মিঠুন কি হাওয়া দেখে পাল তোলেন?
মিঠুন চক্রবর্তী - ছবি সংগৃহীত
একসময় অতিবাম মিঠুন চক্রবর্তী সিপিএম, তৃণমূল ঘুরে যোগ দিলেন দক্ষিণপন্থী বিজেপি-তে। তাকে পেয়ে কতটা লাভ হলো বিজেপির?
পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোটে 'বাঙালি মুখ' পেল বিজেপি। মিঠুন চক্রবর্তী। মৃগয়ার সেই রাগী যুবক, পরে যার ডিস্কো ড্যান্সের তালে মেতেছে গোটা ভারত। এক ছোবলে ছবি হয়ে যাওয়ার সংলাপ ইনস্ট্যান্ট ভাইরাল। মারব এখানে, লাশ পরবে শ্মশানে তো সুপার-ডুপার হিট। এহেন মিঠুন আবার ভোটের ময়দানে। ভোটের বাজারে তিনি মারটা মেরেছেন বটে, তবে কার লাশ কোথায় পড়বে, তা অবশ্য জানা নেই। জানা যাবে ২ মে ভোটগণনার পর।
বিজেপি এত দিন ধরে হন্যে হয়ে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে একজন বাঙালি মুখ খুঁজছিল। প্রথম পছন্দ ছিল দাদা, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। অসুস্থ দাদা রাজি না হওয়ায় বিজেপি আঁকড়ে ধরেছে মিঠুনকে। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে মিঠুন প্রবাসী বাঙালি। তিনি মুম্বই ও উটিতে থাকেন। শুটিং থাকলে বা টিভি-র রিয়ালিটি শোয়ের বিচারক হিসেবে কলকাতায় আসেন। তিনি ধুতি-পঞ্জাবি পরে ব্রিগেডের মাঠে বঙ্গসন্তানের ইমেজটা ঝালিয়ে নিতে চেয়েছেন।
এ পর্যন্ত ঠিক আছে। পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে গত কিছু বছর ধরে একটা প্রবণতা শুরু হয়েছে. নায়ক-নায়িকাদের রাজনীতিতে নিয়ে আসা। খেলোয়াড়দের ভোটে দাঁড় করানো। তৃণমূলের তারকা ব্রিগেড খুবই শক্তিশালী। এবারো অনেক তারকাকে প্রার্থী করেছেন মমতা। তবে তাদের সঙ্গে মিঠুনের অনেক পার্থক্য। দেব থেকে শুরু করে সায়ন্তিকা, শুভশ্রী, কাঞ্চন মল্লিকেরা ঘরের মাঠে, মানে টলিউডের তারকা। মিঠুন বলিউডের সেই সময়ের তারকা, যখন হিরো লার্জার দ্যান লাইফ হতো। অমিতাভ বচ্চন যখন বলিউড শাসন করছেন, তখন মিঠুন নিজগুণে জনপ্রিয় তারকা হতে পেরেছেন। তাই সর্বভারতীয় ইমেজে অন্যদের থেকে মিঠুন অনেক এগিয়ে।
প্রচারের মুখ
পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি-র প্রচারের মুখ হলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এখন পর্যন্ত বিজেপি কোনো মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি। মোদিকে সামনে রেখেই ভোটে লড়বে তারা। রাজ্যে জনসভা শুরু করে দিয়েছেন মোদি। পশ্চিমবঙ্গে আট পর্বের ভোটে বারবার তিনি আসবেন প্রচারে। তার ভরসাতেই ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন দেখছে বিজেপি। হলদিয়ার জনসভায় মোদির ছবি।
কোনো সন্দেহ নেই, সৌরভ গাঙ্গুলিকে সঙ্গে পেলে বিজেপি-র লাভ হতো। মিঠুনকে পেয়ে তা হবে না। কারণ, সৌরভের পশ্চিমবঙ্গজুড়ে সব বয়সীদের মধ্যে আবেদন আছে। মিঠুনের আবেদন এখন আর ততটা নেই। তিনি অতীতের তারকা। ডিস্কো ড্যান্সার এ প্রজন্মকে আর আকৃষ্ট করে না। তাকে দেখতে ভিড় হতে পারে কিন্তু উন্মাদনার সম্ভাবনা কম। কিন্তু তিনি আবেদন করলে বিরোধী শিবির থেকে ভোট পদ্মে পড়বে কি? টিভির কল্যাণে তিনি মহাগুরু। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে গুরু বা মহাগুরু এখনো পর্যন্ত একজনই। উত্তম কুমার। তাকে টপকে যাওয়া দূরস্থান, কাছাকাছি কেউ পৌঁছতে পেরেছেন কি? আমি অন্ধ্রে এনটি রাম রাও-এর প্রচার দেখেছি। তিনি তেলুগু সিনেমায় দেবতাদের ভূমিকায় বেশি অভিনয় করেছেন। সাধারণ মানুষ তাকে সামনে দেখে পাগল হয়ে যেত। সেই উন্মাদনা প্রবাসী বাঙালি মিঠুনকে ঘিরে বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির ময়দানে হওয়ার সম্ভবনা কম।
মিঠুনকে ভোটের মুখ করা নিয়ে বিজেপি কোনো কথা বলেনি। মিঠুন নিজেও প্রসঙ্গটি এড়িয়ে গেছেন। তিনি কোনো গোপন কথা ফাঁস করতে চাননি। তা প্রোটোকল বিরোধী। বিজেপি-তে যোগ দিয়ে প্রোটোকল খুব ভালভাবে মেনে চলছেন মিঠুন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারাতে গেলে বিজেপি-কে নিজের সংগঠন, মোদীর জনপ্রিয়তা, অমিত শাহের ভোটকৌশল, সঙ্ঘ পরিবারের সমর্থন, তৃণমূলের বিরুদ্ধে ক্ষোভকে কাজে লাগিয়েই তা করতে হবে। সেখানে মিঠুনের পক্ষে প্রধান ভূমিকা নেয়া খুব কঠিন। সেখানে তার নায়ক হয়ে ওঠার সম্ভাবনা কম। তাকে সম্ভবত পার্শ্বচরিত্র হিসেবেই থেকে যেতে হবে।
সূত্র : ডয়চে ভেলে