জেনারেল জিয়াউল হক নিয়ে কিছু কথা
জেনারেল জিয়াউল হক - ছবি : সংগৃহীত
তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট জেনারেল জিয়াউল হকের সাথে আমার প্রথম সাক্ষাৎ হয় ১৯৮৫ সালে, করাচির এক সেমিনারে। আইডিবি (ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংক), পাকিস্তান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকিং ইনস্টিটিউট ও পাকিস্তান সেন্ট্রাল জাকাহ এডমিনিস্ট্রেশন যৌথভাবে এই আন্তর্জাতিক সেমিনারের আয়োজন করে। সেখানে আমি নিবন্ধ উপস্থাপন করেছিলাম। আইডিবির সাবেক প্রেসিডেন্ট ড. আহমেদ মোহাম্মদ আলীও সেমিনারে যোগ দেন। আইডিবি প্রেসিডেন্টের ‘স্পিচ রাইটার’ হিসেবে আমাকে সাধারণত তার সাথে যেতে হতো। সেমিনারে প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হক বক্তব্য রাখেন। তখনই প্রথম তাকে কাছ থেকে দেখি। স্থানীয় ও বিদেশী ইসলামী চিন্তাবিদ অংশগ্রহণ করেছিলেন ওই সেমিনারে। এদের প্রত্যেকের সাথে কথা বলেন জিয়াউল হক। আমার সাথেও। কথাবার্তা ইংরেজিতে হচ্ছিল। তিনি জিজ্ঞেস করেন, ড. মান্নান, কেমন আছেন? আমি বলি, ‘জি, ভালো আছি। আমাদের তো এখন আর দেনা-পাওনার কোনো বিষয় নেই। তাই ভালোই আছি।’ তিনি হেসে দেন। খুবই আন্তরিকভাবে সবার সাথে তিনি মিশছিলেন। আইডিবি প্রেসিডেন্টের সাথেও জিয়াউল হকের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। এর পর থেকে আমার ঘনিষ্ঠতা তৈরি হতে থাকে।
ওই সেমিনারের পর জিয়াউল হক দেশের ব্যাংকিং সিস্টেমে থাকা সঞ্চয়ী আমানত থেকে শরিয়াহ বিধান অনুযায়ী জাকাত কর্তনের সিদ্ধান্ত নেন। এ বিষয়ে মতামত জানতে আলাদা একটি সভা ডাকেন তিনি। তাতে স্থানীয় অর্থনীতিবিদদের পাশাপাশি সেমিনারে অংশগ্রহণকারীদের মধ্য থেকে আমাকে ও মিসরের ড. আহমদ নাজ্জারকে ডাকলেন। ড. নাজ্জার ‘ইসলামী ব্যাংকের জনক’ হিসেবে খ্যাতিমান। উপস্থিত সবাই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছেন। শুধু আমি ও ড. নাজ্জার পক্ষে মতো দিলাম। তবে শর্ত দিলাম যে, আল কুরআনে যে আটটি খাতের কথা বলা হয়েছে, জাকাতের টাকা এর বাইরে খরচ করা যাবে না। আর যে এলাকা থেকে জাকাত সংগ্রহ করা হবে সেখানেই তা খরচ করতে হবে। জিয়াউল হক আমাদের বক্তব্য শুনলেন এবং রাত ১২টার পর নিজের হাতে লিখে অর্ডিন্যান্স জারি করে দিলেন। ফলে রাতারাতি দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে ৩০০ মিলিয়ন ডলারের মতো জাকাত সংগ্রহ হলো। জনগণকে তিনি বললেন, জাকাতের টাকা কুরআন নির্দেশিত আটটি খাতেই খরচ করা হবে, যার ছয়টিই দারিদ্র্য বিমোচনে। একটি খাত হচ্ছে- যে সংগ্রহ করছে, তার পারিশ্রমিক হিসেবে এবং আরেকটি খাত হলো আল্লাহর রাস্তায়। মানুষ যখন দেখে তার জাকাতের টাকা তারই এলাকায় খরচ করা হচ্ছে, তখন তারা শান্ত মনে তা মেনে নেয়। ব্যাংকিং খাত ধসে পড়বে বলে স্থানীয় অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা মিথ্যা প্রমাণ করে দিয়ে পরের বছর ৫০০ মিলিয়ন ডলার সংগৃহীত হয়।
এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল। মানুষকে যদি ভালো কাজে উদ্বুদ্ধ করা যায় তাহলে তারা অবশ্যই সাড়া দেবেন। সমাজে ভালো মানুষের অভাব নেই। অভাব শুধু তাদেরকে উদ্বুব্ধ করা আর তাদের আস্থা অর্জন। তারা গরিব মানুষকে সাহায্য করতে চান অথচ জাকাতের টাকা সরকারের হাতে দিতে চান না। এর কারণ, অব্যবস্থাপনা। জনগণ আশঙ্কা করে, সরকারকে টাকা দেয়া হলে তা সত্যিকারের সুফলভোগীদের কাছে পৌঁছবে না।
