বাদুড় থেকেই মানবদেহে ‘সামান্য পরিবর্তন’ করেই এসেছে করোনা!
বাদুড় - ছবি : সংগৃহীত
বারবার বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করেছেন, চীনে বাদুড় ও প্যাঙ্গোলিনের শরীর থেকে মানব শরীরে সংক্রমিত হয়েছে করোনাভাইরাস। এ বার একটি গবেষণায় দাবি করা হলো, বাদুড় থেকে মানবদেহে সংক্রমণের সময় খুব বেশি জিনগত পরিবর্তন হয়নি করোনাভাইরাসের। এটি নিজের স্পাইক প্রোটিন ও অন্য কয়েকটি সামান্য জিনগত পরিবর্তনের পরেই মানব দেহে জায়গা করে নিয়েছে। মানব শরীরে প্রবেশের আগেই এটির সংক্রমণের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মতামত বিজ্ঞানীদের। বাদুড়ের শরীরেই যাবতীয় পরিবর্তন ঘটিয়ে ভাইরাস সংক্রমণের ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে, তারপর প্রবেশ করেছে মানব শরীরে, মোটের উপর বিজ্ঞানীদের দাবি এমনই।
পিএলওএস বায়োলজি গবেষণা পত্রিকায় দাবি করা হয়েছে, করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার প্রথম ১১ মাসের মধ্যে মানব শরীরে যে ভাইরাসগুলো পাওয়া গেছে, সেগুলো পরীক্ষা করে দেখা গেছে, এগুলোর সামান্যই জিনগত পরিববর্তন হয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ‘তার মানে এটা নয় যেকোনো পরিবর্তনই হয়নি। সাধারণত কোনো নতুন শরীরে ভাইরাস প্রবেশ করলে সেটির খাপ খাইয়ে নিতে বেশ কিছুটা সময় লাগে। করোনার মতো শক্তি অর্জন করতে তো বেশ কিছুটা সময় লাগেই। অনেক ভাইরাস এমন শক্তিশালী হয়ে উঠতেও পারে না। তার ফলে হয় ভাইরাসটি কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে, অথবা এটি সামান্য স্থানীয় স্তরের সংক্রমণ ঘটায়। কিন্তু করোনার ক্ষেত্রে সেটি হয়নি।’
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মানব শরীরে সংক্রমণের আগে, সম্ভবত বাদুড়ের শরীরেই করোনাভাইরাসের বেশ কয়েকটি পরিবর্তন হয়েছিল। সেই কারণে এই ভাইরাসটি সরাসরি মানব শরীরে সংক্রমণের শক্তি অর্জন করে ফেলেছিল। উল্লেখ্য, তারা বলেছেন, ভাইরাসটি অন্য স্তন্যপায়ী প্রাণীদের সংক্রমণের ক্ষেত্রেও সক্ষমতা আগে থেকেই অর্জন করে ফেলেছিল।
তবে তারা বলেছেন, টিকাতে এখনো করোনা সংক্রমণ অনেকটাই আটকানো যেতে পারে। তাদের মতে, করোনা ভাইরাসের যে কটি প্রজাতির এখন সন্ধান পাওয়া যায়, সেগুলোর বেশিরভাগই টিকার মাধ্যমে নির্মুল করা সম্ভব। কিন্তু দ্রুত ভাইরাসকে একেবারে পরাস্ত করার লক্ষ্যে পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে হবে। যত তাড়াতাড়ি এই কাজটি করা যাবে, ততই করোনা সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব হবে।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন ট্রায়াল এবার শিশুদের ওপর
শিশুদের দেহে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন কতটা কার্যকর তা জানতে প্রথমবারের মতো ট্রায়াল শুরু করেছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের দেহে এই ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের কথা জানানো হয়েছে।
এর নাম দেয়া হয়েছে ‘মিড-স্টেজ ট্রায়াল।’ এক্ষেত্রে ৬ থেকে ১৭ বছরের শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের তেহে এই ভ্যাকসিন কতটা কাজ করছে তা জানা সম্ভব হবে। পুরো প্রক্রিয়া শুরু হবে এ মাসেই। প্রাথমিকভাবে এই পরীক্ষা চালাতে ৩শ জনের নাম নথিভুক্ত করা হবে।
ইতোমধ্যেই নিরাপত্তা এবং সংরক্ষণের সুবিধা বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হয়েছে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন। শিশুদেরও ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে তাই এবার ট্রায়ালের পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে।
অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন গবেষণার প্রধান অ্যান্ড্রু পোলার্ড বলেন, ‘হয়তো বাচ্চাদের করোনা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবুও তাদের শরীরে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা প্রয়োজন। সামান্য হলেও শিশুদের এক অংশের এই ভ্যাকসিনের কারণে লাভও হতে পারে।’
শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের শরীরে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন প্রথমবার প্রয়োগ করা হলেও গত অক্টোবর থেকেই এই পরীক্ষা শুরু করে দিয়েছে ফাইজার। মডার্নাও গত বছরই শিশুদের ওপর ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ধীরে ধীরে স্কুল খুলে যাচ্ছে। তাই সংক্রমণ আটকাতে এখন শিশু ও কিশোর-কিশোরীদেরও ভ্যাকসিন দেয়ার প্রয়োজন হয়ে পড়ছে। কিন্তু তাদের শরীরে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা কতটা, সেটা পরীক্ষা করে দেখা দরকার। অক্সফোর্ডের গবেষকরাও সেটাই মনে করছেন। সে কারণেই পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হতে যাচ্ছে।
এদিকে, চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধেই করোনাভাইরাসের নতুন ধরন মোকাবিলায় সক্ষম ভ্যাকসিন বাজারে আসতে পারে বলে জানিয়েছে ফার্মাসিউটিক্যাল জায়ান্ট অ্যাস্ট্রাজেনেকা। ব্রিটিশ-সুইডিশ প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, নতুন ধরন শনাক্তের পরপরই তারা এ নিয়ে কাজ শুরু করেছিল, আগামী ছয় থেকে নয় মাসের মধ্যেই এর সুফল পাওয়া যেতে পারে।
সূত্র : বিবিসি