বাইডেনের সামনে চীন সমীকরণ
বাইডেনের সামনে চীন সমীকরণ - ছবি সংগৃহীত
আজ ১২ মার্চ কোয়াড জোটের চার রাষ্ট্র আমেরিকা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া আর ভারত এক ভার্চুয়াল বৈঠক মানে অনলাইন সামিটে মিলিত হচ্ছেন। বিগত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আমলে এমনকি নির্বাচনের মাসখানেক আগে গত বছর অক্টোবরেও ট্রাম্পের যুদ্ধংদেহী মনোভাব আর যখন তখন হুমকির মুখে কোয়াড মানে যেন হয়ে গেছিল এক সামরিক জোট। কিন্তু নতুন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের শপথের পরে সবাই মেনে নিয়েছেন, সেসব দিনের অবসান ঘটেছে। তবে এর মানে এমন না যে, এখন কোয়াড সদস্যরা কেউ আগ বাড়িয়ে ধরে নেবে, কোয়াড মারা গেছে। তাহলে কী হবে?
আগেই জানা যাচ্ছিল, বাইডেন প্রশাসনের সবচেয়ে সম্ভাব্য অবস্থান হবে ‘কোয়াড’ শব্দটা থাকবে কিন্তু এর সামরিক বা নিরাপত্তাবিষয়ক কোনো অর্থ আর থাকবে না। এমনকি তা টার্গেট করে চীনবিরোধিতা করা হবে না। (হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি মিস জেন সাকি ইতোমধ্যে সাংবাদিকদেরকে পরিষ্কার করে দিয়েছেন, ‘কোয়াড মিটিংয়ের ফোকাস চীন নয়’) তবে অর্থনৈতিক (সমমনা) স্বার্থজোট ধরনের অবস্থান থাকবে। যেমন এবারের এই অনলাইন সামিটের মূল উদ্দেশ্য হলো দুটো- আমেরিকানদের ভাষায়, ‘কোভিড ভ্যাকসিন ইস্যু ও চীনের প্রভাব’। মানে চীনের ক্রমেই বেড়ে চলা সামরিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব ব্যালেন্স করতে তারা কী করতে পারেন, এ নিয়ে আলোচনা।
কোয়াড মূলত ইংরেজি শব্দ। এর আক্ষরিক অর্থ একসাথে জন্ম নেয়া চারজন, অনেকটা যমজের মতো যেখানে একসাথে দু’জনের জন্ম নেয়া বুঝানো হয়। এখানে কোয়াড মানে চীনবিরোধী চার দেশীয় এক জোটের নাম; আর দেশগুলো হলো আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত। কিন্তু শুরু থেকেই এটা কেমন ধরনের ‘জোট’? মানে এটা স্ট্র্যাটেজিক জোট হলেও তবে কি মূলত সামরিক নাকি অর্থনৈতিক জোট?
আমাদের অবজারভেশন বলে, কে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়ে আছেন তার ওপর নির্ভর করে জবাবটা। এমনকি তার মুড কেমন- এর ওপরও নির্ভর করবে। যেমন আনুষ্ঠানিক অর্থে কোয়াডের জন্ম ২০০৭ সালে জাপানের উৎসাহে। জাপানের খুব ইচ্ছা চীনবিরোধী একটা জোট বানায়, তাই। এর পেছনের চিন্তা অনেকটা এরকম যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (১৯৩৯-৪৫) ‘হারুপার্টি’ জাপান, যুদ্ধে হেরে যাবার দুঃখ বুকে চেপে রেখে বিপরীতে সে সময় আমেরিকার বিপুল বিনিয়োগ ও পুনর্বাসন ঋণ পাওয়াতে সহজে লজ্জা ভুলে যাওয়ার উপায় হিসেবে কাজপাগল একটা জনগোষ্ঠী এই পরিচয় গ্রহণ করে পালিয়ে বেঁচেছিল জাপান। এতে ফলাফল খারাপ হয়নি। আর তাতে অচিরেই অন্তত অর্থনীতিতে এত বিপুল উন্নতি লাভ করে যে, জাপান তার ‘আমেরিকা ভাই’কে সাথে করে আরেকটা ‘বিশ্বব্যাংক’ বা অবকাঠামো উন্নতিতে সমতুল্য এক বিনিয়োগ ব্যাংক খুলে বসেছিল, ১৯৬৬ সালেই যার নাম এডিবি বা এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক। আজ দুদেশ মিলে তারা প্রায় ১৬ শতাংশ করে এর শেয়ারহোল্ডার মালিক। এভাবেই চলছিল ভালোই। কিন্তু চলতি শতকে এসে ক্রমশ দৃশ্যমানভাবে এবং ২০০৯ সাল থেকে চীনের উদ্বৃত্ত অর্থনীতির রাষ্ট্র হিসেবে উত্থান আনুষ্ঠানিকভাবে ঘটেছিল। অনেকটা যেন, ক্রমশ এর আগমন হচ্ছিল সেটা টের পাচ্ছিল সবাই আর এর প্রতিক্রিয়ায় জাপান এই ‘কোয়াড’ জোট গড়ার উদ্যোগ নিয়েছিল।
