উচিৎ সাজা পেয়েছেন সারকোজি!
সারকোজি - ছবি সংগৃহীত
ফরাসি এক আদালত ‘করাপশন’ চার্জে ১ মার্চ ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজিকে তিন বছরের জেল দিয়েছে। ৬৬ বছর বয়স্ক সারকোজি ২০০৭ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ফরাসি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং ফরাসি ইতিহাসে সবচেয়ে ‘করাপ্ট’, ‘নির্লজ্জ’ ‘সরকারি তহবিল যথেচ্ছ খরচের’ জন্য ধিকৃত হিসেবে গণ্য হয়েছেন। সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তার বিরুদ্ধে বিচারাধীন এক মামলায় ২০১৪ সালে তথ্য হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টার অপরাধেও জেল দেয়া হয়েছে। সেটি তিন বছর সাজার মধ্যে রয়েছে। এএফপি আরো জানায়, মোনাকোতে উচ্চ পদে এক চাকরির ব্যাপারে ভেতরের তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করেন তিনি, যেখানে নির্বাচনী অর্থের তহবিল যুক্ত ছিল। সেখানেও সারকোজির বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত হয়। রায়ে আদালত বলেন, প্রেসিডেন্ট পদ মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তির এত সব ‘মারাত্মক অভিযোগ’! সারকোজির হাতে ও পায়ে ইলেকট্রনিক ব্রেসলেট লাগিয়ে একটি কক্ষকে জেলখানা ঘোষণা দিয়ে সেখানে জেলের মেয়াদ গণনা করা হবে। নির্ধারিত বা পরিচিত জায়গার বাইরে তিনি গেলে সিকিউরিটি গার্ডের হাতে পড়বেন এবং এ অপরাধের জন্য সাজা আরো বৃদ্ধি পাবে। চলতি মাসের শেষের দিকে ২০১২ সালের নির্বাচনী অর্থ সংগ্রহ ও প্রতারণার জন্য ১৩ ব্যক্তির সাথে তার আরো এক অপরাধের বিচারপর্ব শেষ হবে। এভাবে সারকোজির অনেক অপরাধ রয়েছে; কিছু তদন্তাধীন, কিছু বিচারাধীন। সারকোজির আগের প্রেসিডেন্ট জ্যাক শিরাককেও পাবলিক ফান্ড অপব্যবহারের জন্য দুই বছরের সাজা দেয়া হয়েছিল। তবে সারকোজি সবাইকে মাত করেছেন।
২০১৭ সালের নির্বাচনে সারকোজির কনজারভেটিভ দল মনোনয়ন না দেয়ায় প্রার্থী হতে পারেননি। সে নির্বাচনে ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ জিতে প্রেসিডেন্ট হন। ২০১২ সালের নির্বাচনে পরাজিত হয়েছিলেন। এরই মধ্যে সারকোজির বিভিন্ন কীর্তি মিডিয়ায় প্রকাশ পেয়ে যায়। তিনি ওই নির্বাচনে ৪২.৮ মিলিয়ন ইউরো খরচ করেছিলেন। বিধি অনুসারে সর্বাধিক এর অর্ধেক খরচ করা যায়। ওই নির্বাচনে ওল্যান্দে জিতেছিলেন ও প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। লিবিয়ার গাদ্দাফির কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহের ঘটনা ঘটে ২০০৭ সালে। সারকোজির এই সাজা ২০২২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কনজারভেটিভ দলকে প্রভাবিত করবে।
সাবেক প্রেসিডেন্ট সারকোজিকে পুলিশ হেফাজতে লিবিয়ার নিহত নেতা কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফির কাছ থেকে বড় অঙ্কের অর্থ গ্রহণ করার বিষয়ে পৃথকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০০৭ সালে নিজ নির্বাচন পরিচালনার জন্য গাদ্দাফির কাছ থেকে কয়েক কোটি ইউরো সহায়তা পেয়েছিলেন। এ অভিযোগে গত পাঁচ বছর ধরে তদন্ত চলছে।
