রাজা হতে যে অনৈতিক পন্থার আশ্রয় নিয়েছিলেন আলেক্সান্ডার দি গ্রেট

মিজানুর রহমান | Mar 04, 2021 03:46 pm
আলেক্সান্ডার দি গ্রেট

আলেক্সান্ডার দি গ্রেট - ছবি সংগৃহীত

 

আলেক্সান্ডার দি গ্রেট, ম্যাসিডন থেকে যার শাসন বিস্তৃত হয়েছিল উত্তর-পূর্ব আফ্রিকা থেকে বর্তমান পাকিস্তান পর্যন্ত। তার রাজত্বের পরিধি বাড়ানোর পথে যারাই সামনে পড়েছে, তারাই নিদারুণ গণহত্যার শিকার হয়েছে কিংবা ধংস হয়ে গেছে। তার এবং তার বাহিনীর হাতে কত মানুষের প্রাণ গেছে, তার সুনির্দিষ্ট কোনো হিসাবও নেই। এমনকি কথিত আছে তার বাবাকেও সে-ই খুন করেছে।

আলেক্সান্ডারের বাবা রাজা দ্বিতীয় ফিলিপ ছিলেন প্রচণ্ড প্রতাপশালী। রাজা ফিলিপ যে ভিত্তি গড়ে দিয়েছিলেন, সেই ভিত্তির উপর দাঁড়িয়েই আলেক্সান্ডার তার সামাজ্য বিস্তৃত করে গেছেন।

খ্রিস্টপূর্ব ৩৩৬ সালে রাজা ফিলিপকে হাজার হাজার জনতার সামনে প্রকাশ্যে দিবালোকে খুন করা হয়। তাকে খুন করেন তারই দেহরক্ষী পসানিয়াস। জনতার উদ্দেশ্যে ভাষণ দেওয়ার জন্য রাজা ফিলিপ যখন মঞ্চের দিকে আসছিলেন, পসানিয়াস তখন ছুটে গিয়ে তার পাঁজরে (মতান্তরে বুকে) ড্যাগার দিয়ে একের পর যখম করতে থাকেন। কিছুক্ষণের মধ্যে মঞ্চেই তার মৃত্যু হয়।

ফিলিপের মতো এত ক্ষমতাশালী রাজার এমন খুন নিয়ে বহু তত্ব আছে। অনেকে বলেন পসানিয়াস ব্যাক্তিগত ক্ষোভ থেকে এটি ঘটিয়েছেন, অনেকে বলেন ফিলিপের বড় স্ত্রী (আলেক্সান্ডারের মা) এটি করিয়েছেন আবার অনেকের অভিযোগের আঙুল স্বয়ং আলেক্সান্ডারের দিকে।

প্রথমে আসি পসানিয়াসের কথায়। ফিলিপের প্রতি তার ক্ষোভের যথেষ্ঠ কারণ ছিল। মেসিডোনিয়ার অন্যান্য রাজার মতো ফিলিপও ছিলেন পলিগ্যামাস, মানে তাদের একাধিক শয্যাসঙ্গি/সঙ্গিনী ছিল। পসানিয়াস যখন ছোট, তখন সেও ফিলিপের শয্যাসঙ্গী ছিল। কিন্তু অল্প কিছু দিন পরই ফিলিপ পসানিয়াসকে সরিয়ে সে জায়গায় অন্য আরেকটি ছেলেকে আনেন। হিংসার চোটে পসানিয়াস নতুন ছেলেটিকে প্রায়ই উপহাস করতো এবং এসব উপহাসে বিরক্ত হয়ে সেও কোনো একটি যুদ্ধে নিজের বীরত্ব দেখাতে গিয়ে যাচ্ছেতাইভাবে মারা গেলো।
এই নিহত তরুণের অনেক আত্মীয় স্বজনরা তখন মেসিডোনিয়ার উচ্চপর্যায়ে আসীন ছিল, যাদের মধ্যে অন্যতম ছিল অ্যাটালাস।

অ্যাটালাস সিদ্ধান্ত নিলো পসানিয়াসের বিরুদ্ধে সে কঠিন প্রতিশোধ নেবে। সে একদিন তার বাসায় পসানিয়াসকে দাওয়াত দিয়ে তাকে মারাত্মকভাবে ধর্ষণ এবং প্রহার করে। পসানিয়াস রাজা পিলিপের কাছে গিয়ে এই ঘটনার বিচার চায়। কিন্তু রাজা ফিলিপ এটা নিয়ে আর কথা বাড়াতে চাইলেন না। তিনি পসানিয়াসকে দমে যেতে বললেন এবং পুরস্কার হিসেবে নিজের দেহরক্ষী নিযুক্ত করলেন। ফিলিপের সাতজন দেহরক্ষির মধ্যে পসানিয়াসের বয়সই ছিল তখন সবচেয়ে কম।

এত তরুণ বয়সে ফিলিপের দেহরক্ষী হিসেবে নিয়োগ পাওয়া অনেক সম্মানের হলেও পসানিয়াস তার সেই ধর্ষণের ক্ষত ভুলতে পারছিলেন না। তার সব ক্ষোভ গিয়ে পড়ে ফিলিপের উপর এবং রাজার প্রতি তার সম্মান ক্ষোভ ও ঘৃনায় পরিণত হয়।

রাজাকে জনসম্মুখে খুন করে সে হয়তো এই ক্ষোভটাই মিটিয়েছে। কিন্তু এতবড় একটা ঘটনা পসানিয়াস একা একা ঘটিয়েছে, এমনটা অনেকেই মানতে নারাজ। তারা এর পেছনে স্বয়ং আলেক্সান্ডারের হাত খুঁজে পান।
এর পেছনের প্রথম কারণ হচ্ছে, রাজাকে খুন করে পালিয়ে যাওয়ার জন্য পসানিয়াস একাধিক ঘোড়া প্রস্তুত করে রেখেছিলেন। একা পালিয়ে যেতে চাইলে তিনি হয়তো একটা ঘোড়াই রাখতেন। আবার, পসানিয়াস যখন রাজাকে আক্রমণ করলেন, তখন তার অন্য ছয় দেহরক্ষীরাও তেমন কিছুই করেনি। এখান থেকেও পেছনের বড় কিছুর ইঙ্গিত স্পষ্ট।

রাজা ফিলিপ মারা যাওয়ার ঘন্টাখানেকের মধ্যেই আলেক্সান্ডার মেসিডোনিয়ার ক্ষমতা নিজের হাতে তুলে নেন। তখন তার বয়স মাত্র ২১। ক্ষমতাগ্রহণের সঙ্গে সঙ্গেই তার সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের খুন করেন তিনি। পরের বছর তিনি দক্ষিণ গ্রিস এবং বলকান সীমান্তে তীব্র সামরিক আগ্রাসন চালান। এসব আগ্রাসন তার ক্ষমতাকে আরো পাকাপোক্ত করেছিল। তিনি এমন কোনো সুযোগই রাখেননি, যে সুযোগের ফাঁক গলে বাবার মতো নিজেও খুন হবেন।

আলেক্সান্ডার জীবনে যে কাজটি কখনো করেননি, সেটি হচ্ছে দ্বিধা। জীবনে কখনো কোনো কাজ করতে তিনি দ্বিধা করেননি। এই আগ্রাসী মনোভাবে তাকে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে নিজের অধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করেছে। ফিলিপের মৃত্যু আলেক্সান্ডারের ক্ষমতার পথকে অনেকখানিই সহজ করে দিয়েছিল। মেসিডোনিয়া তখন ছিল অনেক সম্পদশালী এবং তাদের সেনাবাহিনী ছিল বেশ শক্তিশালী। তাই, মেসিডোনিয়ার রাজা হওয়ার লোভ তার হতেও পারে।

অনেকের অভিযোগের আঙুল আবার ফিলিপের স্ত্রী ও আলেক্সান্ডারের মা অলিম্পিয়াসের দিকে। ফিলিপের ৮ জন স্ত্রীর মধ্যে অলিম্পিয়াস বিশেষ মর্যাদা ভোগ করতেন, কারণ তার ছেলে আলেক্সান্ডার ছিলেন সিংহাসনের সরাসরি উত্তরাধিকারী। কিন্তু ফিলিপ যখন অ্যাটালাসের ভাগ্নীকে বিয়ে করেন, তখন অলিম্পয়াস অনেক মনক্ষুন্ন হয়েছিলেন এবং এটা নিয়ে রাজার সঙ্গে তার বিবাদ তুঙ্গে উঠেছিল। এই খুনের পেছনে অলিম্পিয়াসের হাত থাকার জল্পনা আরো গভীর হয়, যখন ফিলিপের খুনের কয়েক ঘন্টার মধ্যেও রাজার সেই স্ত্রী এবং তার সদ্যোজাত শিশুকেও খুন করা হয়।

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us