কিন্তু জাপানের ক্যালকুলেশনে বড় একটা ভুল ছিল। সেটা এই যে, চলতি শতক আর কোল্ড ওয়ারের যুগ নয়। ফলে চীন-আমেরিকার কোনো কোল্ডওয়ার সম্পর্ক এখানে হবেই না। তাই কোল্ড ওয়ার উঠে যাওয়ার একালে কোয়াড জোটই ঠিকমতো কাজ করবে না, এমনকি জোটটা খাড়া করাই খুবই কঠিন হবে। সংক্ষেপে এর কারণ বলতে হবে, কোল্ডওয়ারের আমলজুড়ে (১৯৫৩-৯১) কখনোই আমেরিকা ও তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে কোনো লেনদেন-বিনিময় বাণিজ্য ছিল না। এটা ফান্ডামেন্টাল কারণ। আমরা যদি এর সাথে চীনের তুলনা করি ১৯৯২ সালের পর থেকে, একালে কোয়াডের সব সদস্যই চীনের সাথে ঘোরতরভাবে বাণিজ্যিক সম্পর্কে জড়িত। দুনিয়ায় আমরা প্রায় সব রাষ্ট্রই একই গ্লোবাল বাণিজ্য ব্যবস্থায় অংশগ্রহণ করে পরস্পর সরাসরি সম্পর্কিত।
মূলত এ কারণেই চীনবিরোধী স্বার্থ আমেরিকা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া আর ভারত- এদের সবার থাকা সত্ত্বেও ১০ বছর (২০০৭-১৭), কোয়াড জন্মের পরেও অকেজো হয়ে ছিল। ট্রাম্পের আমলের তাও কেবল প্রথম বছরে (২০১৭ সালে) এটাকে আবার চাঙ্গা করার চেষ্টা করা হয়। তাও এর প্রথম সভা তারা করেছিলেন সাইড লাইনে বসে। মানে, ট্রাম্পসহ নেতারা ফিলিপাইনে এসেছিলেন আসিয়ানের বৈঠকে, এরই সাইড লাইনে বসে সে মিটিং করা হয়। ঘর পোড়ায় আলু পোড়া দেয়ার মতো করে নামেই এক বৈঠক করেছিলেন। ট্রাম্প আবার ফিলিপাইনে এসেছিলেন, এর আগে তার চীন সফর শেষ করে ফেরার পথে এবং সেবারের সফরে ট্রাম্প চীনের কাছ থেকে বাণিজ্যে বহু ছাড় পেয়েছিলেন। বলা হয়, সে কারণেই কোয়াড জোটের তৎপরতা চালুর ঘোষণা দিলেও একসাথে একই ভাষায় কোয়াডের পক্ষ থেকে কোনো বিবৃতি তারা দিতে পারেনি। চার দেশই মূল বিবৃতিকে কাটছাঁট করে নিজের বক্তব্য ঢুকিয়ে প্রেসে দিয়েছিল। এর মূল কারণ, সবাই কোনো না কোনোভাবে চীনের সাথে বাণিজ্য সম্পর্কে জড়িত। ফলে সবাই চেয়েছে, সেই সম্পর্ক অটুট রেখে কোয়াড জোট খাড়া করতে। ফলে বাস্তবে এটা কখনো দাঁড়াতেই পারেনি। তবে কেবল ২০১৮ সালের শেষে চীনের সাথে আমেরিকার বাণিজ্যবিরোধ মিটতে ব্যর্থ হলে, মানে এটা ফেল করতে যাচ্ছে স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পরই কোয়াডের গুরুত্ব আবার বেড়েছিল। এমনকি সামরিক দিকে ঝোঁক যেমন, জোটের সামরিক মহড়া ধরনের বিষয়ের দিকে, এই জোট ঘুরতে উদ্যত হচ্ছিল। আবার ট্রাম্পের গত নির্বাচনে এটা সামরিক প্রপাগান্ডা হিসাবে ট্রাম্প কোয়াডের তৎপরতা বাড়িয়েছিলেন ২০২০ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত।
নির্বাচনে বাইডেনের বিজয়ের পরে আমরা বলেছিলাম, বাইডেন প্রশাসনের নীতি হবে কোয়াড ভেঙে দেয়া নয়। তবে এটা অর্থনৈতিকভাবে সমমনাদের স্বার্থজোট এমন পরিচয়ে কেবল সীমাবদ্ধ থাকতে চাইবে। আর তাই গত ১২ মার্চের অনলাইন বৈঠকে ভ্যাকসিন উৎপাদনের সুরাহা ছাড়া দ্বিতীয় ইস্যু হলো, চীনের ক্রমেই বেড়ে চলা সামরিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব এই কোয়াড জোট ঠেকাতে পারবে না হয়তো। তবু একে কিছুটা ব্যালেন্স করতে তাদের জোট কী করতে পারে তা নিয়ে কিছু আলোচনা তারা করবেন।
কিন্তু বাইডেনের দিক থেকে আরো কিছু সাবধানতাও আছে। বহু আকাঙ্ক্ষিত, ট্রাম্পের ফেলে যাওয়া ‘চীন-আমেরিকা বাণিজ্যবিরোধ’ এর জট ছোটানো নিয়ে আলোচনায় বসার তারিখ ইতোমধ্যেই ঠিক হয়ে গেছে এবং সেটা হবে আগামী সপ্তাহেই ১৯ মার্চ এবং আমেরিকার আলাস্কা রাজ্যে; আর এই স্থান সম্পর্কে বলা হচ্ছে এটা নাকি চীন ও মূল আমেরিকা থেকে সম-দূরত্বে। কিন্তু তাতে সমস্যা কী? সমস্যা হলো, ১২ মার্চের কোয়াড সামিট থেকে এমন কোনো চীনবিরোধী ভাষ্য বাইডেন প্রশাসন আনবে না যেটা চীন-আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা খুঁজে পাওয়ার আগেই বাইরের কারণে ‘তিতা’ হয়ে যায়। বলাই বাহুল্য, আমেরিকার কাছে কোয়াড জোটের থাকা না থাকার চেয়ে চীন-আমেরিকা বাণিজ্যবিরোধের সমাধান নিয়ে আলোচনা অনেক বেশি গুরুত্বের।
কোয়াড বৈঠকের ইস্যু কী?
মিডিয়া রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, এই বৈঠকের মূল ইস্যু কী? এ নিয়ে অন্তত দুটি মতামত আছে। রয়টার্স এ নিয়ে গত দুদিনে তিনটা রিপোর্ট ছেপেছে। সেখানে আমেরিকান প্রশাসন পরিষ্কার করে বলছে, করোনা ভ্যাক্সিন ও চীনের প্রভাব ব্যালেন্স করতে সম্ভাব্য করণীয়- এই হলো দুই আলোচ্য ইস্যু। কিন্তু ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর মনে করেন, ‘ইন্দো-প্যাসিফিক রিজিয়নে ফ্রি ও ওপেন সমুদ্র চলাচলও’ এখানে আলোচ্য ইস্যু। এর সাথে তিনি দাবি করেছেন ‘মেরিটাইম সিকিউরিটিও’ এখানে আলোচ্য ইস্যু। আবার অস্ট্র্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীও ‘রিজিওনাল সিকিউরিটি’ এবং ‘সভরেন ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইন্দো-প্যাসিফিক’ রাখার কথা উল্লেখ করেছেন- ভারতের মতো আলোচ্য ইস্যু হিসাবে। কিন্তু এ ব্যাপারে তুলনায় জাপান একদম মুখবন্ধ; মানে জাপান যেন ওস্তাদ আমেরিকার সাথেই আছে ভারত বা অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে বেশি করে। এমন হওয়ার পেছনে মূল কারণ যেমন, ভারতের হিসাবটা সোজা। বাইডেনের আমেরিকা মোদির জন্য ট্রাম্পের আমলের মতো ‘ইজি-গোয়িং’ নয়। কারণ বাইডেন ঘোষণা দিয়েই এসেছেন যে, মোদির কাশ্মির দখল আর মুসলমানদের ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘন ও নির্যাতনের অভিযোগ- এসব প্রসঙ্গে তিনি মোদির বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন ও কথা বলবেন। তাই সেই থেকে ভারতের মনষ্কামনা হলো, যেন চীন-আমেরিকা দ্বন্দ্ব জোরদার হয়, সহসা মিটে না যায়। তাহলে এটা যত জোরদার হবে ততই ওই দ্বন্দ্বের আড়ালে চার বছর ভারত কাটিয়ে দেয়া দেয়া বা টিকে যাওয়া সহজ হবে। এ জায়গায় এসে মোদি আর বাইডেনের পথ দুটা দুই দিকে চলে গেছে।
করোনা ভ্যাকসিন কোয়াড বৈঠকের প্রধান ইস্যু কেন?
