টকজাতীয় ফলে কি ঘা পাকে

টকজাতীয় ফলে কি ঘা পাকে - ছবি সংগৃহীত
টকজাতীয় ফল বা খাবার ছোটবড় সবারই পছন্দ। বিশেষ করে মেয়েরা টক একটু বেশি পছন্দ করে। এ কারণে একসময় সাধারণের মধ্যে ধারণা ছিল, অতিরিক্ত টক খাওয়ার কারণেই মেয়েদের ‘ব্রেন ডাল’ হয় বা জ্ঞানবুদ্ধি কম হয়। যদিও চিকিৎসা বিজ্ঞান এ ধরনের ধারণা কখনো পোষণ করেছে বলা হয় না। তারপরও সাধারণের মাঝে টক সম্পর্কে এ রকম একটা ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত আছে। টক সম্পর্কে এই ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হয়ে অনেকেই তাদের সন্তানদের, বিশেষ করে ১৩-১৪ বছর বয়স পর্যন্ত টকজাতীয় ফল খেতে দেন না।
তাদের ধারণা, টক খেলে ব্রেন বা মস্তিষ্কের বৃদ্ধি ঘটবে না এবং বুদ্ধি কম হবে। টকজাতীয় ফল যেমন আমড়া, আমলকী, তেঁতুল, চালতা, লেবু, জলপাই ইত্যাদি এবং যেসব খাবারে এসব ফল বাড়তি স্বাদের জন্য দেয়া হয় সেই খাবার খেলেও ‘ব্রেন ডাল’ হবে বা বুদ্ধি কম হবে- এ রকম ধারণাকে মিথ্যা প্রমাণ করে আজকালকার মেয়েরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে জ্ঞান ও বুদ্ধির প্রতিযোগিতায় সাফল্য রেখে যাচ্ছে। মেধাবী ছেলে কিংবা মেয়েদের কেউই কি তা হলে টক খায় না বা পছন্দ করে না? নিশ্চয়ই এমনটি ভাবা অবান্তর।
প্রকৃতপক্ষে টকজাতীয় ফল সম্পর্কে এ ধরনের ধারণা মোটেই সত্য নয়। বরং টকজাতীয় ফল খাওয়াই উত্তম। কারণ টকজাতীয় এসব ফলের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি ও ভিটামিন এ। ভিটামিন এ শিশুকে রাতকানা রোগের কবল থেকে রক্ষা করে আর ভিটামিন সি স্কার্ভি রোগ থেকে রক্ষা করে। অর্থাৎ মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ প্রতিরোধ করে। ভিটামিন-এ ও ভিটামিন-সি উভয় ভিটামিনই শিশু-কিশোরদের জন্য প্রয়োজনীয়। কাজেই ‘বুদ্ধি কম হবে’ এ ধারণার বশবর্তী হয়ে শিশু-কিশোরদের টকজাতীয় ফল অর্থাৎ ভিটামিন-এ ও ভিটামিন-সি থেকে বঞ্চিত করা ঠিক নয়।
এদিকে টকজাতীয় ফল খেলে ‘ব্রেন ডাল’ হয় বা বুদ্ধি কমে যায়, মস্তিষ্কের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ইত্যাদি নেতিবাচক ভ্রান্ত ধারণার কোনোটাই বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয়। টক খেলে বুদ্ধি কমে যাবে- এ রকম ধারণার কোনোই ভিত্তি নেই। বরং টকজাতীয় ফলে শিশুদের ভিটামিন-এ ও সি-সহ অন্যান্য ভিটামিন, খনিজপদার্থ ও পুষ্টি উপাদানের চাহিদা পূরণ হয়- এ কথাটিকেই বার বার স্মরণ রাখা উচিত।
শিশুদের বুদ্ধি কম হওয়া বা মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বুদ্ধি ব্যাহত করার জন্য দায়ী হচ্ছে অপুষ্টি ও আয়োডিনের অভাবসহ অনেক কারণ। কাজেই শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য সুষম খাবার গ্রহণ ও আয়োডিনযুক্ত লবণের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি শিশুকে পছন্দমতো টকজাতীয় ফল খেতে দিলে শিশুর প্রয়োজনীয় ভিটামিনের চাহিদা পূরণ হবে। এ থেকে মস্তিষ্কের ক্ষতি হওয়ার প্রশ্নই আসে না।
সুতরাং টকজাতীয় ফলের প্রতি বিরূপ মনোভাব ত্যাগ করলে অন্তত ভিটামিনের অভাবজনিত সমস্যা থেকে কিছুটা হলেও রেহাই পাওয়া যাবে।