রাসূলের সন্ধি, ফরমান ও পত্রাবলি

শাহ আলম বাদশা | Mar 02, 2021 03:15 pm
রাসূলের সন্ধি, ফরমান ও পত্রাবলি

রাসূলের সন্ধি, ফরমান ও পত্রাবলি - ছবি সংগৃহীত

 

সব ধর্মগ্রন্থে সর্বশেষ রাসূল ও নবী মুহাম্মদ সা: সম্পর্কে আল্লাহ এত বেশি ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে, বাস্তবিকপক্ষেই তিনি পবিত্র কুরআনে ঘোষিত ‘সারা বিশ্বের রহমতস্বরূপ’ হিসেবে নিজেকে প্রমাণও করেছেন। তিনিই মূলত সর্বকালের সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল মুহাম্মদ, যাকে শিক্ষা-দীক্ষা ও জ্ঞান-গরিমায় আল্লাহ কোনো মানুষেরই মুখাপেক্ষী করেননি, যাতে তার রিসালাত ও চরিত্র সম্পর্কে কেউ সন্দেহ পোষণ করতে না পারে! মাতৃগর্ভে থাকাবস্থায় পিতৃবিয়োগ এবং পরবর্তীতে মাতৃবিয়োগের পর পিতৃ-মাতৃহীন অসহায় রাসূল সা: পর্যায়ক্রমে দাদা আবদুল মুত্তালিব এবং দারিদ্র্যপীড়িত চাচা আবু তালিবের গৃহে প্রতিপালিত হন বটে। কিন্তু চাচার দরিদ্র সংসারে লেখাপড়ার বদলে তাকে নিয়মিতভাবে মাঠে গিয়ে মেষ চড়াতে হতো। তিনি কেমন অক্ষরজ্ঞানহীন অথচ উচ্চশিক্ষিত প্রশিক্ষক ছিলেন, তা আল্লাহর ভাষায় শোনা যেতে পারে-

১. (হে নবী) তুমি তো এর (কুরআন) আগে কোনো কিতাব পাঠ করোনি এবং স্বহস্তে কোনো কিতাব লিখনি যে, মিথ্যাবাদীরা সন্দেহ পোষণ করবে? (সূরা নাহল, আয়াত-৪৮)

২. সেসব লোক, যারা আনুগত্য করে এ রাসূলের, যিনি উম্মি নবী, যাঁর সম্পর্কে তারা নিজেদের কাছে রক্ষিত তাওরাত ও ইঞ্জিলে লেখা দেখতে পায়...। (সূরা আরাফ, আয়াত-১৫৭)

৩. তিনিই মহান সত্তা, যিনি নিরক্ষরদের (নগণ্য সংখ্যক অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন কুরাইশদের) মধ্য থেকে একজন রাসূল পাঠিয়েছেন, যিনি তাদের তার আয়াত শোনান, তাদের জীবনকে সজ্জিত-সুন্দর করেন এবং তাদের কিতাব ও হিকমাহ শিক্ষা দেন। অথচ ইতঃপূর্বে তারা স্পষ্ট গোমরাহিতে নিমজ্জিত ছিল। (সূরা জুমুয়াহ, আয়াত-২)
রাসূলের শিক্ষাব্যবস্থা ও লেখকরা : নবুয়তপ্রাপ্তির পর সুদীর্ঘ ১৩ বছরের মক্কি জীবনে তিনি আল্লাহর খলিফা হিসেবে একদল জানবাজ অনুসারী তৈরি করলেও ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা দূরে থাক, নির্যাতন ও প্রাণনাশের হুমকির মধ্যে প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচারের সুযোগ পাননি। ফলে ইসলামী খিলাফত-কায়েমের উদ্দেশ্যে আল্লাহ তাকে মদিনায় হিজরত করতে নির্দেশ দেন। মদিনায় গিয়ে ইহুদি, খ্রিষ্টান ও মুসলিমদের একজাতি স্বীকৃতি দিয়ে তিনি যে, মদিনা-সনদ রচনা (সন্ধিচুক্তি) করেন, তারই পথ ধরে প্রতিষ্ঠিত হয় ইসলামী খিলাফত। আল্লাহর উলুহিয়াত বা সার্বভৌম-ক্ষমতার প্রতিনিধি হিসেবে তিনি ইসলামী রাষ্ট্রের শাসক হয়ে বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধান, রাষ্ট্রদূত, গোত্র, গভর্নর, সেনাপ্রধানসহ বিভিন্ন জনের কাছে বিভিন্ন সময়ে লিখিত চুক্তি, সন্ধি, ফরমান ইত্যাদি লিখিয়ে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।

