অন্ধত্বের ঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে যেসব কারণে
অন্ধত্বের ঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে যেসব কারণে - ছবি সংগৃহীত
স্টেরয়েড ইনডিউসড গ্লুকোমা কি?
দীর্ঘ দিন ধরে স্টেরয়েড ব্যবহারে সেটি চোখে হোক বা খাবার অথবা ইনজেকশন হোক তাতে চোখের চাপ বা ইন্ট্রা অকুলার প্রেসার সংক্ষেপে আইও পি স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যেতে পারে। এটিকে বলা হয়, স্টেরয়েড ইনডিউসড গ্লুকোমা। সবার ক্ষেত্রে এমনটি হয় না। কারো কারো বেলায় বিশেষ এক ধরনের স্টেরয়েড সংবেদনশীলতা থাকে যাদেরকে বলা হয় স্টেরয়েড রেসপন্ডার। তাদের বেলায় দীর্ঘ দিন অধিক মাত্রায় স্টেরয়েড ব্যবহারে এমনটি হতে পারে। প্রাথমিক অবস্থায় চোখের প্রেসার বেড়ে যাওয়াটা সাময়িক। স্টেরয়েড বন্ধ করে দিলে চোখের প্রেসার এমনিতেই স্বাভাবিক হয়ে আসে। কোনো ধরনের বাড়তি ওষুধের প্রয়োজন হয় না।
স্টেরয়েড ইনডিউসড গ্লুকোমার পরিণতি
প্রাথমিক অবস্থায় বিষয়টি ধরা পড়লে সাথে সাথে স্টেরয়েড বন্ধ করে দিলে কিছু দিনের মধ্যেই চোখের প্রেসার স্বাভাবিক হয়ে আসে। কোনো ধরনের দৃষ্টি সমস্যা হয় না। অন্যথায় দীর্ঘ দিন ধরে চোখের উচ্চচাপ বা স্টেরয়েড ইনডিউসড গ্লুকোমার সমস্যাটি চলতে থাকলে গ্লুকোমায় চোখের যে পরিণতি হয় এখানেও একই পরিণতি হবে অর্থাৎ চোখের স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে স্থায়ীভাবে দৃষ্টি সমস্যা দেখা দিতে পারে এমনকি অন্ধত্ব বয়ে আনতে পারে।
ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা
১. পারিবারিকভাবে যাদের গ্লুকোমার প্রবণতা বিদ্যমান।
২. যাদের আগে স্টেরয়েড ইনডিউসড গ্লুকোমার প্রাদুর্ভাব আছে।
৩. টাইপ-১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি।
৪. উচ্চমাত্রার দৃষ্টি সমস্যা বিশেষ করে মায়োপিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি।
৫. অল্পবয়স্ক শিশু বিশেষ করে ৬ বছর বয়সের নিচে যাদের বয়স।
৬. যাদের কোলাজেন ডিজিজ যেমন এএসএলই, আর্থ্রাইটিস, স্পন্ডাইলাইটিস ইত্যাদি আছে।
সব ধরনের স্টেরয়েড সমান ঝুঁকিপূর্ণ নয়। ডেক্সামিথাসোন এবং প্রেডনিসোলোন গ্রুপের স্টেরয়েড অধিকতর সংবেদনশীল। পক্ষান্তরে ফ্লোরোমিথলন জাতীয় স্টেরয়েড অনেকটাই নিরাপদ। মুখে সেবন বা ইনজেকশনের মাধ্যমে স্টেরয়েড গ্রহণের চেয়ে সরাসরি চোখে স্টেরয়েড ব্যবহারে গ্লুকোমার ঝুঁকি বেশি। চোখে ব্যবহার সেটি ড্রপ হতে পারে; ইনজেকশন হতে পারে; ইনজেকশন আবার চোখের বাইরে বা ভেতরে হতে পারে। সাধারণত চোখে ৬ সপ্তাহের কম সময়ের জন্য ব্যবহারে তেমন একটা ঝুঁকিপূর্ণ নয়। ইনহেলার বা ত্বকে দীর্ঘ দিন ধরে স্টেরয়েড ব্যবহারেও স্টেরয়েড ইনডিউসড গ্লুকোমা হতে পারে। জন্মনিরোধক ডিপোট স্টেরয়েড ব্যবহারেও এই সমস্যাটি দেখা দিতে পারে।
স্টেরয়েড ব্যবহারে সতর্কতা
১. প্রথমত স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধের বিকল্প থাকলে স্টেরয়েড ওষুধ প্রথম বিবেচনায় না রাখাই উত্তম। যেকোনো চিকিৎসায় স্টেরয়েডের বিকল্প বেছে নেয়ার চেষ্টা করতে হবে। যেমন চোখের এলার্জির ক্ষেত্রে স্টেরয়েডের বিকল্প যেমন ওলোপেটাডিন বা অনুরূপ এন্টি এলার্জিক প্রিপারেশন দিয়ে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা দেয়া যেতে পারে।
২. চিকিৎসকের অনুমতি ব্যতীত স্টেরয়েড ব্যবহার পরিহার করতে হবে। চক্ষুবিশেষজ্ঞের পরামর্শ ব্যতিরেখে চোখে স্টেরয়েড ড্রপ ব্যবহার কোনো মতেই সমীচীন নয় ।
৩. দীর্ঘমেয়াদি স্টেরয়েড ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশেষ করে যারা স্টেরয়েড জাতীয় ইনহেলার; জন্মনিরোধক ডিপোট স্টেরয়েড অথবা কোলাজেন ডিডিজ বা ত্বকের সমস্যা বা অন্য কোনো সমস্যায় দীর্ঘমেয়াদে স্টেরয়েড ব্যবহার করেন তাদের বেলায় নিয়মিত চোখের প্রেসার বা আইও পি পরিমাপ করতে হবে। সম্ভব না হলে ক’মাস পরপর স্টেরয়েড ব্যবহারে বিরতি দিতে হবে। বিশেষ করে যাদের বেলায় ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা বিদ্যমান।
৪. কোনো সময় চোখের প্রেসার বেশি পাওয়া গেলে সাথে সাথে স্টেরয়েড ব্যবহার বন্ধ করে দিতে হবে। ৪-৬ সপ্তাহের মধ্যে চোখের প্রেসার নিজ থেকেই স্বাভাবিক হয়ে আসে।
৫. স্টেরয়েড ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিষয়টি ভালো করে রোগী বা তার লোকজনকে বুঝিয়ে দিতে হবে। বিশেষ করে নির্ধারিত মেয়াদ শেষে যেন তারা নিজ থেকে স্টেরয়েড ব্যবহার না করেন।
লেখক : এমবিবিএস, এফসিপিএস, এমএস (চক্ষু) চক্ষুবিশেষজ্ঞ ও সার্জন প্রাক্তন সহযোগী অধ্যাপক, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল এবং কনসাল্টেন্ট, আইডিয়াল আই কেয়ার সেন্টার, ৩৮/৩-৪ রিং রোড, শ্যামলী, আদাবর, ঢাকা। ফোন : ০১৯২০৯৬২৫১২