প্রথমত যেসব দেশ ল্যাব থেকে ভ্যাকসিন বের করেছে ভারত তাদের অন্তর্গত কেউ নয়। এর পরেও একটা ‘কিন্তু’ আছে। অনেকটা যেমন, জীবন-যাপন শিল্পোৎপাদনসহ সবখানে ডাটাবেজ বা ডিজিটালাইজেশন অথবা ব্রডলি কম্পুটারাইজেশন করা দুনিয়ায় এই ব্যাপারটা চালু করার নেতা হলো আমেরিকা। কিন্তু আমেরিকার এতে প্রোগ্রামিং বা কোড বসানোর জন্য যে বিপুল হিউম্যান রিসোর্স লাগবে, তা সাপ্লাইয়ের জন্য যোগ্য শ্রমদাতা হলো ভারত। কারণ এটা আমেরিকায় বসবাসকারী সিটিজেন কেউ হলে ভারতের চেয়ে তার শ্রমমজুরি কয়েক গুণ বেশি গুনতে হবে। অর্থাৎ সেটা এড়াতেই পুরা শিল্পের বড় শ্রমনিয়োগের অংশটা আউটসোর্সিং করা এবং ভারত থেকে করিয়ে আনা। এটাই ঘটছে ভ্যাকসিন বাণিজ্যিক উৎপাদনের ক্ষেত্রে। তা হলো ভারত ভ্যাকসিন উৎপাদনের লাইসেন্স নিয়েছে বিদেশী কোম্পানির কাছে, এরপর বাল্ক প্রডাকশন বা গণ-উৎপাদনে নেমে পড়েছে। এই সক্ষমতা ভারতের আছে।
ভ্যাকসিন প্রসঙ্গে বাইডেন ট্রাম্পের চেয়ে পুরাই আলাদা এবং সক্রিয় ও তৎপর। তিনি দ্রুত আমেরিকার সবাইকে করোনার ভ্যাকসিনের অধীনে আনতে চান। কারণ যতই দেরি, ততই বিভিন্ন এলাকায় ভাইরাসের বিভিন্ন স্ট্রেইনের জন্ম বা উপস্থিতির সম্ভাবনা বাড়বে। এ ছাড়াও এমনিতেই বলা হয় ভ্যাকসিনের দুটা ক্লাস তৈরি হয়ে গেছে, গরিব আর বড়লোক বলে। আমেরিকার টিকা এখনো আমাদের দেশের তুলনায় দামি ভ্যাকসিনের ব্যবহার দিয়ে শুরু ও বর্তমান। এই ভ্যাকসিন সংরক্ষণও ব্যয়বহুল। তাই আমেরিকা ভ্যাকসিন উৎপাদন ও বিতরণ আরো ত্বরান্বিত করার উদ্যোগ নিতে চায়। এ ছাড়া সেটা চায় নিরাপদ হিসেবে, সবাই যেন পায় আর দাম সীমার মধ্যে যেন থাকে এমন শর্তে। এদিকে আবার আমেরিকারই আরো অন্তত দুটা (নোভাভ্যাক্স ও জনসন অ্যান্ড জনসন) ভ্যাকসিন আছে যাদের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুই হয়নি বা অস্পষ্ট। সব মিলিয়ে বাইডেন ভারতকে দিয়েই ভ্যাকসিন উৎপাদন করিয়ে নিতে চান। তাই এই সামিটের সবচেয়ে বড় ‘নগদ’ উদ্দেশ্য হলো, ভারতের সাথে ‘প্লানস টু অ্যানাউন্স ফিনান্সিয়াল অ্যাগ্রিমেন্ট’ এর গ্রাউন্ড তৈরি করে দেয়া। এতে আমেরিকার ওসব কোম্পানির লাইসেন্স নিয়ে ভারতের উৎপাদনে যেতে যে বিনিয়োগ লাগবে, সেটাও আমেরিকা ও জাপান দিতে চায়। সার কথা ভারতকে দিয়ে ব্যাপক ভ্যাকসিন উৎপাদন করিয়ে নেয়া- এটাই কোয়াডের প্রথম আলোচ্য ইস্যু।
