পাহাড় পর্বতে আল্লাহর নিদর্শন
পাহাড় পর্বতে আল্লাহর নিদর্শন - ছবি সংগৃহীত
পৃথিবী কত সুন্দর বিছানার ন্যায় সৃজন করেছেন আরশের মালিক মহান আল্লাহ তায়ালা। যেদিকে তাকাই রহমত বরকতে ভরপুর। চারপাশ যেন সবুজের সমাহার। ফুল ফলে ভরে রেখেছেন গাছ, মানবের আহার নিবারণের জন্য কতই না সুন্দর ব্যবস্থাপনা।
জমিনের বুকচিরে দাঁড়িয়ে আছে কত বড় বড় উঁচু স্তম্ভের ন্যায় পাহাড় পর্বত। আল্লাহর সৃষ্টির মহত্ব, তার সৃজন কত নিখুঁত বলার অপেক্ষা রাখে না।
এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বর্ণনা করেন- ‘তিনিই জমিনের মধ্যে পাহাড়গুলো রেখে দিয়েছেন, যাতে করে জমিন তোমাদের নিয়ে ঢলে না পড়ে।’ (সূরা নাহল, আয়াত-১৫)
পাহাড়-পর্বতমালা শুধু প্রকৃতির নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অংশই নয়। মানুষের জীবন সুরক্ষায় পাহাড়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য। পাহাড় হলো জমিনের খুঁটি। পাহাড় ধ্বংস করার ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সময়ে বৃষ্টি না হয়ে অসময়ে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। শীত মওসুমে হালকা গরম অনুভূত হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায়ই ভূমিকম্প অনুভূত হচ্ছে। ফসলের ওপর রোগ-বালাইয়ের আক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষ নানা ধরনের কঠিন রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। মানুষ যখন থেকে প্রকৃতির বিরুদ্ধে আচরণ করে, প্রকৃতিও সমভাবে বৈরী আচরণ শুরু করে।
ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি আসমানগুলোকে কোনো স্তম্ভ ব্যতীত সৃষ্টি করেছেন, তোমরা তো তা দেখতেই পাচ্ছ। তিনি জমিনে পাহাড়গুলো স্থাপন করে রেখেছেন, যাতে করে তা তোমাদের নিয়ে কখনো ঢলে না পড়ে, তাতে অনেক ধরনের বিচরণশীল জন্তু তিনি ছড়িয়ে দিয়েছেন।’ (সূরা লোকমান, আয়াত-১০)
১৮ হাজার প্রাণিজগতের অনেকে পাহাড়ে বসবাস করে। পাহাড় কেটে বনজঙ্গল উজাড় করার ফলে অনেক বন্য পশুপাখি বিলুপ্তির পথে। অতীতে গ্রামাঞ্চলে যেসব বন্য পশুপাখি দেখা যেত, তাদের বেশির ভাগই এখন আর দেখা যায় না। পাহাড় কেটে ফেলার ফলে প্রাণিজগতের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।
আজকাল পাহাড়ে দেখা মেলে না কোনো প্রাণিজগতের, সব যেন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনিই এ জমিনের মাঝে এর ওপর থেকে পাহাড়গুলো গেঁড়ে দিয়েছেন ও তাতে বহুমুখী কল্যাণ রেখে দিয়েছেন এবং তাতে (সবার) আহারের পরিমাণ নির্ধারণ করে দিয়েছেন।’
(সূরা হামিম আস-সাজদাহ, আয়াত-১০) আল্লাহ তায়ালা পাহাড়ে রিজিকের ব্যবস্থা রেখেছেন। মানুষ চাষাবাদ করে। বন্য পশুপাখিরা চাষাবাদ করে না। আল্লাহ গায়েব থেকে বন্যপ্রাণীর খাবার পাহাড়-জঙ্গলে ছড়িয়ে দিয়েছেন। পাহাড় ধ্বংসের ফলে বন্যপ্রাণীদের খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছে। খাদ্যাভাবের ফলে অনেক প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। বন্যহাতিরা খাবারের খোঁজে প্রায়ই সমতল ভূমিতে চলে আসছে।
ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি জমিনকে বিছিয়ে দিয়েছি, আমি তার মধ্যে স্থাপন করেছি মজবুত পাহাড়গুলো আবার এ জমিনে আমি উদ্গত করেছি সব রকমের চোখ জুড়ানো উদ্ভিদ।’ (সূরা কাফ, আয়াত-৭)
পাহাড়ের তৃণ ও গাছপালা আমাদের জীবনের জন্য অত্যন্ত মূল্যবান অক্সিজেন সরবরাহ করে। কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস গ্রহণ করে বায়ুমণ্ডলকে বিশুদ্ধ রাখে। পশুপাখি ও সাপ-বিচ্ছুদের অনেকের আবাসস্থল হলো গাছ। এ ছাড়া গাছ দিয়ে আসবাবপত্র তৈরি হয়। গাছের মধ্যে অনেক ঔষধি গুণ রয়েছে। গাছ সুস্বাদু ফল সরবরাহ করে, যা আমাদের অপুষ্টি দূর করে। পাহাড়ের সাথে মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি যেমন জড়িত আছে, তেমনি পাহাড়ের সাথে প্রকৃতির ভারসাম্য ও অন্যান্য প্রাণির জীবনের সম্পৃক্ততা রয়েছে।
পাহাড় ধংস করে বড় বড় দালান কোটা তৈরি করা হচ্ছে আজকাল, এতে করে পাহাড়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেলেও ধংস হয়ে যাচ্ছে পাহাড়ে বসবাস করা প্রাণিজগৎ। সুতরাং পাহাড় সংরক্ষণে সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং জীবন সুরক্ষার প্রয়োজনের তাগিদেই পাহাড় সংরক্ষণ করতে হবে।
লেখক : কবি ও প্রাবন্ধিক