লাখ লাখ লিবিয়ান ও আরব মুসলমান শুনে খুশি হয় যে, সারকোজিকে অর্থ গ্রহণের দায়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে এবং তার বিচার শুরু হয়েছে। এবার জেল হওয়ার খবর শুনে মিডিয়ায় তারা খুব উৎফুল্ল। সারকোজির বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল- মুয়াম্মার আল গাদ্দাফি থেকে ৫০ মিলিয়ন ইউরো নিয়ে ২০০৭ সালের নির্বাচনী প্রচারণায় দেদার খরচ করা। অথচ ২০১১ সালে ন্যাটো বোমা বর্ষণে লিবিয়াকে তছনছ করা হয়েছে এবং শেষের দিকে গাদ্দাফির ১৫টি গাড়ির কনভয়ে বোমা বর্ষণ করে ফ্রান্সের বিমানবহর। এতে গাদ্দাফি মারাত্মকভাবে আহত হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকেন, পরে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। যাই হোক, ফরাসি তদন্তকারী দল সারকোজির বিরুদ্ধে অনেকগুলো মারাত্মক অপরাধের বিবরণ পেয়ে তদন্ত ও মামলা শুরু করে। দুর্নীতি, অর্থপাচার, নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ, সরকারি অর্থ অপচয় ইত্যাদি। সারকোজি চেয়েছিলেন, গাদ্দাফিকে গ্রেফতার বা হত্যা করে কোনো অজানা স্থানে মাটিচাপা দিতে। তিনি চিন্তা করেননি গাদ্দাফির ‘অভিশাপ’ তাকে শান্তিতে থাকতে দেবে না। গাদ্দাফিকে মাটিচাপা দেয়া সম্ভব না হলেও সারকোজি নিজে ‘ইতিহাসের ডাস্টবিনে’ চাপা পড়ছেন। গাদ্দাফি পুত্র এমন কথাই বলেছিলেন। লেবানিজ-ফ্রেঞ্চ ব্যবসায়ী জিয়াদ তাকিদ্দিন ২০০ ও ৫০০ ইউরো নোটের বান্ডিলে ঠাসা তিনটি ব্রিফকেস ব্যক্তিগতভাবে সারকোজিকে হস্তান্তর করেছিলেন। লিবিয়ার পররাষ্ট্র গোয়েন্দাপ্রধান মুসা কুসা লিখিত অভিমত দেয়ার পর গাদ্দাফি প্রশাসন ৫০ মিলিয়ন ইউরো ক্যাশ সারকোজির কাছে হস্তান্তর করে।
২০০১ সালের মার্চে যখন ন্যাটোর লিবিয়া আক্রমণের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠে তখন গাদ্দাফি এক জনসভায় নিজেই বলেন, ‘আমি সারকোজিকে ক্ষমতা আরোহণে সহায়তা দিয়েছি। আমি তাকে অর্থ দিয়েছি, তিনি প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। ... তিনি লিবিয়ায় এসেছেন, আমার তাঁবুতে এসেছেন, তিনি তখন ইন্টেরিয়র মন্ত্রী ছিলেন। আমার সাহায্য কামনা করেছেন।’ কিন্তু ঘটনার পর সারকোজির চোখ উল্টে যায়। গাদ্দাফির পুত্র সাইফ মিডিয়ায় বলেন, লিবিয়ার টাকাটা ফেরত দিলে আমরা খুশি হবো। এই ঘটনার অনেক সাক্ষী ফ্রান্সে ও লিবিয়ায় এখনো রয়েছে। ডকুমেন্টও রয়েছে। যেমন সাইফ আল ইসলাম, সাবেক নিরাপত্তা প্রধান আবদুল্লাহ আস সানুসি, মুসা কুসা বর্তমানে কাতারে বসবাসরত, গাদ্দাফির সাবেক অফিস প্রধান বশির সালেহ যিনি বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাসরত। ফ্রান্সের তদন্তকারী দল তাদের বক্তব্য নিয়েছে।
কিন্তু প্রতিশোধ গাদ্দাফির জীবন কি ফিরিয়ে আনবে? ন্যাটো বোমা বর্ষণে লিবিয়ায় ৩৫ হাজার জীবনহানি হয়েছে। তাদের পরিবার কি ফিরে পাবে স্বজনদের? গাদ্দাফি ‘স্টেট-অ্যাসেট’ হিসাবে ৩৬০ বিলিয়ন ডলার রেখে দিয়েছিলেন রাষ্ট্রের উন্নতি ও জনসেবামূলক কাজের জন্য, সেগুলো ন্যাটো সমর্থক মিলিশিয়ারা লুট করে নিয়ে যায়। এই বিপুল সম্পদ কি অত সহজে আবার জমা করবে কোনো সরকার?