তবে এখানেও একটা কথা পরিষ্কার করা দরকার। আমেরিকার প্রশাসন রয়টার্সকে জানিয়েছে বাইডেনের টার্গেট আমেরিকান জনগণকে ভ্যাকসিন দেয়া আর সাথে অল্প কিছু ভ্যাকসিন যা ইউএসএইড ফান্ডেড এনজিওদেরকে দেবার জন্য আমেরিকা কমিটেড, কেবল ততটুকু। কিন্তু ভারত চেষ্টা করেছে কথাটা ‘ভ্যাকসিন ডিপ্লোম্যাসি’ শব্দের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করতে। ভারতের কাছে এর মানে হলো, অন্য দেশে ভ্যাকসিন দেয়া মানে ‘প্রভাব বিস্তার’ করা। তাতে আমাদের মতো দেশগুলোতে চীন যদি ফ্রি সিনোভ্যাক ভ্যাকসিনের অফার দেয়, তবে এর বিরুদ্ধে ভারত লড়বে ওই দেশেই নিজের ভ্যাকসিন বিক্রি করে। আর তা করবে ওদেশের সরকারকে কমিশন দেয়ার লোভ দেখিয়ে নিজের ভ্যাকসিন বিক্রি করে। এটাই ভারতের ভ্যাকসিন আবিষ্কারক না হয়েও চীনের পাল্টা ভ্যাকসিন লড়াই জারি করা- চীনের বিরুদ্ধে ‘প্রভাব বিস্তার’ করার লড়াই বলে যেটা ভারত বুঝেছে। এই কথিত প্রভাব বিস্তারের লড়াই, এটাই ভারতের চোখে ভ্যাকসিন ডিপ্লোম্যাসি, অন্যের তেলে মাছ ভেজে নেয়া। ভারত এভাবেই তার অন্য কোয়াড বন্ধুদের ভারতে বিনিয়োগ করে চীনের বিরুদ্ধে লড়াই এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান রেখেছে।
কিন্তু বাইডেন প্রশাসন এদিকে তেমন আগ্রহী নয়। যেমন রয়টার্স নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক সিনিয়র প্রশাসনিক কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়েছে। তিনি বলছেন, ‘আমেরিকা আপাতত নিজের ভ্যাকসিন পাবার জন্যই কোয়াড নিয়ে তৎপরতায় নেমেছে, এটাই তার ফোকাস। কাজেই আমরা ঠিক এই মুহূর্তে অন্যদের সাথে ভ্যাকসিন শেয়ারের প্রসঙ্গে কথা বলছি না। অর্থাৎ ভারত যতই আমেরিকাকে চীনের বিরুদ্ধে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেবার কৌশল নিতে চাইছে আমেরিকান ডিপ্লোম্যাটরা ততই আপাতত ব্যাপারটা পাস কাটিয়ে যেতে চাইছেন।
চীনের প্রতিক্রিয়া কী?
হ্যাঁ, চীনের প্রতিক্রিয়াও আছে। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিন্ন প্রসঙ্গে প্রেসের সাথে কথা বলতে গিয়ে কোয়াডের নাম না ধরে বলেছেন, ‘বহুরাষ্ট্রীয় তৎপরতার নামে ছোট এক সার্কেল গড়া এটা তো আসলে গ্রুপ পলিটিক্স করা।’ ... ‘বহুরাষ্ট্রীয় তৎপরতার নামে খোদ নিজস্বার্থে কাজ করা এটা তো একপক্ষীয় স্বার্থচিন্তার কারবার। কাজেই বেছে বেছে বহুরাষ্ট্রীয় তৎপরতার আওয়াজ তোলা সঠিক রাস্তা নয়।’
এ ছাড়াও চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রেগুলার ব্রিফিংয়ের মুখপাত্র সাবধান করে ও শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, কোয়াডের ‘মিটিং যেন আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও শান্তির জন্য সহায়ক হয় এবং এর বিপরীত কিছু না হয়।’
লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com