শীতকালে ঘন ঘন প্রস্রাব করতে হয় কেন?
শীতকালে ঘন ঘন প্রস্রাব করতে হয় কেন? - ছবি সংগৃহীত
ধরুন, বাইরে বেশ ঠাণ্ডা পড়েছে। আপনি একটু আরাম করে কম্বলের নিচে নিজেকে এলিয়ে দিলেন। কম্বলও একটু উষ্ণ হতে শুরু করেছে। ঠিক এমন সময়ই আপনার প্রস্রাবের বেগ হলো। আপনার মনে বিরক্তি আসাটাই স্বাভাবিক। সেইসাথে একটি প্রশ্নও মনে জাগতে পারে, শীতকালে তো আমরা পানি বেশি খাই না, তাহলে কেন এত ঘন ঘন প্রস্রাব করতে হয়!
অনেকেরই শীতকালে ঘন ঘন প্রস্রাব করতে হয় এবং এর পেছনে বৈজ্ঞানিক কারণও আছে।
প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের শীরের সম্পর্ক এর জন্য দায়ী। এটা আসলে মানুষের এক ধরণের সাইকোলজিক্যাল রিঅ্যাকশন, যা ‘কোল্ড ইনডিউসড ডাইয়ুরেসিস’ নামে পরিচিত। শীতকালে বেশি ঠাণ্ডা লাগে, যার প্রভাবে আমাদের আমাদের ঘন ঘন প্রস্রাবের চাপ তৈরি হয়। মানুষের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৩৬-৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু শীতের সময় অতিরিক্ত ঠাণ্ডায় আমাদের শরীরে কাঁপুনি ধরে, রক্তনালীগুলো আরো সংকুচিত হয়ে যায়, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রতঙ্গে আরো বেশি রক্ত সঞ্চালন করে এবং শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
এই অতিরিক্ত রক্তপ্রবাহ যখন কিডনিতে সঞ্চালিত হয়, তখন একে বলে ‘ভাস্কোকনস্ট্রিকশন’। কিডনির কাজই হচ্ছে রক্ত থেকে বর্জ্য আলাদা করে ফেলা এবং এই বর্জ্যটাই হচ্ছে পস্রাব। শীতকালে যখন কিডনিতে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত রক্ত প্রবাহিত হয়, তখন কিডনিও অতিরিক্ত কাজ করতে বাধ্য হয়। অর্থাৎ, সে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি বর্জ্য উৎপাদন করে। এ কারণেই আমাদেরও ঘন ঘন বাথরুমে যেতে হয়। ব্লাডার (প্রস্রাবের থলি) পরিপূর্ণ থাকলে শরীর তাপমাত্রা হারাতে থাকে। তাই শরীরকে উষ্ণ রাখতে দ্রুত পস্রাব করে নেওয়াই ভালো। অতিরিক্ত ঠান্ডা আবহওয়া শরীরের রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা ও বিভিন্ন সিস্টেমকে দুর্বল করে দেয় এবং ব্লাডারের সঙ্গে সংযুক্ত নার্ভ সিস্টেমের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। যার ফলে এই রকম পরিস্থিতিতে মানুষ অনেক সময় স্ট্রেস অনুভব করতে পারে।
শীতকালে ঘন ঘন বাথরুমে যেতে হয় বলে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। বরং অতিরিক্ত ঠান্ডা থেকে আমাদের শরীর এভাবেই আমাদেরকে সুরক্ষিত রাখে। তাই এটি অবশ্যই শরীরের জন্য ভালো। তবে অতিরিক্ত প্রস্রাব কিন্তু আবার হাইপোথার্মিয়ার লক্ষণও হতে পারে। এইরকম পরিস্থিতি তৈরী হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। শীতকালে ঘন ঘন বাথরুমে যেতে না চাইলে নিজেকে সবসময় উষ্ণ আবহাওয়ায় রাখুন অথবা বেশি বেশি শারীরিক পরিশ্রম করুন।
পানি তো নষ্ট হয় না, তাহলে পানির বোতলে মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ লেখা থাকে কেন?
অপচনীয় পণ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ লেখাটা কিছুটা অযৌক্তিক। মাছ, মাংস বা দুগ্ধজাত পণ্যের গায়ে মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ লেখাটা হয়তো ঠিক আছে। কিন্তু খাবার পানির বোতলে মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ লেখাটাকে অনেকের কাছে ‘ননসেন্স’ মনে হতে পারে। H2O কী দীর্ঘদিন কিংবা আজীবন একইরকম থাকার কথা না?
উত্তর হচ্ছে- ‘হ্যাঁ’। কিন্তু এই মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখের সঙ্গে পানির কোনো সম্পর্ক নেই। ১৯৮৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সি রাজ্য নতুন এক আইন জারি করে যার ফলে সেই রাজ্যে বিক্রিত প্রতিটি খাদ্যপণ্যে সর্বোচ্চ দুই বছর বা তার কম মোয়াদোত্তীর্ণ তারিখ লেখা থাকতে হবে। এই আইনের কারণে নিউ জার্সিতে বিক্রিত সব পানির বোতলের গায়ে দুই বছরের মেয়াদ লেখা থাকতো। এমনকি সেখান থেকে অন্যান্য রাজ্যগুলোতেও যেসব পানি রফতানি করা হতো, সেগুলোর গায়েও মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ লেখা থাকতো। সেই থেকে ধীরে ধীরে এটি একটি রীতিতে পরিণত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ফুড এন্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) কখনোই খাবার পানির জন্য নির্দিষ্ট কোনো মেয়াদোত্তীর্ণের সময়সীমা বেধে দেয়নি। নিউ জার্সিও এক পর্যায়ে এই আইন বাতিল করে। কিন্তু বহু বছর প্রচলিত থাকার ফলে এটি স্থায়ী রীতিতে পারিণত হয়। বোতলজাত কোম্পানিগুলোও এই রীতি মেনে বোতলের গায়ে এক্সপাইরেশন ডেট লেখা চালু করেছে।
‘এক্সপায়ার্ড’ পানি শরীরের জন্য ক্ষতিকর না, এটা যেমন ঠিক, তেমনি একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর এ পানি পান না করাই ভালো। পানির বোতলে যে প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয় সেখানে পলিথিন টেরিপথালেট এবং হাই ডেনসিটি পলিথিন ব্যবহার করা হয়। দীর্ঘদিন বোতলে থাকার কারণে তাই পানির স্বাদ কিছুটা নষ্ট হয়ে যায়।