ওই ঘটনার পর জিয়াউল হক আবার আমাকে ডেকেছিলেন। তিনি জাকাতের টাকা দিয়ে গিলগিট-বাল্টিস্তানের মতো প্রত্যন্ত এলাকায় সড়ক-মহাসড়ক করতে চান। কিন্তু আমি এর বিরোধিতা করেছি। আমি বলি, জাকাতের টাকা গরিবের হক। কিন্তু রাস্তা তৈরি করা হলে সেখান দিয়ে তো ধনীরাও যাবে। আপনি তখন ধনী গরিব আলাদা করবেন কিভাবে? ধনীরা না হয় টোল-ট্যাক্স দিয়ে গাড়ি হাঁকিয়ে গেল, কিন্তু গরিবদের গাড়ি থাকে না। তা ছাড়া এর সাথে আরো অনেক শরিয়াহত প্রশ্ন জড়িত। এগুলো দীর্ঘ ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের বিষয়। খামোখা গরিবের হক নষ্ট করা ঠিক হবে না।’ এরপর বিষয়টি আর এগোয়নি।
আমি তখন থ্রি-সেক্টর মডেল নিয়ে কাজ করছি। গরিব মুসলিম দেশগুলোর অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানে অর্থনীতির আনুষ্ঠানিক, অনানুষ্ঠানিক ও স্বেচ্ছাসেবক খাতকে ইসলামনির্দেশিত পথে সমন্বয় করে সামাজিক ব্যাংকিং চালুর করা। এরই মধ্যে একবার ইসলামাবাদ যাই। পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সমস্যা নিরসনের উপায় নিয়ে কথা বলতে আমি প্রেসিডেন্টের সাথে দেখা করার সিদ্ধান্ত নেই। আমি ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে উঠি। সেখান থেকে প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎ চেয়ে মেসেজ পাঠাই। আমাকে অবাক করে দিয়ে কিছুক্ষণ পরেই হোটেল থেকে আমাকে বলা হলো প্রেসিডেন্ট অফিস থেকে আমার সাথে কথা বলতে চায়। ফোন রিসিভ করি। ওপাশ থেকে শুনি, ‘ড. মান্নান, হাউ আর ইউ?’ আমি পাল্টা প্রশ্ন করি, ‘হু আর ইউ?’ উত্তর পাই, ‘আই এম জিয়াউল হক’। আমি তো আকাশ থেকে পড়ি, বলে কি! নিশ্চিত হওয়ার জন্য আবার বলি, ‘আর ইউ দ্যা প্রেসিডেন্ট?’ ‘ইয়েস’, বলেন উনি। আরো বললেন যে, আমার বার্তা তিনি পেয়েছেন।
কিন্তু এই মুহূর্তে তিনি দেখা করতে পারছেন না বলে দুঃখিত। কারণ, পূর্বনির্ধারিত একটি প্রোগ্রামে তাকে করাচিতে চলে যেতে হবে। তবে প্রেসিডেন্ট জানালেন যে, একজন জেনারেলকে দিয়ে আমার জন্য লিমুজিন পাঠাচ্ছেন। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় লিমুজিন আমাকে তুলে নেবে। আমি যেন ওই জেনারেলকে ব্রিফ করি। প্রেসিডেন্টের কথা মতো ঠিক সময়ে একটি কালো লিমুজিন গাড়ি হোটেলের গেটে এসে হাজির। জেনারেলের সাথে আমি প্রেসিডেন্টের অফিসে গেলাম। আমাকে রীতিমতো রাজকীয় সম্মান দেখানো হলো যা আমার কল্পনাতেও ছিল না। আমি অভিভূত হই। ওই দিন জিয়াউল হকের দেয়া উপহার সুভ্যেনির হিসেবে এখনো আমার বাসায় আছে।
চাকরি জীবনের শুরুর দিকে আমি যখন পাকিস্তান সরকারের কর্মকর্তা হিসেবে ইসলামাবাদে যাই, তখন পশ্চিম পাকিস্তানিদের সম্পর্কে আমার বিরূপ ধারণা ছিল। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখি, মন্দ ও ভালো মানুষ সব সমাজেই আছে। সেখানেও প্রচুর ভালো মানুষ আছে। আমি দেখলাম, সেখানকার সাধারণ মানুষের মধ্যে পূর্বপাকিস্তানিদের জন্য অসম্ভবরকম ভালোবাসা রয়েছে। আমার ক্যারিয়ার তৈরিতে তাদের অনেকের সাহায্য পেয়েছি। আমার পশ্চিম পাকিস্তানি সহকর্মীদের সাহায্য ছাড়া হয়তো আমার পিএইচডি করাই হতো না। সেখানে বসে ‘ইকনমিক প্রবলেমস অ্যান্ড প্লানিং ইন পাকিস্তান’ শীর্ষক যে বইটি লিখি সেটি লেখা ও প্রকাশের ক্ষেত্রেও পশ্চিম পাকিস্তানিদের সহায়তা পেয়েছি। ওই বইয়ে আমি দুই পাকিস্তানের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিষয়টি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেই।
এই বৈষম্য দেখে স্বাভাবিকভাবেই পশ্চিম পাকিস্তানি রাজনৈতিক নেতাদের ওপর সন্তুষ্ট ছিলাম না। যার জেরে আমি যুক্তরাষ্ট্রে বসে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করায় আমাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। তাই বলে আমার স্বীকার করতে কার্পণ্য নেই যে, অনেক পশ্চিম পাকিস্তানির মধ্যে মনুষ্যত্ববোধ, সহমর্মিতা, উদারতার মতো অনেক মানবিক গুণও দেখেছি। আমি পিএইচডি করতে যুক্তরাষ্ট্র চলে যাওয়ার পর বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। আমার পরিবার ঢাকায় আটকা পড়ে যায়। সামরিক শাসকদের মাধ্যমে আমি পরিবারের খবরাখবর পাই এবং তারাই আমার পরিবারকে যুক্তরাষ্ট্র চলে যেতে সাহায্য করেন (ইতঃপূর্বে এ ব্যাপারে বিস্তারিত নয়া দিগন্তের কলামে লিখেছি)। এখানে একটি উপলব্ধির বিষয় আছে। আমরা যতই মারামারি কিংবা হানাহানি করি না কেন, দিন শেষে আমরা সবাই কিন্তু মানুষ। আমদের ব্যর্থতা হলো, আমরা জীবনের দায়িত্ব সম্পর্কে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে পারিনি। কত রাজা-মহারাজ, প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রী আসছেন যাচ্ছেন, তাদের অনেকেই আত্মার এ ডাকটি শুনতে পান না। তারা আত্মার অন্তর্নিহিত মর্মটি উপলব্ধি করেন না। আমি জিয়াউল হকের মধ্যে যে মানবতা দেখেছি, তা অবিশ্বাস্য।
আমি জেনারেলকে ব্রিফ করে আসি। এরপর জিয়াউল হক থ্রি-সেক্টর মডেলের ভক্ত হয়ে গেলেন। তখন বাংলাদেশেও এই মডেলের ব্যাংক স্থাপনের চেষ্টা করছিলাম। তাই ভাবি, বাংলাদেশে যেহেতু দেরি হচ্ছে, দেখি পাকিস্তানে পারা যায় কি-না। আমাদের সম্পর্ক এতটাই ব্যক্তিগত পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে, জিয়া আমাকে চিঠি পর্যন্ত লিখেছেন। আমি তাকে আমার লেখা ‘দ্যা মেকিং অব ইসলামিক ইকনমিক সোসাইটি’ বইটি পাঠিয়েছিলাম। তিনি আমাকে পাকিস্তানে আয়োজিত ‘ফিসক্যাল অ্যান্ড মনিটরি পলিসি ইন ইসলামিক ফ্রেমওয়ার্ক’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনারে ব্যক্তিগতভাবে আমন্ত্রণ জানান। কোথাও সেমিনার হবে আর সে দেশের প্রেসিডেন্ট কাউকে ব্যক্তিগতভাবে আমন্ত্রণ জানাবেন, এটা কি কল্পনা করা যায়? কিং আব্দুল আজিজ ইউনিভার্সিটি ও পাকিস্তানের ইসলামিক ইউনিভার্সিটি ওই সেমিনারের কো-স্পন্সর ছিল। তখন আমি ঢাকায় একই ধরনের একটি ইউনিভার্সিটি করতে চেয়েছিলাম। এর তহবিল দেবে কিং আব্দুল আজিজ ইউনিভার্সিটি। এর ভিসির বেতনও কিং আব্দুল আজিজ ইউনিভার্সিটি থেকে দেয়া হবে। আমি আইডিবিতে কাজ করলেও কিং আব্দুল আজিজ ইউনিভার্সিটি, রাবেতার সবার সাথেই সুসম্পর্ক ছিল এবং তাদের বিভিন্ন সেমিনার, সিম্পোজিয়ামে যোগ দিতাম। আসলে আশির দশকটি ছিল আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। এই সময়টিতে বিশ্বের বহু দেশের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, বাদশাহ, নোবেল লরিয়েটসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়, আলাপচারিতার সুযোগ হয়। এই দশকেই আমার সেরা বুদ্ধিবৃত্তিক কাজগুলো করেছি।
জেনারেল জিয়াউল হক মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখতেন। এ কথা আমি জেনেশুনেই বলছি। তিনি দেশের আনাচে কানাচে ছুটে বেড়াতেন। পাকিস্তানিদের কাছে ওনার আচরণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তারা বলে, ড্রাইভারদের খাওয়ানোার পর তিনি খেতে বসতেন। আমাদের অনেকেই হয়তো জানি না, ১৯৮৫ সালে ঘূর্ণিঝড়ের সময় যখন বাংলাদেশের উড়িরচর বিরাণ হয়ে যায় তখন প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হক সন্তর্পণে বাংলাদেশে এসে উপকূলের ধ্বংসলীলা দেখে গেছেন। তার বাংলাদেশে আসার বিষয়টি আগে থেকে ঘোষণা করা হয়নি। সবার মধ্যে এই চেতনা থাকলে মুসলিম বিশ্বের কোনো সমস্যা থাকত না। অনেকেই জিয়াউল হককে ‘ভেরি রাফ অ্যান্ড টাফ’ হিসেবে উল্লেখ করে থাকেন কিন্তু আমার কাছে এর উল্টোটা মনে হয়েছে। এ যেন এক পরিহাস।
জিয়াউল হক চেয়েছিলেন সত্যিকারের একটি ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে। তিনি ছিলেন খুবই অমায়িক ও ধর্মপ্রাণ মানুষ। পকেটে সব সময় কুরআনের ছোট্ট একটি কপি রাখতেন। এ জন্য তাকে জীবন দিতে হয়েছে বলে সন্দেহ করা হয়। বলা হয়, তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে একটি বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থা। তারা বুঝে গিয়েছিল, জিয়াউল হককে না সরালে পাকিস্তানকে কব্জায় আনা যাবে না। তার বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র চলছিল, সে বিষয়ে সতর্কও করা হয়েছিল। ১৯৮৮ সালে তাকে বহনকারী বিমানটির দুর্ঘটনা এমনভাবে সাজানো হয়েছিল যেন কেউ সন্দেহ না করে। এ জন্য একজন রাষ্ট্রদূতকে পর্যন্ত জীবন দিতে হয়েছে। দুর্ঘটনার পর জিয়াউল হকের লাশের সাথে ওই ছোট্ট কুরআন শরিফটি পাওয়া যায়, প্রায় অক্ষত অবস্থায়।
জিয়াউল হককে দেখেছি এক অসাধারণ মানবিক গুণ সম্পন্ন ব্যক্তি হিসেবে। গরিবের জন্য তার উদ্বেগ ছিল অবাক হওয়ার মতো। আমার মনে হয়, তার মতো গুণের অধিকারী কয়েকজন মানুষ থাকলে আজ পাকিস্তানের চেহারা আমূল পাল্টে যেত। আমি তার কাজের দোষ-গুণ বিচার করছি না কিন্তু তাকে দেখেছি আইনকে আপন গতিতে চলতে দিতে। মানুষের দুদর্শার কথা শুনলে তাকে ছুটে যেতে দেখেছি। তার সম্পর্কে অনেকের মনে ভুল ধারণা আছে। তিনি ক্ষমতায় আসার পর ভুট্টোর ফাঁসি হয়। আমার জানা মতে এই রায়ের ক্ষেত্রেও তার কোনো হস্তক্ষেপ ছিল না। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাকে একনিষ্ঠ মুসলমান হিসেবে দেখেছি।
বাংলাদেশ-পাকিস্তানের সম্পর্ক যাই হোক না কেন, আমার উপলব্ধিটুকুই শুধু এখানে তুলে ধরেছি। জিয়াউল হক জানতেন আমি বাংলাদেশের। তাই বলে আমাদের সম্পর্কে বিষাক্ত রাজনীতির ছোয়া ছিল না। মানুষকে যদি মানুষ হিসেবে দেখা হয়, তার সাথে কথা বলা যায়, তাহলে আমরা জীবনের অনেক সমস্যা উৎরে যেতে পারি। কিন্তু আমরা খুবই কৃপণ, কি করে আরেকজনকে দমিয়ে রাখা যায় সেই চিন্তায় সবসময় বিভোর থাকি। আমরা ভুলে যাই দিন শেষে আমরা সবাই মানুষ।
তিনি স্নেহপূর্ণ উদারতার গুণে আমাকে কাছে টেনেছেন। এগুলোই আমাদের জন্য শিক্ষনীয়।
লেখক : প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড; সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ, ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক, জেদ্দা
hmct2004@yahoo.com