চীনের শাওলিন মঠের সন্ন্যাসীরা উড়েন যেভাবে
চীনের শাওলিন মঠের সন্ন্যাসীরা উড়েন যেভাবে - ছবি সংগৃহীত
চীনের জনপ্রিয় মার্শাল আর্ট কুংফু। সারা বিশ্বে বিভিন্ন রূপে কুংফু-র চর্চা চলে। দ্রুততার সঙ্গে কৌশলগত মোকাবিলার জন্য এই মার্শাল আর্ট সারা বিশ্বে জনপ্রিয়।
এই মার্শাল আর্ট শেখানোর জন্য সারা বিশ্বে চীনের শাওলিনের বৌদ্ধমঠ খুবই জনপ্রিয়। বৈচিত্রের পাশাপাশি কঠিন কুংফু শেখানো হয় এই মঠে।
টিভির পর্দায় কুংফু মাস্টারদের উড়তে দেখা যায়। কিন্তু সত্যিই কি কুংফু-তে অভিজ্ঞরা উড়তে পারেন? হ্যাঁ। শাওলিনের এক বৌদ্ধমঠে সত্যিই ‘উড়তে’ পারেন বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা।
চীনের হেনান প্রদেশের সংস্যাং পাহাড়ের মাথায় রয়েছে গাছে ঘেরা এক বৌদ্ধমঠ। নাম শাওলিন বৌদ্ধমঠ। কুংফুর শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে এই মঠ অত্যন্ত জনপ্রিয়।
এখানেই বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা মঠের উপরে আকাশে ‘ওড়েন’! নিজের চোখে সেই দৃশ্য দেখার সুযোগও রয়েছে মঠে। যা চাক্ষুষ করতে প্রচুর পর্যটক ভিড় জমান সেখানে।
সবটাই আসলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির খেলা। ওই অত্যাধুনিক বৌদ্ধমঠে উড়ন্ত বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের দেখার জন্য আলাদা প্রেক্ষাগৃহ রয়েছে। নাম শাওলিন ফ্লাইং মঙ্ক থিয়েটার।
যার মধ্যে একটি নির্দিষ্ট প্রকোষ্ঠে বড় টারবাইন ঘুরিয়ে প্রচুর হাওয়া তৈরি করা হয়। যার চাপেই মূলত উড়ে যান তারা।
শাওলিন ফ্লাইং মঙ্ক থিয়েটারটির নকশা করা হয়েছে উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে। প্রেক্ষাগৃহের আকারটাই পাহাড়ঘেরা গাছের মতো।
প্রেক্ষাগৃহটি একেবারে খোলা আকাশের নিচে। যার মাঝখানে গাছের মতো আকার বিশিষ্ট একটি কাচ ও স্টিল দিয়ে ঘেরা প্রকোষ্ঠ রয়েছে। এই প্রকোষ্ঠের মধ্যেই টারবাইন ঘুরিয়ে গতিতে হাওয়া তৈরি করা হয়।
গাছের আকার বিশিষ্ট প্রকোষ্ঠ ছাড়া চারপাশটিই স্টেডিয়াম। সেখানে বসে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের আকাশে ওড়ার দৃশ্য দেখতে পারেন দর্শক।
স্টেডিয়ামের ওই গাছ প্রকোষ্ঠের নিচে টারবাইন থাকে। তাই দর্শকরা টারবাইন দেখতে পাবেন না। তবে তার ভয়ঙ্কর শব্দ তাদের কানে পৌঁছয়।
সবচেয়ে মজার বিষয় হলো শুধু কুংফু মাস্টারই নন, চাইলে পর্যটকেরাও উড়তে পারবেন এই মঠে। কখনো কখনো দর্শকদের জন্যও এই প্রকোষ্ঠ খুলে দেয়া হয়।
শাওলিন মঠে প্রচুর পড়ুয়া কুংফু শেখেন। এক বার উপগ্রহ চিত্রে তাদের কুংফু প্রদর্শনের অভিনব ভিডিও ধরা পড়েছিল। অত্যন্ত শৃঙ্খলাপরায়ণ ও সুসংসঠিত ভঙ্গিতে কুংফু প্রদর্শনের সেই ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল।
শাওলিস মন্দিরে দেড় হাজার বছর ধরে চর্চা হচ্ছে বিশেষ এই কুংফু। শাওলিন কুংফুর মূল ধারণা হলো মানব দেহকে শক্তিশালী ও প্রাণনাশক অস্ত্রে পরিণত করা। চীনা কুংফু বা গুংফু শব্দের অর্থ হলো ধর্য ও শক্তি সহকারে কোনো কিছু অধ্যায়ন করা। কুংফু, কারাতে ছাড়াও জুডো-তাইকোর মতো আরো নানা ধরনের মার্শাল আর্ট রয়েছে। এগুলো সবকিছুর মধ্যে কুংফু একেবারেই স্বকীয়। দুনিয়ার সব মার্শাল আর্টের মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী হলো কুংফু। এর ধরনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হচ্ছে শাওলিন কুংফু। বিশেষ এ কুংফুর যাত্রা শুরু হয়েছিল বুদ্ধভদ্র নামের এক ভারতীয় সন্ন্যাসীর হাত ধরে। চীনের হেনান প্রদেশের এক পাহাড়ি উপত্যকাকে ঘিরে থাকা জঙ্গল, ঝরনা আর উঁচু পর্বতশ্রেণীর অপরূপ নৈসর্গিক দৃশ্য বুদ্ধভদ্রকে মুগ্ধ করেছিল। তাই তিনি ‘সং’ পর্বতের গুহায় তপস্যা শুরু করেন। স্থানীয়রা বৃদ্ধভদ্রের প্রতি মুগ্ধ হয়ে শিষ্যত্ব গ্রহণও শুরু করেন। তাকে নতুন নামও দেয়া হয় ‘ফতুও বাতুও লও’।
আনন্দবাজার পত্রিকা ও অন্যান্য সূত্র