লিলিয়ান বেটেনকোট, ফ্রান্সের সবচেয়ে ধনী মহিলা, যিনি এল ওরিয়েল ফরচুনের উত্তরাধিকারী ও বিশ্বের নবম ধনী। নিট সম্পদ ৩০ বিলিয়ন। তার কাছ থেকেও অর্থ হাতিয়েছেন সারকোজি। এ জন্য আরেক ‘নিরীহকে নিপীড়নের’ অপরাধে মামলা হয়েছে। মহিলাটি এখন ‘ডিমেনশিয়া’য় আক্রান্ত। পারিবারিক তথ্যে জানা যায়, ওরিয়েল দাঁতের ময়লা সাফ করার জন্য নতুন ইউরো নোট ব্যবহার করতেন। এই তথ্য ছড়িয়ে পড়লে তাকে ‘প্রেসিডেন্ট ব্লিং ব্লিং’ নামে ডাকা শুরু হয়। সারকোজিকে যখন অর্থ দেয়া হয় তখনো লিলিয়ান ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন। সারকোজি অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে ফোর্বস মিডিয়া ডকুমেন্টেশনসহ রিপোর্ট ছাপায়। সেই সূত্র ধরে সারকোজির বিরুদ্ধে উৎপীড়ন ও অর্থ আত্মসাতের মামলা হয়েছে।
নির্বাচনী প্রচারণায় বেআইনিভাবে এই সব উৎস থেকে অর্থ ব্যবহারের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি সারকোজি। ২০১২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ভুয়া অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে প্রায় এক কোটি ৮০ লাখ ইউরো নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যয় করেছিলেন। অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সারকোজি। আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে তিনি আপিল করেছিলেন। ২০১২ সালের নির্বাচনে লড়াইয়ে হেরে যান। এ ছাড়া ২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়াইয়ে নামার ইঙ্গিত দিলেও এতে ব্যর্থ হয়েছেন। সারকোজির বিরুদ্ধে অভিযোগ- সাবেক এ প্রেসিডেন্টের রাজনৈতিক দল ইউনিয়ন ফর অ্যা পপুলার মুভমেন্ট পার্টি (ইউএমপি) নির্বাচনী প্রচারণার জন্য একটি কোম্পানিকে নিয়োগ দিয়েছিল। নির্বাচনের পরে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের অভিযোগ ওঠে। আদালত বলছে, নির্বাচনী প্রচারণার সময় অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের বিষয়টি জানতেন সারকোজি। এ তথ্য গোপনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বিচার শুরু হয়। নির্বাচনী প্রচার কাজে ‘বাইগমালিয়ন’ নামের একটি পাবলিক রিলেশনস কোম্পানিকে নিয়োগ দিয়েছিল সারকোজির দল। ওই কোম্পানির আর্থিক কেলেঙ্কারি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে পরিচিতি পেয়েছে।
