ইউরোপের প্রথম নারী শাসক!
ইউরোপের প্রথম নারী শাসক! - ছবি : সংগৃহীত
আজকের দুনিয়ায় নারী শক্তির উত্থান, নারীর ক্ষমতা নিয়ে নানা আলোচনা হয়। আগামী দিনে মেয়েরাই যে বিশ্ব পরিচালনা করবেন, এই সব কথা নানা জায়গায় উচ্চারিত হয়। কিন্তু প্রাচীন যুগেও যে এই ধারণা প্রচলিত ছিল সেটা বেশ বিস্ময়কর। পুরুষদের দমিয়ে রেখে ইউরোপ শাসন করছেন মেয়েরাই, এমন কথা ভাবলেও চোখ কপালে ওঠে!
যদিও সম্প্রতি অ্যান্টিকুইটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে এমনই একটি চিত্তাকর্ষক প্রবন্ধ। যেখানে বলা হয়েছে যে আজকের আধুনিক স্পেনে আজ থেকে ৪ হাজার বছর আগে সমাধিস্থ করা এক নারী ছিলেন আশেপাশের অঞ্চলের শাসক। একদল আন্তর্জাতিক গবেষক এই তথ্য প্রকাশ করেছেন। দক্ষিণ স্পেনের মুরসিয়া অঞ্চলের লা আমোলায়া একটি বারিয়াল সাইট বা সমাধি দেয়ার অঞ্চল। এটিকে একটি রাজকীয় সমাধি ক্ষেত্র বলা যেতে পারে। অঞ্চলটি নিয়ে ২০১৩ সাল থেকে কাজ করছেন গবেষকরা। দেখা গিয়েছে যে একটি সেরামিকের পাত্রে এক নারী ও এক পুরুষকে এখানে সমাধি দেয়া হয়েছে। ওই সিরামিকের পাত্রটি ১৭ শতকের। সমাধিস্থ নারীর আশেপাশে অনেক দামি দামি জিনিস রাখা আছে। এর থেকে অনুমান করা হচ্ছে যে তিনি সমাজের খুব উচ্চ স্তরে অবস্থান করতেন।
ওই নারীর বয়স আনুমানিক ২৫ থেকে ৩০-এর মধ্যে। তিনি আরগারিক যুগের মানুষ। সমাধিস্থল থেকে ৫০ মাইল দক্ষিণে অবস্থিত প্রত্নতাত্বিক সাইট এল আরগারের নাম অনুসারে এই আরগারিক যুগের নামকরণ করা হয়েছে। ওই নারী কঙ্কালে পরানো ছিল এক বিশেষ রকমের অভিজাত মুকুট, যাকে বলা হয় ডায়াডেম। এছাড়াও তার কাছে রাখা ছিল দামি ব্রেসলেট, আংটি ইত্যাদি। এই সাইট থেকে ২৩০ গ্রাম মতো রুপা পাওয়া গেছে। যা অনুমান করা হচ্ছে, ওই সময়ে ৯৩৮ জন দিনমজুরের দৈনিক পাওনার সমান। ডায়াডেম নামের যে বিশেষ মুকুট এখানে পাওয়া গেছে, সেরকম সমতুল আরো ছয়টি মুকুট আরগারিক সমাধি থেকে পাওয়া গেছে। এই সব নারীরাই ধনী ও ক্ষমতাশালী ছিলেন। এটা প্রমাণ করে যে ওই সময়ে সমাজ ছিল মাতৃতান্ত্রিক, পুরুষদের অবস্থান ছিল সমাজে নারীর পরে।
এত দিন পর্যন্ত অনেকেরই ধারণা ছিল যে তাম্র যুগে পুরুষদের আধিপত্য ছিল। কিন্তু এই ধারণা যে ঠিক নয়, সে কথার ইঙ্গিত দিচ্ছে এই রাজকীয় নারীদের সমাধিগুলো। এই নারীরা প্রত্যেকেই ভুরু পর্যন্ত ঢাকা এবং নাকের নিচে এক জাতীয় চন্দ্রাকৃতি গয়না পরতেন। তারা যে সাধারণ নয়, সেটা প্রমাণিত। আরগারিক যুগের সময়সীমা ছিল ২২০০ থেকে ১৫০০ খ্রিস্ট পূর্বকাল। দক্ষিণ পূর্ব আইবেরিয়ান উপদ্বীপে এই সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে। আশেপাশের অন্যান্য অঞ্চলের অনেক আগেই আরগারিক সংস্কৃতির মানুষ তামার ব্যবহার শিখে নেয়।
বার্সেলোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতাত্ত্বিক রবার্ট রিশ বলেছেন যে এই নারীরা ক্ষমতাশালী ছিলেন। কিন্তু সেটা ঠিক কী রকম ক্ষমতা, তা বিশদে জানা যায়নি। এই নিয়ে আপাতত গবেষণা চলছে। যদিও লা আমোলোয়া থেকে প্রাপ্ত এই সমাধিগুলো ইঙ্গিত করে যে ওই সময়ের সমাজে নারীদের যথেষ্ট প্রতিপত্তি ছিল।
সূত্র : নিউজ ১৮