কুয়াশার জানা-অজানা

মিজানুর রহমান | Mar 08, 2021 04:28 pm
কুয়াশার জানা-অজানা

কুয়াশার জানা-অজানা - ছবি সংগৃহীত

 

কুয়াশা হচ্ছে এক ধরণের মেঘ (ক্লাউড), যা ভূমির কাছাকাছি থাকি। কুয়াশা ভারীও হতে পারে আবার হালকা হতে পারে। কুয়াশা যত ঘন, দৃষ্টিগ্রাহ্যতা তত কম। মাঝে মাঝে কুয়াশা এত ঘন হয়ে যায় যে শহরের আইকনিক ভবনগুলোও দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে যায়! যেমন, লন্ডনে যখন অতিরিক্ত কুয়াশা পড়ে, তখন লন্ডন ব্রিজ খালি চোখে দেখা যায় না।

কোনো একটি স্থানের তাপমাত্রা যখন কমে যায়, তখন সেখানকার মাটিতে থাকা আদ্রতা উপরে উঠে গিয়ে কুয়াশা তৈরি করে । কুয়াশা তৈরী হওয়ার জন্য প্রচুর পরিমান পানি বাষ্পীভূত হতে হয়।

আমরা শীতকালে যে কুয়াশা দেখতে পাই, সেটি হচ্ছে বাসাতে জমে থাকা কুয়াশা। কুয়াশা যদি এভাবে না জমতো, তাহলে তা আমাদের চোখে ধরা পড়তো না। অনেক সময় ঘন কুয়াশা বৃষ্টির মতো ঝরে পড়ে আর পশ্চিমা দেশগুলোতে শীতের তাপমাত্রা আরো কম থাকায় সেখানে এই কুয়াশাটাই হয় ‘স্নো ফল’।

বাসাতে কুয়াশা জমার জন্য কিছু পরিমাণ দূষিত বাতাস দরকার। আমরা জাতি দূষিত বাসাতে বিভন্ন ধরণের মাইক্সোস্কোপিক পার্টিকলস থাকে। কুয়াশা এসব ছোট ছোট পার্টিকলসের আশেপাশে জমা হতে হতে একসময় ঘন হতে শুরু করে এবং তখন এটি আমাদের দৃষ্টিগ্রাহ্য হয়। সমুদ্রের আশেপাশে বা নোনা পানির জলাধারের আশেপাশে আমরা যে কুয়াশা দেখি সেটির নাম ‘সী ফগ’। এই ধরণের কুয়াশা সাধারণত বাসাতে ভেসে থাকা লবণের কণার সঙ্গে যুক্ত থাকে।

আবহাওয়ার আর্দ্রতা ও তাপমাত্রার উপর ভিত্ত করে কোনো কোনো কুয়াশা হঠাৎ তৈরী হতে পারে আবার হঠাৎ নিঃশেষ হয়ে যেতে পারে। এই ধরণের কুয়াশাকে বলে ‘ফ্ল্যাশ ফগ’।
অরেক ধরণের কুয়াশা আছে, যেটি ঠিক কুয়াশা না। ইংরেজীতে এর নাম ‘মিস্ট’। কুয়াশার তুলনায় ‘মিস্ট’ আরও হালকা। স্বাভাবিক কুয়াশায় মানুষের ভিজিবিলিটি থাকে এক কিলোমিটার আর মিস্টে মানুষের ভিজিবিলিটি থাকে দুই থেকে তিন কিলোমিটার।

আরেক ধরণের কুয়াশা আছে, যা ’ভ্যালি ফগ’ নামে পরিচিত। পাহাড়ে গেলে এই কুয়াশা নিয়ে অনেকের মধ্যেই বিভ্রান্তি দেখা দেয়। এটা কি কুয়াশা নাকি মেঘ, এটা অনেকেই নিশ্চত হতে পারেন না।

ভ্যালি ফগ তৈরী হয় পাহাড়ি উপত্যকায়। আর্দ্র বাতাস যখন পাহাড়ের গায়ে ধাক্কা খেয়ে আটকে যায়, তখন ভ্যালিতে কুয়াশা তৈরী হয়। পাহাড়ের উপর দাঁড়িয়ে আশেপাশে তাকালে আমরা এই কুয়াশাটাই দেখি। পাহাড়ি এলাকায় দূষিত বায়ু থাকলে এই কুয়াশা মাঝে মাঝে ভয়ঙ্করও হতে পারে। ১৯৩০ সালে বেলজিয়ামের মিউজ ভ্যালিতে বায়দূষণের প্রভাবে তৈরী হওয়া ঘন কুয়াশায় অন্তত ৬০ জন মানুষ মারা গিয়েছিলেন।

প্রাচীন অনেক সংস্কৃতিতে ব্যবহারের জন্য কুয়াশা থেকে পানি সংগ্রহ করার প্রচলণ ছিল। মানুষ গাছের নিচে বড় পাত্র রাখতো এবং গাছের পাতা বেয়ে কুয়াশা নিচের পাত্রে জমা হতো এবং সেই পানি মানুষ দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করতো। কিন্তু কুয়াশার পানি কখনই বৃষ্টির পানির বিকল্প হতে পারেনি। বর্তমানে ইঞ্জিনিয়াররা কুয়াশার পানি সংগ্রহের আরও সহজ ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি আবিস্কারের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত এ কাজে সবচয়ে বড় সফলতা হচ্ছে ‘ফগ ক্যাচারস’।

ফগ ক্যাচারস হচ্ছে বিশালাকাল এক ধরণের স্ক্রিন যেগুলো বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলে স্থাপন করা হয়। যখন কুয়াশার স্তুপ ওই স্কিনের সঙ্গে ধাক্কা খায়, তখন কুয়াশাতে থাকা পানির কনাগুলো সেই স্ক্রিন বেয়ে নিচে রাখা বিশালাকার পাত্রগুলোতে জমা হয়। এভাবে এক দিনে শত শত গ্যালন পানি সংগ্রহ করা সম্ভব। শুষ্ক অঞ্চলে, যেখানে বৃস্টিপাতের পরিমাণ অনেক কম, সেখানে এ পদ্ধতি অনেক উপকারে আসতে পারে।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us