রাসূলের সন্ধি ও পত্রাবলি
রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে বিভিন্ন ভাষাভাষী লোকদের জন্য তাদের ভাষায় পত্রাদি লিখার কাজ করার জন্য রাসূলে করিম সা:-এর নির্দেশে তৎকালীন দুনিয়ায় প্রচলিত ভাষাসমূহ শিখে নিয়েছিলেন বহু সাহাবি। হজরত জায়দ ইবনে সাবিত রা: সুরিয়ানি ভাষা শিখে নিয়েছিলেন। সেই ভাষায় লিখিত কোনো পত্র রাসূলের কাছে এলে তিনি তা পাঠ করে লিখিত বিষয় সম্পর্কে রাসূলকে অবহিত করতেন। তার লিখিত চুক্তি, সন্ধি ও চিঠিপত্রের উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-

১. নবী করিম সা: মদিনায় হিজরত করে স্থানীয়ভাবে বসবাস শুরুর পর সর্বপ্রথম যে গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক কার্যসম্পাদন করেন, তা হলো- মদিনার ইহুদি-খ্রিষ্টান এবং মদিনার আনসার ও মুহাজির মুসলমানদের মধ্যে পারস্পরিক অনাক্রমণ এবং অন্যান্য শর্তসম্বলিত ৫২-দফার দীর্ঘ চুক্তিনামা, যা মদিনা সনদ নামে বিশ্ব বিখ্যাত। বস্তুত সভ্যতার ইতিহাসে এ চুক্তিই প্রথম লিখিত শাসনতন্ত্রের মর্যাদার অধিকারী এবং অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ দলিল।

২. রাসূলে করিম সা: মদিনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর মুসলিম নাগরিকদের আদমশুমারি গ্রহণ করেন। তিনি এ উদ্দেশ্যে নিন্মোক্ত ভাষায় তার অফিসারের উদ্দেশে এক ফরমান জারি করেন- ‘যেসব লোক ইসলাম কবুল করার কথা বলেছে, তাদের নাম-ধাম আমার জন্য লিখিয়ে দাও।’

৩. তৃতীয় হিজরি সনের সফর মাসে বনি জামরা গোত্রের সাথে নবী করিম সা: এক সন্ধিচুক্তি করেন। এই চুক্তিনামাও লিখিত অবস্থায় পাওয়া গেছে। অবশ্য নিম্নলিখিত দুটি বিবরণ থেকেও প্রমাণ পাওয়া যায় যে, হিজরতের অব্যবহিত আগেও নবী করিম সা: অন্তত দুটি ক্ষেত্রে লিখিত ফরমান দিয়েছিলেন। ক. তামিমদারিকে নবী করিম সা: এক লিখিত পরোয়ানা পাঠান। খ. হিজরত করিয়া মদিনায় যাওয়ার পথে নবী করিম সা: সুরাকার ইবনে মালিক মুদলেজিকে একটি নিরাপত্তালিপি লিখিয়ে দিয়েছিলেন।

৪. হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- মক্কা বিজয়ের বছর (অষ্টম হিজরি) খাজায়া গোত্রের লোকরা লাইস গোত্রের এক ব্যক্তিকে হত্যা করে। এ সংবাদ রাসূলে করিমের কাছে পৌঁছালে তিনি তাঁর জন্তুযানের পৃষ্ঠে সওয়ার অবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষণদান করেন। তাতে তিনি হেরেম শরিফের মর্যাদা, শ্রেষ্ঠত্ব, মাহাত্ম্য এবং নরহত্যার দণ্ড ও এ সংক্রান্ত যাবতীয় হুকুম আহকাম বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেন। ভাষণ সমাপ্ত হলে হজরত আবু শাহ নামক জনৈক সাহাবি রাসূলে করিম সা:কে বলিলেন, ‘হে রাসূল! আমার জন্য ভাষণটি লিখিয়ে দিন। তখন নবী করিম সা: তার আবেদন মঞ্জুর করে জনৈক সাহাবিকে বলিলেন, ...এই ভাষণটি আবু শাহকে লিখিয়ে দাও।

৫. ঐতিহাসিক হাফিজ ইবন আবদুল বার লিখিয়েছেন- নবী করিম সা: আমর ইবনে হাজম ও অন্যান্যকে সাদকা, ফরজ ও সুন্নাত সম্পর্কে এক দস্তাবেজ লিখিয়ে দিয়েছিলেন। আল্লামা শাওকানি বিভিন্ন স্থানে এই কিতাবটিরই উল্লেখ করেছেন। ইমাম মালিক রা: এ কিতাবখানির উল্লেখ করে বর্ণনা করেছেন- আবুবকর ইবনে মুহাম্মদ ইবনে হাজম থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, এটি নবী করিম সা: লিখিত সেই কিতাব, যা তিনি আমর ইবনে হাজমকে ইয়েমেনে পাঠানোর সময় লিখিয়ে দিয়েছিলেন। তাকে পাঠিয়েছিলেন সেখানকার অধিবাসীদেরকে দ্বীন-ইসলামের গভীর জ্ঞান দান ও সুন্নতের শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে এবং তাদের কাছ থেকে জাকাত আদায় করার জন্য। এতে তার জন্য নিয়োগপত্র ও প্রতিশ্রুতি এবং সেখানকার লোকদের মধ্যে তার দায়িত্ব পালনের বিষয়ও লিখিত ছিল। হিজরি দশম সনে নবী করিম সা: হজরত আমর ইবনে হাজম রা:কে নাজরান অধিবাসীদের শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন।

৬. এতদ্ব্যতীত নবী করিম সা: ইয়েমেনের অধিবাসীদের জন্য আর একটি ‘দস্তাবেজ’ লিখিয়ে পাঠিয়েছিলেন। এর নাম ছিল ‘কিতাবুল জিরাহ’। এ ঘোষণাপত্র উষ্ট্রচর্মে লিখিত ছিল।

৭। বনু সকিফের প্রতিও তিনি এক সন্ধিনামা লিপিবদ্ধ করে দিয়েছিলেন। এর শুরুতে লিখিত ছিল- এটি সকিফ গোত্রের জন্য আল্লাহর রাসূলের লিখিত সন্ধিনামা।

৮. নবী করিম সা: সদকা ও জাকাত সম্পর্ক একটি পূর্ণাঙ্গ দস্তাবেজ লিখিয়ে নিয়েছিলেন। একে ইসলামী রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলের সরকারি দায়িত্বশীল কর্মচারীদের কাছে পাঠানোই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য। কিন্তু তা পাঠানোর আগেই তিনি ইন্তেকাল করেন। পরে তা খিলাফতে রাশেদার কার্যপরিচালনার ব্যাপারে পুরাপুরি দিকদর্শন হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

ইমাম জুহরি এ দস্তাবেজটি দেখতে পেয়েছেন এবং বলেছেন, এটি নবী করিমের সদকা সম্পর্কে লিখিত কিতাব। জুহরি সালেম ইবনে আবদুল্লাহর কাছে এর পাঠ গ্রহণ করেছিলেন এবং তিনি তা নিজের মধ্যে আয়ত্ত করে নিয়েছিলেন। উত্তরকালে উমর ইবনে আবদুল আজিজ খিলাফতের দায়িত্ব দিয়ে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমরের বংশধরদের কাছ থেকে তা গ্রহণ করেন এবং এর প্রতিলিপি তৈরি করে নেন। (মুসনাদে ইমাম আহমদ, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা-১৪)

৯. রাসূল সা: হজরত মুআজ ইবনে জাবাল রা:কেও সাদকা সম্পর্কে একটি দস্তাবেজ লিখিয়ে দিয়েছিলেন। মুসা ইবনে তালহা বলেন, আমাদের কাছে নবী করিম সা:-এর কাছ থেকে প্রাপ্ত মুআজ ইবনে জাবালের একটি কিতাব রয়েছে। (মিশকাত, পৃষ্ঠা-১৫৯)।

এছাড়াও নবী করিম সা:-এর লিখিত আরো বহু সন্ধিচুক্তি ও অন্যান্য দলিল-দস্তাবেজ পাওয়া গেছে। এ ধরনের দস্তাবেজসমূহের সংখ্যা তিন শতাধিক হবে। ‘মিফতাহুল আকবা’ গ্রন্থে নবী করিম সা:-এর পাঠানো ৩৬টি চিঠির প্রতিলিপির উল্লেখ করা হয়েছে। টংক রাজ্যের তদানীন্তন অভ্যন্তরীণ বিষয়ক মন্ত্রী সাহেবজাদা আবদুর রহিম খান ২৫০টি লিখিত দস্তাবেজের উল্লেখ করেছেন।

যেমন-
১. হুদাইবিয়ার সন্ধিনামা। (আল-বিদায়া, আন-নিহায়া, ইবনে কাসির, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা-১৬৮; সহিহ বুখারি, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৩৭১; দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা-৬১০)

২. বিভিন্ন কবিলা ও গোত্রের প্রতি বিভিন্ন সময়ে লিখিত ফরমান। (তাবাকাতে ইবনে সায়াদ, কিতাবুল আমওয়াল : আবু উবাইদ, পৃষ্ঠা-২১)

৩. বিভিন্ন দেশের বাদশাহ ও রাষ্ট্রনেতাদের কাছে লিখিত ইসলামী দাওয়াতের পত্রাবলি। (বুখারি শরিফ, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা-৬৩১)

৪. আবদুল্লাহ ইবনে হাকিম রা:-এর কাছে রাসূল সা:-এর পাঠানো চিঠি। এই চিঠিতে মৃত জন্তু ইত্যাদি সম্পর্কে আইন লিখিত হয়েছিল। (মুজিমুস সগির তাবরানি)

৫. ওয়ায়েল ইবনে হাজার রা:-এর জন্য নামাজ, মদ্যপান ও সুদ ইত্যাদি সম্পর্কে নবী করিম সা: বিধান লিখিয়ে দিয়েছিলেন। (ওই)

৬. জহাক ইবনে সুফিয়ান রা:-এর কাছে রাসূলে করিম সা:-এর লিখিত ও পাঠানো একটি হিদায়াতনামা বর্তমান ছিল, তাতে স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রী কর্তৃক রক্তপাতের বদলা আদায় করার বিধান লিখিত ছিল। (আবু দাউদ)

৭. ইয়েমেনবাসীর প্রতি বিভিন্ন ফসলের জাকাত সম্পর্কে নবী করিম সা: কর্তৃক লিখিত ও পাঠানো এক দস্তাবেজ।

৮. ইয়েমেনবাসীর প্রতি রাসূলে করিম সা:-এর লিখিত অপর একটি পত্র, যাতে লিখিত ছিল- ‘ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের মধ্যে যারা ইসলাম কবুল করবে, তারা মুমিনদের মধ্যে গণ্য হবে, তাদের অধিকার ও কর্তব্য মুমিনদের সমান হবে। আর যারা ইহুদি বা খ্রিষ্টান থেকে যাবে, তাদেরকে তাদের ধর্ম পালন থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করা হবে না, তবে তারা ‘জিজিয়া’ আদায় করতে বাধ্য থাকবে। (কিতাবুল আমওয়াল : আবু উবাইদ, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা-২১)

৯. হুজাইফা ইবনে আয়ামান রা:কে এক ফরমান লিখিয়ে দিয়েছিলেন। তাতে জাকাতের ফরজগুলো সম্পর্কে বিবরণ লিখিত ছিল। (তাবাকাতে ইবন সায়াদ)

১০. আল-ইবনুল হাজারিকে রাসূল করিম সা: জাকাতের মসলা লিখিয়ে দিয়েছিলেন।

১১. নবম হিজরি সনে হজরত আবুবকর সিদ্দিক রা:কে আমিরে হজ নিযুক্ত করে পাঠিয়েছিলেন এবং তাকে নবী করিম সা: হজের নিয়ম-পদ্ধতি লিখিয়ে দিয়েছিলেন। (সিরাতে ইবনে হিশাম, পৃষ্ঠা-৫৫৬)

১২. সূরা তওবা নাজিল হওয়ার পর নবম হিজরি সনে মদিনা থেকে হজরত আলী রা:কে মক্কার বিশেষ পয়গামসহ পাঠান। তাকে হজের সময় লোকদেরকে জানিয়ে দেয়ার জন্য নি¤েœাক্ত ঘোষণা লিখিয়ে দেন- এই বছরের পর কোনো মুশরিকই কাবা ঘরের কাছে যেতে পারবে না; উলঙ্গ হয়ে কেউ তাওয়াফ করতে পারবে না, বেহেশতে মুমিন ব্যতীত কেউ দাখিল হতে পারবে না এবং প্রত্যেকে প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে বাধ্য থাকবে।’ (সিরাতে ইবনে হিশাম, পৃষ্ঠা-৫৫৩)

১৩. রাসূল কর্তৃক উমর ইবনে আকসা সুলামিকে এক লিখিত ফরমান পাঠানো হয়, তাতে সদকা ও জন্তুর জাকাত সম্পর্কিত আইন-কানুন লিখিত ছিল।

১৪. গালিব ইবনে আবদুল্লাহকে এক ফরমান পাঠানো হয়, তাতে গনিমতের মাল সম্পর্কে বিস্তারিত মাসয়ালা-মাসায়েল লিখিত হয়েছিল।

১৫. সুমামা প্রতিনিধিদলকে রাসূলে করিম সা: ফরজসমূহ এবং সদকার মাসয়ালা লিখিয়ে দিয়েছিলেন।

১৬. আবু রাশেদুল আজদিকে নামাজের নিয়ম-কানুন ও আইন লিখিয়ে দেন।

১৭. নজরানাবাসীর এক পাদ্রির প্রতি রাসূলে করিম সা:-এর লিখিত ফরমান পাঠানো হয়। তাতে ইসলাম, ইসলামের দাওয়াত ও জিজিয়ার আদেশ লিখিত হয়।

১৮. ‘হাজরামাউত’-এর শাসনকর্তার নামে নামাজ, জাকাত ও গনিমতের মালের বিবরণ লিখিয়ে পাঠানো হয়।

১৯. ‘দাওমাতুল জান্দাল’ অধিবাসীদের নামে জিজিয়া ও জাকাতের বিধান লিখিয়ে পাঠানো হয়। (কিতাবুল আমওয়াল আবু উবায়দ, পৃষ্ঠা-১৯৫)

২০. দাওমাতুল জান্দাল ও কতনের অধিবাসীদের নামে ওশর সম্পর্কীয় মাসয়ালা লিখিয়ে পাঠানো হয়।

২১. হররা ও আজরাহ কবিলাসমূহের নামে জিজিয়ার বিধান লিখিয়ে পাঠানো হয়।


২২. বনু নাহাদ কবিলার নামে জাকাতের পশুসম্পর্কে নির্দেশ পাঠানো হয়।

২৩. বনু হানিফা কবিলাকে জিজিয়ার মাসয়ালা লিখিয়ে পাঠানো হয়।

২৪. হাজারবাসীর প্রতি এক ফরমান পাঠানো হয়। তাতে ইসলামের ওপর মজবুত হয়ে দাঁড়াতে ও শাসনকর্তার আনুগত্য করতে বলা হয়।

২৫. ইবনে কাসির লিখিয়েছেন- রাসূল সা: ইউহানা ও আয়লাবাসীর জন্য একটি দস্তাবেজ লিখিয়ে দেন। এটি তাদের কাছে রক্ষিত ছিল। (কিতবুল আমওয়াল, পৃষ্ঠা-২০০, নুরুল ইয়াকিন, পৃষ্ঠা-২৪৮)

২৬. তামিমদারি কবিলাকে উপঢৌকন কবুল করা ও স্বর্ণনির্মিত জিনিসপত্র ব্যবহার সম্পর্কে ইসলামী বিধান লিখিয়ে দেয়া হয়।

২৭. আম্মানের শাসনকর্তা জাফর ও আবদের নামে ইসলামের দাওয়াত, ওশর, জাকাত ইত্যাদির মাসয়ালা লিখিয়ে পাঠানো হয়।

২৮. খালিদ ইবনে জামাদকে ইসলামের ‘আরকান’ লিখিয়ে দেয়া হয়।

২৯. জুরয়া ইবনে সায়ফকে জিজিয়া ও জাকাতের বিধান লিখিয়ে দেয়া হয়। (কিতাবুল আমওয়াল, পৃষ্ঠা-২০১)

৩০. রবিয়া ইবনে জিমারহাব হাজরিকে শুল্ক ইত্যাদির মাসয়ালা লিখিয়ে দেয়া হয়।

৩১. শারহবিল, হারেস, নইম, বনু আবদু কালানকে গনিমতের মাল, ওশর ও জাকাতের মাসয়ালা লিখিয়ে দেয়া হয়।

৩২. মুসলিম জনগণের জন্য এক ফরমানে নবী করিম সা: ফল পরিপক্ব হওয়ার আগে তার বিক্রয় ও বায়তুলমালের এক পঞ্চমাংশ আদায় করার আগে গনিমতের মাল থেকে নিজেদের অংশগ্রহণ ইত্যাদি সম্পর্কে ইসলামের বিধিবিধান লিখিয়ে দিয়েছিলেন।

৩৩. বিক্রির আগে পণ্যদ্রব্যের দোষ প্রকাশ করার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আদা ইবনে খালিদকে এক বয়ান লিখিয়ে দেয়া হয়।

৩৪. হজরত উমর রা:কে সদকার মাসয়ালাসমূহ লিখিয়ে দেয়া হয়।

৩৫. হজরত আবুবকর রা:কে জাকাতের যাবতীয় হুকুম আহকাম লিখিয়ে দেন।

৩৬. তামিমদারি ইসলাম কবুল করলে তার জন্য একখণ্ড জমি লিখিয়ে দেয়া হয়। হজরত উমর রা: খলিফা নিযুক্ত হওয়ার পর সেই লিখিত দস্তাবেজ তার কাছে পেশ করা হয় এবং তিনি ওই ভূমিখণ্ড তার জন্যই বরাদ্দ করেন। (কিতাবুল আমওয়াল-আবু উবাইদ, পৃষ্ঠা-২৭৪)

৩৭. মজ্জায়া ইয়ামনিকে একখণ্ড জমি লিখিয়ে দেয়া হয় এবং এর জন্য দস্তাবেজ তৈরি করে দেয়া হয়। আবু সালাবাত খুশানিকেও অনুরূপ দস্তাবেজ তৈরি করে একখণ্ড জমি দেয়া হয়।

৩৮. মতরফ ইবন কাহেন বাহেলিকে জাকাতের মাসয়ালা-মাসায়েল লিখিয়ে দেন।

৩৯. মুনজির ইবনে সাবিকে জিজিয়ার মাসয়ালা লিখিয়ে দেয়া হয়। অগ্নিপূজকদের প্রতি ইসলামের ভূমিকা সম্পর্কেও এক বয়ান লিখিয়ে দেয়া হয়। (ওই, পৃষ্ঠা-২৮০ ও ২৮১)

৪০. আকিদর বংশের লোকদেরকে এক ফরমান লিখিয়ে দেয়া হয়। তখন পর্যন্ত রাসূল সা:-এর নবুয়তি (সরকারি) স্ট্যাম্প তৈরি না হওয়ার কারণে এর ওপর হজরতের টিপসই লাগানো হয়। (আল ইসাবাহ, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা-১৩১)

৪১. মুসাইলমাতুল কাজজাবের নামে রাসূলে করিম সা: এক ফরমান লিখিয়ে পাঠিয়েছিলেন।

৪২. খায়বারের ইহুদিদের এলাকায় হজরত আবদুল্লাহ ইবনে সাহল রা:কে মৃতাবস্থায় পাওয়া যায়। তখন নবী করিম সা: ইহুদিদেরকে এর দিয়ত দেয়া সম্পর্কে এক পত্র লিখিয়ে পাঠান। (সিরাতে ইবনে হিশাম (উর্দু), পৃষ্ঠা-৪৭৩)

৪৩. বায়হাকি উল্লেখ করেছেন- নবী করিম সা: ইয়েমেনবাসীকে লিখিয়েন যে, মধু চাষকারীদের কাছ থেকে জাকাত নেয়া হবে।

৪৪. নবী করিম সা: মুআজ ইবনে জাবাল রা:কে লিখিয়ে পাঠান যে, প্রতি দুইশ’ দিরহাম থেকে পাঁচ দিরহাম ও প্রতি কুড়ি মিসকাল স্বর্ণ থেকে অর্ধ মিসকাল জাকাত গ্রহণরবে। (প্রথম খণ্ড, কিতাবুজ জাকাত, পৃষ্ঠা-১৭৫, দারে কুতনি)

৪৫. অপর এক ফরমান সম্পর্কে ইমাম দারেমি লিখিয়েছেন- নবী করিম সা: ইয়েমেনের অধিবাসীকে লিখিয়ে পাঠান যে, কুরআন মাজিদকে কেবল পাক ব্যক্তিই স্পর্শ করবে, বিয়ের মালিকানা বা স্বামীত্ব লাভের আগে তালাক হতে পারে না এবং কিনে নেয়ার আগে গোলাম আজাদ করা যায় না। (সুনানে দারেমি, পৃষ্ঠা-২৯৩)

৪৬. আরবের সব কবিলার নামেই নবী করিম সা: একসময় দিয়তের মাসয়ালা লিখিয়ে পাঠান। (বুখারি, নাসায়ি, দারে কুতনি, নায়লুল আওতার, সপ্তম খণ্ড, পৃষ্ঠা-২৪২)

৪৭. খায়বারের দখলকৃত জমি ইহুদিদের মধ্যে বণ্টনের চুক্তিনামা লিখিত হয়। (ফতুহুল বুলদান, পৃষ্ঠা ৩৬-৪২)
৪৮. নবী করিম সা: হামাদান গোত্রের প্রতি এক পত্র হজরত আলী রা:-এর মাধ্যমে পাঠিয়েছিলেন।

৪৯. আল্লামা ইবনে কাসির লিখিয়েছেন, রাসূলে করিম সা: জুরবা ও আজরাহবাসীর জন্য আমান-নামা লিখলেন। এর শুরুতে বিসমিল্লাহ লেখার পর লিখিত হয়- এটি আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদের তরফ থেকে জুরবা ও আজরাহবাসীর জন্য লিখিত দলিল, তারা আল্লাহর ও মুহাম্মদের কাছ থেকে প্রদত্ত আমান ও পূর্ণ নিরাপত্তার মধ্যে থাকবে। (পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৬-১৭)

৫০. হেমইয়ারের বাদশাহদের প্রতি রাসূলের লিখিত পত্র। আল্লামা ইবনে কাসির লিখিয়েছেন, রাসূলে করিম সা: তাদের প্রতি এক পত্র লিখিয়েন।

৫১. নবী করিম সা: নাজরানের বিশপ-পাদ্রির নামে এক পত্র পাঠান। তাতে লিখিত ছিল- আল্লাহর রাসূল ও নবী মুহাম্মদের তরফ থেকে নাজরানের বিশপের প্রতি, তুমি ইসলাম কবুল করো, আমি তোমার কাছে ইবরাহিম, ইসহাক ও ইয়াকুবের আল্লাহর হামদ করছি। অতঃপর আমি তোমাদেরকে বান্দার দাসত্ব থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর দাসত্ব কবুল করার ও মানুষের বন্ধুত্ব পৃষ্ঠপোষকতা থেকে নিষ্কৃতি পেয়ে আল্লাহর বন্ধুত্ব-পৃষ্ঠপোষকতার আশ্রয় গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি। এটি কবুল না করলে তোমরা জিজিয়া দিতে বাধ্য থাকবে। আর তাও অস্বীকার করলে তোমাদের সাথে যুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করব।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us