তেঁতুলের বিচিতে এত উপকার!
তেঁতুলের বিচিতে এত উপকার! - ছবি সংগৃহীত
আচার ও আচার জাতীয় খাবার হিসেবে তেঁতুল বেশ জনপ্রিয়। কেবল ফল হিসেবে এর পরিচিতি থাকলেও, তেঁতুলের বিচিও যে উপকারী তা হয়তো সবার জানা নাও থাকতে পারে। কিন্তু তেঁতুলের বিচি দেশীয় উৎপাদনে বাজারের চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না। ফলে বিদেশ থেকে এখন আমদানি হচ্ছে। সম্প্রতি ভারত থেকে ৯০ টন তেঁতুলের বিচি দেশে আমদানি করা হয়েছে।
তেঁতুলের বিচি আমদানি করার কথা সচরাচর শোনা যায় না। আর এটি যে একেবারে ফেলনা নয়, তা বোঝা যাচ্ছে দাম জেনে, প্রতি টন তেঁতুলের বিচি ২০০ মার্কিন ডলার মূল্যে আমদানি করা হয়েছে।
কী কাজে লাগে তেঁতুলের বিচি?
তেঁতুলের বিচি আমদানিকারক সত্যজিৎ দাস বিবিসিকে বলেছেন, বাংলাদেশে মূলত পাটকল ও কাপড়ের মিলে সুতা রং করার কাজে তেঁতুল বিচি ব্যবহার করা হয়। তিনি বলেন, সুতার রং টেকসই করার কাজে বহু দিন ধরেই তেঁতুল বিচি ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়াও মশার কয়েল তৈরির কাজে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হয় তেঁতুলের বিচি।
জানা গেছে, দেশে মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় যেসব উদ্যোক্তা এখন কয়েল তৈরি করছেন, তারাই আমদানিকৃত তেঁতুল বিচির বড় ক্রেতা। এসব শিল্প উৎপাদন কেন্দ্রিক প্রয়োজনের বাইরে তেঁতুলের বিচি ওষুধি গুনের কারণেও খুবই দরকারি একটি জিনিস।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শামীম শামছি বলেছেন, তেঁতুলের বিচি ইউনানি, আয়ুর্বেদ, হোমিও ও অ্যালোপ্যাথিক ওষুধের কাঁচামাল হিসেবেও ব্যবহার হয়। তিনি বলেন, শুষ্ক চোখের চিকিৎসায় যে ড্রপ তৈরি হয়, তাতে তেঁতুলের বিচি ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়াও পাকস্থলীর গোলযোগ, লিভার এবং গলব্লাডারের সক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে তেঁতুলের বিচি।
গর্ভকালীন বমিভাব ও মাথাঘোরার সমস্যায় তেঁতুল বিচির শরবত উপকারী। তেঁতুলের বিচি গরম পানিতে ফুটিয়ে এক ধরনের আঠা তৈরি করা হয়, যা ছবি আকার কাজে ব্যবহার করা হয়।
সূত্র : বিবিসি
টকজাতীয় ফলে কি ঘা পাকে
ডা: আইনুন আফরোজ
টকজাতীয় ফল বা খাবার ছোটবড় সবারই পছন্দ। বিশেষ করে মেয়েরা টক একটু বেশি পছন্দ করে। এ কারণে একসময় সাধারণের মধ্যে ধারণা ছিল, অতিরিক্ত টক খাওয়ার কারণেই মেয়েদের ‘ব্রেন ডাল’ হয় বা জ্ঞানবুদ্ধি কম হয়। যদিও চিকিৎসা বিজ্ঞান এ ধরনের ধারণা কখনো পোষণ করেছে বলা হয় না। তারপরও সাধারণের মাঝে টক সম্পর্কে এ রকম একটা ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত আছে। টক সম্পর্কে এই ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হয়ে অনেকেই তাদের সন্তানদের, বিশেষ করে ১৩-১৪ বছর বয়স পর্যন্ত টকজাতীয় ফল খেতে দেন না।
তাদের ধারণা, টক খেলে ব্রেন বা মস্তিষ্কের বৃদ্ধি ঘটবে না এবং বুদ্ধি কম হবে। টকজাতীয় ফল যেমন আমড়া, আমলকী, তেঁতুল, চালতা, লেবু, জলপাই ইত্যাদি এবং যেসব খাবারে এসব ফল বাড়তি স্বাদের জন্য দেয়া হয় সেই খাবার খেলেও ‘ব্রেন ডাল’ হবে বা বুদ্ধি কম হবে- এ রকম ধারণাকে মিথ্যা প্রমাণ করে আজকালকার মেয়েরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে জ্ঞান ও বুদ্ধির প্রতিযোগিতায় সাফল্য রেখে যাচ্ছে। মেধাবী ছেলে কিংবা মেয়েদের কেউই কি তা হলে টক খায় না বা পছন্দ করে না? নিশ্চয়ই এমনটি ভাবা অবান্তর।
প্রকৃতপক্ষে টকজাতীয় ফল সম্পর্কে এ ধরনের ধারণা মোটেই সত্য নয়। বরং টকজাতীয় ফল খাওয়াই উত্তম। কারণ টকজাতীয় এসব ফলের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি ও ভিটামিন এ। ভিটামিন এ শিশুকে রাতকানা রোগের কবল থেকে রক্ষা করে আর ভিটামিন সি স্কার্ভি রোগ থেকে রক্ষা করে। অর্থাৎ মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ প্রতিরোধ করে। ভিটামিন-এ ও ভিটামিন-সি উভয় ভিটামিনই শিশু-কিশোরদের জন্য প্রয়োজনীয়। কাজেই ‘বুদ্ধি কম হবে’ এ ধারণার বশবর্তী হয়ে শিশু-কিশোরদের টকজাতীয় ফল অর্থাৎ ভিটামিন-এ ও ভিটামিন-সি থেকে বঞ্চিত করা ঠিক নয়।
এদিকে টকজাতীয় ফল খেলে ‘ব্রেন ডাল’ হয় বা বুদ্ধি কমে যায়, মস্তিষ্কের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ইত্যাদি নেতিবাচক ভ্রান্ত ধারণার কোনোটাই বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয়। টক খেলে বুদ্ধি কমে যাবে- এ রকম ধারণার কোনোই ভিত্তি নেই। বরং টকজাতীয় ফলে শিশুদের ভিটামিন-এ ও সি-সহ অন্যান্য ভিটামিন, খনিজপদার্থ ও পুষ্টি উপাদানের চাহিদা পূরণ হয়- এ কথাটিকেই বার বার স্মরণ রাখা উচিত।
শিশুদের বুদ্ধি কম হওয়া বা মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বুদ্ধি ব্যাহত করার জন্য দায়ী হচ্ছে অপুষ্টি ও আয়োডিনের অভাবসহ অনেক কারণ। কাজেই শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য সুষম খাবার গ্রহণ ও আয়োডিনযুক্ত লবণের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি শিশুকে পছন্দমতো টকজাতীয় ফল খেতে দিলে শিশুর প্রয়োজনীয় ভিটামিনের চাহিদা পূরণ হবে। এ থেকে মস্তিষ্কের ক্ষতি হওয়ার প্রশ্নই আসে না।
সুতরাং টকজাতীয় ফলের প্রতি বিরূপ মনোভাব ত্যাগ করলে অন্তত ভিটামিনের অভাবজনিত সমস্যা থেকে কিছুটা হলেও রেহাই পাওয়া যাবে।