নিকোলাস সারকোজি এক দিনে ১০ হাজার পাউন্ড খাবারের জন্য ব্যয় করেছেন। তার এলিজি প্রাসাদে ১২১টি গাড়ি রয়েছে নিজের। গাড়ির ইনস্যুরেন্সের জন্য এক লাখ পাউন্ড এবং তেল খরচ হয় দুই লাখ ৭৫ হাজার পাউন্ড। লন্ডন থেকে এই তথ্য প্রকাশ পাওয়ায় পাউন্ড ব্যবহার করা হয়েছে। তার জীবনযাত্রা নিয়ে L'argent de l'Etat (Money from the State) নামে বইও প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে আয়েশী জীবনের এসব নানা তথ্য প্রকাশ পায়। ডেইলি মেইল সমালোচনা করে বলেছে, সারকোজি প্রাইভেট ও পাবলিক অ্যাকাউন্টের মৌলিক সীমারেখা অবজ্ঞা করেছেন। তিনি পাঁচ লাখ পাউন্ডের গার্ডেন পার্টি বাতিল করেছেন সত্যি, কিন্তু রাষ্ট্রীয় খরচে মেডিক্যাল টিম রাষ্ট্রীয় প্রাইভেট জেট বিমান ব্যবহার করে তার পুত্র পিয়ারেকে দেখভাল করার জন্য ইউক্রেন পাঠান এবং সেখান থেকে তাকে দেশে নিয়ে আসেন। এতে খরচ হয় ২২ হাজার পাউন্ড। দেখা যায়, বিদেশ সফরের খরচও কম নয়। তিনি এয়ারবাস এ৩৩০ ব্যবহার করেন। এটার নাম দেয়া হয়েছিল ‘সার্কো ওয়ান’। এই বিমান সরকারি তহবিলের ২১৫ মিলিয়ান পাউন্ড নিয়ে যায়। তার বার্ষিক খরচ ৯৫ মিলিয়ন পাউন্ড।
ফ্রান্সের ৩০০ জন ব্যক্তি কুরআনের কিছু আয়াত মুছে ফেলার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তাদের দাবি, আয়াতগুলো ইহুদি-খ্রিষ্টানদের হত্যা ও শাস্তির কথা বলেছে। ফরাসি পত্রিকা লে পারিশিয়ান, ২১ এপ্রিল, ২০১৮ সালে একটি ম্যানিফেস্টো ছাপায়। ৩০০ জন ফরাসি গণ্যমান্য ব্যক্তি ওখানে স্বাক্ষর করেন। ওই তালিকায় নিকোলাস সারকোজি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ম্যানুয়েল ভালস, সেরা গায়ক চার্লস আজনাভোর প্রমুখও ছিলেন। মুসলমানরা প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, এরা ইসলামের বিষয়ে মূর্খ। রঙধনু থেকে যেমন কোনো একটি রঙ কেড়ে নেয়া চলে না, তেমনি কুরআন থেকে কোনো আয়াত মুছে ফেলা সম্ভব নয়।’
উল্লেখ্য, ফ্রান্সে মুসলমানের সংখ্যা ১০ লাখেরও বেশি।
ফরাসি এ্যাকাডেমিকরা তর্কে জড়িত হয়েছেন এই প্রশ্নে যে, মৌলবাদ ও সন্ত্রাসবাদ বিস্তারে ইসলামের কোনো ভূমিকা নেই। প্রেসিডেন্ট ওল্যান্দের সময় প্রধানমন্ত্রী ম্যানুয়েল ভালস, নিরাপত্তার নামে সমুদ্রপাড়ে মুসলিম মহিলারা যে বুরকিনি পরত সেগুলো নিষিদ্ধ করেন। তার মতে, ‘ইসলাম একটি সমস্যা’। ম্যাক্রোঁ ২০১৫ সালে ক্ষমতায় আসেন। তিনি মুসলমানদের সব ধরনের বিদেশী তহবিল বন্ধ করেন অথচ খ্রিষ্টান ও ইহুদিদের অর্থ নিয়ে কোনো নির্দেশনা দেননি।
