আব্বাস সিদ্দিকিকে নিয়ে মমতার হিসাব
আব্বাস সিদ্দিকি ও মমতা ব্যানার্জি - ছবি : সংগৃহীত
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধান সভার নির্বাচনকে সামনে রেখে কংগ্রেস ও বামফ্রন্টের মহাসমাবেশ তথা ব্রিগেডে যেভাবে মঞ্চ মাতিয়েছেন ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি তা যে একেবারে চোখ কাড়েনি তৃণমূলের তা বোধহয় পুরোপুরি ঠিক নয়। বাম-কংগ্রেস জোট নিয়ে এর আগে আব্বাস সিদ্দিকি ও তার নয়া দল ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেও, এবার কিন্তু অনেকটা সাবধানী তৃণমূল। ফুরফুরা শরিফের পীরজাদার বিরুদ্ধে কোনও মন্তব্য করলে তা বিধানসভা নির্বাচনের বিপাক বাড়াতে পারে। তাই ‘খেলা হবে’ বুঝেশুনে, সবুজ শিবিরের অন্দরে এখন মনোভাব এমনটাই।
মমতা শিবির কিন্তু এখনো একটি বিশ্বাস অটুট রেখেছে তা হলো সিদ্দিকির সমর্থকেরা যতই ময়দান গরম করুক না কেন রাজ্যের জনসংখ্যার ২৭ শতাংশ মুসলিম ভোটের যে মেরুকরণ হবে তা স্পষ্ট। তাই দলের শীর্ষ নেতৃত্বও একমত যে এই ভোট ভাগাভাগির পরিস্থিতিতে খুব সাবধানে এগোতে চাইছে তৃণমূল।
তৃণমূলে কংগ্রেসের বর্ষীয়ান রাজনৈতিক কুশলী দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানান যে ফুরফুরা শরিফে প্রভাব রয়েছে সিদ্দিকির। সেখানে হয়ত জিততে পারেন। তবে এটাও ঠিক যে তৃণমূলের যে সংখ্যালঘু সমর্থন রয়েছে তা কিছুটা হলেও কেড়ে নেবে। যদিও বাম-কংগ্রেস জোট কিন্তু নয়। এর নেপথ্যে বিজেপিও রয়েছে। তাদের ভোট কাটাকাটির হিসাবটি একেবারে স্পষ্ট। ওই ভাবেই কাজ করতে চাইছে। তবে বর্ষীয়ান নেতা এও বলেন যে, জনসমাগম কিন্তু নির্বাচনী সমর্থন বোঝায় না।
অন্যদিকে, আব্বাস সিদ্দিকে সরাসরি ‘মৌলবাদী’ আখ্যা দিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার এমপি সুখেন্দু শেখর রায়। তিনি বলেন, “তার বক্তৃতার ভিডিও যদি দেখেন দেখবেন ধর্ম প্রাধান্য পেয়েছে। তৃণমূল সবসময়ই ধর্মনিরপেক্ষ। আমাদের দলে হিন্দু-মুসলিম একসঙ্গে আছে। মেরুকরণের রাজনীতি তৃণমূল করে না। বিজেপি করে। এখন আব্বাস সিদ্দিকির পাশে দেখছি বাম-কংগ্রেসও আছে। সকলেই আগুন নিয়ে খেলছে। মুর্শিদাবাদ-মালদায় এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।”
এদিকে, নির্বাচনের দিন ঘোষণার আগেই ফুরফুরা শরীফ মাজারের উন্নয়নের জন্য ২ কোটি ৬০ লক্ষ রুপি বরাদ্দ করল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। তৃণমূল নেতা তথা ফুরফুরা শরীফের পিরজাদা তহ্বা সিদ্দিকি গত সপ্তাহেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও নগর উন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে দেখা করেন। সিপিআইএম এবং কংগ্রেসের সঙ্গে ‘ভাইপো’ আব্বাস সিদ্দিকির হাত মেলানো মোটেই ভালো চোখে নেননি ত্বহা। বরং প্রকাশ্যে তৃণমূলের বন্দনা করে আব্বাসের বিরুদ্ধেই “দুর্নীতির গুরুতর অভিযোগ” এনেছেন।
অতএব মেরুকরণ ও পাল্টা মেরুকরণের রাজনীতিতে আব্বাস সিদ্দিকির বিরুদ্ধের খেলা অত্যন্ত সাবধান হয়েই খেলবে মমতা ব্যানার্জির শিবির, তা সমীকরণ থেকে স্পষ্ট। বিজেপির ফাঁদে পা না দিয়ে কতটা ভোট দখলে রাখতে পারে তৃণমূল, ওই দিকেই নজর রাজনৈতিক মহলের।
সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস