কেন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন মোহাম্মদ ইউসুফ!
মোহাম্মদ ইউসুফ - ছবি : সংগৃহীত
পাকিস্তান ক্রিকেটের সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান তিনি। ধ্রুপদী ব্যাটিংয়ে মন জয় করেছেন বিশ্বের। সেই মোহম্মদ ইউসুফই এবার জানিয়ে দিলেন কেন ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন।
পাকিস্তানের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান ক্রিকেট বিশ্বে কেরিয়ারের প্রাথমিক পর্বে পরিচিত ছিলেন ইউসুফ ইউহানা নামেই। পরে ধর্ম পরিবর্তন করার পর নিজের নাম রাখেন মোহম্মদ ইউসুফ।
তিনি সাফ জানিয়ে দিলেন, কোনো প্রকার চাপের মুখে ধর্ম বদলাননি তিনি। বরং তিনি জাতীয় দলে সাঈদ আনোয়ারের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। তার সান্নিধ্যেই ধর্ম পরিবর্তন করেছিলেন।
পাকপ্যাশন.নেট-কে দেয়া সাক্ষাৎকারে মোহম্মদ ইউসুফ জানালেন, 'অনেকেই অভিযোগ করেন আমি নাকি চাপের সামনে ধর্ম ত্যাগ করেছি। এমনটা মোটেও নয়। আসল ঘটনা হলো, আমি সাঈদ আনোয়ারের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলাম। মাঠ ও মাঠের বাইরে আমাদের বন্ধুত্ব অন্য পর্যায়ের ছিল। বাচ্চাবেলা থেকেই দুজনে একসঙ্গে বহু ক্রিকেট খেলেছি। সঈদের সঙ্গে এত সময় কাটাতাম যে তা মা-বাবার আমাকে নিজের সন্তান মনে করতেন। তাদের বাড়িতে যখন যেতাম, দেখতাম কীভাবে শৃঙ্খলাপরায়ণ জীবন যাপন করে তারা। এটাই আমার কাছে আকর্ষণের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।'
এরপরেই তারকা আরো বলেছেন, 'সাঈদ আনোয়ার পুরোপুরি ধার্মিক হয়ে ওঠার আগে ওর জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত চোখের সামনে দেখেছি। তার মেয়ের মর্মান্তিক মৃত্যু কীভাবে আরো তাকে স্রষ্টার দিকে ঠেলে দিলো, সেটাও দেখেছি। সঈদের ধার্মিক হয়ে পড়াটা অনেকের কাছেই অনুপ্রেরণার ছিল। ওটাই আমাকে ধর্ম পরিবর্তনে প্রভাবিত করেছিল।'
মোহম্মদ ইউসুফের কেরিয়ারের সেরা সময় ২০০৬ সাল। ওই বছর ১১ টেস্টে ১৭৮৮ রান করেছিলেন। নয়টি শতরানসহ। সেই বছরেই এক ক্যালেন্ডার বর্ষে সর্বাধিক রান করার রেকর্ডে স্বয়ং স্যার ভিভ রিচার্ডসকে পেরিয়ে যান। তার আগে টানা ৩০ বছর সেই রেকর্ডের অধিকারী ছিলেন ভিভ রিচার্ডস।
২০০৫ সালে ধর্মান্তরিত হওয়ার পরে ২০০৬ সালেই ব্যাট হাতে একের পর এক রেকর্ড! মোহম্মদ ইউসুফ এখনো মনে করেন, স্রষ্টার কাছে নিজেকে সমর্পণ করার জন্যই তাকে পুরস্কার দেন সর্বশক্তিমান।
ইউসুফ বলেছেন, 'এমন নয় যে ২০০৬ সালে বিশেষ কিছু ট্রেনিং করেছি। ২০০৫-এর শেষের দিকেই ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হই। ওই বছরে প্রথমবার ইসলামের প্রার্থনা করি। তারপর দাঁড়ি রাখায় মনে শান্তি আসে। ওই সময় মানসিক প্রশস্তি এমনই ছিল যে যেকোনো চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত ছিলাম।'
এরপর তার সংযোজন, 'আমার সবসময় মনে হয় ইসলাম ধর্মে কনভার্ট করার জন্যই আল্লাহ আমাকে উপহার দিয়েছিলেন ২০০৬ সাল। তার আগে কখনই ভাবিনি যে স্বয়ং ভিভিয়ান রিচার্ডসের রেকর্ড ভেঙে দেব। তবে সেই সময় মানসিকভাবে এমন জায়গায় ছিলাম যে খেলার দক্ষতার শীর্ষে উঠতে পেরেছিলাম। তখন মনে হতো, আমাকে কেউই থামাতে পারবে না।'
৯০টি টেস্ট, ২৮৮ একদিনের ম্যাচ এবং ৩টি টি২০ ম্যাচে পাকিস্তানের জার্সিতে খেলেছেন তিনি। তিন ফরম্যাটে তার রানসংখ্যা যথাক্রমে ৭,৫৩০, ৯,৭২০ ও ৫০। ২০১০ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের জার্সিতে শেষবার আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেন।
সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস