ব্রাহমা জাত কি দেশীয় গরুদের বিলীন করে দিতে পারবে?

Mar 10, 2021 01:24 pm
ব্রাহমা জাতের গরু

ব্রাহমা জাতের গরু - ছবি সংগৃহীত

 

রাজধানী ঢাকার বিমানবন্দরে সম্প্রতি কমপক্ষে ৩০টি আমদানি করা গরু বাজেয়াপ্ত করা হয়। আমদানি নিষিদ্ধ বেশি গোশত উৎপাদনকারী ব্রাহমা জাতের গরুগুলো মিথ্যা তথ্য দিয়ে আনা হচ্ছিল বলে পরে জানা গেছে।

ব্রাহমা জাতের গরু বাংলাদেশে উৎপাদন ও পালন নিষিদ্ধ না হলেও ২০১৬ সালে এক নীতিমালায় এ জাতটি আমদানি নিষিদ্ধের তালিকায় ঢোকানো হয়েছে। ফলে গত ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে আটক করা ব্রাহমা গরুগুলো আনা হচ্ছিলো ফ্রিজিয়ান জাত বলে ঘোষণা দিয়ে।

আইন বহির্ভূতভাবে আমদানি করায় গরুগুলো বাজেয়াপ্ত করে সাভারের কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।

তথ্য বলছে, ব্রাহমা জাতের উৎপাদন বাড়ায় দেশে গোশতের উৎপাদন বেড়েছে ও চাহিদা মেটানো সহজ হয়েছে। এই জাতের গরু পালন সহজ ও লাভজনক। রোগ বালাইও অন্যান্য জাতের চেয়ে কম হওয়ায় স্থানীয় অনেক খামারি এই গরু আমদানি করতে চান।

ব্রাহমা জাতের গরুর বৈশিষ্ট্য

বাংলাদেশে যেসব ব্রাহমা জাতের গরু রয়েছে এর প্রায় সবই কৃত্রিম পদ্ধতিতে প্রজনন করা।

প্রাণীসম্পদ অধিদফতরের কৃত্রিম প্রজনন বিভাগের উপ-পরিচালক ডা: ভবতোষ কান্তি সরকার বিবিসিকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ব্রাহমা জাতের গরুর সিমেন বা শুক্রাণু এনে সরকার কয়েকটি জেলায় স্থানীয় খামারিদের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে এই জাতের গরু উৎপাদন শুরু করে। দেশে ২০০৮ সালে প্রথম প্রাণীসম্পদ অধিদফতর ‘বিফ ক্যাটল ডেভেলপমেন্ট’ নামে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে পরীক্ষামূলকভাবে ব্রাহমা গরু উৎপাদন কর্মসূচি শুরু করে। ১১টি উপজেলায় তিন বছরের জন্য এ কর্মসূচি চালু হলেও এখন প্রায় ৫০টি জেলায় চলছে এ কর্মসূচি।

প্রাণীসম্পদ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ডা: ভবতোষ কান্তি বলেছেন, ব্রাহমা গরু মূলত গোশতের জাত বলে পরিচিত। দুধের জন্য এই গরুর তেমন খ্যাতি নেই। ব্রাহমা গরু দেখতে অনেকটাই দেশী গরুর মতো। কিন্তু আকৃতিতে বেশ বড় হয়। এই গরুর গোশতের স্বাদ দেশী গরুর মতো। এর গায়ে চর্বি কম হয়। যে কারণে পুষ্টিগুণ বেশি।

প্রাণী পুষ্টি ও জেনেটিক্স বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্রাহমা গরুর আদি নিবাস ভারতে। বর্তমানে যেসব ব্রাহমা গরু বাংলাদেশ, ভারত বা অস্ট্রেলিয়ায় দেখা যায় এগুলো মূলত ব্রাহমার সিমেন বা শুক্রাণু দিয়ে কৃত্রিম পদ্ধতিতে জন্ম নেয়া শঙ্কর জাতের গরু।

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানিম্যাল নিউট্রিশন, জেনেটিক্স অ্যান্ড ব্রিডিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আল-নূর মোহাম্মদ ইফতেখার রহমান বলেছেন, ব্রাহমা জাতের গরু নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে। যে কারণে এই জাতের গরুর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে চূড়ান্ত কথা বলা যায় না।

সাধারণভাবে ব্রাহমা গরুর জনপ্রিয়তার প্রধান কারণের মধ্যে তিনটি বৈশিষ্ট্যকে গুরুত্ব দেয়া হয়-
১. এর উচ্চ তাপমাত্রা সহনশীলতা
২. দীর্ঘ জীবন ও
৩. ক্রস-ব্রিডিংয়ে উচ্চফলন।

সাধারণত একটি পূর্ণবয়স্ক ব্রাহমা জাতের ষাঁড়ের ওজন ৮০০ কেজি থেকে ১০০০ কেজির বেশি হতে পারে। আর একটি পূর্ণবয়স্ক ব্রাহমা জাতের গরু (গাভী/আবাল) ওজন হবে ৫০০ কেজি থেকে ১০০০ কেজি। ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রায় ব্রাহমা গরু সুস্থ স্বাভাবিক থাকতে পারে। সাধারণত একটি ব্রাহমা গরু ১৫ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত বাঁচে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আরো দীর্ঘ জীবন পাওয়ার নজির আছে।

এ ছাড়াও উচ্চ তাপমাত্রা সহনশীল হওয়ার কারণে ব্রাহমা জাতের গরুর রোগবালাই অনেক কম হয়।

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আল-নূর মোহাম্মদ ইফতেখার রহমান আরো বলেন, গোশত বেশি হওয়ার কারণে দেশে দ্রুতই জনপ্রিয়তা পেয়েছে এই জাতের গরু। কুরবানির সময় বাজারে অস্বাভাবিক দাম হাঁকানো গরুগুলো মূলত এই ব্রাহমা জাতেরই গরু। দেশের কয়েকটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন ব্রাহমা জাতের গরু নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছে। সেগুলোর ফলাফল জানা গেলে আগামী দিনে এ জাতের গরুর উৎপাদন দেশে আরো বাড়বে।

আমদানি নিষিদ্ধ কেন?

দেশে যেসব পশু কুরবানি হয়, এক সময় এর একটা বড় অংশ আসত ভারত থেকে। কিন্তু ২০১৪ সালে ভারতে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশে গরু আসা বন্ধে সীমান্তে কড়াকড়ি করা হয়। যে কারণে একপর্যায়ে দেশীয় পর্যায়ে গোশতের চাহিদা পূরণ নিয়ে সংশয় তৈরি হয়।

প্রাণীসম্পদ অধিদফতরের উপ পরিচালক ডা. সরকার বলেছেন, সে সময় দেশীয় গোশতের চাহিদা পূরণে সরকার ব্যাপকভাবে ব্রাহমা গরু উৎপাদনের দিকে যায়।

তিনি বলেন, ব্রাহমা জাতের গরু পালন খামারিদের জন্য সহজ ও লাভজনক হওয়ায় এবং রোগ-বালাই অন্যান্য জাতের গরুর চেয়ে কম হওয়ায় স্থানীয় খামারিদের কাছে এই গরু পালন জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

এ মূহুর্তে দেশে গরুর গোশতের চাহিদার একটি বড় অংশ আসছে ব্রাহমা জাতের গরুর গোশত থেকেই। কিন্তু ২০১৬ সালে সরকারের কৃত্রিম প্রজনন নীতিমালার অধীনে বেসরকারিভাবে ও ব্যক্তি উদ্যোগে খামারিদের মাধ্যমে ব্রাহমা গরু আমদানি নিষিদ্ধ করে।

কারণ ব্যাখ্যা করে ডা. ভবতোষ কান্তি বলেন, এখন খামারিরা সরকারের কাছ থেকে সিমেন নিয়ে প্রজনন করছে। কিন্তু আমদানির অনুমতি পেলে খামারিরা ব্যাপক হারে এই গরু উৎপাদন করবে। তিনি বলেন, ‘কিন্তু এই জাতের গাভী তার আকৃতি অনুযায়ী দুধ দেয় না। এখন খামারিরা যদি ব্যাপক হারে ব্রাহমা উৎপাদন করে তাহলে দেশে গরুর দুধের উৎপাদন একেবারেই কমে যাবে। মূলত এ জন্যই বেসরকারি পর্যায়ে ব্রাহমা গরু আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।’

সরকারের আশঙ্কা ব্যাপক হারে ব্রাহমা গরু উৎপাদন হলে হোলস্টেইন জাতের বা ফ্রিজিয়ান জাতের গরুর উৎপাদনে আগ্রহ হারাবে খামারিরা। এই জাতের গরু দুধের উৎপাদনের জন্য খ্যাত। দেশে দুগ্ধ উৎপাদন খাতকে সুরক্ষা দেয়ার জন্যই মূলত নিষিদ্ধ করা হয়েছে ব্রাহমা জাতের গরুর আমদানি।

সূত্র : বিবিসি


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us