপুর কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে এই প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারায় বার্লির পরীক্ষামূলক চাষে সফলতায় আশাবাদী সংশ্লিষ্ট সবাই।
জানা গেছে, সরকার দেশে বার্লির চাহিদা মেটাতে ইতোমধ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে বার্লি চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, যার ফলে ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বার্লির চাষ আশানুরূপভাবে এগিয়ে চললেও চট্টগ্রামে এই প্রথমবারের মতো বার্লি আবাদ হলো। সে হিসেবে চট্টগ্রামে বার্লি চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে রবি মৌসুমে চট্টগ্রামের অনাবাদি প্রায় লক্ষাধিক হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে বার্লি চাষ করে দেশে বার্লির চাহিদার অনেকটাই জোগান দেয়া সম্ভব বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার হাসানুজ্জামান বলেন, উপসহকারী কৃষি অফিসার অঞ্জন কুমার দে’র প্রচেষ্টায় কৃষক জামাল উদ্দিন প্রায় ৩৫ শতক জমিতে বার্লি চাষ করেছেন। বীজসহ নানা উপকরণ ও পরামর্শ দেয়া হয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পক্ষ থেকে। কৃষক জামাল উদ্দিন জানালেন, রবি মৌসুমের একটু দেরিতে হলেও ফল খুব ভালো হয়েছে। কৃষি অফিসার হাসানুজ্জামান বলেন, প্রতি হেক্টরে অন্তত দুই মেট্রিক টন ফলন হবে বলে তিনি মনে করেন।
বার্লি কিছুটা লবণাক্ততা সহনশীল জাতীয় ফসল। বার্লি দিয়ে শিশুখাদ্য, ওভালটিন, হরলিক্স প্রভৃতি সুস্বাদু খাদ্য তৈরি করা হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৮ সালে সিমিট থেকে বার্লির জাত আনা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক ১৯৯৪ সালে ওই জাতটিকে বারি-বার্লি-১ জাত হিসেবে অনুমোদন দেয়া হয়। বর্তমানে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক বারি বার্লির ৯টি জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। এর মধ্যে বারি বার্লি ৪, ৬, ৭, ৮ ও বারি বার্লি ৯ জাতের ফলন খুব ভালো হয় বলে জানা গেছে।
বার্লি একটি ঘাসজাতীয় উদ্ভিদ। এর উচ্চতা প্রায় ৮৫ থেকে ৯০ মিটারের মতো হয়। পাতা গাঢ় সবুজ ও এর কাণ্ড খুব শক্ত হয়। সহজে পোকামাকড়ে আক্রান্ত হয় না। তা ছাড়াও বিনা সেচেও বার্লির ফলনে খুব একটা হেরফের হয় না। সেচ ছাড়াও প্রতি হেক্টরে উৎপাদন হয় দুই বা আড়াই মেট্রিক টন।
বার্লি গমের চেয়েও পুষ্টিমানে ভরা। শিশুখাদ্য ছাড়াও ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও গ্যাস্ট্রিকসহ বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে উপকারী বার্লি কিছুটা লবণাক্ততা সহনশীল ফসল; সে কারণে সাগর-নদী ও পাহাড় বেষ্টিত চট্টগ্রাম জেলায় বার্লি চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে।