ফেনী নদীতে ‘মৈত্রী সেতু’ : কার লাভ কত

অন্য এক দিগন্ত ডেস্ক | Mar 10, 2021 03:12 pm
ফেনী নদীতে ‘মৈত্রী সেতু’ : কার লাভ কত

ফেনী নদীতে ‘মৈত্রী সেতু’ : কার লাভ কত - ছবি সংগৃহীত

 

বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তে ফেনী নদীর ওপর দু’দেশের মধ্যে সংযোগকারী সেতুটি মঙ্গলবার উদ্বোধন করা হয়েছে। সেতুটির এক প্রান্ত বাংলাদেশের খাগড়াছড়ি জেলার রামগড়ে, অন্য প্রান্ত ভারতের দক্ষিণ ত্রিপুরার সাব্রুম শহরে।

ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে বিজেপি সরকারের তিন বছর পূর্তির দিনে ৯ মার্চ দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক ভার্চ্যুয়াল অনুষ্ঠানে এই সেতুর উদ্বোধন করেন। এই অনুষ্ঠানে রেকর্ড করা এক ভাষণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রাজনীতির সীমারেখা বাণিজ্যে বাধা হতে পারে না।

দু’দেশের কর্মকর্তারা বলছেন, এই সেতুর মাধ্যমে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে ভারতের ত্রিপুরাসহ দেশটির উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর পণ্য আনা নেয়া সহজ হবে। কিন্তু বাংলাদেশের লাভ কতটা হবে- এমন প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশের জন্যও এটি ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বড় সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে।

বাংলাদেশে-ভারতের সংযোগকারী সেতুর গুরুত্ব
এই প্রথম কোনো নদীতে সেতুর মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারতে সড়কপথে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করা হলো। বাংলাদেশের খাগড়াছড়ির রামগড় থেকে ফেনীর নদীর ওপর ভারতের ত্রিপুরার সাব্রুম শহরকে যুক্ত করার এই সেতু লম্বায় দুই কিলোমিটার। এর নাম দেয়া হয়েছে ‘মৈত্রী সেতু’। ভারতের অর্থায়নে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে।

ভারতের ত্রিপুরা, মিজোরামসহ দেশটির উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্যের সাথে সরাসরি যোগাযোগ বাড়ানোর লক্ষ্যে এই সেতু নির্মাণ করার কথা দুই দেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। ফেনী নদীর ওপর এই সেতু থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের দূরত্ব মাত্র ৮০ কিলোমিটার।

মৈত্রী সেতুতে বাংলাদেশের লাভ কতটা?
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেছেন, এই সেতুর ফলে ভারতের জন্য সুবিধা বেশি হবে। তবে চট্টগ্রাম বন্দর ও রাস্তা ব্যবহারের জন্য শুল্ক আদায় করে বাংলাদেশ লাভবান হতে পারে বলে তিনি মনে করেন।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেছেন, ‘ভারতের দিক থেকে সুবিধার মাত্রাটি হয়তো শুরুর দিকে বেশি মনে হচ্ছে। তবে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার হবে, ফলে বন্দরের বিভিন্ন সেবা নেয়ার জন্য মাশুল বা শুল্ক বাংলাদেশ হয়তো পাবে। এছাড়া অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যবহারের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ শুল্ক নিতে পারবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এই সেতু মূলত ভারতের উভয় পাশের রাজ্যগুলোর মধ্যে সংযোগ স্থাপনকে সহজ করবে। তবে দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশের জন্য এটি ইতিবাচক হতে পারে। এর মাধ্যমে ত্রিপুরার সাথে বাংলাদেশ যুক্ত হলেও মেঘালয়, মণিপুরসহ যেসব রাজ্য রয়েছে, ওইগুলোর যেহেতু মিয়ানমারের সাথে সংযোগ স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে, এ ক্ষেত্রে সড়কপথে বাংলাদেশেরও মিয়ানমারের সাথে সংযোগ স্থাপনের সুযোগ রয়েছে।’

সিপিডির এই গবেষক মনে করেন, এই সেতু ব্যবহার করে ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর জন্য পণ্য আনা নেয়া করতে চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর চাপ বাড়তে পারে। এই দিকেও নজর দিতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক কানেকটিভিটি নিয়ে কাজ করেন। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য ফেনী নদীর ওপর নির্মিত মৈত্রী সেতু অনেক সুবিধা দেবে।

অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন বলেন, ‘ভারতের সাথে কানেকটিভিটি আমাদের খুবই দরকার। কারণ আমরা এখনো মিয়ানমারে কোনো স্থিতিশীল অবস্থা দেখছি না। এ জন্য মিয়ানমারের সাথে অর্থনৈতিক করিডোর নিয়ে একটা সন্দেহ রয়েছে।’

অধ্যাপক ইয়াসমিন আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলে অ্যাক্সেস পাওয়া মানে হচ্ছে, আমরা একটা বার্গেনিং পাওয়ার তৈরি করতে পারি। ইতোমধ্যে আমরা নেপালের সাথে একটা (করিডর) তৈরি করেছি। এ ছাড়া ভারতের উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলোতে বাংলাদেশের পণ্যের একটা বিশাল মার্কেট আছে। যদিও অনেকে যুক্তি দেবেন যে এই সেতুর মাধ্যমে ভারতের জন্য পণ্য আনা নেয়া সহজ হবে। কিন্তু এর সাথে আমার দেশের পণ্য যাওয়াটাও সহজ হবে। আমাদের দু’টি দিকই খেয়াল রাখতে হবে।’

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছিলেন ২০১৫ সালের জুন মাসে। ভার্চ্যুয়াল অনুষ্ঠানে সেতুটির উদ্বোধন করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এটিকে দু’দেশের মধ্যে নতুন বাণিজ্য করিডোর হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

অনুষ্ঠানে এক ভিডিও বার্তায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এই সেতু আমাদের দু’দেশের মাঝে শুধু সেতু বন্ধনই রচনা করবে না, ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও বিরাট অবদান রাখবে। শুধু চট্টগ্রাম পোর্ট নয়, চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরও ত্রিপুরাবাসী ব্যবহার করতে পারবে।’

বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছে, দু’দেশের মধ্যে চুক্তির মাধ্যমে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। তবে চট্টগ্রাম বন্দর ও রাস্তা ব্যবহারে শুল্ক কতটা হবে- তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। তা ছাড়া উদ্বোধন হলেও সেতুটি পুরোপুরি চালু হতে আরো কিছুটা সময় লেগে যেতে পারে।

সূত্র : বিবিসি


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us