ইহুদিদের একটি সংগঠন ‘দ্য ইউনিয়ন অব ফ্রেঞ্চ জিউস ফর পিস’ সব ধরনের ইসলামবিদ্বেষের সমালোচনা করে। তারা বলে, অযথা ইহুদিদের নিয়ে ফ্রান্স চিন্তিত; অথচ ফিলিস্তিনে যে জাতিগত নিধন চলছে, সে বিষয়ে নীরব। এ জন্য সংগঠন নিন্দা জানায়। বোরকা বন্ধ করার জন্য সারকোজি প্রশাসনও নানা উদ্যোগ নেয়। সারকোজি বলতেন, বোরকা ‘দাসত্বের প্রতীক’।
সেক্যুলার ফ্রান্স গঠনের মানসে ২০০৩ সালে নিকোলাস সারকোজি ফ্রেঞ্চ কাউন্সিল অব মুসলিম গঠন করেছিলেন। ইসলামকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে তখন তিনি ধর্মীয় বিষয়াদি আউট সোর্সিং করেছিলেন। ইসলামে মধ্যপন্থা প্রয়োগ করে তিনি মূল বিষয়গুলো বাদ দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু রাষ্ট্র বিধানানুসারে এটি করতে পারে না। অথচ ৩০ বছর ধরে ফরাসিরা সেটাই করছে।
সারকোজির তৃতীয় স্ত্রী কার্লা ব্রুনি সাজা ঘোষণার পর বলেন, ‘ফাইট চলবে’। ৫৩ বছরের ব্রুনি একজন গায়িকা, নীতিকবিতা লেখিকা ও সুপার মডেল। সারকোজির বিরুদ্ধে যে সব অপরাধ রয়েছে সেগুলোতে দোষী প্রমাণিত হলে ১০ বছরের জেল ও এক মিলিয়ন ইউরো জরিমানা হতে পারে মর্মে আদালত ভাষ্যকার জানান। টেলিফোনে আড়িপাতার টেপের সূত্র ধরে অপরাধের তদন্ত শুরু হলে ‘থলের বিড়াল’গুলো বের হতে থাকে। সারকোজির নিজের কণ্ঠ অস্বীকার করার কোনো উপায় ছিল না। বিচারকালে সারকোজি আদালতে বলেছিলেন, ‘বিন্দুমাত্র করাপশনও করিনি।’ ১৭ মার্চ, ২০১২ সালের নির্বাচনে অতিরিক্ত খরচের জন্য তার আরেকটি বিচার শুরু হচ্ছে। গেল জানুয়ারিতে রাশিয়ার বিষয়ে অনাবশ্যক প্রভাব বিস্তারের আরেক অপরাধের সূত্র পেয়েছেন তদন্তকারীরা। রাশিয়ার পুতিন, তুরস্কের এরদোগান ও ইসরাইলের নেতানিয়াহু খুবই অপছন্দ করেন সারকোজিকে। পুতিন সারকোজিকে সামনাসামনি বলেছিলেন, ‘ফ্রান্স এত বড় (এক হাত দেখিয়ে); আমার রাশিয়া এত বড় (দুহাত দেখিয়ে)’ পুতিন সারকোজিকে সাবধানও করেছিলেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নে তুরস্কের সদস্য পদে জার্মানি সমর্থন দিলেও সারকোজি বিরোধিতা করায় এরদোগান সাবধানবাণী উচ্চারণ করেছিলেন। সারকোজি ওবামাকে বলেছিলেন ‘নেতানিয়াহু একজন মিথ্যুক’। এতে নেতানিয়াহু ক্ষেপেছিলেন এবং সারকোজিকে ‘বাজে লোক’ ও ‘অর্থহীন কথা’ এসব মন্তব্য করেছিলেন।
সারকোজি একটি বই লিখেছেন 'The Time of Storms', সেটি এখন বেস্ট সেলার। সারকোজির ফ্যানরা বইতে দস্তখত নিতে তার কাছে ছুটে যাচ্ছেন। গাদ্দাফির পরিবারের লোকজন ও ফ্যানরা বলছেন, সামনে ‘আরো খেলা’ শুরু হচ্ছে।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব