জিএনএর দিন শেষ, লিবিয়ায় এখন জিএনইউ সরকার
আব্দুল হামিদ এদবেইবা - ছবি : সংগৃহীত
জিএনএর দিন শেষ। লিবিয়ার নতুন সরকারের নাম জিএনইউ- গভর্নমেন্ট অব ন্যাশনাল ইউনিটি। আজ সিরতে লিবিয়ার পার্লামেন্ট (পূর্বাঞ্চলীয় পার্লামেন্ট হাউজ অব রিপ্রেজেন্টিটিভস, যেটাকে বৈধ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়) আব্দুল হামিদ এদবেইবার নেতৃত্বে নবগঠিত মন্ত্রিসভাকে অনুমোদন দিয়েছে।
পার্লামেন্টের অনুমোদনের পর এত দিন পর্যন্ত আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত জিএনএর প্রধানমন্ত্রী ফায়েজ আল-সাররাজ এবং অননুমোদিত পূর্বাঞ্চীয় সরকারের প্রধানমন্ত্রী আব্দুল্লাহ থিনি পৃথক বিবৃতিতে নতুন সরকারকে স্বাগত জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে এবং ক্ষমতা হস্তান্তরে তারা প্রস্তুত বলে আশ্বস্ত করেছে।
এরফলে নতুন কোনো জটিলতা সৃষ্টি না হলে ২০১৪ সালের পর দীর্ঘ সাত বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো লিবিয়া একটি একক সরকার পেতে যাচ্ছে।
জিএনইউ গঠনের প্রক্রিয়া আরো আগেই শুরু হয়েছিল। জাতিসঙ্ঘের তত্ত্বাবধানে লিবিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলের ৭৫ জন প্রতিনিধি গত মাসে চার সদস্যের চারটি করে দলের মধ্য থেকে একটি দলকে নির্বাচিত করে। এই চার সদস্যের দলে আছে তিন সদস্যের একটি প্রেসিডেনশিয়াল কাউন্সিল এবং একজন প্রধানমন্ত্রী।
মজার ব্যাপার হচ্ছে এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্ষমতার ভাগ-বাটোয়ারির খেলায় হাফতারের ঘনিষ্ঠ মিত্র, পূর্বাঞ্চলীয় পার্লামেন্টের স্পিকার আগিলা সালাহর সাথে একসাথে জোটবদ্ধ হয়েছিল সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে থাকা মুসলিম ব্রাদারহুডের সমর্থন পাওয়া জিএনএর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফাতহি বাশাগা।
কিন্তু প্রথম রাউন্ডে বেশি ভোট পেলেও দ্বিতীয় রাউন্ডে সমন্বিত নেগেটিভ ভোটের মুখে এই হাই প্রোফাইল জোট পরাজিত হয়। ক্ষমতায় আসে আব্দুল হামিদ এদবেইবা (প্রধানমন্ত্রী) এবং মোহাম্মদ মেনফির (প্রেসিডেন্ট) নেতৃত্বাধীন তুলনামূলকভাবে স্বল্প পরিচিত জোট।
এই জোটের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এরা রাজনৈতিকভাবে মোটামুটি মধ্যপন্থী, কিন্তু এদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রচুর। ইনফ্যাক্ট নামকরা ব্যবসায়ী এদবেইবার বিরুদ্ধে ভোট কিনে জয়লাভ করার অভিযোগ এসেছে জাতিসঙ্ঘেরই প্যানেল অব এক্সপার্টসের রিপোর্টে।
সম্ভবত রাজনৈতিকভাবে কম বিতর্কিত হওয়ায়, পরিষ্কারভাবে কোনো এক পক্ষের লোক না হওয়াতে, এবং উভয় পক্ষের পছন্দের প্রার্থীদেরকে সমান সমান সুযোগ দিয়ে মন্ত্রিসভায় স্থান দেওয়াতেই এদবেইবার মন্ত্রীসভা সময়মতো পার্লামেন্টের অনুমোদন পেয়েছে। কিন্তু আগামী দিনগুলোতে দুই বিপরীত পক্ষকে সন্তুষ্ট করে এই সরকার কতদূর যেতে পারবে, সেটা দেখার বিষয় হবে।
এদবেইবার এই মন্ত্রিসভার আরেকটা উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এতে পাঁচজন নারী মন্ত্রী স্থান পেয়েছে। এরমধ্যে পররাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ও আছে।
জিএনইউর এই সরকারের মেয়াদ মোটামুটি এক বছর। এর প্রধান দায়িত্ব বিবাদমান দুই পক্ষের মধ্যে রিকনসিলিয়েশন করা এবং বছরের শেষ নাগাদ নির্বাচনের আয়োজন করা। যদিও জিএনইউর শুরুটা ভালোভাবেই হয়েছে, তারপরও এক বছর সময়টা খুবই উচ্চাকাঙ্ক্ষী বলেই মনে হচ্ছে। তারপরেও দেখা যাক। আপাতত কয়েক বছর শান্তিতে কাটলেই হলো।