কয়েনের পাশে লম্বা লম্বা খাঁজ থাকে কেন?

মিজানুর রহমান | Mar 04, 2021 03:52 pm
কয়েনের পাশে লম্বা লম্বা খাঁজ থাকে কেন?

কয়েনের পাশে লম্বা লম্বা খাঁজ থাকে কেন? - ছবি সংগৃহীত

 

এটার উত্তর পেতে হলে একটু পেছন ফিরে যেতে হবে। ১৭৯২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের টাকশাল (ইউএস মিন্ট) মিন্ট এন্ড কয়েনেজ অ্যাক্ট পাশ করে। এই আইন অনুসারে ১০ ডলার, ৫ ডলার এবং ২.৫০ ডলার (যথাক্রমে ঈগল, হাফ-ঈগল ও কোয়ার্টার ঈগল নামেও পরিচিত ছিল) মূল্যমানের কয়েনে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সোনা ব্যবহার করতে হতো। এক ডলার, হাফ ডলার, কোয়ার্টার ডলার মূল্যমানের কয়েনে সিলভার ব্যবহার করার বাধ্যবাধকতা ছিল। ১৭৯৪ সালে মুদ্রিত প্রথম এক ডলারের কয়েনে ৮৯.২৫ শতাংশ ছিল সিলভার এবং ১০.৭৫ শতাংশ ছিল কপার। এক ডলারের সিলভার কয়েনে অন্তত এক ডলার সমমুল্যের সিলভার থাকতো।

কিন্তু খুব দ্রুতই একটি বড় সমস্যা সবার দৃষ্টিগোচরে এলো। এই সমস্যাটি সমাধানের জন্যই ইউএস মিন্ট কয়েনের প্রান্ত বরাবর লম্বালম্বিভাবে খাঁজ দেওয়া শুরু করে। এই পদ্ধতিকে বলা হতো ‘রিডিং’ (Reeding). রিডিং পদ্ধতি চালু হওয়ার পর মূলত দুই দিক দিয়ে উপকার হলো। নকল কয়েন তৈরীর পথ প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং কয়েন থেকে মূল্যবান ধাতব আলাদা করে বিক্রির পথও রুদ্ধ হয়ে যায়।

খাঁজ দিয়ে কীভাবে প্রতারণা ঠেকানো গেল?
বেশি মূল্যমানের কয়েনগুলো স্বর্নের মতো মূল্যবান ধাতু দিয়ে তৈরী করা হতো। অপরাধীরা সহজেই এসব কয়েন থেকে করে স্বর্ন আলাদা করে ফেলতো। যে উপায়ে এ কাজটি করা হতো, সেটির নাম ছিল ক্লিপিং। এটা অনেকটা কাঠ চাঁছার মতো। একজন দক্ষ ক্লিপারের পক্ষে কয়েন থেকে স্বর্ণ আলাদা করাটা কঠিন কোনো কাজ ছিল না। অনেক ক্লিপার এতই দক্ষ ছিল যে, তারা কয়েন থেকে স্বর্ণ এমনভাবে ট্রিম করতো, সাধারণ চোখে কয়েনের আকৃতি এবং ওজনের পরিবর্তন বোঝাই যেত না। এভাবে অসংখ্য কয়েন থেকে স্বর্ণ ট্রিম করে অপরাধীরা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ স্বর্ণ নিজেদের করায়ত্বে নিয়ে নিতে পারতো। ধারাবাহিকভাবে এরকমটা চলতে থাকলে সরকার উল্লেখযোগ্য পরিমাণ স্বর্ণের ওপর থেকে নিয়ন্ত্রণ হারাতো পারতো।

কিন্তু রিডিং সিস্টেম এসব পথ চিরতরে বন্ধ করে দেয়। আগে কয়েনের প্রান্তগুলো মসৃণ থাকাতে কেউ যদি খুব সুনিপুনভাবে কয়েনকে ট্রিম করে ছোট করে ফেলতো, সেটি সহজে বোঝার উপায় ছিল না। কিন্তু খাঁজ থাকায় এটি খুব সহজেই বোঝা যাবে। এভাবে কয়েনের মূল্যবান ধাতব অংশটি যেমন রক্ষা পেলো, একইসঙ্গে কয়েন জাল হওয়ার আশঙ্কাও প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে এলো।

যুক্তরাষ্ট্রের গ্রেট ডিপ্রেশনের সময় ইউএস মিন্ট স্বর্ণের তৈরী ডলার উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। ১৯৭০ সালের পর আর হাফ ডলারের কয়েনেও সিলভার ব্যবহৃত হচ্ছে না। কিন্তু সেই রীতি এখনো রয়ে গেছে।

পানি তো নষ্ট হয় না, তাহলে পানির বোতলে মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ লেখা থাকে কেন?

অপচনীয় পণ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ লেখাটা কিছুটা অযৌক্তিক। মাছ, মাংস বা দুগ্ধজাত পণ্যের গায়ে মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ লেখাটা হয়তো ঠিক আছে। কিন্তু খাবার পানির বোতলে মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ লেখাটাকে অনেকের কাছে ‘ননসেন্স’ মনে হতে পারে। H2O কী দীর্ঘদিন কিংবা আজীবন একইরকম থাকার কথা না?

উত্তর হচ্ছে- ‘হ্যাঁ’। কিন্তু এই মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখের সঙ্গে পানির কোনো সম্পর্ক নেই। ১৯৮৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সি রাজ্য নতুন এক আইন জারি করে যার ফলে সেই রাজ্যে বিক্রিত প্রতিটি খাদ্যপণ্যে সর্বোচ্চ দুই বছর বা তার কম মোয়াদোত্তীর্ণ তারিখ লেখা থাকতে হবে। এই আইনের কারণে নিউ জার্সিতে বিক্রিত সব পানির বোতলের গায়ে দুই বছরের মেয়াদ লেখা থাকতো। এমনকি সেখান থেকে অন্যান্য রাজ্যগুলোতেও যেসব পানি রফতানি করা হতো, সেগুলোর গায়েও মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ লেখা থাকতো। সেই থেকে ধীরে ধীরে এটি একটি রীতিতে পরিণত হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ফুড এন্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) কখনোই খাবার পানির জন্য নির্দিষ্ট কোনো মেয়াদোত্তীর্ণের সময়সীমা বেধে দেয়নি। নিউ জার্সিও এক পর্যায়ে এই আইন বাতিল করে। কিন্তু বহু বছর প্রচলিত থাকার ফলে এটি স্থায়ী রীতিতে পারিণত হয়। বোতলজাত কোম্পানিগুলোও এই রীতি মেনে বোতলের গায়ে এক্সপাইরেশন ডেট লেখা চালু করেছে।

‘এক্সপায়ার্ড’ পানি শরীরের জন্য ক্ষতিকর না, এটা যেমন ঠিক, তেমনি একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর এ পানি পান না করাই ভালো। পানির বোতলে যে প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয় সেখানে পলিথিন টেরিপথালেট এবং হাই ডেনসিটি পলিথিন ব্যবহার করা হয়। দীর্ঘদিন বোতলে থাকার কারণে তাই পানির স্বাদ কিছুটা নষ্ট হয়ে যায়।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us